মাগরিব নামাজ কখন, কত রাকাত, কিভাবে পড়তে হয়, নিয়ত কী, এবং এর ফজিলত কী—সব প্রশ্নের নির্ভরযোগ্য উত্তর একসাথে এই আর্টিকেলে।
মাগরিবের নামাজের সময় : কত রাকাত? নিয়ম,আমল ও ফজিলত
- আপডেট সময়ঃ ০৬:৪৫:৪২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫
- / ৫৮ বার পড়া হয়েছে।
মাগরিব নামাজ কী?
মাগরিব নামাজ মুসলমানদের দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে চতুর্থ নামাজ। সূর্যাস্তের পর থেকে শুরু হয় এই নামাজের সময়। এটি ফরজ ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি নামাজ।
সময় কখন শুরু ও শেষ হয়?
মাগরিবের সময় শুরু হয় সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গে এবং শেষ হয় আকাশে লাল আভা চলে যাওয়ার আগপর্যন্ত। বাংলাদেশে গড়ে এই সময়টা থাকে প্রায় ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট।
হাদীসে এসেছে:
“মাগরিবের নামাজের সময় সূর্য অস্তমিত হওয়া থেকে শুরু হয়ে লাল আভা বিলীন হওয়া পর্যন্ত।”
(সহীহ মুসলিম: ৬১৩)
মাগরিব নামাজ কত রাকাত?
নামাজে মোট ৫ রাকাত নামাজ আদায় করা উত্তম।
-
৩ রাকাত ফরজ (ফরজুল আইন)
-
২ রাকাত সুন্নতে মুয়াক্কাদা
মাগরিব নামাজের নিয়ম ও তরিকা
➤ ফরজ নামাজের নিয়ম:
১. নিয়ত করে তাকবিরে তাহরিমা বলা
২. সূরা ফাতিহা ও অন্য কোনো সূরা মিলিয়ে পড়া
৩. রুকু, সিজদা যথাযথভাবে আদায় করা
৪. ৩ রাকাত পর তাশাহুদ ও দোয়া শেষে সালাম ফিরানো
➤ সুন্নত নামাজের নিয়ম:
ফরজের পর ২ রাকাত সুন্নত নামাজ পড়তে হয়, যেটি নবীজী (সা.) নিয়মিত আদায় করতেন।
মাগরিব নামাজের নিয়ত (বাংলায় উচ্চারণ সহ)
➡️ ৩ রাকাত ফরজের নিয়ত:
“নিয়ত করিলাম আমি তিন রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করিব মাগরিবের, কিবলামুখী হইয়া, এই সময়ের জন্য, আল্লাহু আকবার।”
➡️ ২ রাকাত সুন্নতের নিয়ত:
“নিয়ত করিলাম আমি দুই রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করিব মাগরিবের পর, কিবলামুখী হইয়া, আল্লাহু আকবার।”
মাগরিব নামাজে কোন সূরা পড়া উত্তম?
ফরজ রাকাতে সূরা ফাতিহার পর ছোট সূরাগুলো যেমন সূরা ইখলাস, সূরা কাওসার, সূরা নাসর ইত্যাদি পড়া যায়। রাসুল (সা.) বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সূরা পড়েছেন।
মাগরিব নামাজের সুন্নত ও তার ফজিলত
মাগরিবের পর ২ রাকাত সুন্নত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি সুন্নতে মুয়াক্কাদা, অর্থাৎ না পড়লে গুনাহ হতে পারে না, তবে অভ্যাসগতভাবে না পড়লে গাফেল মনে করা হয়।
হাদীসে এসেছে:
“যে ব্যক্তি ফরজ নামাজের পরে ২ রাকাত নামাজ আদায় করে, তার জন্য জান্নাতে একটি বাড়ি বানানো হয়।”
(তিরমিজি: ৪১৫)
মাগরিবের পরে নফল নামাজ আদায় করা যায় কি?
হ্যাঁ, চাইলে মাগরিবের পরে ২ বা ৪ রাকাত নফল নামাজ আদায় করা যায়, যা ইবাদতের মর্যাদা বৃদ্ধি করে।
মাগরিবের নামাজের গুরুত্ব কুরআন ও হাদীসের আলোকে
কুরআনের বহু জায়গায় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের গুরুত্ব এসেছে। মাগরিবের নামাজকেও আল্লাহ বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন।
“وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ قَبْلَ طُلُوعِ ٱلشَّمْسِ وَقَبْلَ ٱلْغُرُوبِ”
“সূর্যোদয়ের পূর্বে ও সূর্যাস্তের পূর্বে তোমার রবের প্রশংসায় তসবিহ পাঠ কর।”
(সূরা ক্বাফ: ৩৯)
নবীজি (সা.)-এর মাগরিব নামাজ পড়ার পদ্ধতি
রাসুল (সা.) মাগরিব নামাজকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিতেন। তিনি জামাতে সময়মতো মাগরিব আদায় করতেন এবং পরে ২ রাকাত সুন্নত পড়তেন।
মাগরিবের নামাজ না পড়লে কী গুনাহ হবে?
ফরজ নামাজ ইচ্ছাকৃতভাবে ছেড়ে দিলে তা কবিরা গুনাহ। হাদীসে এসেছে:
“যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ ত্যাগ করলো, সে ইসলাম থেকে বের হয়ে গেল।”
(মুসনাদে আহমাদ)
মাগরিবের নামাজ কি জামাতে পড়া জরুরি?
পুরুষদের জন্য জামাতে পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা। নিয়মিত না পড়লে গাফেল হিসেবে গণ্য হন।
নারীদের জন্য মাগরিবের নামাজের নিয়ম
নারীরা ঘরে নামাজ আদায় করবে। পুরুষদের মতো একই নিয়মে নামাজ আদায় করতে হবে, তবে জামাত ছাড়াই।
ভ্রমণের সময় মাগরিব নামাজ কীভাবে পড়তে হয়?
ভ্রমণে থাকা অবস্থায়ও মাগরিব ৩ রাকাতই ফরজ। কসর করা যায় না। তবে সময় মতো পড়াই জরুরি।
-
মাগরিবের পর দোয়া ও যিকিরের ফজিলত
মাগরিবের পর বিশেষ কিছু দোয়া ও যিকির রয়েছে, যেমন:
-
আয়াতুল কুরসী
-
সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার (৩৩ বার করে)
-
ইস্তিগফার
-
মাগরিবের নামাজের ফজিলত সম্পর্কিত হাদীস
মাগরিব নামাজের রয়েছে অগণিত ফজিলত। এটি এমন একটি সালাত, যার সময় সীমিত এবং গুরুত্ব অনেক বেশি। রাসূল (সা.) বলেছেন:
“যে ব্যক্তি সূর্যাস্তের পর মাগরিবের নামাজ পড়ে, সে যেন একটি বড় পুরস্কার অর্জন করলো।”
(মুসলিম: ৬৩৬)
আরো এসেছে:
“যে ব্যক্তি মাগরিবের পরে ছয় রাকাত নফল নামাজ পড়ে এবং এর মাঝে কোনো খারাপ কথা না বলে, আল্লাহ তার ১২ বছরের গুনাহ মাফ করে দেন।”
(তিরমিজি: ৪৩৫)
এই হাদীসগুলো আমাদের জানিয়ে দেয় মাগরিব নামাজের গুরুত্ব ও তাৎপর্য কতটা বেশি।
অব্যবস্থাপনার কারণে মাগরিব নামাজ ছুটে গেলে করণীয়
অনেক সময় কাজের চাপে, যানজট বা অবহেলার কারণে মাগরিব নামাজ ছুটে যেতে পারে। এর প্রতিকার কী?
-
পশ্চাতাপ: প্রথমেই আন্তরিকভাবে তওবা করতে হবে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
-
কাজা আদায়: সময় শেষ হয়ে গেলে যত দ্রুত সম্ভব কাজা আদায় করতে হবে।
-
পরবর্তীতে নিয়মিততা: সময়মতো নামাজ আদায়ের জন্য পরিকল্পনা করা দরকার, যেমন মোবাইলে এলার্ম সেট করা।
-
অবহেলা নয়: ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ ফেলে দেওয়া মারাত্মক গুনাহ। হাদীসে এসেছে:
“নামাজ ছেড়ে দেওয়া কুফরীর কাছাকাছি কাজ।”
(তিরমিজি: ২৬১৮)
মাগরিবের নামাজ সম্পর্কে প্রচলিত ভুল ও সংশোধনী
✅ ভুল ১: সূর্য ডোবার আগেই মাগরিব শুরু করে ফেলা
🔁 সংশোধন: সম্পূর্ণ সূর্য অস্ত যাওয়ার পরই মাগরিবের সময় শুরু হয়।
✅ ভুল ২: ফরজ নামাজের পর সুন্নত না পড়া
🔁 সংশোধন: মাগরিবের পর ২ রাকাত সুন্নত নামাজ পড়া রাসূল (সা.)-এর নিয়মিত আমল ছিল।
✅ ভুল ৩: শুধু ঘরে নামাজ আদায় করে জামাত এড়িয়ে চলা (পুরুষদের ক্ষেত্রে)
🔁 সংশোধন: জামাতে নামাজ আদায় করা পুরুষদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
✅ ভুল ৪: সময় চলে যাওয়ার পরেও মাগরিব নামাজ না পড়া
🔁 সংশোধন: নামাজ কাজা করে নিতে হবে যত দ্রুত সম্ভব।
মাগরিব নামাজের সময়সূচি বাংলাদেশে
বাংলাদেশে মাগরিবের সময় সাধারণত সন্ধ্যা ৫:১৫ থেকে ৬:৩০ এর মধ্যে হয়ে থাকে, ঋতুভেদে পরিবর্তিত হয়।
আপনি চাইলে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বা নির্ভরযোগ্য অ্যাপস (যেমন: Muslim Pro, Al-Amin Calendar) ব্যবহার করে আপনার জেলার সঠিক নামাজের সময়সূচি জানতে পারেন।
মাগরিব নামাজ ইসলামি ইবাদতের অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ছোট এই নামাজে রয়েছে অসাধারণ ফজিলত। সময় সীমিত হওয়ায় এটি সময়মতো আদায় করা অত্যন্ত জরুরি। ফরজ ও সুন্নত—উভয় রাকাতকেই গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের উচিত, প্রতিদিন সঠিক নিয়মে মাগরিব নামাজ আদায় করা এবং এর বরকত লাভ করা।
❓ গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর (FAQs)
প্রশ্ন ১: মাগরিব নামাজের সময় কতক্ষণ স্থায়ী থাকে?
উত্তর: সূর্যাস্ত থেকে শুরু হয়ে আকাশের লাল আভা না যাওয়া পর্যন্ত থাকে। গড়পড়তা ৩০–৪৫ মিনিট।
প্রশ্ন ২: মাগরিবের পরে ছয় রাকাত নফল পড়া কি হাদীসসম্মত?
উত্তর: হ্যাঁ, তিরমিজি শরীফে আছে যে, ছয় রাকাত নফল পড়লে ১২ বছরের গুনাহ মাফ হয়।
প্রশ্ন ৩: মাগরিবের নামাজ জামাতে না পড়লে কি গুনাহ হবে?
উত্তর: পুরুষদের জন্য জামাত ছেড়ে দেওয়া মাকরুহ এবং নিয়মিত না পড়লে গুনাহ হতে পারে।
প্রশ্ন ৪: নামাজ ছুটে গেলে কি শুধু তওবা করলেই চলবে?
উত্তর: না, তওবার পাশাপাশি কাজা নামাজ আদায় করাও আবশ্যক।
প্রশ্ন ৫: নারীরা কি জামাতে মাগরিব নামাজ পড়তে পারবেন?
উত্তর: নারীদের জন্য ঘরে নামাজ আদায় উত্তম। তবে যদি নিরাপদ পরিবেশে মসজিদে যান, অনুমতি আছে











