পিতা ও পুত্রর কুরবানির ঘটনা
ইব্রাহিম (আঃ) ও ইসমাইল (আঃ)-এর কুরবানির ঘটনা : কুরআন ও হাদীসের আলোকে

- আপডেট সময়ঃ ০৯:৩৩:২৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫
- / ৭৪ বার পড়া হয়েছে।
ইসলামের ইতিহাসে হযরত ইব্রাহিম (আঃ) ও তাঁর পুত্র ইসমাইল (আঃ)-এর কুরবানির ঘটনা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও হৃদয়বিদারক অধ্যায়।
এটি কুরআন ও হাদীসে বিশদভাবে বর্ণিত হয়েছে এবং মুসলিম বিশ্বে ঈদুল আযহার মূল শিক্ষা ও তাৎপর্য এই ঘটনার উপরই ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।
আল্লাহর পরীক্ষায় পিতা ও পুত্র-
হযরত ইব্রাহিম (আঃ) ছিলেন একজন খাঁটি মুমিন ও নবী। তিনি ছিলেন আল্লাহর প্রিয় বন্ধু (খালীলুল্লাহ)।
বহু বছর সন্তান না থাকার পর আল্লাহ তাআলা তাঁকে বৃদ্ধ বয়সে পুত্র হযরত ইসমাইল (আঃ) দান করেন। পুত্র লাভের এই আনন্দের মধ্যেই একদিন তিনি স্বপ্নে দেখলেন, তিনি তাঁর সন্তান ইসমাইলকে কুরবানি করছেন।
ইসলামী বিশ্বাস অনুসারে,
নবীদের স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহী বা নির্দেশ হয়ে থাকে। তাই হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এই স্বপ্নকে আল্লাহর নির্দেশ হিসেবে গ্রহণ করেন এবং তা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেন।
এরই মাঝে পিতার হাত ধরে পুত্র ইসমাইল যখন পাহাড়ের দিকে যাচ্ছিলো।পথিমধ্যে শয়তান এসে ইসমাইল নবীকে কানে কানে বলতে থাকে,’হে ইসমাইল,তুমি কি জানো ?তোমার পিতা আজ তোমাকে ঘুরতে নিয়ে যাচ্ছে না ,বরং তার রবের হুকুমে তোমাকে কুরবানী করে দিতে নিয়ে যাচ্ছে।
দেখো তার কোমরে দড়ি রয়েছে ,যা দিয়ে তোমাকে বাঁধবে।তার কোমরে ছুরি রয়েছে ,যেটি দিয়ে তোমাকে জবেহ করবে।সুতরাং বাঁচতে চাইলে বাবার সাথে যেও না।
শয়তানের এমন ধোঁকা লক্ষ্য করে,নবী পুত্র ইসমাইল জবাব দিলো – আমার পিত যদি তার রবের হুকুমে আমাকে কুরবানী করতে চায়,তাহলে আমিও রাজি। তিনি আল্লাহর নবী। তিনি ভুল কাজ করবেন না।
কুরআনে সূরা সাফফাতে এ ঘটনা এভাবে বর্ণিত হয়েছে:“তারপর যখন ইসমাইলের পিতার সঙ্গে চলাফেরা করার বয়স হলো,
তখন ইব্রাহিম নবী বললেন, ‘হে আমার প্রিয় পুত্র ! আমি স্বপ্নে দেখি যে আমি তোমাকে কুরবানি করছি। এখন বলো, তুমি কী মনে করো?’
সে বলল,
‘হে আমার পিতা! আপনি যা আদেশ পাচ্ছেন তা-ই করুন। ইনশাআল্লাহ আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত পাবেন।’”
— (সূরা সাফফাত: ১০২)
এটি ছিল এক অভূতপূর্ব দৃশ্য—
একজন পিতা প্রিয় সন্তানকে আল্লাহর নির্দেশে কুরবানি করতে প্রস্তুত, এবং পুত্রও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজের জীবন দিতে রাজি।
ইব্রাহিম (আঃ) যখন পুত্র ইসমাইল (আঃ)-কে মিনা প্রান্তরে শুইয়ে তাঁর গলা কাটার জন্য প্রস্তুত হন,
তখন আল্লাহ তাআলা তাঁর আনুগত্য ও ত্যাগ দেখে তাঁকে থামিয়ে দেন। পরিবর্তে আল্লাহ একটি বিরাট পশু (দুম্বা) পাঠান।
আল্লাহ বলেন:
“আর যখন তারা উভয়ে আনুগত্য প্রকাশ করল এবং সে (ইসমাইল) কে কাত করে শুইয়ে দিল,
আমি তাকে আহ্বান করলাম, ‘হে ইব্রাহিম! তুমি তো স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করেছ।
আমি এভাবেই সৎকর্মপরায়ণদের পুরস্কৃত করি।’
এটি ছিল এক স্পষ্ট পরীক্ষা।
আমি তাকে মুক্তি দিয়েছি এক মহান কুরবানির মাধ্যমে।”
— (সূরা সাফফাত: ১০৩–১০৭)
এই কুরবানির মাধ্যমে ইব্রাহিম (আঃ) ও ইসমাইল (আঃ) আল্লাহর প্রতি সর্বোচ্চ আনুগত্য, ত্যাগ ও বিশ্বাসের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
তাঁদের এই ত্যাগের স্মরণেই আজ প্রতিটি মুসলমান ঈদুল আযহার সময় পশু কুরবানি করে থাকে।
ইব্রাহিম (আঃ) ও ইসমাইল (আঃ)-এর কুরবানির ঘটনা শুধু একটি ঐতিহাসিক কাহিনী নয়, বরং এটি মুসলমানদের জীবনে একটি চিরন্তন শিক্ষা—
আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যে কোনো ত্যাগে প্রস্তুত থাকার অঙ্গীকার।
কুরবানির মাধ্যমে একজন মুসলমান শেখে, আল্লাহর নির্দেশের কাছে দুনিয়ার সবকিছুই তুচ্ছ।আল্লাহর প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্য –
ইব্রাহিম (আঃ)-এর মতো বিশ্বাস রাখতে শেখায়।তাকওয়া ও ত্যাগের চেতনা –
নিজের প্রিয় জিনিস আল্লাহর জন্য ত্যাগ করার মানসিকতা।পরিবারে দ্বীনের চর্চা – পিতা-পুত্র উভয়ের সম্মিলিত আনুগত্যের উদাহরণ।
রেফারেন্স:
কুরআন: সূরা সাফফাত, আয়াত ১০২–১০৭
হাদীস: সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম – কুরবানির ফজিলত ও ইতিহাস