কুরআন-হাদীসের আলোকে বিশ্লেষণ
পূজায় অংশ নেয়া সম্পর্কে ইসলামের সতর্কবার্তা কি?
- আপডেট সময়ঃ ১২:১৭:১৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ অক্টোবর ২০২৫
- / ৭৮ বার পড়া হয়েছে।
বর্তমান সমাজে ভ্রাতৃত্ব, সম্প্রীতি ও সামাজিক মেলবন্ধনের নামে অনেক মুসলমানকে হিন্দু ধর্মীয় উৎসব পূজাতে যোগ দিতে বা অন্তত পূজামণ্ডপ পরিদর্শনে উৎসাহিত করা হয়।
কিন্তু প্রশ্ন হলো: ইসলামের দৃষ্টিতে এটি কি জায়েজ নাকি হারাম? আর মুসলিম যদি পূজামণ্ডপে যায় তবে তার কী ধরনের আকীদাগত ও ইমানি ক্ষতি হতে পারে?
কুরআনের আলোকে মুসলিমদের জন্য বিধান
আল্লাহ তাআলা স্পষ্টভাবে বলেছেন:
﴿وَالَّذِينَ اجْتَنَبُوا الطَّاغُوتَ أَنْ يَعْبُدُوهَا وَأَنَابُوا إِلَى اللَّهِ لَهُمُ الْبُشْرَى﴾
“আর যারা মিথ্যা উপাস্যদের ইবাদত থেকে বেঁচে থাকে এবং আল্লাহর দিকে ফিরে আসে, তাদের জন্য সুসংবাদ রয়েছে।”
— [সূরা আয-যুমার: ১৭]
👉 এখানে ‘তাগুত’ বলতে বোঝানো হয়েছে সব মিথ্যা উপাসনা, যেমন: মূর্তি, প্রতিমা, দেব-দেবীর উপাসনা। দুর্গাপূজা সরাসরি শিরক বা মূর্তি পূজার অন্তর্ভুক্ত।
তাই কোনো মুসলিমের সেখানে উপস্থিতি ইসলাম অনুমোদন করে না।
আল্লাহ তাআলা আরেক জায়গায় বলেন:
﴿وَقَدْ نَزَّلَ عَلَيْكُمْ فِي الْكِتَابِ أَنْ إِذَا سَمِعْتُمْ آيَاتِ اللَّهِ يُكْفَرُ بِهَا وَيُسْتَهْزَأُ بِهَا فَلَا تَقْعُدُوا مَعَهُمْ حَتَّى يَخُوضُوا فِي حَدِيثٍ غَيْرِهِ﴾
“তোমাদের প্রতি কিতাবে নাযিল করা হয়েছে যে, যখন তোমরা শুনবে আল্লাহর আয়াতসমূহ অস্বীকার করা হচ্ছে বা উপহাস করা হচ্ছে,
তখন তাদের সাথে বসবে না যতক্ষণ না তারা অন্য কোনো বিষয়ে লিপ্ত হয়।”
— [সূরা আন-নিসা: ১৪০]
👉 এখানে শিক্ষণীয় বিষয় হলো: যেখানে আল্লাহর সাথে শিরক হয়, সেখানে বসা বা উপস্থিত থাকাও নিষিদ্ধ।
পূজামণ্ডপে যাওয়া এ আয়াতের অন্তর্ভুক্ত।দুর্গাপূজা : মুসলিমরা পূজামণ্ডপে গেলে কি কি ক্ষতি? ইসলাম কি বলে ?
হাদীসের আলোকে বিধান
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:
مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ
“যে ব্যক্তি কোনো জাতির সাথে সাদৃশ্য রাখে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত।”
— [আবু দাউদ, হাদীস: ৪০৩১]
👉 অর্থাৎ, যদি মুসলমানরা অমুসলিমদের ধর্মীয় আচারে অংশ নেয় বা সাদৃশ্য রাখে, তবে সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।
পূজা যেহেতু হিন্দু ধর্মের অন্যতম প্রধান ইবাদত, তাই মুসলিমের সেখানে উপস্থিতি বড় ধরনের গুনাহ।
রাসূলুল্লাহ ﷺ আরো বলেছেন:
إِنَّ اللَّهَ حَرَّمَ عَلَيْكُمْ عُقُوقَ الْأُمَّهَاتِ، وَوَأْدَ الْبَنَاتِ، وَمَنْعًا وَهَاتِ، وَكَرِهَ لَكُمْ قِيلَ وَقَالَ، وَإِضَاعَةَ الْمَالِ، وَكَثْرَةَ السُّؤَالِ
“আল্লাহ তোমাদের জন্য হারাম করেছেন মায়ের অবাধ্যতা, কন্যাশিশুদের জীবিত কবর দেওয়া,
অন্যের অধিকার অস্বীকার করা এবং শিরক ও কুফরী কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়া।”
— [সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম]
👉 পূজা যেহেতু শিরক ও কুফরীর অন্যতম প্রকাশ, তাই মুসলমানের জন্য এটি থেকে বিরত থাকা ফরজ।
দুর্গাপূজা : মুসলিমরা পূজামণ্ডপে গেলে কি কি ক্ষতি? ইসলাম কি বলে ?
আলেমদের ব্যাখ্যা
🔹 ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেছেন:
“অমুসলিমদের ধর্মীয় উৎসব পালন করা বা তাতে অংশগ্রহণ করা সম্পূর্ণ হারাম।
এমনকি তাদের উৎসবে উপস্থিত হওয়াও ইসলাম অনুমোদন করে না।”
— [ইকতিদা আস-সিরাত আল-মুস্তাকিম, খণ্ড ১]
🔹 ইমাম নববী (রহ.) বলেন:
“মুসলমানের জন্য অমুসলিমদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়া বা তাদের অনুকরণ করা হারাম। এটি ইমানের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।”
— [আল-মাজমু’ শরহুল মুহাযযাব]
পূজামণ্ডপে গেলে মুসলমানের কী ক্ষতি হতে পারে?
১. আকীদাগত ক্ষতি – শিরক ও কুফরীর স্থানে উপস্থিত থাকা ইমান দুর্বল করে এবং আল্লাহর গজব ডেকে আনে।
>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>নফসের ক্ষতি – সঙ্গদোষে অন্য ধর্মীয় আচারকে হালকা ভাবা শুরু হতে পারে।
৩. সামাজিক ক্ষতি – মুসলিম সমাজে বিভ্রান্তি ছড়ায় যে ধর্মীয় উদযাপনগুলো সব সমান।
৪. আখিরাতের ক্ষতি – যদি আল্লাহর কাছে তওবা না করে মৃত্যু হয়, তবে আখিরাতে মুক্তি পাওয়া কঠিন।
➡ পূজা ও পূজামণ্ডপ মুসলিমদের জন্য হারাম।
➡ সেখানে উপস্থিত হওয়া কেবল আকীদাগত ঝুঁকি নয়, বরং ইমান হানির কারণ।
>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>➡ মুসলিমদের উচিত সামাজিক ভদ্রতা ও সৌজন্য রক্ষা করে দূর থেকে শুভেচ্ছা জানানো, কিন্তু কখনোই ধর্মীয় আচার বা পূজামণ্ডপে অংশ না নেওয়া।
✦ দোয়া:
اللَّهُمَّ ثَبِّتْ قُلُوبَنَا عَلَى دِينِكَ
“হে আল্লাহ! আমাদের অন্তরকে তোমার দ্বীনের উপর দৃঢ় রাখ।”
— [তিরমিজি, হাদীস: ২১৪০]









