০৮:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫
আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য পশু নির্বাচন

কেমন পশু বিশুদ্ধ কুরবানীর জন্য উত্তম?

Jaynab Fatema
  • আপডেট সময়ঃ ১১:৪৭:৩১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫
  • / ৩৪ বার পড়া হয়েছে।

কেমন পশু বিশুদ্ধ কুরবানীর জন্য উত্তম?

কুরবানী ইসলামের অন্যতম ইবাদত, যা মূলত ত্যাগের প্রতীক। এটি শুধু পশু জবাই নয় বরং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সব কিছু ত্যাগের এক ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত। তবে, কুরবানী কবুল হওয়ার অন্যতম শর্ত হলো বিশুদ্ধ ও নির্দোষ পশু। আজকের আলোচনায় আমরা জানব, কেমন পশু কুরবানীর জন্য উত্তম এবং ইসলামী বিধি অনুযায়ী কোন গুণাবলী থাকা জরুরি।


কুরবানীর গুরুত্ব

আল্লাহ তায়ালা বলেন:

“তোমরা তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত কায়েম করো এবং কুরবানী দাও।”
— (সূরা কাওসার: ২)

রাসূল ﷺ বলেন:

“যে ব্যক্তি কুরবানীর সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানী করে না, সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।”
— (সুনান ইবন মাজাহ, হাদীস: ৩১২৩)


কোন কোন পশু কুরবানীর জন্য বৈধ?

ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী নিচের পশুগুলো কুরবানীর জন্য বৈধ:

১. উট

  • বয়স: কমপক্ষে ৫ বছর পূর্ণ

  • শর্ত: সুস্থ, নির্দোষ

২. গরু, ষাঁড়, মহিষ

  • বয়স: ২ বছর পূর্ণ (হিসান)

৩. ছাগল, ভেড়া, দুম্বা

  • বয়স: ১ বছর পূর্ণ

  • তবে, একমাত্র দুম্বা যদি দেখতে একবছরের মতো হয়, ৬ মাস বয়স হলেই চলবে (হাদীস দ্বারা প্রমাণিত)


কুরবানীর জন্য উত্তম পশুর গুণাবলী

১. শারীরিকভাবে নির্দোষ হতে হবে

রাসূল ﷺ বলেন:

“চার ধরণের পশু কুরবানীর উপযুক্ত নয়ঃ একচোখা (যার অন্ধত্ব পরিষ্কার), অসুস্থ (যার অসুস্থতা স্পষ্ট), ল্যাংড়া (যে স্পষ্টভাবে হাটতে পারে না), এবং এমন দুর্বল যে হাড়ে মাংস নেই।”
— (সুনান আবু দাউদ, হাদীস: ২৮০২)

২. সুস্থ ও সবল হতে হবে

অত্যন্ত দুর্বল, রোগাক্রান্ত, খুরে-ল্যাংড়া পশু কুরবানীর অযোগ্য।

৩. অঙ্গহানি থাকলে চলবে না

যদি পশুর কান, লেজ, চোখ, দাঁত, বা পা ভাঙা থাকে এবং তা চলাফেরা বা জীবনযাপনে ব্যাঘাত ঘটায়, সে পশু কুরবানীর জন্য অনুপযুক্ত।


উত্তম পশুর আরও কিছু বৈশিষ্ট্য

১. মোটা-তাজা ও আকর্ষণীয় পশু

সুস্থ, সুন্দর ও মোটা পশু কুরবানীর জন্য অধিক উত্তম। রাসূল ﷺ নিজেও সুন্দর পশু কুরবানী দিতেন।

“নবী ﷺ দুটি সাদা-কালো ডোরা ডোরা, শিংযুক্ত ও মোটা দুম্বা কুরবানী করেছিলেন।”
— (সহীহ বুখারী, হাদীস: ৫৫৫৮)

২. শিং থাকা উত্তম, তবে বাধ্যতামূলক নয়

শিংভাঙা বা শিংবিহীন হলেও, যদি অন্য দিক থেকে উপযুক্ত হয়, তাহলে কুরবানী জায়েয।

৩. দাঁত থাকা জরুরি নয়, তবে ভালো

বয়সে পরিপূর্ণ পশুর দাঁত উঠে যায়, এটা সমস্যা নয়। তবে খুব অল্প বয়সী ও দাঁতহীন পশু গ্রহণযোগ্য নয়।


অন্যদের অংশগ্রহণ কেমন হওয়া উচিত?

গরু ও উটে ৭ জন পর্যন্ত অংশ নিতে পারে

রাসূল ﷺ বলেন:

“আমরা রাসূল ﷺ এর সাথে এক সফরে ছিলাম। আমরা সাতজন এক উটে কুরবানী দিয়েছি এবং একইভাবে গরুতে।”
— (সহীহ মুসলিম, হাদীস: ১৩১৮)

ছাগল, ভেড়া, দুম্বা শুধু একজনের জন্য

এই ধরণের পশুতে একাধিক অংশগ্রহণ করা বৈধ নয়।


পশু ক্রয়ের সময় সতর্কতা

১. বয়স যাচাই করুন:
পশু বিক্রেতার কথায় বিশ্বাস না করে নিজে দেখে বা জানিয়ে নিশ্চিত হোন।

২. চলাফেরা দেখুন:
পশুটি সোজা হেঁটে চলতে পারে কিনা, ল্যাংড়া না হয়।

৩. চোখ ও কান পরীক্ষা করুন:
অন্ধ বা কানে কাটা পশু এড়ানো উচিত।

৪. অঙ্গ হানি আছে কিনা দেখুন:
লেজ বা শিং সম্পূর্ণ কিনা খেয়াল করুন।


বৈধতা সংক্রান্ত আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক

১. পশু চুরি করা বা অন্যায়ভাবে অর্জিত হলে চলবে না

কুরবানীর পশু অবশ্যই হালাল উপার্জন থেকে কেনা উচিত। অন্যথায় ইবাদত কবুল হবে না।

২. পশুর উপর কারো হক থাকলে আগে মীমাংসা করুন

যেমন ঋণের কারণে জামানত রাখা পশু কুরবানীযোগ্য নয় যতক্ষণ না মালিকানা পুরোপুরি সুনিশ্চিত।


নারী কি পশু কুরবানী দিতে পারে?

হ্যাঁ, ইসলামী দৃষ্টিতে নারীর জন্য কুরবানী দেওয়া সুন্নত এবং অনেক সাহাবিয়া কুরবানী করতেন।


কুরবানীর পশু সেজদা দেওয়া জায়েয নয়

অনেক এলাকায় দেখা যায় পশুর সামনে মাথা রেখে সেজদা দেয়া হয় — এটি বিদআত এবং ইসলামে নিষিদ্ধ।


কুরবানীর পশুর প্রতি দয়া করা

রাসূল ﷺ বলেন:

“যখন তোমরা কুরবানী করো, তখন ভালোভাবে করো। পশুকে কষ্ট দিও না। ছুরি ধারালো করো।”
— (সহীহ মুসলিম)


বিশুদ্ধ কুরবানীর জন্য শুধু পশু জবাই করাই যথেষ্ট নয়। বরং সে পশুর গুণাগুণ, স্বাস্থ্য, বৈধতা সবই গুরুত্বপূর্ণ। ইসলাম কুরবানীর পশুকে সম্মানের চোখে দেখে। তাই আমাদের উচিত সঠিক জ্ঞান নিয়ে, শরিয়ত অনুযায়ী, হৃদয় দিয়ে কুরবানী সম্পন্ন করা। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য পশু নির্বাচনে কোনো অবহেলা যেন না হয়।


প্রশ্নোত্তর (FAQs)

১. ছোটখাটো কান বা লেজ কাটলে কি কুরবানী হবে?
ছোটখাটো ক্ষতি থাকলেও, যদি তাতে চলাফেরায় ব্যাঘাত না ঘটে, তবে কুরবানী জায়েয।

২. গর্ভবতী গাভী কুরবানী করা যাবে কি?
হ্যাঁ, তবে মানবিক বিবেচনায় এমন পশু কুরবানী না করাই উত্তম।

৩. মাইক্রোচিপ দেওয়া গরু কুরবানী জায়েয হবে কি?
যদি গরুটি হালাল উপায়ে কেনা হয় এবং অন্যান্য শর্ত পূরণ করে, তাহলে জায়েয।

৪. ওষুধ খাইয়ে মোটা করা গরু কুরবানী জায়েয?
যদি ওষুধ বা ইনজেকশন শরীরের জন্য ক্ষতিকর না হয়, তবে কুরবানী হতে পারে। তবে প্রকৃত উপায়ে মোটা করা উত্তম।

৫. কোনো পশু দান করা হলে, তা দিয়ে কুরবানী করা যাবে?
যদি তা বৈধভাবে দান করা হয়, এবং সব শর্ত পূরণ করে, তাহলে কুরবানী জায়েয।

নিউজটি শেয়ার করুন

বিস্তারিত লিখুনঃ

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য পশু নির্বাচন

কেমন পশু বিশুদ্ধ কুরবানীর জন্য উত্তম?

আপডেট সময়ঃ ১১:৪৭:৩১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫

কুরবানী ইসলামের অন্যতম ইবাদত, যা মূলত ত্যাগের প্রতীক। এটি শুধু পশু জবাই নয় বরং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সব কিছু ত্যাগের এক ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত। তবে, কুরবানী কবুল হওয়ার অন্যতম শর্ত হলো বিশুদ্ধ ও নির্দোষ পশু। আজকের আলোচনায় আমরা জানব, কেমন পশু কুরবানীর জন্য উত্তম এবং ইসলামী বিধি অনুযায়ী কোন গুণাবলী থাকা জরুরি।


কুরবানীর গুরুত্ব

আল্লাহ তায়ালা বলেন:

“তোমরা তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত কায়েম করো এবং কুরবানী দাও।”
— (সূরা কাওসার: ২)

রাসূল ﷺ বলেন:

“যে ব্যক্তি কুরবানীর সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানী করে না, সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।”
— (সুনান ইবন মাজাহ, হাদীস: ৩১২৩)


কোন কোন পশু কুরবানীর জন্য বৈধ?

ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী নিচের পশুগুলো কুরবানীর জন্য বৈধ:

১. উট

  • বয়স: কমপক্ষে ৫ বছর পূর্ণ

  • শর্ত: সুস্থ, নির্দোষ

২. গরু, ষাঁড়, মহিষ

  • বয়স: ২ বছর পূর্ণ (হিসান)

৩. ছাগল, ভেড়া, দুম্বা

  • বয়স: ১ বছর পূর্ণ

  • তবে, একমাত্র দুম্বা যদি দেখতে একবছরের মতো হয়, ৬ মাস বয়স হলেই চলবে (হাদীস দ্বারা প্রমাণিত)


কুরবানীর জন্য উত্তম পশুর গুণাবলী

১. শারীরিকভাবে নির্দোষ হতে হবে

রাসূল ﷺ বলেন:

“চার ধরণের পশু কুরবানীর উপযুক্ত নয়ঃ একচোখা (যার অন্ধত্ব পরিষ্কার), অসুস্থ (যার অসুস্থতা স্পষ্ট), ল্যাংড়া (যে স্পষ্টভাবে হাটতে পারে না), এবং এমন দুর্বল যে হাড়ে মাংস নেই।”
— (সুনান আবু দাউদ, হাদীস: ২৮০২)

২. সুস্থ ও সবল হতে হবে

অত্যন্ত দুর্বল, রোগাক্রান্ত, খুরে-ল্যাংড়া পশু কুরবানীর অযোগ্য।

৩. অঙ্গহানি থাকলে চলবে না

যদি পশুর কান, লেজ, চোখ, দাঁত, বা পা ভাঙা থাকে এবং তা চলাফেরা বা জীবনযাপনে ব্যাঘাত ঘটায়, সে পশু কুরবানীর জন্য অনুপযুক্ত।


উত্তম পশুর আরও কিছু বৈশিষ্ট্য

১. মোটা-তাজা ও আকর্ষণীয় পশু

সুস্থ, সুন্দর ও মোটা পশু কুরবানীর জন্য অধিক উত্তম। রাসূল ﷺ নিজেও সুন্দর পশু কুরবানী দিতেন।

“নবী ﷺ দুটি সাদা-কালো ডোরা ডোরা, শিংযুক্ত ও মোটা দুম্বা কুরবানী করেছিলেন।”
— (সহীহ বুখারী, হাদীস: ৫৫৫৮)

২. শিং থাকা উত্তম, তবে বাধ্যতামূলক নয়

শিংভাঙা বা শিংবিহীন হলেও, যদি অন্য দিক থেকে উপযুক্ত হয়, তাহলে কুরবানী জায়েয।

৩. দাঁত থাকা জরুরি নয়, তবে ভালো

বয়সে পরিপূর্ণ পশুর দাঁত উঠে যায়, এটা সমস্যা নয়। তবে খুব অল্প বয়সী ও দাঁতহীন পশু গ্রহণযোগ্য নয়।


অন্যদের অংশগ্রহণ কেমন হওয়া উচিত?

গরু ও উটে ৭ জন পর্যন্ত অংশ নিতে পারে

রাসূল ﷺ বলেন:

“আমরা রাসূল ﷺ এর সাথে এক সফরে ছিলাম। আমরা সাতজন এক উটে কুরবানী দিয়েছি এবং একইভাবে গরুতে।”
— (সহীহ মুসলিম, হাদীস: ১৩১৮)

ছাগল, ভেড়া, দুম্বা শুধু একজনের জন্য

এই ধরণের পশুতে একাধিক অংশগ্রহণ করা বৈধ নয়।


পশু ক্রয়ের সময় সতর্কতা

১. বয়স যাচাই করুন:
পশু বিক্রেতার কথায় বিশ্বাস না করে নিজে দেখে বা জানিয়ে নিশ্চিত হোন।

২. চলাফেরা দেখুন:
পশুটি সোজা হেঁটে চলতে পারে কিনা, ল্যাংড়া না হয়।

৩. চোখ ও কান পরীক্ষা করুন:
অন্ধ বা কানে কাটা পশু এড়ানো উচিত।

৪. অঙ্গ হানি আছে কিনা দেখুন:
লেজ বা শিং সম্পূর্ণ কিনা খেয়াল করুন।


বৈধতা সংক্রান্ত আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক

১. পশু চুরি করা বা অন্যায়ভাবে অর্জিত হলে চলবে না

কুরবানীর পশু অবশ্যই হালাল উপার্জন থেকে কেনা উচিত। অন্যথায় ইবাদত কবুল হবে না।

২. পশুর উপর কারো হক থাকলে আগে মীমাংসা করুন

যেমন ঋণের কারণে জামানত রাখা পশু কুরবানীযোগ্য নয় যতক্ষণ না মালিকানা পুরোপুরি সুনিশ্চিত।


নারী কি পশু কুরবানী দিতে পারে?

হ্যাঁ, ইসলামী দৃষ্টিতে নারীর জন্য কুরবানী দেওয়া সুন্নত এবং অনেক সাহাবিয়া কুরবানী করতেন।


কুরবানীর পশু সেজদা দেওয়া জায়েয নয়

অনেক এলাকায় দেখা যায় পশুর সামনে মাথা রেখে সেজদা দেয়া হয় — এটি বিদআত এবং ইসলামে নিষিদ্ধ।


কুরবানীর পশুর প্রতি দয়া করা

রাসূল ﷺ বলেন:

“যখন তোমরা কুরবানী করো, তখন ভালোভাবে করো। পশুকে কষ্ট দিও না। ছুরি ধারালো করো।”
— (সহীহ মুসলিম)


বিশুদ্ধ কুরবানীর জন্য শুধু পশু জবাই করাই যথেষ্ট নয়। বরং সে পশুর গুণাগুণ, স্বাস্থ্য, বৈধতা সবই গুরুত্বপূর্ণ। ইসলাম কুরবানীর পশুকে সম্মানের চোখে দেখে। তাই আমাদের উচিত সঠিক জ্ঞান নিয়ে, শরিয়ত অনুযায়ী, হৃদয় দিয়ে কুরবানী সম্পন্ন করা। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য পশু নির্বাচনে কোনো অবহেলা যেন না হয়।


প্রশ্নোত্তর (FAQs)

১. ছোটখাটো কান বা লেজ কাটলে কি কুরবানী হবে?
ছোটখাটো ক্ষতি থাকলেও, যদি তাতে চলাফেরায় ব্যাঘাত না ঘটে, তবে কুরবানী জায়েয।

২. গর্ভবতী গাভী কুরবানী করা যাবে কি?
হ্যাঁ, তবে মানবিক বিবেচনায় এমন পশু কুরবানী না করাই উত্তম।

৩. মাইক্রোচিপ দেওয়া গরু কুরবানী জায়েয হবে কি?
যদি গরুটি হালাল উপায়ে কেনা হয় এবং অন্যান্য শর্ত পূরণ করে, তাহলে জায়েয।

৪. ওষুধ খাইয়ে মোটা করা গরু কুরবানী জায়েয?
যদি ওষুধ বা ইনজেকশন শরীরের জন্য ক্ষতিকর না হয়, তবে কুরবানী হতে পারে। তবে প্রকৃত উপায়ে মোটা করা উত্তম।

৫. কোনো পশু দান করা হলে, তা দিয়ে কুরবানী করা যাবে?
যদি তা বৈধভাবে দান করা হয়, এবং সব শর্ত পূরণ করে, তাহলে কুরবানী জায়েয।