বর্তমান যুগের ফতোয়া ও অবস্থান
আরবিরা সান্ডা খায় কেন : কুরআন হাদিস মতে হালাল নাকি হারাম?

- আপডেট সময়ঃ ১০:৪৯:৫৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫
- / ৭৫ বার পড়া হয়েছে।
সান্ডা খাওয়া মুসলিমদের জন্য বৈধ কিনা, তা নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন রয়েছে। মরুভূমিতে বসবাসকারী আরব, পাকিস্তান, ভারতীয় কিছু উপজাতি একে খাদ্য বা চিকিৎসায় ব্যবহার করে। কিন্তু ইসলামী শরীয়তের আলোকে এর বৈধতা কী? চলুন বিষয়টি হাদীস, ফিকহ, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞান – সব দিক থেকেই দেখে নেই।
সান্ডা কী?
সান্ডা মূলত মরুভূমিতে বসবাসকারী একটি গিরগিটির প্রজাতি। ইংরেজিতে একে “Uromastyx” বলা হয়। এটি অনেক সময় দাব্ব নামেও পরিচিত। সাধারণত সাউথ এশিয়া ও আরব অঞ্চলে এটি কিছু লোকের খাদ্য বা তেলের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
ইতিহাসের আলোকে সান্ডা খাওয়া
মরু অঞ্চলে খাবারের স্বল্পতার কারণে প্রাচীনকালে বেদুইনরা সান্ডা খেত। পরে তা সংস্কৃতিতে মিশে যায়। তবে রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর যুগে কী অবস্থান ছিল, তা জানতে আমাদের হাদীসের দিকে তাকাতে হবে।
ইসলামে খাদ্য হালাল ও হারামের নীতিমালা
আল্লাহ বলেন:কুরআন [সূরা মায়েদা ৫:৩]: “তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত জন্তু, রক্ত, শুকরের মাংস…”
যেসব প্রাণী আক্রমণকারী, বিষাক্ত বা অপবিত্র, তা হারাম হিসেবে চিহ্নিত। সান্ডা এই তিনটির মধ্যে কোথায় পড়ে?
সাধারণ হাদীস অনুযায়ী হালাল ও হারাম প্রাণী
-
দাঁতওয়ালা শিকারি প্রাণী: হারাম
-
উভচর (জলে-স্থলে): সাধারণত অপছন্দনীয়
-
পোকামাকড়, সাপ, গিরগিটি ইত্যাদি: বিভিন্ন ইমাম ভিন্নমত দিয়েছেন
সান্ডা সম্পর্কে নির্দিষ্ট হাদীস
হাদীস ১: রাসূল ﷺ খাননি, নিষেধও করেননি
ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেন:
“রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর সামনে দাব্ব পরিবেশন করা হয়, তিনি তা খাননি এবং খেতে নিষেধও করেননি।”
[সহীহ বুখারী: ৫৫৩৮]
অর্থাৎ ব্যক্তিগত অপছন্দ থাকলেও, তিনি হারাম ঘোষণা করেননি।
হাদীস ২: সাহাবীগণ খেলেও রাসূল ﷺ খাননি
খালিদ বিন ওলিদ (রাঃ) বলেন:
“আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর সঙ্গে ছিলাম, তাঁর সামনে দাব্ব পরিবেশন করা হলো, তিনি খেলেন না এবং বললেন, ‘এটি আমার কওমের খাদ্য নয়।'”
[সহীহ মুসলিম: ১৯৪৬]
চার ইমামের মতামত
মাজহাব | মতামত |
---|---|
হানাফি | মাকরূহ তাহরিমি |
শাফিঈ | হালাল |
মালিকি | হালাল (যদি ক্ষতিকর না হয়) |
হাম্বলি | হালাল |
মতপার্থক্যের কারণ
ইসলামী ফিকহে স্থানীয় রীতিনীতি (উরফ) অনেক সময় বিবেচনায় নেওয়া হয়। আরবদের জন্য যা স্বাভাবিক, তা হয়ত ভারতীয়দের জন্য অপছন্দনীয়। এই ধরনের প্রাণীর ক্ষেত্রে মতপার্থক্য এ কারণেই।
বর্তমান যুগের ফতোয়া ও অবস্থান
-
দারুল উলূম দেওবন্দ (ভারত): সান্ডা খাওয়া মাকরূহ
-
সৌদি আরব: হালাল
-
মিশরের দারুল ইফতা: খাওয়া বৈধ, তবে নিরুৎসাহিত
সান্ডা তেল ও চিকিৎসা
দাবি করা হয় সান্ডা তেল যৌনশক্তি বাড়ায়। যদিও আধুনিক বিজ্ঞান এ দাবির পক্ষে কিছু বলেনি। ইসলামেও ভিত্তিহীন চিকিৎসা গ্রহণ না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ
-
বিষাক্ত জীবাণু থাকতে পারে
-
সঠিকভাবে রান্না না করলে বিপজ্জনক
-
বিপন্ন প্রাণী হিসেবে কিছু দেশে সংরক্ষিত
উপমহাদেশীয় সংস্কৃতিতে সান্ডার স্থান
পাকিস্তান ও ভারতের গ্রামীণ এলাকায় এটি খাওয়া হয় বা তেল তৈরি করা হয়। লোককথা অনুযায়ী এর তেল পুরুষত্ব বৃদ্ধির কাজ করে। ইসলামিক দৃষ্টিকোণে এসব ভিত্তিহীন বিশ্বাস।
ইসলামী সিদ্ধান্ত: কবে বৈধ, কবে নয়
-
জরুরী অবস্থায় খাওয়া জায়েজ
-
ব্যক্তিগতভাবে অপছন্দ করা উত্তম
-
চিকিৎসায় ব্যবহার বৈধ যদি শরিয়াহসম্মত হয়
সান্ডা খাওয়া হারাম নয়, তবে মাকরূহ হতে পারে। রাসূল ﷺ নিজে খাননি, কিন্তু নিষেধও করেননি। ইমামদের মাঝে মতপার্থক্য থাকলেও, অধিকাংশ আলেম এটি খাওয়ার চেয়ে না খাওয়াই শ্রেয় মনে করেন। যখন সন্দেহ হয়, তখন ছেড়ে দেওয়া সবচেয়ে নিরাপদ।