০৮:০৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫
কুরআন-হাদীসের আরবি দলিলসহ বিস্তারিত বর্ণনা

জীনপরী বা যাদুকুফুরী থেকে বাঁচার পরীক্ষিত আমল, তদবির ও রুকইয়ার পানি তৈরির পূর্ণ পদ্ধতি

রিপোর্টার নামঃ
  • আপডেট সময়ঃ ০১:৩৮:২৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১ জুন ২০২৫
  • / ১০ বার পড়া হয়েছে।

জীনপরী বা যাদুকুফুরী থেকে বাঁচার পরীক্ষিত আমল, তদবির ও উপায় — কুরআন-হাদীসের আরবি দলিলসহ বিস্তারিত বর্ণনা


জীন-পরী ও যাদুর ভয় ইসলাম অনুমোদন করে না। বরং মুসলমানকে উচিত — দৈনিক কুরআনি দোয়া, রুকইয়া এবং সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন যাপন করা। যাদুর ভয় নয়, বরং আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল এবং রাসূল (সা.)-এর দোয়া ও আমলই হতে পারে আমাদের মূল রক্ষা কবচ।


🕌 জীন, পরী, যাদু ও কুফুরী থেকে বাঁচার ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গি

আলোচ্য বিষয়:

  • জীন ও যাদুর বাস্তবতা

  • ইসলামী দৃষ্টিতে যাদু ও কুফর

  • রক্ষা পাওয়ার আমল ও দোয়া

  • কুরআন-হাদীসের দলিল

  • ৫০টি বহুল আলোচিত প্রশ্নোত্তর


🔥 জীন, শয়তান, যাদু ও কুফর — কুরআনহাদীস কী বলে?

📖 কুরআনের দৃষ্টিতে জীন ও যাদু

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

وَأَنَّهُ كَانَ رِجَالٌۭ مِّنَ ٱلْإِنسِ يَعُوذُونَ بِرِجَالٍۢ مِّنَ ٱلْجِنِّ فَزَادُوهُمْ رَهَقًۭا
“মানুষদের মধ্যে কিছু লোক জিনদের কাছে আশ্রয় চাইত, ফলে তারা তাদের আরও ভয় বৃদ্ধি করত।”
— (সূরা আল-জিন: ৬)

আবার বলেন:

وَمَا كَفَرَ سُلَيْمَـٰنُ وَلَـٰكِنَّ ٱلشَّيَـٰطِينَ كَفَرُوا۟ يُعَلِّمُونَ ٱلنَّاسَ ٱلسِّحْرَ
“সুলাইমান (আঃ) কুফরি করেননি; বরং শয়তানরাই ছিল কাফের, তারা মানুষকে যাদু শিক্ষা দিত।”
— (সূরা আল-বাকারা: ১০২)


🛡️ জাদু, জীন ও শয়তান থেকে রক্ষার কুরআনহাদীস পরীক্ষিত আমলসমূহ

১. সূরা ফালাক ও সূরা নাস প্রতিদিন পড়া

রাসূল (সা.) বলেন:

قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ… قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ
“এই দুটি সূরা যেন প্রতিরক্ষা কবচ — সকালে ও সন্ধ্যায় ৩ বার করে পড়া।”
— (সহিহ মুসলিম)

২. আয়াতুল কুরসী

اللَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ…
প্রতি নামাজের পর ও রাতে শোবার আগে পাঠ করুন।
— (সহিহ বুখারি)

৩. সূরা বাকারা নিয়মিত পড়া বা চালু রাখা ঘরে

“যে ঘরে সূরা বাকারা পাঠ করা হয়, সেখানে শয়তান প্রবেশ করে না।”
— (সহিহ মুসলিম)

৪. রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর শিখানো দোয়া

أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ
(আমি আল্লাহর পূর্ণ কালিমাগুলোর মাধ্যমে আশ্রয় চাই তাঁর সৃষ্ট সব কিছুর অনিষ্ট থেকে)
— (সহিহ মুসলিম)


🧿 ইসলামিক তদবির ও হালাল রুকইয়া

রুকইয়া (রুকিয়া) মানে কুরআন ও হাদীস দ্বারা ঝাড়ফুঁক — যা সুন্নত ও বৈধ। এতে শুধু আল্লাহর নাম, দোয়া ও কুরআনি আয়াত ব্যবহার করা হয়।

✅ বৈধ রুকইয়া:

  • সূরা ফাতিহা

  • সূরা ফালাক, সূরা নাস

  • আয়াতুল কুরসী

  • “হাসবুনাল্লাহু ওয়া নিঅমাল ওয়াকিল”

🚫 অবৈধ রুকইয়া:

  • যেকোনো তাবিজ যা কুরআন নয় বা শিরকী শব্দযুক্ত

  • অজানা ভাষা বা জিনের নাম ব্যবহার

  • রক্ত, হাড়, আগুন বা ধোঁয়া


📚 ৫০টি বহুল আলোচিত অজানা প্রশ্ন ও উত্তর (FAQ)

প্রশ্ন সংক্ষিপ্ত উত্তর
১. জীন কি বাস্তব? হ্যাঁ, কুরআনে বহুবার জীনের কথা বলা হয়েছে
২. মানুষকে জীন আছর করতে পারে? হ্যাঁ, হাদীসে আছে কিছু জীন ক্ষতি করে
৩. সব জীন কি খারাপ? না, ভালো জীনও আছে (সূরা জিন ১৪)
৪. যাদু শিখলে কি কুফরি হয়? হ্যাঁ, কুরআনে কুফরি বলা হয়েছে
৫. যাদু প্রতিরোধে করণীয় কী? সূরা ফালাক, সূরা নাস, আয়াতুল কুরসী
৬. সূরা বাকারা চালু রাখার উপকারিতা? শয়তান ঘরে প্রবেশ করে না
৭. কুরআনের কোন আয়াতে যাদুর কথা এসেছে? সূরা বাকারা: ১০২
৮. রুকইয়া করা কি সুন্নত? হ্যাঁ, রাসূল (সা.) নিজেও করেছেন
৯. তাবিজ ব্যবহার বৈধ কি? যদি শুধু কুরআন হয়, তাও সতর্কভাবে
১০. যাদুর লক্ষণ কী কী? হঠাৎ অসুস্থতা, মানসিক বিপর্যয়, দুর্বলতা
১১. জীনের ভয় কি কুফরি? না, তবে অতিরিক্ত ভয় ঈমান দুর্বল করে
১২. জীন দেখলে কী করবো? আয়াতুল কুরসী পাঠ করে আল্লাহর শরণ
১৩. যাদু কাটাতে গিয়ে অনৈসলামিক পদ্ধতি? সম্পূর্ণ হারাম
১৪. ঘুমে ভয় পেলে? সূরা নাস, আয়াতুল কুরসী

১৫. রুকইয়া নিজে করতে পারি?

হ্যাঁ, সুন্নত অনুযায়ী পড়া যাবে
১৬. রুকইয়ার জন্য কোন পানি ব্যবহার করবো? যমযম পানি উত্তম, না থাকলে সাধারণ পানি
১৭. যাদুর সময় চিকিৎসা নেয়া যাবে? হ্যাঁ, তবে ইসলাম সম্মত হতে হবে
১৮. যাদু কি পরিবার ভাঙতে পারে? হ্যাঁ, কুরআনে বলা হয়েছে (সূরা বাকারা: ১০২)
১৯. কিভাবে নিশ্চিত হবো যাদু হয়েছে? রুকইয়া এবং অভিজ্ঞ আলেমের পরামর্শ
২০. যাদু হলে নামাজ বন্ধ হবে? না, বরং নামাজ বেশি করতে হবে
২১. কি করলে যাদুর প্রভাব কমে যায়? রুকইয়া, দোয়া ও ধারাবাহিক আমল
২২. হুজুরদের ঝাড়ফুঁক কি সব বৈধ? না, কেবল যারা সুন্নাহ ভিত্তিক রুকইয়া করেন
২৩. রুকইয়া শুনে কি উপকার হয়? হ্যাঁ, বিশেষত মনোযোগ দিয়ে শুনলে
২৪. যাদুর জন্য পাথর বা রঙিন কাপড় ব্যবহার কি ঠিক? না, এটি বিদআত ও শিরক হতে পারে
২৫. যাদু কি উত্তরাধিকার সূত্রে হয়? না, তবে পূর্বপুরুষের প্রভাব পড়তে পারে
২৬. কবরস্থান থেকে আনা জিনিস দিয়ে যাদু হয়? হ্যাঁ, অনেক যাদুকর কবরস্থানের বস্তু ব্যবহার করে

২৭. কোনো খাবার বা পানীয় দ্বারা যাদু হতে পারে?

হ্যাঁ, হাদীসে তা প্রমাণিত

২৮. যাদুর চিকিৎসায় হাকিমি ওষুধ ব্যবহার বৈধ? বৈধ, যদি হারাম উপাদান না থাকে
২৯. ছোট শিশুদের উপর যাদু হতে পারে? হ্যাঁ, তাদের জন্য রুকইয়া করা সুন্নত
৩০. কি দোয়ায় বাচ্চাদের রক্ষা করা যায়? أُعِيذُكَ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّةِ…
৩১. স্বপ্নে ভয়ঙ্কর কিছু দেখলে করণীয়? বামে তিনবার থুতু ফেলা, আল্লাহর আশ্রয়
৩২. যাদু বা জীন দ্বারা গৃহস্থালির সমস্যা হয়? হ্যাঁ, আলামত দেখা যায়
৩৩. বাড়িতে সূরা ইয়াসিন পাঠের উপকার? রহমত ও বরকত নেমে আসে
৩৪. ঘরে কি কি জিনিস শয়তান টানে? কুকুর, মূর্তি, বাজে গানের আওয়াজ
৩৫. অমুসলিম যাদুকরের কাছে যাওয়া বৈধ? সম্পূর্ণ হারাম
৩৬. যাদু কাটাতে কবিরাজের কাছে যাওয়া? যদি শিরক না থাকে তবে বিশেষ অবস্থায় বিবেচ্য
৩৭. রুকইয়া কারা করতে পারে? নিজের জন্য বা অভিজ্ঞ মুত্তাকি মুসলিম
৩৮. তাবিজে শুধু কুরআনের আয়াত থাকলে? আলেমদের মধ্যে মতভেদ আছে
৩৯. যাদু বা জীনের চিকিৎসায় রুকইয়ার পানি কিভাবে তৈরি করবো? কুরআনের আয়াত পড়ে পানিতে ফুঁ দিলে
৪০. কত দিন রুকইয়া চালিয়ে যেতে হবে? যতদিন না উপশম হয়

৪১. যাদু কি পরীক্ষা নাকি শাস্তি?

উভয়ই হতে পারে

৪২. যাদু বা জীন আসর হলে কি নামাজ হয়? হ্যাঁ, চেষ্টার মাধ্যমে নামাজ আদায় করতে হবে
৪৩. কারও যাদুর লক্ষণ থাকলে কীভাবে জানবো? রুকইয়া করলে প্রকাশ পায়
৪৪. রাসূল (সা.) নিজে কি কখনো রুকইয়া করেছেন? হ্যাঁ, নিজের ও সাহাবীদের জন্য
৪৫. রুকইয়ার জন্য কোনো নির্দিষ্ট সময় আছে কি? না, তবে ফজর ও মাগরিবে উত্তম
৪৬. কি করলে ঘরে জীন ঢোকে না? ১. সূরা বাকারা পাঠ ২. নিয়মানুবর্তী সালাত
৪৭. রুকইয়ার সময় ঝাড়ফুঁক করে স্পর্শ করা কি জায়েজ? নারীদের ক্ষেত্রে নয়; পুরুষ হলে পরিস্থিতিভেদে
৪৮. যাদু প্রতিরোধে রোজা কি উপকারী? হ্যাঁ, আত্মিক শক্তি বাড়ায়
৪৯. কি কি দোয়া বেশি বেশি পড়তে হবে? আয়াতুল কুরসী, সূরা ফালাক, সূরা নাস
৫০. যাদু থেকে চিরস্থায়ী মুক্তির উপায়? তাওবা, ইস্তিগফার, রুকইয়া ও কুরআন-সুন্নাহর চর্চা

📌 রেফারেন্স:

  • কুরআন: সূরা আল-বাকারা ১০২, সূরা আল-জিন ১-১৫, সূরা ফালাক ও সূরা নাস
  • হাদীস: সহিহ বুখারী, সহিহ মুসলিম, সুনান আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ
  • রুকইয়া: ইবনে তায়মিয়াহ, ইমাম নববী, আলবানী (রহ.) এর বই


    🧴 রুকইয়ার পানি তৈরির পূর্ণ পদ্ধতি

    রুকইয়া পানি (ধর্মীয় উপায়ে পড়া পানি) তৈরির জন্য সুন্নাহভিত্তিক পদ্ধতি নিচে তুলে ধরা হলো:

    🛑 করণীয়:

    1. পানি ও পাত্র প্রস্তুত করুন:
      বিশুদ্ধ পানি (যেমন: জ্বর-ফ্রিজের ঠান্ডা পানি, জমজম পানি উত্তম) একটি পাত্রে রাখুন।

    2. সুরা ও আয়াত তিলাওয়াত করুন:
      নিচের কুরআনের আয়াতসমূহ ধীরে ধীরে মুখে পড়ে পানিতে ফুঁ দিন:

      • সূরা ফাতিহা (১বার বা ৭বার)

      • আয়াতুল কুরসি (সূরা বাকারা ২:২৫৫)

      • সূরা আল-ইখলাস, ফালাক, নাস – প্রতিটি ৩বার

      • সূরা আল-বাকারা ২:১০২ (হারূত-মারূতের আয়াত)

      • সূরা ত্বাহা ২০:৬৯

      • সূরা ইউনুস ১০:৮১-৮২

      • সূরা আ’রাাফ ৭:১১৭-১১৮

    3. দোয়া করুন:
      اللَّهُمَّ اشْفِهِ شِفَاءً لا يُغَادِرُ سَقَمًا
      “O Allah, grant healing that leaves no disease behind.”

    4. পানি ফুঁ দিন:
      প্রতিটি আয়াত পড়া শেষে পানিতে হালকাভাবে ফুঁ দিন। চাইলে সাতবার ফুঁ দিতে পারেন।

    5. ব্যবহার:

      • এই পানি পান করুন দিনে কয়েকবার।

      • ঘুমানোর আগে একটু মাথা ও শরীরে লাগান।

      • চাইলে বাসায় ছিটিয়ে দিন (শয়তান বিতাড়নে সহায়ক)।


    👁️ যাদু শনাক্তের বাস্তব লক্ষণসমূহ

    ❗️সাধারণ লক্ষণ:

    • হঠাৎ করেই ভয় লাগা বা আতঙ্ক

    • ঘুমের মধ্যে চিৎকার বা দুঃস্বপ্ন

    • বুকে চাপ, হঠাৎ কান্না

    • চিকিৎসায় কাজ না হওয়া (বিশেষ করে মানসিক রোগ)

    • পরিবার বা দাম্পত্য সম্পর্কে হঠাৎ ঝগড়া

    ❗️বিশেষ লক্ষণ:

    • শরীরে তাপ বা ঝাঁকুনি অনুভব

    • কারো নাম বা ছবি দেখলেই ভয়

    • গলায় বা পেটের ভেতরে চাপ অনুভব

    • হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যাওয়া পরীক্ষার আগে, বিয়ের আগে ইত্যাদি

    উল্লেখ: এগুলো যাদুর ১০০% প্রমাণ নয়। তবে রুকইয়া করলে লক্ষণ প্রকট হয় কি না, তা বোঝা যায়।


    🔖 তাবিজের ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গি

    ✅ বৈধ তাবিজ:

    • শুধুমাত্র কুরআনের আয়াত থাকলে (কিছু আলেম অনুমোদন দিয়েছেন)

    • শিরক বা বিদআত ছাড়া, আরবি ভাষায় থাকলে

    ❌ হারাম তাবিজ:

    • তাবিজে নাম না জানা চিহ্ন, যন্ত্র, সংখ্যা

    • কুফরি শব্দ বা অজানা ভাষা

    • যাদুকরের তৈরি তাবিজ

    • শরীরের সাথে লটকানো তাবিজ যা সালাতে বাধা দেয়

    হাদীসের দলিল:

    “তাবিজ ঝুলানো শিরক।”
    — (আহমদ, আবু দাউদ)

    রাসুল (ﷺ) বলেছেন:

    “যে ব্যক্তি ঝাড়ফুঁক করে, তাবিজ ঝুলায়, অথবা ভাগ্য গণনায় বিশ্বাস করে, সে শিরকে লিপ্ত হয়।”
    — (আহমদ ৪/১৫৬)


    📚 রুকইয়া পানি তৈরি সহজ, কিন্তু তাওয়াক্কুল আল্লাহর উপর থাকতে হবে।

    • যাদু শনাক্তে রুকইয়া পরীক্ষিত পদ্ধতি।

    • তাবিজের ক্ষেত্রে কুরআন ও হাদীসের নির্দেশ স্পষ্ট — শিরকের পথে যাওয়া যাবে না।

নিউজটি শেয়ার করুন

বিস্তারিত লিখুনঃ

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

কুরআন-হাদীসের আরবি দলিলসহ বিস্তারিত বর্ণনা

জীনপরী বা যাদুকুফুরী থেকে বাঁচার পরীক্ষিত আমল, তদবির ও রুকইয়ার পানি তৈরির পূর্ণ পদ্ধতি

আপডেট সময়ঃ ০১:৩৮:২৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১ জুন ২০২৫

জীন-পরী ও যাদুর ভয় ইসলাম অনুমোদন করে না। বরং মুসলমানকে উচিত — দৈনিক কুরআনি দোয়া, রুকইয়া এবং সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন যাপন করা। যাদুর ভয় নয়, বরং আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল এবং রাসূল (সা.)-এর দোয়া ও আমলই হতে পারে আমাদের মূল রক্ষা কবচ।


🕌 জীন, পরী, যাদু ও কুফুরী থেকে বাঁচার ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গি

আলোচ্য বিষয়:

  • জীন ও যাদুর বাস্তবতা

  • ইসলামী দৃষ্টিতে যাদু ও কুফর

  • রক্ষা পাওয়ার আমল ও দোয়া

  • কুরআন-হাদীসের দলিল

  • ৫০টি বহুল আলোচিত প্রশ্নোত্তর


🔥 জীন, শয়তান, যাদু ও কুফর — কুরআনহাদীস কী বলে?

📖 কুরআনের দৃষ্টিতে জীন ও যাদু

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

وَأَنَّهُ كَانَ رِجَالٌۭ مِّنَ ٱلْإِنسِ يَعُوذُونَ بِرِجَالٍۢ مِّنَ ٱلْجِنِّ فَزَادُوهُمْ رَهَقًۭا
“মানুষদের মধ্যে কিছু লোক জিনদের কাছে আশ্রয় চাইত, ফলে তারা তাদের আরও ভয় বৃদ্ধি করত।”
— (সূরা আল-জিন: ৬)

আবার বলেন:

وَمَا كَفَرَ سُلَيْمَـٰنُ وَلَـٰكِنَّ ٱلشَّيَـٰطِينَ كَفَرُوا۟ يُعَلِّمُونَ ٱلنَّاسَ ٱلسِّحْرَ
“সুলাইমান (আঃ) কুফরি করেননি; বরং শয়তানরাই ছিল কাফের, তারা মানুষকে যাদু শিক্ষা দিত।”
— (সূরা আল-বাকারা: ১০২)


🛡️ জাদু, জীন ও শয়তান থেকে রক্ষার কুরআনহাদীস পরীক্ষিত আমলসমূহ

১. সূরা ফালাক ও সূরা নাস প্রতিদিন পড়া

রাসূল (সা.) বলেন:

قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ… قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ
“এই দুটি সূরা যেন প্রতিরক্ষা কবচ — সকালে ও সন্ধ্যায় ৩ বার করে পড়া।”
— (সহিহ মুসলিম)

২. আয়াতুল কুরসী

اللَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ…
প্রতি নামাজের পর ও রাতে শোবার আগে পাঠ করুন।
— (সহিহ বুখারি)

৩. সূরা বাকারা নিয়মিত পড়া বা চালু রাখা ঘরে

“যে ঘরে সূরা বাকারা পাঠ করা হয়, সেখানে শয়তান প্রবেশ করে না।”
— (সহিহ মুসলিম)

৪. রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর শিখানো দোয়া

أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ
(আমি আল্লাহর পূর্ণ কালিমাগুলোর মাধ্যমে আশ্রয় চাই তাঁর সৃষ্ট সব কিছুর অনিষ্ট থেকে)
— (সহিহ মুসলিম)


🧿 ইসলামিক তদবির ও হালাল রুকইয়া

রুকইয়া (রুকিয়া) মানে কুরআন ও হাদীস দ্বারা ঝাড়ফুঁক — যা সুন্নত ও বৈধ। এতে শুধু আল্লাহর নাম, দোয়া ও কুরআনি আয়াত ব্যবহার করা হয়।

✅ বৈধ রুকইয়া:

  • সূরা ফাতিহা

  • সূরা ফালাক, সূরা নাস

  • আয়াতুল কুরসী

  • “হাসবুনাল্লাহু ওয়া নিঅমাল ওয়াকিল”

🚫 অবৈধ রুকইয়া:

  • যেকোনো তাবিজ যা কুরআন নয় বা শিরকী শব্দযুক্ত

  • অজানা ভাষা বা জিনের নাম ব্যবহার

  • রক্ত, হাড়, আগুন বা ধোঁয়া


📚 ৫০টি বহুল আলোচিত অজানা প্রশ্ন ও উত্তর (FAQ)

প্রশ্ন সংক্ষিপ্ত উত্তর
১. জীন কি বাস্তব? হ্যাঁ, কুরআনে বহুবার জীনের কথা বলা হয়েছে
২. মানুষকে জীন আছর করতে পারে? হ্যাঁ, হাদীসে আছে কিছু জীন ক্ষতি করে
৩. সব জীন কি খারাপ? না, ভালো জীনও আছে (সূরা জিন ১৪)
৪. যাদু শিখলে কি কুফরি হয়? হ্যাঁ, কুরআনে কুফরি বলা হয়েছে
৫. যাদু প্রতিরোধে করণীয় কী? সূরা ফালাক, সূরা নাস, আয়াতুল কুরসী
৬. সূরা বাকারা চালু রাখার উপকারিতা? শয়তান ঘরে প্রবেশ করে না
৭. কুরআনের কোন আয়াতে যাদুর কথা এসেছে? সূরা বাকারা: ১০২
৮. রুকইয়া করা কি সুন্নত? হ্যাঁ, রাসূল (সা.) নিজেও করেছেন
৯. তাবিজ ব্যবহার বৈধ কি? যদি শুধু কুরআন হয়, তাও সতর্কভাবে
১০. যাদুর লক্ষণ কী কী? হঠাৎ অসুস্থতা, মানসিক বিপর্যয়, দুর্বলতা
১১. জীনের ভয় কি কুফরি? না, তবে অতিরিক্ত ভয় ঈমান দুর্বল করে
১২. জীন দেখলে কী করবো? আয়াতুল কুরসী পাঠ করে আল্লাহর শরণ
১৩. যাদু কাটাতে গিয়ে অনৈসলামিক পদ্ধতি? সম্পূর্ণ হারাম
১৪. ঘুমে ভয় পেলে? সূরা নাস, আয়াতুল কুরসী

১৫. রুকইয়া নিজে করতে পারি?

হ্যাঁ, সুন্নত অনুযায়ী পড়া যাবে
১৬. রুকইয়ার জন্য কোন পানি ব্যবহার করবো? যমযম পানি উত্তম, না থাকলে সাধারণ পানি
১৭. যাদুর সময় চিকিৎসা নেয়া যাবে? হ্যাঁ, তবে ইসলাম সম্মত হতে হবে
১৮. যাদু কি পরিবার ভাঙতে পারে? হ্যাঁ, কুরআনে বলা হয়েছে (সূরা বাকারা: ১০২)
১৯. কিভাবে নিশ্চিত হবো যাদু হয়েছে? রুকইয়া এবং অভিজ্ঞ আলেমের পরামর্শ
২০. যাদু হলে নামাজ বন্ধ হবে? না, বরং নামাজ বেশি করতে হবে
২১. কি করলে যাদুর প্রভাব কমে যায়? রুকইয়া, দোয়া ও ধারাবাহিক আমল
২২. হুজুরদের ঝাড়ফুঁক কি সব বৈধ? না, কেবল যারা সুন্নাহ ভিত্তিক রুকইয়া করেন
২৩. রুকইয়া শুনে কি উপকার হয়? হ্যাঁ, বিশেষত মনোযোগ দিয়ে শুনলে
২৪. যাদুর জন্য পাথর বা রঙিন কাপড় ব্যবহার কি ঠিক? না, এটি বিদআত ও শিরক হতে পারে
২৫. যাদু কি উত্তরাধিকার সূত্রে হয়? না, তবে পূর্বপুরুষের প্রভাব পড়তে পারে
২৬. কবরস্থান থেকে আনা জিনিস দিয়ে যাদু হয়? হ্যাঁ, অনেক যাদুকর কবরস্থানের বস্তু ব্যবহার করে

২৭. কোনো খাবার বা পানীয় দ্বারা যাদু হতে পারে?

হ্যাঁ, হাদীসে তা প্রমাণিত

২৮. যাদুর চিকিৎসায় হাকিমি ওষুধ ব্যবহার বৈধ? বৈধ, যদি হারাম উপাদান না থাকে
২৯. ছোট শিশুদের উপর যাদু হতে পারে? হ্যাঁ, তাদের জন্য রুকইয়া করা সুন্নত
৩০. কি দোয়ায় বাচ্চাদের রক্ষা করা যায়? أُعِيذُكَ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّةِ…
৩১. স্বপ্নে ভয়ঙ্কর কিছু দেখলে করণীয়? বামে তিনবার থুতু ফেলা, আল্লাহর আশ্রয়
৩২. যাদু বা জীন দ্বারা গৃহস্থালির সমস্যা হয়? হ্যাঁ, আলামত দেখা যায়
৩৩. বাড়িতে সূরা ইয়াসিন পাঠের উপকার? রহমত ও বরকত নেমে আসে
৩৪. ঘরে কি কি জিনিস শয়তান টানে? কুকুর, মূর্তি, বাজে গানের আওয়াজ
৩৫. অমুসলিম যাদুকরের কাছে যাওয়া বৈধ? সম্পূর্ণ হারাম
৩৬. যাদু কাটাতে কবিরাজের কাছে যাওয়া? যদি শিরক না থাকে তবে বিশেষ অবস্থায় বিবেচ্য
৩৭. রুকইয়া কারা করতে পারে? নিজের জন্য বা অভিজ্ঞ মুত্তাকি মুসলিম
৩৮. তাবিজে শুধু কুরআনের আয়াত থাকলে? আলেমদের মধ্যে মতভেদ আছে
৩৯. যাদু বা জীনের চিকিৎসায় রুকইয়ার পানি কিভাবে তৈরি করবো? কুরআনের আয়াত পড়ে পানিতে ফুঁ দিলে
৪০. কত দিন রুকইয়া চালিয়ে যেতে হবে? যতদিন না উপশম হয়

৪১. যাদু কি পরীক্ষা নাকি শাস্তি?

উভয়ই হতে পারে

৪২. যাদু বা জীন আসর হলে কি নামাজ হয়? হ্যাঁ, চেষ্টার মাধ্যমে নামাজ আদায় করতে হবে
৪৩. কারও যাদুর লক্ষণ থাকলে কীভাবে জানবো? রুকইয়া করলে প্রকাশ পায়
৪৪. রাসূল (সা.) নিজে কি কখনো রুকইয়া করেছেন? হ্যাঁ, নিজের ও সাহাবীদের জন্য
৪৫. রুকইয়ার জন্য কোনো নির্দিষ্ট সময় আছে কি? না, তবে ফজর ও মাগরিবে উত্তম
৪৬. কি করলে ঘরে জীন ঢোকে না? ১. সূরা বাকারা পাঠ ২. নিয়মানুবর্তী সালাত
৪৭. রুকইয়ার সময় ঝাড়ফুঁক করে স্পর্শ করা কি জায়েজ? নারীদের ক্ষেত্রে নয়; পুরুষ হলে পরিস্থিতিভেদে
৪৮. যাদু প্রতিরোধে রোজা কি উপকারী? হ্যাঁ, আত্মিক শক্তি বাড়ায়
৪৯. কি কি দোয়া বেশি বেশি পড়তে হবে? আয়াতুল কুরসী, সূরা ফালাক, সূরা নাস
৫০. যাদু থেকে চিরস্থায়ী মুক্তির উপায়? তাওবা, ইস্তিগফার, রুকইয়া ও কুরআন-সুন্নাহর চর্চা

📌 রেফারেন্স:

  • কুরআন: সূরা আল-বাকারা ১০২, সূরা আল-জিন ১-১৫, সূরা ফালাক ও সূরা নাস
  • হাদীস: সহিহ বুখারী, সহিহ মুসলিম, সুনান আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ
  • রুকইয়া: ইবনে তায়মিয়াহ, ইমাম নববী, আলবানী (রহ.) এর বই


    🧴 রুকইয়ার পানি তৈরির পূর্ণ পদ্ধতি

    রুকইয়া পানি (ধর্মীয় উপায়ে পড়া পানি) তৈরির জন্য সুন্নাহভিত্তিক পদ্ধতি নিচে তুলে ধরা হলো:

    🛑 করণীয়:

    1. পানি ও পাত্র প্রস্তুত করুন:
      বিশুদ্ধ পানি (যেমন: জ্বর-ফ্রিজের ঠান্ডা পানি, জমজম পানি উত্তম) একটি পাত্রে রাখুন।

    2. সুরা ও আয়াত তিলাওয়াত করুন:
      নিচের কুরআনের আয়াতসমূহ ধীরে ধীরে মুখে পড়ে পানিতে ফুঁ দিন:

      • সূরা ফাতিহা (১বার বা ৭বার)

      • আয়াতুল কুরসি (সূরা বাকারা ২:২৫৫)

      • সূরা আল-ইখলাস, ফালাক, নাস – প্রতিটি ৩বার

      • সূরা আল-বাকারা ২:১০২ (হারূত-মারূতের আয়াত)

      • সূরা ত্বাহা ২০:৬৯

      • সূরা ইউনুস ১০:৮১-৮২

      • সূরা আ’রাাফ ৭:১১৭-১১৮

    3. দোয়া করুন:
      اللَّهُمَّ اشْفِهِ شِفَاءً لا يُغَادِرُ سَقَمًا
      “O Allah, grant healing that leaves no disease behind.”

    4. পানি ফুঁ দিন:
      প্রতিটি আয়াত পড়া শেষে পানিতে হালকাভাবে ফুঁ দিন। চাইলে সাতবার ফুঁ দিতে পারেন।

    5. ব্যবহার:

      • এই পানি পান করুন দিনে কয়েকবার।

      • ঘুমানোর আগে একটু মাথা ও শরীরে লাগান।

      • চাইলে বাসায় ছিটিয়ে দিন (শয়তান বিতাড়নে সহায়ক)।


    👁️ যাদু শনাক্তের বাস্তব লক্ষণসমূহ

    ❗️সাধারণ লক্ষণ:

    • হঠাৎ করেই ভয় লাগা বা আতঙ্ক

    • ঘুমের মধ্যে চিৎকার বা দুঃস্বপ্ন

    • বুকে চাপ, হঠাৎ কান্না

    • চিকিৎসায় কাজ না হওয়া (বিশেষ করে মানসিক রোগ)

    • পরিবার বা দাম্পত্য সম্পর্কে হঠাৎ ঝগড়া

    ❗️বিশেষ লক্ষণ:

    • শরীরে তাপ বা ঝাঁকুনি অনুভব

    • কারো নাম বা ছবি দেখলেই ভয়

    • গলায় বা পেটের ভেতরে চাপ অনুভব

    • হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যাওয়া পরীক্ষার আগে, বিয়ের আগে ইত্যাদি

    উল্লেখ: এগুলো যাদুর ১০০% প্রমাণ নয়। তবে রুকইয়া করলে লক্ষণ প্রকট হয় কি না, তা বোঝা যায়।


    🔖 তাবিজের ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গি

    ✅ বৈধ তাবিজ:

    • শুধুমাত্র কুরআনের আয়াত থাকলে (কিছু আলেম অনুমোদন দিয়েছেন)

    • শিরক বা বিদআত ছাড়া, আরবি ভাষায় থাকলে

    ❌ হারাম তাবিজ:

    • তাবিজে নাম না জানা চিহ্ন, যন্ত্র, সংখ্যা

    • কুফরি শব্দ বা অজানা ভাষা

    • যাদুকরের তৈরি তাবিজ

    • শরীরের সাথে লটকানো তাবিজ যা সালাতে বাধা দেয়

    হাদীসের দলিল:

    “তাবিজ ঝুলানো শিরক।”
    — (আহমদ, আবু দাউদ)

    রাসুল (ﷺ) বলেছেন:

    “যে ব্যক্তি ঝাড়ফুঁক করে, তাবিজ ঝুলায়, অথবা ভাগ্য গণনায় বিশ্বাস করে, সে শিরকে লিপ্ত হয়।”
    — (আহমদ ৪/১৫৬)


    📚 রুকইয়া পানি তৈরি সহজ, কিন্তু তাওয়াক্কুল আল্লাহর উপর থাকতে হবে।

    • যাদু শনাক্তে রুকইয়া পরীক্ষিত পদ্ধতি।

    • তাবিজের ক্ষেত্রে কুরআন ও হাদীসের নির্দেশ স্পষ্ট — শিরকের পথে যাওয়া যাবে না।