মুসলিম জীবনে এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য,হজযাত্রীদের জন্য ওকুফের গুরুত্ব, হজযাত্রীদের জন্য ওকুফের গুরুত্ব
আরাফা দিবস: মুসলিম জীবনে এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য

- আপডেট সময়ঃ ১১:১৮:০১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫
- / ২৫ বার পড়া হয়েছে।
আরাফা দিবস ইসলামী বর্ষপঞ্জির অন্যতম পবিত্র দিন। হিজরি জিলহজ্জ মাসের ৯ তারিখে পালিত এই দিনটি ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম — হজের মূল কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দু। হজরত মুহাম্মদ (সা.) এই দিনেই তাঁর ঐতিহাসিক বিদায় হজের খুতবা প্রদান করেন। কুরআন, হাদিস এবং ইসলামী ঐতিহ্যে এই দিনটির বিশেষ গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।(আরাফা দিবস নিয়ে৫০টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর)
দিবস কী এবং এর ইতিহাস-
আরাফা শব্দের অর্থ ‘পরিচয়’ বা ‘জানাজানি’। ইসলামী বর্ণনা মতে, হযরত আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.) জান্নাত থেকে পৃথকভাবে পৃথিবীতে অবতরণ করার পর এই ময়দানে একে অপরকে চিনতে পেরেছিলেন, তাই এর নাম হয়েছে ‘আরাফা’।
হজের অন্যতম স্তম্ভ
হজ পালনের অন্যতম ফরজ হলো “ওকুফে আরাফা” — অর্থাৎ, জিলহজ্জ ৯ তারিখে আরাফার ময়দানে অবস্থান। এটি ছাড়া হজ শুদ্ধ হয় না।
হাদিস:
“হজ হচ্ছে আরাফা।” — [সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ১৯৪৯]
আরাফা দিবসের ফজিলত
১. অতুলনীয় রোজার ফজিলত
যারা হজে অংশগ্রহণ করেন না, তাঁদের জন্য আরাফা দিবসে রোজা রাখা সুন্নত। এই রোজা দুই বছরের গুনাহ মাফের কারণ হয়।
হাদিস:
“আরাফার দিনের রোজা বিগত এবং ভবিষ্যৎ এক বছরের গুনাহ মাফ করে।”
— [সহীহ মুসলিম, হাদিস: ১১৬২]
২. দোয়া কবুলের শ্রেষ্ঠ দিন
এই দিনে আল্লাহ তায়ালা অসংখ্য বান্দাকে দোজখ থেকে মুক্তি দেন এবং তাঁদের দোয়া কবুল করেন।
হাদিস:
“আরাফার দিনে আল্লাহ দোজখ থেকে যত মানুষকে মুক্তি দেন, তা অন্য কোনো দিনে দেন না।” — [সহীহ মুসলিম]
৩. জান্নাতের পথে আলোকবর্তিকা
এই দিন আত্মশুদ্ধি, তাওবা, ইবাদত ও আল্লাহর স্মরণে আত্মনিয়োগের একটি বিরল সুযোগ। মুসলিম জীবনের পরিশুদ্ধি ও জান্নাতের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
আরাফাতের ময়দান: এক পবিত্র ভূমি
অবস্থান ও বিবরণ
আরাফাত সৌদি আরবের মক্কার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত একটি সমতল ময়দান। এখানেই অবস্থান করেন হজযাত্রীরা ৯ জিলহজ্জে। ময়দানের মধ্যবর্তী স্থানে একটি পাহাড় রয়েছে, যার নাম “জাবালুর রহমাহ” (দয়া পর্বত)।
ইতিহাসের অংশ
হজরত মুহাম্মদ (সা.) বিদায় হজের খুতবা এই ময়দানেই প্রদান করেন — যা মানবাধিকার, নারীর অধিকার, সমাজনীতির এক অমূল্য দলিল।
হজযাত্রীদের জন্য ওকুফের গুরুত্ব
হজের মূল রুকন হিসেবে, আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা ফরজ। জোহর থেকে মাগরিব পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করে দোয়া ও ইবাদতে রত থাকা হজের শর্ত।
কুরআনের নির্দেশ
“…তোমরা আরাফাত থেকে ফিরে এসো যেখানে অন্যরা ফিরে আসে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালু।” — [সুরা আল-বাকারা: ১৯৯]
হজে অংশ না নেওয়া মুসলিমদের জন্য আমল
যারা হজে যেতে পারেননি, তাঁদের জন্যও এই দিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ:
১. রোজা রাখা
রোজা পালনকারীর গুনাহ মাফ হয়, এ বিষয়ে হাদিস স্পষ্ট।
২. বেশি বেশি দোয়া ও তাওবা
এই দিনে আল্লাহর দরবারে ক্ষমা চাওয়া খুবই ফলপ্রসূ।
৩. তাকবির, তাহমিদ, তাসবিহ
“আল্লাহু আকবার, আলহামদু লিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, সুবহানাল্লাহ” — এই সব দোয়া বারবার পড়া।
৪. কুরআন তিলাওয়াত
আরাফার দিনে কুরআন তিলাওয়াত অতুলনীয় সওয়াবের মাধ্যম।
আরাফা দিবসে করা দোয়া
হাদিস:
“আরাফার দিনের সর্বশ্রেষ্ঠ দোয়া হলো —
لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ”
— [তিরমিজি, হাদিস: ৩৫৮৫]
আধ্যাত্মিক তাৎপর্য
এই দিনটি মুসলমানদের জন্য তওবা, দোয়া, আত্মবিশ্লেষণ এবং আল্লাহর রহমত লাভের একটি সোনালী সুযোগ। রোজা, ইবাদত, সৎকর্মের মাধ্যমে এই দিনে আত্মাকে পরিচ্ছন্ন করা যায়।
আধুনিক যুগে আরাফা দিবসের গুরুত্ব
আজকের প্রযুক্তিনির্ভর, ব্যস্ত জীবনে আত্মিক প্রশান্তি পাওয়ার জন্য এই দিনটি এক বিরল উপলক্ষ। এটি আমাদের শিক্ষা দেয় – সবকিছুর ঊর্ধ্বে আল্লাহর স্মরণ ও ক্ষমা লাভ সবচেয়ে বড় সাফল্য।
আরাফা দিবস একটি পবিত্র, তাৎপর্যময় ও আত্মশুদ্ধির দিন। যারা হজে অংশগ্রহণ করেন, তাদের জন্য এটি হজের মূল স্তম্ভ। আর যারা হজে যান না, তাদের জন্যও এটি রহমত ও মাগফিরাতের সোনালী সুযোগ। এই দিনটিকে অবহেলা করা মানেই এক বিশাল ইবাদতের দরজা বন্ধ করে দেওয়া। তাই আমাদের উচিত, এই দিনকে যথাযথভাবে পালন করা — রোজা রাখা, দোয়া করা, কুরআন পড়া এবং আত্মশুদ্ধির প্রচেষ্টা চালানো।
তথ্যসূত্র (References)
- সহীহ মুসলিম – হাদিস: ১১৬২
- সহীহ বুখারী – হাদিস: ১৬৫৯
- সুনান আবু দাউদ – হাদিস: ১৯৪৯
- কুরআন মাজিদ – সুরা আল-বাকারা: ১৯৮-১৯৯
- তিরমিজি – হাদিস: ৩৫৮৫
- আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ইবনে কাসীর
- রিয়াদুস সালিহীন – ইমাম নববী