১১:৪১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫
কার উপর কুরবানী ওয়াজিব এবং কেমন পশু কুরবানীর জন্য উত্তম

কেমন পশু কুরবানীর জন্য উত্তম—কার উপর কুরবানী ওয়াজিব / ওয়াজিব নয়

Hossain Ali
  • আপডেট সময়ঃ ০৩:০৩:১১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫
  • / ৬৫ বার পড়া হয়েছে।

কার উপর কুরবানী ওয়াজিব এবং কেমন পশু কুরবানীর জন্য কুরবানীর পশুর কি কি খাওয়া হারামউত্তম কে কুরবানী না করেও সাওয়াব পাবে?

দলিলসহ বিশদ আলোচনা :-

কুরবানী ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখে আদায় করা হয়। এটি হযরত ইব্রাহিম (আঃ)-এর আত্মত্যাগ এবং হযরত ইসমাইল (আঃ)-এর আনুগত্যের এক জীবন্ত নিদর্শন। কুরবানী আমাদেরকে ত্যাগ, তাকওয়া ও দরিদ্রের প্রতি সহানুভূতির শিক্ষা দেয়।


🐐 কুরবানী কাকে বলা হয়?

“কুরবানী” শব্দটি এসেছে আরবি “قربان” (কুরবান)-থেকে, যার অর্থ হলো “নিকটবর্তী হওয়া”। এটি এমন এক ইবাদত যার মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে নির্দিষ্ট দিনগুলোতে নির্দিষ্ট পশু জবাই করে।

📅 কুরবানী কখন ওয়াজিব হয়?

ইসলামে কুরবানী ঈদুল আযহা উপলক্ষে জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখে আদায় করা হয়। এই সময়কে বলা হয় “আয়্যামুন নাহর” (জবাইয়ের দিনগুলো)


ইসলামে কুরবানীর ওয়াজিব হওয়ার শর্ত

📌 ১. মুসলিম হওয়া:

অ-মুসলিমদের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়।

📌 ২. বালেগ বা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া:

যাদের উপার্জন করার সামর্থ্য আছে এবং প্রাপ্তবয়স্ক।

📌 ৩. মুকীম (স্থায়ী বাসিন্দা):

মুসাফির (৭৮ কিমি বা তার বেশি ভ্রমণরত) হলে কুরবানী ওয়াজিব নয়।

📌 ৪. আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান হওয়া:

যার কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ আছে, যেমন ৮৭.৪৮ গ্রাম স্বর্ণ বা তার সমমূল্য সম্পদ।


যাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়

  • দরিদ্র বা ঋণগ্রস্ত
  • অপ্রাপ্তবয়স্ক বাচ্চা
  • ভ্রমণরত (মুসাফির)
  • যাদের কাছে প্রয়োজনীয় খরচ বাদে অতিরিক্ত সম্পদ নেই

📖 দলিল সহ কুরবানীর ওয়াজিবের প্রমাণ

কুরআন থেকে: “فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ”“অতএব, তোমার প্রভুর উদ্দেশ্যে নামায পড় এবং কুরবানী কর।”
📚 (সূরা কাওসার: ২)

হাদীস থেকে:“যার কুরবানী করার সামর্থ্য রয়েছে, সে যেন কুরবানী না করে আমাদের ঈদগাহে না আসে।” 📚 (ইবন মাজাহ: ৩১২৩)


🐄 কুরবানীর উত্তম পশু কেমন হওয়া উচিত?

🔢 বয়স ও প্রকারভেদ:

পশুর ধরন সর্বনিম্ন বয়স
ছাগল / ভেড়া ১ বছর (কিছু মত মতে ৬ মাস যদি মোটা তাজা হয়)
গরু / মহিষ ২ বছর
উট ৫ বছর

💡 শারীরিক অবস্থা:

  • দু’চোখ অন্ধ হলে কুরবানী সহি নয়
  • অসুস্থ বা দুর্বল পশু
  • কান, লেজ বা শিং অর্ধেক কাটা হলে কুরবানী হয় না

🤝 একটি পশুতে কতজন অংশ নিতে পারে?

  • 🐄 গরু/মহিষ: সাতজন পর্যন্ত
  • 🐫 উট: সাতজন পর্যন্ত
  • 🐐 ছাগল/ভেড়া: শুধুমাত্র একজনের পক্ষ থেকে

🕌 রাসূল (সাঃ)-এর কুরবানীর আদর্শ

তিনি (সাঃ) নিজ হাতে দুটি মোটা, শিংওয়ালা, কালো-সাদা রঙের দুম্বা কুরবানী করেছিলেন।
📚 (বুখারি, হাদীস: ৫৫৫৮)


⚠️ প্রচলিত ভুল ধারণা

  • ❌ শুধু দামি পশু কুরবানী করলেই বেশি সওয়াব
  • ❌ এক পরিবারের সদস্যদের পক্ষে একটি গরু যথেষ্ট না হলেও করা হয়

✅ বরং ইচ্ছা থাকলে বেশি কুরবানী করা সুন্নত, তবে শর্ত হলো তা হালাল ও সঠিকভাবে আদায় হতে হবে।


কুরবানী না করলে কী হবে?

হাদীসের আলোকে এটি খুবই বড় গোনাহ, যদি কেউ সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানী না করে। রাসূল (সাঃ) এর নিষেধাজ্ঞা স্পষ্ট—ঈদগাহে এমন ব্যক্তিকে না আসার নির্দেশ।


কুরবানী শুধু পশু জবাই নয়, এটি হলো আল্লাহর প্রতি আনুগত্য, আত্মত্যাগ এবং তাকওয়ার প্রকাশ। সামর্থ্যবান প্রতিটি মুসলমানের উচিত এই ইবাদত পালন করা। কুরবানীর পশু যেন শারীরিকভাবে উত্তম ও হালাল উৎস হতে হয়—এটি আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবার একটি বড় শর্ত।

❓FAQs

১. কুরবানী কার উপর ওয়াজিব?

যার কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ আছে, সে মুকীম, মুসলিম ও প্রাপ্তবয়স্ক—তার উপর কুরবানী ওয়াজিব।

২. নারী কি কুরবানী করতে পারবে?

হ্যাঁ, নারীদের উপরও কুরবানী ওয়াজিব যদি শর্ত পূরণ করে।

৩. এক পরিবারের পক্ষ থেকে একটিই কি যথেষ্ট?

না, যদি পরিবারের একাধিক সদস্য নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়, তাদের প্রত্যেকের পক্ষ থেকে আলাদা কুরবানী করতে হবে।

৪. শিশুদের পক্ষ থেকে কি কুরবানী করা লাগবে?

না, শিশুদের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। তবে চাইলে বাবা-মা স্বেচ্ছায় করতে পারেন।

৫. গরুর একটিতে কয়জন অংশ নিতে পারে?

সর্বোচ্চ সাতজন পর্যন্ত গরু বা উটে অংশ নিতে পারে।

নিউজটি শেয়ার করুন

বিস্তারিত লিখুনঃ

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

কার উপর কুরবানী ওয়াজিব এবং কেমন পশু কুরবানীর জন্য উত্তম

কেমন পশু কুরবানীর জন্য উত্তম—কার উপর কুরবানী ওয়াজিব / ওয়াজিব নয়

আপডেট সময়ঃ ০৩:০৩:১১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫

দলিলসহ বিশদ আলোচনা :-

কুরবানী ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখে আদায় করা হয়। এটি হযরত ইব্রাহিম (আঃ)-এর আত্মত্যাগ এবং হযরত ইসমাইল (আঃ)-এর আনুগত্যের এক জীবন্ত নিদর্শন। কুরবানী আমাদেরকে ত্যাগ, তাকওয়া ও দরিদ্রের প্রতি সহানুভূতির শিক্ষা দেয়।


🐐 কুরবানী কাকে বলা হয়?

“কুরবানী” শব্দটি এসেছে আরবি “قربان” (কুরবান)-থেকে, যার অর্থ হলো “নিকটবর্তী হওয়া”। এটি এমন এক ইবাদত যার মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে নির্দিষ্ট দিনগুলোতে নির্দিষ্ট পশু জবাই করে।

📅 কুরবানী কখন ওয়াজিব হয়?

ইসলামে কুরবানী ঈদুল আযহা উপলক্ষে জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখে আদায় করা হয়। এই সময়কে বলা হয় “আয়্যামুন নাহর” (জবাইয়ের দিনগুলো)


ইসলামে কুরবানীর ওয়াজিব হওয়ার শর্ত

📌 ১. মুসলিম হওয়া:

অ-মুসলিমদের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়।

📌 ২. বালেগ বা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া:

যাদের উপার্জন করার সামর্থ্য আছে এবং প্রাপ্তবয়স্ক।

📌 ৩. মুকীম (স্থায়ী বাসিন্দা):

মুসাফির (৭৮ কিমি বা তার বেশি ভ্রমণরত) হলে কুরবানী ওয়াজিব নয়।

📌 ৪. আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান হওয়া:

যার কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ আছে, যেমন ৮৭.৪৮ গ্রাম স্বর্ণ বা তার সমমূল্য সম্পদ।


যাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়

  • দরিদ্র বা ঋণগ্রস্ত
  • অপ্রাপ্তবয়স্ক বাচ্চা
  • ভ্রমণরত (মুসাফির)
  • যাদের কাছে প্রয়োজনীয় খরচ বাদে অতিরিক্ত সম্পদ নেই

📖 দলিল সহ কুরবানীর ওয়াজিবের প্রমাণ

কুরআন থেকে: “فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ”“অতএব, তোমার প্রভুর উদ্দেশ্যে নামায পড় এবং কুরবানী কর।”
📚 (সূরা কাওসার: ২)

হাদীস থেকে:“যার কুরবানী করার সামর্থ্য রয়েছে, সে যেন কুরবানী না করে আমাদের ঈদগাহে না আসে।” 📚 (ইবন মাজাহ: ৩১২৩)


🐄 কুরবানীর উত্তম পশু কেমন হওয়া উচিত?

🔢 বয়স ও প্রকারভেদ:

পশুর ধরন সর্বনিম্ন বয়স
ছাগল / ভেড়া ১ বছর (কিছু মত মতে ৬ মাস যদি মোটা তাজা হয়)
গরু / মহিষ ২ বছর
উট ৫ বছর

💡 শারীরিক অবস্থা:

  • দু’চোখ অন্ধ হলে কুরবানী সহি নয়
  • অসুস্থ বা দুর্বল পশু
  • কান, লেজ বা শিং অর্ধেক কাটা হলে কুরবানী হয় না

🤝 একটি পশুতে কতজন অংশ নিতে পারে?

  • 🐄 গরু/মহিষ: সাতজন পর্যন্ত
  • 🐫 উট: সাতজন পর্যন্ত
  • 🐐 ছাগল/ভেড়া: শুধুমাত্র একজনের পক্ষ থেকে

🕌 রাসূল (সাঃ)-এর কুরবানীর আদর্শ

তিনি (সাঃ) নিজ হাতে দুটি মোটা, শিংওয়ালা, কালো-সাদা রঙের দুম্বা কুরবানী করেছিলেন।
📚 (বুখারি, হাদীস: ৫৫৫৮)


⚠️ প্রচলিত ভুল ধারণা

  • ❌ শুধু দামি পশু কুরবানী করলেই বেশি সওয়াব
  • ❌ এক পরিবারের সদস্যদের পক্ষে একটি গরু যথেষ্ট না হলেও করা হয়

✅ বরং ইচ্ছা থাকলে বেশি কুরবানী করা সুন্নত, তবে শর্ত হলো তা হালাল ও সঠিকভাবে আদায় হতে হবে।


কুরবানী না করলে কী হবে?

হাদীসের আলোকে এটি খুবই বড় গোনাহ, যদি কেউ সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানী না করে। রাসূল (সাঃ) এর নিষেধাজ্ঞা স্পষ্ট—ঈদগাহে এমন ব্যক্তিকে না আসার নির্দেশ।


কুরবানী শুধু পশু জবাই নয়, এটি হলো আল্লাহর প্রতি আনুগত্য, আত্মত্যাগ এবং তাকওয়ার প্রকাশ। সামর্থ্যবান প্রতিটি মুসলমানের উচিত এই ইবাদত পালন করা। কুরবানীর পশু যেন শারীরিকভাবে উত্তম ও হালাল উৎস হতে হয়—এটি আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবার একটি বড় শর্ত।

❓FAQs

১. কুরবানী কার উপর ওয়াজিব?

যার কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ আছে, সে মুকীম, মুসলিম ও প্রাপ্তবয়স্ক—তার উপর কুরবানী ওয়াজিব।

২. নারী কি কুরবানী করতে পারবে?

হ্যাঁ, নারীদের উপরও কুরবানী ওয়াজিব যদি শর্ত পূরণ করে।

৩. এক পরিবারের পক্ষ থেকে একটিই কি যথেষ্ট?

না, যদি পরিবারের একাধিক সদস্য নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়, তাদের প্রত্যেকের পক্ষ থেকে আলাদা কুরবানী করতে হবে।

৪. শিশুদের পক্ষ থেকে কি কুরবানী করা লাগবে?

না, শিশুদের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। তবে চাইলে বাবা-মা স্বেচ্ছায় করতে পারেন।

৫. গরুর একটিতে কয়জন অংশ নিতে পারে?

সর্বোচ্চ সাতজন পর্যন্ত গরু বা উটে অংশ নিতে পারে।