“সালাতুল হাজত: বিপদের সময় আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার জন্য বিশেষ নামাজ — নিয়ম, নিয়ত ও হাদীসভিত্তিক দোয়া
সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম, নিয়ত ও ফজিলত | হাদীসভিত্তিক বিশ্লেষণ
- আপডেট সময়ঃ ০৪:০৭:৩১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫
- / ৩০ বার পড়া হয়েছে।
কুরআন ও হাদীসের আলোকে বিশ্লেষণ
🔹 সালাতুল হাজত নামাজ কী?
সালাতুল হাজত (صَلَاةُ الْحَاجَةِ) হল এমন একটি নফল নামাজ, যা মানুষ নিজের বিশেষ প্রয়োজন, বিপদ বা সংকটে আল্লাহর সাহায্য লাভের আশায় আদায় করে থাকে। এটি দু’রাকাত নফল নামাজ, যার পর বিশেষ দোয়া করা হয়।
🔹 সালাতুল হাজতের হাদীস ভিত্তি:
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন:
“যে ব্যক্তির আল্লাহর নিকট অথবা মানুষের নিকট কোনো প্রয়োজন রয়েছে, সে যেন উত্তমরূপে অজু করে, তারপর দুই রাকাত নামাজ পড়ে, এরপর আল্লাহর প্রশংসা করে ও দরূদ পড়ে এবং তারপর এই দোয়া করে…”
— 📚 (তিরমিজি: ৪৭৯, ইবনে মাজাহ: ১৩৮৪, হাসান হাদীস)
এই হাদীসে সালাতুল হাজতের নিয়ম, নামাজ এবং দোয়া সবই বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে।
🔹 সালাতুল হাজতের নামাজের নিয়ম:
🔸 রাকাত সংখ্যা:
👉 ২ রাকাত নফল নামাজ (সুন্নাতের মতো পড়তে হয়)।
🔸 সময়:
- দিনে বা রাতে যেকোনো সময় আদায় করা যায়।
- নিষিদ্ধ সময় (সূর্যোদয়, সূর্য মাঝআকাশে থাকা, সূর্যাস্ত) বাদে যেকোনো সময়।
🔸 নিয়ত (বাংলায়):
“আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দুই রাকাত সালাতুল হাজত নামাজ পড়ছি।”
আরবিতে নিয়ত:
نويت أن أصلي لله تعالى ركعتين صلاة الحاجة، الله أكبر
🔹 সালাতুল হাজতের পর পড়ার দোয়া:
📿 হাদীসে বর্ণিত দোয়া:
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ وَأَتَوَجَّهُ إِلَيْكَ بِنَبِيِّكَ مُحَمَّدٍ نَبِيِّ الرَّحْمَةِ، يَا مُحَمَّدُ، إِنِّي أَتَوَجَّهُ بِكَ إِلَى رَبِّي فِي حَاجَتِي هَذِهِ لِتُقْضَى لِي، اللَّهُمَّ فَشَفِّعْهُ فِيَّ
উচ্চারণ:
Allahumma inni as’aluka wa atawajjahu ilaika binabiyyika Muhammad (Sallallahu ‘alayhi wa sallam), Nabi-yyir-Rahmah. Ya Muhammad, inni atawajjahu bika ila Rabbi fi hajati hadhihi lituqda li. Allahumma fashaffi’hu fiyya.
অর্থ:
“হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট প্রার্থনা করছি এবং আপনার দয়া লাভে আপনার নবী মুহাম্মদের (সঃ) মাধ্যমে আপনার দিকে মুখ করছি। হে মুহাম্মদ! আমি আপনার মাধ্যমে আমার প্রভুর নিকট সুপারিশ করছি যেন তিনি আমার এই প্রয়োজন পূর্ণ করেন। হে আল্লাহ! আপনি তাঁকে আমার জন্য সুপারিশকারী করে দিন।”
📚 হাদীস সূত্র: তিরমিযি: ৩৫৭৮, ইবনে মাজাহ: ১৩৮৫
🔹 সালাতুল হাজতের ফজিলত ও উপকারিতা:
| ফজিলত | বিস্তারিত |
|---|---|
| 💠 বিপদ-মুসিবতে মুক্তি | যে কোনো দুঃখ-কষ্টে এটি আল্লাহর সাহায্য লাভের উত্তম উপায় |
| 💠 প্রয়োজন পূর্ণতা লাভ করে | হালাল চাহিদা আল্লাহর দরবারে পেশ করার মাধ্যম |
| 💠 আত্মবিশ্বাস ও মানসিক শান্তি | দু’আ ও ইবাদতের মাধ্যমে অন্তরে প্রশান্তি আসে |
| 💠 গুনাহ মোচন ও নৈকট্য লাভ | নামাজ ও দু’আ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথ |
📖 কুরআনের দৃষ্টিকোণ:
য虽然 কুরআনে সরাসরি সালাতুল হাজতের কথা নেই, তবে আল্লাহ বলেন:
“وَاسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ ۚ إِنَّ اللَّهَ مَعَ الصَّابِرِينَ”
“সবর ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাও; নিশ্চয়ই আল্লাহ সবরকারীদের সাথে আছেন।”
— সূরা আল-বাকারা: ২:১৫৩
📌 এই আয়াত প্রমাণ করে যে, প্রয়োজন বা সংকটে সালাত ও দু’আর মাধ্যমে সাহায্য চাওয়া ইসলামে উৎসাহিত।
🕌 সালাতুল হাজত কারা পড়বেন?
✅ যে কেউ—
- যাদের জীবনে কোনো সমস্যা, সংকট, সিদ্ধান্ত বা বিপদ রয়েছে
- হালাল রিযিক, চাকরি, চিকিৎসা, বিয়ে, ঘর-বাড়ি, সন্তান ইত্যাদির প্রয়োজনে
- আত্মিক প্রশান্তি ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য
📌 বিশেষ পরামর্শ:
- হালাল চাহিদা ছাড়া অন্য কোনো গুনাহের কাজে সাহায্য চাওয়ার নিয়তে এই সালাত পড়া উচিত নয়।
- নামাজের পর তাওবাহ ও দোয়া অবশ্যই আন্তরিকভাবে করুন।
- ধৈর্য ও বিশ্বাস নিয়ে আল্লাহর কাছে আবেদন করুন।
📌
সালাতুল হাজত এমন একটি ইবাদত, যার মাধ্যমে আপনি সরাসরি আল্লাহর দরবারে আপনার চাহিদা ও সমস্যা পেশ করতে পারেন। এটি শুধুমাত্র দোয়া নয়, বরং ইবাদতের মাধ্যমে সাহায্য চাওয়া — যা মুমিন জীবনের অন্যতম অস্ত্র। অন্তর থেকে পড়লে, আল্লাহ অবশ্যই জবাব দেন — হয়তো তৎক্ষণাৎ, না হয় উত্তম কিছু দিয়ে।











