ইমাম মাহ্দী (আঃ) : পরিচয়,বৈশিষ্ট্য,অভিযান,কার্যকাল
কে ইমাম মাহ্দী (আঃ) : পরিচয়,বৈশিষ্ট্য,অভিযান,কার্যকাল

- আপডেট সময়ঃ ১২:০৩:৪৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫
- / ৫৩ বার পড়া হয়েছে।
🌟 কে ইমাম মাহ্দী (আঃ)?
ইমাম মাহ্দী (আঃ) হলেন কিয়ামতের পূর্বে আগমনকারী একজন মহান ইসলামী নেতা। তিনি মুসলিম উম্মাহকে বিভক্তি, দুর্নীতি ও জুলুম থেকে রক্ষা করবেন, ইসলামী খিলাফত পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবেন এবং পৃথিবীতে ইনসাফ ও শান্তি কায়েম করবেন।
🔍 পরিচয়
✅ তাঁর নাম:
- রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:
“তাঁর নাম হবে আমার নামের মতো, এবং তাঁর পিতার নাম হবে আমার পিতার নামের মতো — অর্থাৎ মুহাম্মাদ ইবনে আবদুল্লাহ।”
📘 (আবু দাউদ: ৪২৮২)
বংশ:
- তিনি হযরত ফাতিমা (রাঃ)-এর বংশধর হবেন।
📘 (আবু দাউদ: ৪২৮৩)
✅ চেহারা ও বৈশিষ্ট্য:
- কপাল প্রশস্ত, নাক উঁচু ও উজ্জ্বল চেহারার অধিকারী হবেন।
⚔️ ইমাম মাহ্দী (আঃ)-এর আগমনের প্রেক্ষাপট
ইমাম মাহ্দী তখন আসবেন, যখন:
- পৃথিবী জুলুম ও অন্যায়ে ভরে যাবে
- মুসলিমরা দিকভ্রান্ত হবে
- নেতৃত্ব দুর্বল হবে
- যুদ্ধ, ফিতনা ও বিভাজন ছড়িয়ে পড়বে
✅ রাসূল ﷺ বলেন:
“তিনি পৃথিবীকে ন্যায়বিচারে ভরিয়ে দেবেন, যেভাবে তা অন্যায়ে পূর্ণ ছিল।”
📘 (মুসলিম: ২৮৯৭)
📜 ইমাম মাহ্দী (আঃ)-এর প্রধান এজেন্ডা (অভিযান)
১. ইসলামী খিলাফত পুনঃপ্রতিষ্ঠা
ইমাম মাহ্দী (আঃ) একটি প্রকৃত ইসলামি শাসনব্যবস্থা গঠন করবেন, যেখানে কোরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী বিচার চলবে।
✅ রাসূল ﷺ বলেছেন:
“তারা মাহ্দীর কাছে বাইয়াত করবে… তিনি সাত বা নয় বছর শাসন করবেন।”
📘 (আবু দাউদ: ৪২৮৬)
২. ফিতনা ও জুলুম দূরীকরণ
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা অন্যায়, অবিচার, লুটপাট ও অধঃপতন থেকে মুসলমানদের মুক্ত করবেন।
✅ হাদীসে আছে:
“পৃথিবী জুলুমে ভরে যাবে, এরপর মাহ্দী এসে তা ইনসাফে ভরিয়ে দেবেন।”
📘 (আবু দাউদ: ৪২৮৬)
৩. মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ করা
বর্তমানে মুসলিম জাতি বিভক্ত — মাজহাব, মতবাদ, রাজনীতি ও জাতিগত বিভাজনে। ইমাম মাহ্দী তাদের একত্রিত করবেন।
📘 হাদীস: বদরের সাহাবিদের সংখ্যার সমান (৩১৩ জন) প্রকৃত মু’মিন তাঁর পাশে থাকবে।
📘 (মুস্তাদরাক হাকিম)
৪. দাজ্জালের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি
ইমাম মাহ্দী দাজ্জালের আগমনের পূর্বপ্রস্তুতি নেবেন এবং তার বিরুদ্ধে ঈসা (আঃ)-এর সঙ্গে সম্মিলিতভাবে লড়বেন।
✅ রাসূল ﷺ বলেন:
“মাহ্দীর নেতৃত্বে ঈসা (আঃ) নেমে আসবেন এবং একত্রে দাজ্জালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন।”
📘 (মুসলিম: ২৯৩৭)
৫. ঈসা (আঃ)-এর অবতরণ ও সহায়তা
- ঈসা (আঃ) আসবেন এবং মাহ্দীর পিছনে নামাজ পড়বেন, যা তাঁর মাহ্দীর প্রতি সম্মানের নিদর্শন।
📘 (সহীহ মুসলিম, ২৯৩৭)
৬. অর্থনৈতিক ইনসাফ ও সমতা কায়েম
- ইমাম মাহ্দীর সময়ে সম্পদ এত বেশী হবে যে কেউ দান গ্রহণ করতে চাইবে না।
✅ রাসূল ﷺ বলেন:
“তিনি ধন বিতরণ করবেন, কারো কাছে কিছু গচ্ছিত রাখবেন না।”
📘 (মুসলিম: ২৮৯৭)
🛡️ তাঁর কার্যকাল
- ইমাম মাহ্দী ৭ থেকে ৯ বছর পর্যন্ত শাসন করবেন।
📘 (আবু দাউদ: ৪২৮৬)
তিনি নিজেকে “মাহ্দী” দাবি করবেন না
✅ রাসূল ﷺ বলেছেন:
“মাহ্দী হবে আমার উম্মতের মধ্যে, আল্লাহ এক রাতে তাঁকে হেদায়াত দিবেন।”
📘 (ইবনে মাজাহ: ৪০৮৫)
👉 তিনি নিজে নিজেকে ঘোষণা দিবেন না, বরং মানুষ তাঁকে চিনে নিবে তাঁর গুণ, নেতৃত্ব ও পরিস্থিতির কারণে।
⚠️ মিথ্যা মাহ্দীর দাবিদার থেকে সতর্কতা
ইতিহাসে অনেকেই নিজেদের মাহ্দী বলে দাবি করেছে, যেমন:
- মীরজা গুলাম আহমদ (আহমদিয়া)
- সুদানে মহম্মদ আহমদ
- অনেকে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে, তাই সাহিহ হাদীসের আলোকে যাচাই জরুরি।
📚 ইমাম মাহ্দী (আঃ) একজন ন্যায়বান, ঈমানদার, সাহসী ও দূরদর্শী নেতা হবেন। তাঁর এজেন্ডা হবে:
- ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা
- মুসলিমদের ঐক্য
- ফিতনার বিরুদ্ধে সংগ্রাম
- দাজ্জাল মোকাবিলা
- ইনসাফ, শান্তি ও উন্নতি কায়েম
🕋 আল্লাহর নিকট প্রার্থনা:
اللَّهُمَّ اجْعَلْنَا مِنْ أَنْصَارِ الْمَهْدِيِّ
“হে আল্লাহ! আমাদেরকে মাহ্দীর সাহায্যকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন।”