বাইতুল্লাহর মর্যাদা ও গুরুত্ব দলিলসহ
কাবা ঘরের ফজিলত | বাইতুল্লাহর মর্যাদা ও ইসলামিক গুরুত্ব দলিলসহ

- আপডেট সময়ঃ ১১:১৭:৪৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫
- / ২৩ বার পড়া হয়েছে।
কাবাঘর – মুসলিম উম্মাহর হৃদয়। বাইতুল্লাহ শুধু একটি ইমারত নয়; এটি ঈমান, ঐক্য, ইতিহাস ও আত্মিকতার কেন্দ্রবিন্দু। বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মুসলমান প্রতিদিন এর দিকে মুখ করে নামাজ পড়ে। এই পবিত্র ঘরের ফজিলত ও মর্যাদা নিয়ে আজকের আলোচনা।
🔹 কাবাঘরের পরিচয়
📌 বাইতুল্লাহ: আল্লাহর ঘর
কাবাঘর হলো আল্লাহর ঘর – বাইতুল্লাহ। এটি মক্কার মসজিদুল হারামের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত।
📖 আল কুরআন:
“নিশ্চয়ই মানবজাতির জন্য সর্বপ্রথম যে ঘর নির্ধারিত হয়েছে, তা বাক্কায় (মক্কা), যা বরকতময় এবং জগতবাসীর জন্য হিদায়াত।”
(সূরা আলে ইমরান, ৩:৯৬)
🔹 কাবাঘরের ইতিহাস
📌 ইব্রাহিম (আ.) ও ইসমাঈল (আ.) এর পুনঃনির্মাণ
কাবা প্রথম নির্মাণ করেন আদম (আ.)। পরে ইব্রাহিম (আ.) ও ইসমাঈল (আ.) পুনরায় এটি নির্মাণ করেন আল্লাহর নির্দেশে।
📖 কুরআনে এসেছে:
“আর স্মরণ কর, যখন ইব্রাহিম কাবার ভিত্তি স্থাপন করছিলেন এবং তাঁর সাথে ছিলেন ইসমাঈল…”
(সূরা আল-বাকারা, ২:১২৭)
🔹 কাবাঘরের ফজিলত ও মর্যাদা

📌 ১. মানবজাতির প্রথম ইবাদতের ঘর
আল্লাহ এই ঘরকে প্রথম ইবাদতের স্থান হিসেবে মনোনীত করেছেন।
📌 ২. কিবলা হিসেবে নির্ধারিত
মুসলমানরা নামাজে এই ঘরের দিকে মুখ করে থাকে। এটি উম্মাহর ঐক্যের প্রতীক।
📖 “…তুমি তোমার মুখ মসজিদুল হারামের দিকে ফিরাও…”
(সূরা বাকারা, ২:১৪৪)
📌 ৩. নিরাপত্তার ঘর
এ ঘরে প্রবেশ করলে নিরাপদ থাকা যায়।
📖 “…আর যে এতে প্রবেশ করে, সে নিরাপদ।”
(সূরা আলে ইমরান, ৩:৯৭)
🔹 তাওয়াফের ফজিলত
📌 ৭ বার তাওয়াফ – গুনাহ মাফ
রাসূল (সা.) বলেন,
“এক উমরা থেকে আরেক উমরা – এ দুইয়ের মধ্যবর্তী গুনাহসমূহের কাফফারা।”
(বুখারি ও মুসলিম)
🔹 কাবার দিকে তাকানো ইবাদত
রাসূল (সা.) বলেন:
“কাবার দিকে তাকানো ইবাদত।”
(বায়হাকী, শু’আবুল ঈমান – ফজায়েল প্রসঙ্গে গ্রহণযোগ্য)
🔹 কাবাঘরের সামনে দোআ কবুল হয়
হজ ও উমরার সময় কাবার সামনে দোআ করলে তা কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
“হজ্জের দিনের আমল আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয়…”
(সহীহ বুখারি)
🔹 কাবাঘর ধ্বংস করা ভয়ংকর গুনাহ
“একজন মুমিনকে হত্যা করা কাবা ধ্বংসের চেয়েও বড় গুনাহ।”
(তিরমিজি, ইবনে মাজাহ – হাসান হাদীস)
🔹 হজ ও কাবার সম্পর্ক
হজের অন্যতম অংশ হচ্ছে কাবার তাওয়াফ। কুরআনে বলা হয়েছে:
📖 “মানুষের ওপর আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ ফরজ, যে পথ খুঁজে পায়…”
(সূরা আলে ইমরান, ৩:৯৭)
🔹 বাইতুল্লাহর প্রতি সম্মান – তাকওয়ার নিদর্শন
📖 “আর যারা আল্লাহর নিদর্শনসমূহের সম্মান করে, তা অন্তরের তাকওয়ারই নিদর্শন।”
(সূরা হাজ্জ, ২২:৩২)
🔹 বাইতুল মা’মুর – জান্নাতে কাবার প্রতিরূপ
📖 “…এবং বাইতুল মা’মুর (অত্যন্ত পরিপূর্ণ ঘর)।”
(সূরা আত-তূর, ৫২:৪–৬)
🔹 উমর (রা.) এর দৃষ্টিভঙ্গি
হযরত উমর (রা.) কালো পাথরের প্রতি বলেন:
“তুমি একটি পাথর, ক্ষতি বা উপকার করতে পার না। যদি রাসূল (সা.)-কে তোমাকে চুম্বন করতে না দেখতাম, আমি তোমাকে চুম্বন করতাম না।”
(সহীহ বুখারি)
🔹 ৭০,০০০ ফেরেশতা প্রতিদিন কাবা জিয়ারত করে
“প্রতিদিন ৭০,০০০ ফেরেশতা কাবার উপর অবতরণ করে, যারা একবার আসে তারা আর ফিরে আসে না।”
(সহীহ মুসলিম)
🔚 কাবাঘর মুসলিম জাতির আত্মিক ঘর, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও ঐক্যের প্রতীক। এর ফজিলত অসীম। হাদীস ও কুরআনের আলোকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে,
কাবাঘর শুধু একটি গঠন নয় বরং মুসলমানদের ঈমানের অংশ। যারা জীবনে একবারও কাবাঘর দেখেছে, তাদের হৃদয়ে এটি চিরস্থায়ী হয়ে থাকে।
❓প্রশ্নোত্তর (FAQs)
১. কাবাঘর প্রথম কে নির্মাণ করেন?
আদম (আ.) কাবা প্রথম নির্মাণ করেন। পরে ইব্রাহিম (আ.) পুনঃনির্মাণ করেন।
২. কাবা কোন শহরে অবস্থিত?
মক্কা নগরীতে, সৌদি আরবে।
৩. কাবাঘরের দিকে মুখ করে নামাজ পড়ার কারণ কী?
আল্লাহ তা নির্ধারণ করেছেন মুসলমানদের কিবলা হিসেবে।
৪. কাবাঘরে দোআ করলে কি কবুল হয়?
হ্যাঁ, অনেক বেশি সম্ভাবনা থাকে কবুল হওয়ার।
৫. কাবাঘরের ছাদে উঠা কি বৈধ?
সাধারণ মুসলমানদের জন্য এটি নিষিদ্ধ, সম্মান রক্ষার্থে।