কুরআন-হাদীসের দলিলসহ ৫০টি বহুর আলোচিত অজানা প্রশ্নউত্তর বিস্তারিত বর্ণনা
ইসলামে নারীর অধিকার, মর্যাদা ও গুরুত্ব — কুরআন-হাদীসের দলিলসহ

- আপডেট সময়ঃ ০২:০৭:১৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১ জুন ২০২৫
- / ১৬ বার পড়া হয়েছে।
ইসলাম এমন এক দ্বীন, যা মানব জাতিকে তার প্রকৃত মর্যাদা দিয়েছে। নারীকে সমাজে সম্মানিত স্থান দিয়েছে এবং তার অধিকারকে আল্লাহর পক্ষ থেকে স্বীকৃত করেছে। জাহেলিয়াত যুগে যখন নারীকে অবহেলা ও অপমান করা হতো, তখন ইসলাম নারীর ইজ্জত ও হক প্রতিষ্ঠা করেছে।
🕌 ইসলামে নারীর অবস্থান
النساء شقائق الرجال
“নারীরা পুরুষদের সমান অঙ্গ।”
(হাদীস: আবু দাউদ, ২৩৬)
এই হাদীসের দ্বারা বোঝা যায়, নারীরা ইসলামের পরিপূর্ণ সমাজ কাঠামোর সমান গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
📜 কুরআনে নারীর সম্মান ও মর্যাদা
১. নারী সৃষ্টির গুরুত্ব:
وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا
“আর তিনিই তার (আদমের) থেকে তার সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন।”
— সূরা নিসা: ১
নারীর সৃষ্টিকে আল্লাহ তাআলা আদম (আ.)-এর থেকে করেছেন, সম্মানের সাথে, লাঞ্ছনার জন্য নয়।
২. মানব মর্যাদায় নারী-পুরুষ সমান:
إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِندَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ
“তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে সম্মানিত সেই ব্যক্তি, যে সর্বাধিক আল্লাহভীরু।”
— সূরা হুজুরাত: ১৩
এখানে নারী-পুরুষের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই বরং তাকওয়াই মূল মানদণ্ড।
👩👧👦 ইসলামে নারীর বিভিন্ন পরিচয় ও মর্যাদা
১. মা হিসেবে নারীর মর্যাদা
الجنة تحت أقدام الأمهات
“জান্নাত মায়ের পায়ের নিচে।”
(হাদীস: আহমদ, সহীহ)
আরেক হাদীসে নবী ﷺ বলেন:
من أحق الناس بحسن صحابتي؟ قال: أمك، ثم أمك، ثم أمك، ثم أبوك
“সর্বাধিক সদ্ব্যবহার পাওয়ার অধিকারী কে? তিনি বললেন: তোমার মা, তারপর তোমার মা, তারপর তোমার মা, তারপর তোমার বাবা।”
(বুখারি: ৫৯৭১)
২. স্ত্রী হিসেবে নারীর মর্যাদা
خيركم خيركم لأهله، وأنا خيركم لأهلي
“তোমাদের মধ্যে উত্তম সেই ব্যক্তি, যে তার স্ত্রীর প্রতি উত্তম। আমিও আমার স্ত্রীর প্রতি উত্তম।”
(তিরমিযি: ৩৮৯৫)
ইসলামে স্ত্রীকে নির্যাতন করা নয়, বরং ভালোবাসা, দয়া ও সহযোগিতা করা সুন্নাহ।
৩. কন্যা হিসেবে নারীর মর্যাদা
من عال جاريتين حتى تبلغا جاء يوم القيامة أنا وهو وضم أصابعه
“যে ব্যক্তি দুটি মেয়েকে (কন্যা) প্রতিপালন করে যতক্ষণ না তারা প্রাপ্তবয়স্ক হয়, কেয়ামতের দিন আমি এবং সে এভাবে একসাথে থাকবো।”
(মুসলিম: ২৬৩১)
কন্যা সন্তানকে বোঝা নয়, বরং জান্নাতের উপায় বলা হয়েছে।
📚 ইসলামে নারীর অধিকারসমূহ
✅ ১. ধর্মীয় অধিকার:
নারী ইসলামে নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাতসহ সকল ইবাদতের দায়িত্বপ্রাপ্ত।
✅ ২. শিক্ষার অধিকার:
طلب العلم فريضة على كل مسلم ومسلمة
“জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর উপর ফরয।”
(ইবনে মাজাহ: ২২৪)
✅ ৩. অর্থনৈতিক অধিকার:
নারী নিজের সম্পত্তির মালিক হতে পারে, ব্যবসা করতে পারে, উত্তরাধিকার পেতে পারে।
لِلذَّكَرِ مِثْلُ حَظِّ الْأُنثَيَيْنِ
“ছেলেদের জন্য রয়েছে দুটি অংশ, আর মেয়েদের জন্য একটি।”
— সূরা নিসা: ১১
মেয়ের অংশ আছে, নাকচ করা হয়নি।
✅ ৪. বৈবাহিক অধিকার:
নারীকে জোর করে বিয়ে দেওয়া নিষিদ্ধ। তার মতামত ছাড়া বিবাহ হয় না।
لا تُنكح الأيم حتى تُستأمر، ولا تُنكح البكر حتى تُستأذن
“বিধবাকে তার মতামত ছাড়া বিয়ে দেওয়া যাবে না, এবং কুমারী মেয়েকে তার অনুমতি ছাড়া বিয়ে দেওয়া যাবে না।”
— বুখারি: ৫১৩৬
✅ ৫. রাজনৈতিক ও সামাজিক অধিকার:
নারী ও পুরুষ উভয়ে দ্বীন প্রচারে দায়িত্বশীল।
وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ
“বিশ্বাসী পুরুষ ও নারীরা পরস্পরের সহায়ক।”
— সূরা তাওবা: ৭১
⛔️ ইসলামপূর্ব যুগে নারীর অবস্থা
وَإِذَا الْمَوْءُودَةُ سُئِلَتْ بِأَيِّ ذَنبٍ قُتِلَتْ
“যখন জীবন্ত কবর দেওয়া কন্যাশিশুকে জিজ্ঞেস করা হবে, কোন অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছিল?”
— সূরা তাকভীর: ৮–৯
জাহেলিয়াত যুগে কন্যাশিশুদের জীবন্ত কবর দেওয়া হতো, ইসলাম তা বন্ধ করে দেয়।
🕊 ইসলাম নারীর জন্য করুণা, নয় কষ্ট
ইসলাম নারীকে Hijab দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে তাকে অসম্মান করতে নয়, বরং তার সম্মান রক্ষার জন্য।
ذَٰلِكَ أَدْنَىٰ أَن يُعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ
“এটা তাদের জন্য বেশি উপযোগী যাতে তারা পরিচিত হয় এবং উত্ত্যক্ত না হয়।”
— সূরা আহযাব: ৫৯
🌸 ইসলামে নারীর অধিকার ও মর্যাদা: ৫০টি বহুল আলোচিত প্রশ্নোত্তর
১. ইসলাম নারীর মর্যাদা দিয়েছে কীভাবে?
👉 হ্যাঁ, ইসলাম নারীর মর্যাদা দিয়েছে তাকে মা, স্ত্রী, কন্যা ও বোনের সম্মানজনক আসনে বসিয়ে।
🔹 হাদীস: “জান্নাত মায়ের পায়ের নিচে” (আহমদ)
২. নারীর সৃষ্টির উৎস কী?
👉 আদম (আ.) এর থেকে।
🔹
কুরআনে: “ওয়াখালাকা মিনহা জাওজাহা” – সূরা নিসা: ১
৩. নারী কি পুরুষের চেয়ে কম মর্যাদার?
👉 না, তাকওয়ার ভিত্তিতে মর্যাদা নির্ধারিত।
🔹 কুরআন: “ইন্না আক্রমাকুম ইন্দাল্লাহি আতকাকুম” – হুজুরাত: ১৩
৪. নারীর কি সম্পদের মালিক হওয়ার অধিকার আছে?
👉 হ্যাঁ।
🔹
কুরআনে: “লিররিজালি নাসীবুম মিম্মা তারাকাল…” – সূরা নিসা: ৭
৫. নারীর উপার্জন কি তার ব্যক্তিগত সম্পদ?
👉 হ্যাঁ। ইসলাম স্বীকৃতি দিয়েছে।
৬. ইসলামে কি নারীদের শিক্ষা গ্রহণ করা ফরয?
👉 হ্যাঁ।
🔹 হাদীস: “তালাবুল ইলমি ফারিদাতুন আলা কুল্লি মুসলিম” (ইবনে মাজাহ)
৭. নারী কি পুরুষদের সমান ইবাদত করতে পারে?
👉 হ্যাঁ।
🔹
কুরআনে: “মাল কাজুর মিন যাকরিন আও উন্সা” – আল আহযাব: ৩৫
৮. নারী কি মসজিদে যেতে পারে?
👉 হ্যাঁ, তবে পর্দা ও নিরাপত্তার শর্তে।
৯. নারী কি রাজনৈতিক মতামত দিতে পারে?
👉 হ্যাঁ।
🔹 কুরআন: সূরা মুমতাহিনা – নারীদের বায়াত গ্রহণ করা হয়েছে।
১০. ইসলাম নারীদের উপর পর্দা ফরয করেছে কেন?
👉 সম্মান ও নিরাপত্তার জন্য।
🔹 কুরআন: “যালিকা আদনা আইউরাফনা ফালা ইউ’যাইন” – আহযাব: ৫৯
১১. নারীরা কি চাকরি করতে পারে?
👉 হ্যাঁ, তবে ইসলামি শর্তসাপেক্ষে।
১২. হিজাব কি নারীর ওপর বাধ্যতামূলক?
👉 হ্যাঁ।
🔹 কুরআন: “কুলিল মু’মিনাতি ইয়াগ্দুদনা মিন আবসারিহিন্না…” – নূর: ৩১
১৩. নারীর উত্তরাধিকার কতটুকু?
👉 পুরুষের তুলনায় অর্ধেক।
🔹 কুরআন: “লিজ্যাকারি মিথলু হায্যিল উন্সাইয়াইন” – নিসা: ১১
১৪. নারীদের কি বিবাহের ক্ষেত্রে মতামতের অধিকার আছে?
👉 অবশ্যই।
🔹 হাদীস: “লা তুঙ্কাহুল আইমু….” – বুখারী
১৫. স্ত্রীকে কেমন আচরণ করতে বলা হয়েছে?
👉 উত্তম ব্যবহার।
🔹 হাদীস: “তোমাদের মধ্যে উত্তম সে, যে স্ত্রীর সঙ্গে উত্তম আচরণ করে” – তিরমিযি
১৬. কন্যা সন্তান লালনপালনের ফজিলত কী?
👉 জান্নাতের প্রতিশ্রুতি।
🔹 হাদীস: মুসলিম: ২৬৩১
১৭. একজন নারী কি কুরআন শেখাতে পারে?
👉 হ্যাঁ।
১৮. কি কারণে নারীকে বেশি সওয়াবের আশ্বাস দেওয়া হয়?
👉 ধৈর্য, সেবা ও সন্তান পালনে অবদানের কারণে।
১৯. নারীর জন্য কি আলাদা হজ্জের নিয়ম আছে?
👉 হ্যাঁ, কিছু আলাদা মাসআলা আছে।
২০. নারীর ইমামতি করা কি জায়েয?
👉 শুধু নারীদের জামাতে – হ্যাঁ।
২১. নারীর কি জিহাদ ফরয?
👉 সাধারণভাবে না, তবে জ্ঞান ও দাওয়াতের মাধ্যমে ভূমিকা রাখে।
২২. ইসলাম নারীকে কীভাবে নিরাপত্তা দিয়েছে?
👉 পর্দা, বিবাহ, অধিকার এবং উত্তরাধিকার নিশ্চিত করে।
২৩. নারীর রোজা রাখতে কী শর্ত?
👉 হায়েয ও নিফাস না থাকা।
২৪. কি কারণে নারীকে বেশি ধৈর্যশীল বলা হয়?
👉 সন্তানধারণ, প্রসব, লালনপালনের কষ্ট ইত্যাদিতে।
২৫. নারী কি তালাক দিতে পারে?
👉 “খুলা” পদ্ধতির মাধ্যমে হ্যাঁ।
২৬. স্ত্রীর প্রতি স্বামীর প্রধান দায়িত্ব কী?
👉 ভরণ-পোষণ, ভালো ব্যবহার।
২৭. নারী কি স্বামীর অজ্ঞাতসারে রোজা রাখতে পারবে?
👉 না, নফল রোজা তার অনুমতি ছাড়া নয়।
🔹 হাদীস: বুখারী
২৮. নারীর সর্বোচ্চ নিরাপত্তা কোথায়?
👉 তার পরিবার ও স্বামীর গৃহে।
২৯. নারীর প্রতি সর্বোচ্চ ভালোবাসা কাকে দেখিয়েছেন?
👉 রাসূল ﷺ হযরত খাদিজা (রা)-কে।
৩০. মা হিসেবে নারীর সম্মান কতো বেশি?
👉 তিনগুণ বেশি।
🔹 হাদীস: “উম্মুকা, উম্মুকা, উম্মুকা…” – বুখারী
৩১. নারী কি স্বামীকে তালাক দিতে পারে?
👉 সরাসরি না, তবে খুলা চাইতে পারে।
৩২. নারী কি অজু ছাড়া কুরআন ধরতে পারে?
👉 না।
৩৩. নারীর জন্য কি সোনা-রূপা বৈধ?
👉 হ্যাঁ, পুরুষের জন্য না।
৩৪. নারীর রুজি কি আলাদা নির্ধারিত?
👉 হ্যাঁ, স্বামী বা অভিভাবক কর্তৃক।
৩৫. নারী কি নিজের মত করে ব্যবসা করতে পারে?
👉 হ্যাঁ, যদি শরীয়ত মেনে চলে।
৩৬. নারী কি ইদ গাহে যেতে পারে?
👉 হ্যাঁ, রাসূল ﷺ অনুমতি দিয়েছেন।
৩৭. ইসলাম কি নারীর মানসিক স্বাধীনতা দেয়?
👉 হ্যাঁ।
৩৮. নারী কি নামাযে পুরুষদের মতো কিয়াম করতে পারে?
👉 কিছু ভিন্নতা আছে, যেমন হাত গোঁজার পদ্ধতি।
৩৯. নারীর সাদাকা কতটুকু সওয়াবের কারণ?
👉 অনেক সওয়াব। হাদীসে আছে, যা স্বামী না জানলেও।
৪০. স্বামীর উপর স্ত্রীর অধিকার কী?
👉 ভরণ-পোষণ, নিরাপত্তা, ভাল ব্যবহার।
৪১. নারী কি জুমার নামাজ আদায় করতেই হবে?
👉 না, তার ওপর ফরয নয়।
৪২. নারীর কি সম্পূর্ণ পর্দা বাধ্যতামূলক?
👉 হ্যাঁ।
৪৩. নারী কি একা সফরে যেতে পারে?
👉 ৮৯ কিমি বা ততোধিক হলে মাহরাম ছাড়া নয়।
🔹 হাদীস: বুখারী: ১৮৬২
৪৪. নারী কি ইজতেহাদ করতে পারে?
👉 হ্যাঁ, যোগ্যতা থাকলে।
৪৫. ইসলাম কি নারীকে বিচারকের দায়িত্ব দেয়?
👉 বিতর্কিত, তবে ইলমে দীন প্রচারে সুযোগ আছে।
৪৬. গর্ভবতী নারীর রোজার বিধান কী?
👉 অসুবিধা হলে পরে কাজা বা ফিদিয়া।
৪৭. নারী কি কবর জিয়ারত করতে পারে?
👉 মতভেদ আছে। নির্দিষ্টভাবে নিষেধ নেই।
৪৮. নারী ও পুরুষের জান্নাতের প্রতিদান কি সমান?
👉 হ্যাঁ, তাকওয়ার ভিত্তিতে।
৪৯. নারীকে সম্মান দিতে রাসূল ﷺ কী বলেছেন?
👉 “যে কন্যা সন্তানকে লালন করে সে জান্নাত পাবে” – মুসলিম
৫০. ইসলাম নারীকে কী চূড়ান্ত বার্তা দেয়?
👉 নারী সম্মানের পাত্র, ব্যবসা নয়। সম্মান রক্ষা করো, মর্যাদা দাও।