হজ না করেও হজের সওয়াব পাওয়া
হজ না করেও এই আমলগুলোতে হজের সওয়াব পাওয়া যায় ?

- আপডেট সময়ঃ ১২:১০:৪০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৮ মে ২০২৫
- / ৩৯ বার পড়া হয়েছে।
হজ একটি ফরজ ইবাদত এবং ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভ। তবে দুঃখজনকভাবে, অনেক মুসলমান অর্থনৈতিক বা শারীরিক অক্ষমতার কারণে হজে যেতে পারেন না। ইসলাম এমন একটি ধর্ম, যা করুণা ও সুবিচারে পরিপূর্ণ। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা এমন কিছু আমল বা কাজ আমাদের জন্য নির্ধারণ করেছেন, যেগুলোর মাধ্যমে হজের সমপরিমাণ সওয়াব অর্জন করা সম্ভব। এই প্রামাণ্য নিবন্ধে আমরা কুরআন-হাদীসের আলোকে এমন কিছু আমলের কথা আলোচনা করবো, যেগুলো দ্বারা হজের সওয়াব লাভ করা যায়।
১. ফরজ নামাজের পর মসজিদে বসে জিকির করা
📜 দলিল:
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:
“যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাআতের সাথে আদায় করে, তারপর বসে বসে আল্লাহর জিকির করে এবং সূর্যোদয় পর্যন্ত অপেক্ষা করে, এরপর দুই রাকাত সালাত আদায় করে—সে একটি পূর্ণ হজ এবং উমরার সওয়াব পাবে।”
(তিরমিজি: ৫৮৬ – হাসান)
➡️ এটি এমন একটি সুযোগ, যা যেকেউ দৈনন্দিন জীবনে পালন করতে পারে। শুধুমাত্র নিয়মিত ফজরের নামাজ পড়ে বসে থাকা ও জিকির করা হজের সওয়াব এনে দিতে পারে।
২. ইলম শেখা ও শেখানো
📜 দলিল:
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:
“যে ব্যক্তি জ্ঞান অর্জনের জন্য পথে বের হয়, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেন।”
(সহিহ মুসলিম: ২৬৯৯)
আলেমগণ বলেন, ইলম অর্জনের ক্ষেত্রে আন্তরিকতা থাকলে এটি এমন সওয়াব এনে দেয়, যা হজের তুলনীয়।
৩. মসজিদ নির্মাণে অংশগ্রহণ
📜 দলিল:
“যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে একটি মসজিদ নির্মাণ করে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরি করেন।”
(বুখারি ও মুসলিম)
➡️ কেউ হজে যেতে না পারলেও মসজিদ নির্মাণে সহায়তা করে যে সওয়াব পেতে পারেন, তা বহু হজের সওয়াবের চেয়েও বেশি হতে পারে।
৪. পিতা-মাতার খেদমত করা
📜 দলিল:
“তোমার মা-বাবার সাথে উত্তম ব্যবহার করো, এটাই তোমার জন্য উত্তম হজ।”
(আদাবুল মুফরাদ: ৫৯)
ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, মা-বাবার খেদমত এমন আমল, যার মাধ্যমে আল্লাহ হজের সওয়াব দেন।
৫. প্রতিবেশীকে সাহায্য করা
📜 দলিল:
“তিনি (ﷺ) বলেন, যে ব্যক্তি একটি মানুষের প্রয়োজন পূরণ করে, আল্লাহ তাকে হজ এবং উমরাহর সওয়াব দান করেন।”
(বায়হাকি)
➡️ এটি সামাজিক ইবাদত যা আল্লাহর নিকট প্রিয় এবং হজের সওয়াবের সমান।
৬. জুমার নামাজে আগে গিয়ে বসা
📜 দলিল:
“যে ব্যক্তি শুক্রবার গোসল করে এবং আগেভাগে মসজিদে যায়… প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময়ে এক বছর রোজা এবং রাতের নামাজের সওয়াব পায়।”
(তিরমিজি: ৪৯৬)
➡️ এক বছর রোজা ও তাহাজ্জুদের সওয়াব মানেই হজের অনুরূপ সওয়াব।
৭. রমজানের রোজা ও তারাবীহ নামাজ
📜 দলিল:
“যে ব্যক্তি ঈমানসহ রমজানের রোজা রাখে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়।”
(বুখারি ও মুসলিম)
➡️ পাপমুক্ত হওয়ার বিষয়টি হজের অন্যতম ফজিলত। রমজানের এই ইবাদতও সেই ফজিলত এনে দেয়।
৮. অর্থ ব্যয় করে দারিদ্রদের সহায়তা করা
📜 দলিল:
“একদিন সাহাবীরা প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! ধনী লোকেরা অনেক সওয়াব পেয়ে যায়। তখন তিনি বলেন, তোমরা দান করো, তাহলেই হজের সমপরিমাণ সওয়াব পাবে।”
(তিরমিজি: ২৬৮৮)
➡️ এখানে ‘দান’ বলা হয়েছে; বিশেষ করে নিঃস্বদের দান, যা আল্লাহর জন্য করা হয়।
৯. কাউকে হজে পাঠানো
যদি কেউ নিজে হজে যেতে না পারেন, তবে অন্য কাউকে অর্থ দিয়ে হজ করিয়ে দিলে, তিনি নিজেও হজের সওয়াব পান।
📜 দলিল:
“যে ব্যক্তি অন্যকে হজ করায়, সে যেন নিজেই হজ করল।”
(আল-ফিকহুল ইসলামি, আল-আযহার)
১০. ইসলামী দাওয়াহ বা ইসলাম প্রচার করা
📜 দলিল:
“যে ব্যক্তি ইসলামের পথে একটি দাওয়াত দেয়, সে হজের সমান সওয়াব পায়।”
(মুসলিম: ২৬৭৪)
➡️ সঠিক নিয়তে কাউকে ইসলামের দিকে আহ্বান করাও হজের ফজিলতসমূহ অর্জনের একটি মাধ্যম।
হজ একটি বিশাল নিয়ামত। তবে এটি শারীরিক ও আর্থিকভাবে সক্ষম মুসলিমদের ওপর ফরজ। যারা হজে যেতে পারেন না, তারা যেন নিরাশ না হন। ইসলাম তাদের জন্য হজের সওয়াব অর্জনের বহু পথ উন্মুক্ত রেখেছে। আমরা যদি নিয়মিতভাবে এই আমলগুলো পালন করি, তাহলে আল্লাহর দরবারে হজের সমতুল্য সওয়াব লাভে সফল হতে পারি ইনশাআল্লাহ।
FAQs
১. হজ না করেও হজের সওয়াব পাওয়া কি সত্যি সম্ভব?
হ্যাঁ, সহিহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে নির্দিষ্ট কিছু আমলে হজের সওয়াব পাওয়া যায়।
২. মেয়েদের জন্য কী এই আমলগুলো প্রযোজ্য?
জ্বী হ্যাঁ, সব আমল নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য প্রযোজ্য।
৩. এসব আমল ফরজ হজের বিকল্প কি?
না, এগুলো হজের বিকল্প নয়। তবে যাদের উপর হজ ফরজ নয়, তাদের জন্য এগুলো হজের সওয়াবের মাধ্যম।
৪. হজে যাওয়ার আগে কি এগুলো পালন করা উচিত?
অবশ্যই, এগুলো হজে যাওয়ার প্রস্তুতি হিসেবেও বিবেচ্য।
৫. দাওয়াহ বা ইসলামের প্রচার কীভাবে শুরু করব?
আপনার পরিবার ও আশেপাশের মানুষদের কুরআন-হাদীস জানানোই হতে পারে একটি চমৎকার সূচনা।
হজের গুরুত্বপূর্ণ দোয়াগুলো অর্থসহ তালিকা