আরাফাতের ময়দানের সব কিছু
আরাফাতের ময়দান: সত্যিই কি কিয়ামতের মাঠ? দোয়া,ফজিলত,রোজা,ইতিহাস,অবস্থান

- আপডেট সময়ঃ ১২:১৯:২২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৮ মে ২০২৫
- / ৪১ বার পড়া হয়েছে।
আরাফার দিন ইসলাম ধর্মে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। আরাফাতের ময়দান এমন একটি পবিত্র স্থান যেখানে হজের অন্যতম মূল কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয় এবং রাসূল (সা.) তাঁর বিদায় হজের খুতবা প্রদান করেছিলেন। অনেক মুসলিমের বিশ্বাস, কিয়ামতের দিন মানবজাতি এখানে একত্রিত হবে।
আরাফাতের ময়দানের পরিচয়
ভৌগলিক অবস্থান
আরাফাত সৌদি আরবের মক্কা নগরীর পূর্বদিকে অবস্থিত। এটি মক্কার প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি উন্মুক্ত ময়দান যা প্রায় ১০.৪ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত।
ঐতিহাসিক পটভূমি
এই স্থানটিকে পবিত্র মনে করা হয় কারণ এখানে আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.) পুনরায় মিলিত হয়েছিলেন এবং এই স্থানেই ইসলামের শেষ নবী মুহাম্মদ (সা.) বিদায় হজে তাঁর ঐতিহাসিক খুতবা প্রদান করেন।
কিয়ামতের মাঠ হিসেবে আরাফাতের ময়দান?
কুরআন ও হাদীসের আলোকে আলোচনা
আরাফাতের ময়দান যে কিয়ামতের মাঠ হবে, এটি সাধারণ লোকমুখে প্রচলিত থাকলেও নির্দিষ্ট কোনো সহীহ হাদীসে এটি প্রমাণিত নয়। তবে কিয়ামতের দিন মানুষ সমতল ভূমিতে একত্রিত হবে, এটি সত্য (সূরা কাহফ: ৪৭)।
ইসলামী মনীষীদের মতামত
কিছু ইসলামিক স্কলারদের মতে, আরাফাতের ময়দান কিয়ামতের স্থল হবে না, তবে এই ময়দান কিয়ামতের দিনের অনুরূপতা বহন করে বলে মানা হয়।
আরাফা দিবসের গুরুত্ব
ফজিলত
রাসূল (সা.) বলেন: “আরাফার দিনের রোজা বিগত বছরের ও আগত বছরের গুনাহ মাফ করে।” (সহীহ মুসলিম, হাদীস: ১১৬২)
হাদীস দ্বারা প্রমাণিত গুরুত্ব
এই দিনকে ‘ইয়াওমে আরাফা’ বলা হয়, যা ইসলামের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দিন। এটি দোয়ার সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য দিনও।
আরাফা দিবস ও রোজা
রোজার ফজিলত
আরাফার রোজা রাখা মুস্তাহাব (সুন্নাত) এবং এই রোজা এক বছরে গুনাহ ক্ষমার প্রতিশ্রুতি বহন করে (সহীহ মুসলিম)।
যাদের জন্য রোজা রাখা উত্তম
হজে না যাওয়া মুসলিমদের জন্য এই রোজা রাখা উত্তম। হজ পালনকারীদের জন্য রোজা না রাখা উত্তম, যাতে তারা শক্তি সঞ্চয় করে হজের অন্যান্য কর্ম সম্পাদন করতে পারেন।
আরাফা দিবসের দোয়া
আরবিতে:
اللَّهُمَّ اجْعَلْهُ حَجًّا مَبْرُورًا، وَسَعْيًا مَشْكُورًا، وَذَنْبًا مَغْفُورًا
বাংলা অর্থ:
“হে আল্লাহ! এই হজ কবুল করুন, চেষ্টা ও পরিশ্রমকে কবুল করুন এবং আমার গুনাহ মাফ করুন।”
আরাফাতের ময়দানে কী ঘটে হজের দিন?
এই দিনে হুজ্জাজরা আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হন। জোহরের নামাজের পর ইমাম খুতবা দেন এবং মুসল্লিরা দোয়া ও জিকিরে লিপ্ত থাকেন।
লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখর আরাফাত
“লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক” ধ্বনি দিয়ে মুখরিত থাকে পুরো ময়দান। এটি হজ পালনের ঘোষণার অংশ এবং একাত্মতার প্রতীক।
আরাফাতের ময়দানের বিশেষ স্থানসমূহ
জাবালুর রাহমা
এটি একটি ছোট পাহাড় যেখানে রাসূল (সা.) খুতবা দিয়েছিলেন। এখানে অবস্থান করা মুস্তাহাব।
জিয়া গাছ
আরাফাতের ময়দানে একটি প্রাচীন গাছ রয়েছে যেটিকে ‘জিয়া গাছ’ বলা হয়। এটি ঐতিহাসিকভাবে স্মরণীয়।
আরাফাতের ময়দানে অবস্থানের বিধান
হাদীস অনুযায়ী, “হজ মানে আরাফাত।” (তিরমিজি, হাদীস: ৮৯১)। যারা নির্ধারিত সময়ে আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করে না, তাদের হজ হয় না।
আরাফাতের ময়দানের ছবি ও লাইভ সম্প্রচার
প্রতিবছর হজের সময় ইসলামী চ্যানেলগুলো লাইভ সম্প্রচার করে থাকে। সৌদি টিভি এবং ইউটিউব লাইভে সরাসরি দেখা যায়।
আরাফাতের ময়দানের ফজিলত ও বারাকাহ
এই ময়দানে নবী-রাসূলরা এসেছেন, দোয়া করেছেন, এবং এখানেই ইসলামের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে।
মিনা ও মুযদালিফার সম্পর্ক
হজের নির্দিষ্ট দিনগুলোতে হাজিরা আরাফাত থেকে মুযদালিফা এবং এরপর মিনা গমন করেন। এটি হজের ধারাবাহিকতা বজায় রাখে।
সামাজিক ও আধ্যাত্মিক প্রভাব
আরাফার দিন মুসলিম উম্মাহর জন্য আত্মশুদ্ধির একটি বিশেষ দিন। এই দিনে দান-সদকা, ইবাদত ও আত্ম-উন্নয়নের কাজ করা উত্তম।
আরাফার দিন এবং আরাফাতের ময়দান মুসলিম জীবনে এক বিশাল শিক্ষণীয় দিক। এটি আমাদের একতা, আত্মশুদ্ধি ও আখেরাতের স্মরণ করিয়ে দেয়। হোক না এটি কিয়ামতের মাঠ কি না—এই ময়দানের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা মুসলমানদের অন্তরে চিরন্তনভাবে বেঁচে থাকবে।
FAQs
১. আরাফা দিবস কখন পালিত হয়?
যিলহজ্জ মাসের ৯ তারিখে আরাফা দিবস পালিত হয়।
২. আরাফার দিনের রোজা কি ফারজ?
না, এটি সুন্নাতে মুস্তাহাব।
৩. আরাফাতের ময়দান কি সত্যিই কিয়ামতের মাঠ হবে?
এটি প্রচলিত কথা, তবে সহীহ হাদীসে তা স্পষ্ট নয়।
৪. জাবালুর রাহমা কোথায় অবস্থিত?
আরাফাতের ময়দানের মধ্যেই অবস্থিত একটি পাহাড়।
৫. আরাফাতের ময়দানে কী কী দোয়া করা উত্তম?
মাফ চাওয়া, জান্নাত প্রার্থনা এবং দুনিয়া-আখেরাতের জন্য কল্যাণ চাওয়া।