পরকীয়া — জানুন এর লক্ষণ, পরিণাম, এবং পরীক্ষিত ইসলামী উপায় ও আমল
পরকীয়া কি পাপ বা অপরাধ? পরকীয়ার লক্ষণ : উপায় ও আমল
- আপডেট সময়ঃ ০২:২৮:০৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫
- / ৬২ বার পড়া হয়েছে।
পরকীয়া সম্পর্কে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি
ইসলামে পরকীয়া (যিনা) একটি মহাপাপ (كبيرة الذنوب)। এটি শুধু মানবিক সম্পর্ক নষ্ট করে না, বরং ঈমানকে দুর্বল করে এবং সমাজে অশান্তির বীজ বপন করে। আল্লাহ তাআলা পরকীয়া বা ব্যভিচারকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছেন।
وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَى إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلًا
“ব্যভিচারের নিকটেও যেয়ো না, এটি অশ্লীলতা এবং নিকৃষ্ট পথ।”
(সূরা আল-ইসরাঃ ৩২)
পরকীয়া শব্দের অর্থ ও ব্যাখ্যা
বাংলা “পরকীয়া” শব্দটি এসেছে “পর” অর্থাৎ অন্যের সাথে সম্পর্ক থেকে। ইসলামী পরিভাষায় এটি “যিনা”, অর্থাৎ বিবাহ বহির্ভূত যৌন সম্পর্ক বা নৈতিক সীমা লঙ্ঘন।
পরকীয়া কি ইসলামে পাপ না অপরাধ?
কুরআনের আলোকে ব্যাখ্যা
কুরআনে ব্যভিচারকে সবচেয়ে জঘন্য পাপ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
“ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারী উভয়কে ১০০ বেত্রাঘাত করো।”
(সূরা আন-নূর: ২)
হাদীসের আলোকে বিশ্লেষণ
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:
“যখন কেউ ব্যভিচার করে, তখন তার ঈমান তার থেকে সরে যায়।”
(সহিহ বুখারী, হাদীস: ২৪৭৫)
অতএব, পরকীয়া শুধু পাপ নয়, এটি ঈমানহানির কারণ।
সমাজে পরকীয়ার বিস্তার ও কারণসমূহ
ঈমানের দুর্বলতা
আল্লাহভীতি না থাকলে মানুষ সহজেই হারাম পথে যায়।
দাম্পত্য জীবনে বিরোধ
অসন্তুষ্টি, যোগাযোগের অভাব বা শীতল সম্পর্কই অনেক সময় পরকীয়ার জন্ম দেয়।
প্রযুক্তির অপব্যবহার
সোশ্যাল মিডিয়া ও চ্যাটিং প্ল্যাটফর্মগুলো আজ “শয়তানের হাতিয়ার” হিসেবে কাজ করছে।
সামাজিক মূল্যবোধের পতন
আধুনিকতা ও স্বাধীনতার নামে অনেকে নৈতিকতা হারাচ্ছে।
পরকীয়ার লক্ষণসমূহ
আচরণগত পরিবর্তন
অতিরিক্ত ফোনে ব্যস্ত থাকা, লুকানো মেসেজ, বা নতুন অভ্যাস তৈরি।
গোপনীয়তা ও মিথ্যা বলা
নিজেকে লুকিয়ে চলা, বারবার মিথ্যা অজুহাত দেওয়া।
শারীরিক ও মানসিক দূরত্ব
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসা ও আকর্ষণ কমে যাওয়া।
পরকীয়ার পরিণতি
পরিবার ও সন্তানের ক্ষতি
সন্তানরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে এবং সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
মানসিক অশান্তি ও পাপের বোঝা
পরকীয়া সুখ নয়; এটি আত্মাকে বিষাক্ত করে তোলে।
আখিরাতের শাস্তি
জাহান্নামে কঠিন শাস্তি নির্ধারিত রয়েছে।
“ব্যভিচারীরা জাহান্নামে দগ্ধ হবে।” (সহিহ মুসলিম)
ইসলামে পরকীয়ার শাস্তি
বিবাহিত ব্যক্তির শাস্তি (রজম)
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:
“বিবাহিত ব্যভিচারীর শাস্তি হলো পাথর নিক্ষেপ করে মৃত্যুদণ্ড।”
(সহিহ মুসলিম)
অবিবাহিত ব্যক্তির শাস্তি (বেত্রাঘাত)
“অবিবাহিত ব্যভিচারীকে ১০০ বেত্রাঘাত করো।”
(সূরা নূর: ২)
পরকীয়া থেকে মুক্তির উপায়
তাওবা ও ইস্তেগফার
আল্লাহ বলেন:
“যে তাওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তার গুনাহ ক্ষমা করেন।”
(সূরা মারইয়াম: ৬০)
নামাজ ও তাকওয়া বৃদ্ধি করা
নিয়মিত নামাজ ও কুরআন পাঠ শয়তানের প্ররোচনা থেকে রক্ষা করে।
পরহেজগার সঙ্গী বেছে নেওয়া
ভালো সঙ্গ মানেই পাপ থেকে নিরাপত্তা।
পরকীয়া ছাড়ার পরীক্ষিত আমল
কুরআনের আয়াত পাঠ
প্রতিদিন সূরা নূর (আয়াত ৩০-৩১) পাঠ করলে চোখ ও হৃদয় পবিত্র থাকে।
দোয়া ও জিকির
اللّهُمَّ احْفَظْنِي مِنَ الزِّنَا وَالْمَعَاصِي
“হে আল্লাহ! আমাকে ব্যভিচার ও পাপ থেকে রক্ষা করুন।”
আত্মসংযমের প্রশিক্ষণ
রোজা রাখা, একাকীত্ব এড়ানো ও হারাম দৃষ্টিতে না তাকানো।
ইসলামে বিবাহিত জীবনে ভালোবাসা রক্ষার পরামর্শ
-
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে খোলামেলা কথা বলা
-
একে অপরের প্রতি সম্মান ও যত্ন
-
ভালোবাসার প্রকাশ ও ধৈর্য
পরকীয়া প্রতিরোধে সমাজ ও পরিবারের ভূমিকা
পরিবারে ইসলামী শিক্ষা জোরদার করা, সন্তানের নৈতিক শিক্ষা প্রদান, ও সমাজে পরকীয়া-বিরোধী সচেতনতা তৈরি করা জরুরি।
আল্লাহর রহমত ও ক্ষমার দরজা
আল্লাহর দরজা সর্বদা খোলা। যে তাওবা করে, সে নবজাতকের মতো পবিত্র হয়ে যায়।
মনোবৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে পরকীয়া থেকে মুক্তির কৌশল
নিজেকে ব্যস্ত রাখুন, শখ তৈরি করুন, আত্মসম্মান বাড়ান এবং মানসিকভাবে দৃঢ় থাকুন।
বাস্তব জীবনের অনুশোচনা ও পরিবর্তনের গল্প
অনেকে পরকীয়া করে সব হারানোর পর আল্লাহর পথে ফিরে এসে জীবনের প্রকৃত শান্তি পেয়েছে। আল্লাহ যাকে চান, তাকেই হিদায়াত দেন।
পরকীয়া থেকে মুক্তির আলোকিত পথ
পরকীয়া কোনো ভালোবাসা নয়—এটি আত্মার দূষণ। আল্লাহভীতি, নামাজ, ও তাওবা হলো মুক্তির পথ। মনে রাখবেন, আল্লাহর পথে ফিরে আসাই আসল শান্তি।
FAQs
১. পরকীয়া কি শুধু শারীরিক সম্পর্ক বোঝায়?
না, মানসিক বা অনলাইন সম্পর্কও পরকীয়া হিসেবে গণ্য হতে পারে।
২. পরকীয়া করলে কি আল্লাহ ক্ষমা করবেন?
হ্যাঁ, আন্তরিক তাওবা করলে আল্লাহ ক্ষমা করেন।
৩. পরকীয়া ছাড়তে সবচেয়ে কার্যকর আমল কী?
রোজা রাখা ও নিয়মিত নামাজ আদায় করা।
৪. স্ত্রীর পরকীয়া জানলে স্বামীর করণীয় কী?
ধৈর্য, পরামর্শ ও প্রয়োজনে ইসলামী বিচ্ছেদ।
৫. পরকীয়া প্রতিরোধে কোন দোয়া পাঠ করা উচিত?
اللّهُمَّ احْفَظْنِي مِنَ الزِّنَا وَالْمَعَاصِي









