কুরআন-হাদীসের আরবি দলিলসহ বিস্তারিত বর্ণনা
জীনপরী বা যাদুকুফুরী থেকে বাঁচার পরীক্ষিত আমল, তদবির ও রুকইয়ার পানি তৈরির পূর্ণ পদ্ধতি

- আপডেট সময়ঃ ০১:৩৮:২৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১ জুন ২০২৫
- / ১০ বার পড়া হয়েছে।

জীনপরী বা যাদুকুফুরী থেকে বাঁচার পরীক্ষিত আমল, তদবির ও উপায় — কুরআন-হাদীসের আরবি দলিলসহ বিস্তারিত বর্ণনা
জীন-পরী ও যাদুর ভয় ইসলাম অনুমোদন করে না। বরং মুসলমানকে উচিত — দৈনিক কুরআনি দোয়া, রুকইয়া এবং সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন যাপন করা। যাদুর ভয় নয়, বরং আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল এবং রাসূল (সা.)-এর দোয়া ও আমলই হতে পারে আমাদের মূল রক্ষা কবচ।
🕌 জীন, পরী, যাদু ও কুফুরী থেকে বাঁচার ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গি
আলোচ্য বিষয়:
-
জীন ও যাদুর বাস্তবতা
-
ইসলামী দৃষ্টিতে যাদু ও কুফর
-
রক্ষা পাওয়ার আমল ও দোয়া
-
কুরআন-হাদীসের দলিল
-
৫০টি বহুল আলোচিত প্রশ্নোত্তর
🔥 জীন, শয়তান, যাদু ও কুফর — কুরআন–হাদীস কী বলে?
📖 কুরআনের দৃষ্টিতে জীন ও যাদু
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
وَأَنَّهُ كَانَ رِجَالٌۭ مِّنَ ٱلْإِنسِ يَعُوذُونَ بِرِجَالٍۢ مِّنَ ٱلْجِنِّ فَزَادُوهُمْ رَهَقًۭا
“মানুষদের মধ্যে কিছু লোক জিনদের কাছে আশ্রয় চাইত, ফলে তারা তাদের আরও ভয় বৃদ্ধি করত।”
— (সূরা আল-জিন: ৬)
আবার বলেন:
وَمَا كَفَرَ سُلَيْمَـٰنُ وَلَـٰكِنَّ ٱلشَّيَـٰطِينَ كَفَرُوا۟ يُعَلِّمُونَ ٱلنَّاسَ ٱلسِّحْرَ
“সুলাইমান (আঃ) কুফরি করেননি; বরং শয়তানরাই ছিল কাফের, তারা মানুষকে যাদু শিক্ষা দিত।”
— (সূরা আল-বাকারা: ১০২)
🛡️ জাদু, জীন ও শয়তান থেকে রক্ষার কুরআন–হাদীস পরীক্ষিত আমলসমূহ
১. সূরা ফালাক ও সূরা নাস প্রতিদিন পড়া
রাসূল (সা.) বলেন:
قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ… قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ
“এই দুটি সূরা যেন প্রতিরক্ষা কবচ — সকালে ও সন্ধ্যায় ৩ বার করে পড়া।”
— (সহিহ মুসলিম)
২. আয়াতুল কুরসী
اللَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ…
প্রতি নামাজের পর ও রাতে শোবার আগে পাঠ করুন।
— (সহিহ বুখারি)
৩. সূরা বাকারা নিয়মিত পড়া বা চালু রাখা ঘরে
“যে ঘরে সূরা বাকারা পাঠ করা হয়, সেখানে শয়তান প্রবেশ করে না।”
— (সহিহ মুসলিম)
৪. রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর শিখানো দোয়া
أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ
(আমি আল্লাহর পূর্ণ কালিমাগুলোর মাধ্যমে আশ্রয় চাই তাঁর সৃষ্ট সব কিছুর অনিষ্ট থেকে)
— (সহিহ মুসলিম)
🧿 ইসলামিক তদবির ও হালাল রুকইয়া
রুকইয়া (রুকিয়া) মানে কুরআন ও হাদীস দ্বারা ঝাড়ফুঁক — যা সুন্নত ও বৈধ। এতে শুধু আল্লাহর নাম, দোয়া ও কুরআনি আয়াত ব্যবহার করা হয়।
✅ বৈধ রুকইয়া:
-
সূরা ফাতিহা
-
সূরা ফালাক, সূরা নাস
-
আয়াতুল কুরসী
-
“হাসবুনাল্লাহু ওয়া নিঅমাল ওয়াকিল”
🚫 অবৈধ রুকইয়া:
-
যেকোনো তাবিজ যা কুরআন নয় বা শিরকী শব্দযুক্ত
-
অজানা ভাষা বা জিনের নাম ব্যবহার
-
রক্ত, হাড়, আগুন বা ধোঁয়া
📚 ৫০টি বহুল আলোচিত অজানা প্রশ্ন ও উত্তর (FAQ)
প্রশ্ন | সংক্ষিপ্ত উত্তর | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
১. জীন কি বাস্তব? | হ্যাঁ, কুরআনে বহুবার জীনের কথা বলা হয়েছে | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
২. মানুষকে জীন আছর করতে পারে? | হ্যাঁ, হাদীসে আছে কিছু জীন ক্ষতি করে | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
৩. সব জীন কি খারাপ? | না, ভালো জীনও আছে (সূরা জিন ১৪) | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
৪. যাদু শিখলে কি কুফরি হয়? | হ্যাঁ, কুরআনে কুফরি বলা হয়েছে | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
৫. যাদু প্রতিরোধে করণীয় কী? | সূরা ফালাক, সূরা নাস, আয়াতুল কুরসী | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
৬. সূরা বাকারা চালু রাখার উপকারিতা? | শয়তান ঘরে প্রবেশ করে না | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
৭. কুরআনের কোন আয়াতে যাদুর কথা এসেছে? | সূরা বাকারা: ১০২ | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
৮. রুকইয়া করা কি সুন্নত? | হ্যাঁ, রাসূল (সা.) নিজেও করেছেন | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
৯. তাবিজ ব্যবহার বৈধ কি? | যদি শুধু কুরআন হয়, তাও সতর্কভাবে | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১০. যাদুর লক্ষণ কী কী? | হঠাৎ অসুস্থতা, মানসিক বিপর্যয়, দুর্বলতা | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১১. জীনের ভয় কি কুফরি? | না, তবে অতিরিক্ত ভয় ঈমান দুর্বল করে | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১২. জীন দেখলে কী করবো? | আয়াতুল কুরসী পাঠ করে আল্লাহর শরণ | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৩. যাদু কাটাতে গিয়ে অনৈসলামিক পদ্ধতি? | সম্পূর্ণ হারাম | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৪. ঘুমে ভয় পেলে? | সূরা নাস, আয়াতুল কুরসী | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৫. রুকইয়া নিজে করতে পারি? |
হ্যাঁ, সুন্নত অনুযায়ী পড়া যাবে | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৬. রুকইয়ার জন্য কোন পানি ব্যবহার করবো? | যমযম পানি উত্তম, না থাকলে সাধারণ পানি | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৭. যাদুর সময় চিকিৎসা নেয়া যাবে? | হ্যাঁ, তবে ইসলাম সম্মত হতে হবে | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৮. যাদু কি পরিবার ভাঙতে পারে? | হ্যাঁ, কুরআনে বলা হয়েছে (সূরা বাকারা: ১০২) | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
১৯. কিভাবে নিশ্চিত হবো যাদু হয়েছে? | রুকইয়া এবং অভিজ্ঞ আলেমের পরামর্শ | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
২০. যাদু হলে নামাজ বন্ধ হবে? | না, বরং নামাজ বেশি করতে হবে | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
|
📌 রেফারেন্স:
- কুরআন: সূরা আল-বাকারা ১০২, সূরা আল-জিন ১-১৫, সূরা ফালাক ও সূরা নাস
- হাদীস: সহিহ বুখারী, সহিহ মুসলিম, সুনান আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ
-
রুকইয়া: ইবনে তায়মিয়াহ, ইমাম নববী, আলবানী (রহ.) এর বই
🧴 রুকইয়ার পানি তৈরির পূর্ণ পদ্ধতি
রুকইয়া পানি (ধর্মীয় উপায়ে পড়া পানি) তৈরির জন্য সুন্নাহভিত্তিক পদ্ধতি নিচে তুলে ধরা হলো:
🛑 করণীয়:
-
পানি ও পাত্র প্রস্তুত করুন:
বিশুদ্ধ পানি (যেমন: জ্বর-ফ্রিজের ঠান্ডা পানি, জমজম পানি উত্তম) একটি পাত্রে রাখুন। -
সুরা ও আয়াত তিলাওয়াত করুন:
নিচের কুরআনের আয়াতসমূহ ধীরে ধীরে মুখে পড়ে পানিতে ফুঁ দিন:-
সূরা ফাতিহা (১বার বা ৭বার)
-
আয়াতুল কুরসি (সূরা বাকারা ২:২৫৫)
-
সূরা আল-ইখলাস, ফালাক, নাস – প্রতিটি ৩বার
-
সূরা আল-বাকারা ২:১০২ (হারূত-মারূতের আয়াত)
-
সূরা ত্বাহা ২০:৬৯
-
সূরা ইউনুস ১০:৮১-৮২
-
সূরা আ’রাাফ ৭:১১৭-১১৮
-
-
দোয়া করুন:
اللَّهُمَّ اشْفِهِ شِفَاءً لا يُغَادِرُ سَقَمًا
“O Allah, grant healing that leaves no disease behind.” -
পানি ফুঁ দিন:
প্রতিটি আয়াত পড়া শেষে পানিতে হালকাভাবে ফুঁ দিন। চাইলে সাতবার ফুঁ দিতে পারেন। -
ব্যবহার:
-
এই পানি পান করুন দিনে কয়েকবার।
-
ঘুমানোর আগে একটু মাথা ও শরীরে লাগান।
-
চাইলে বাসায় ছিটিয়ে দিন (শয়তান বিতাড়নে সহায়ক)।
-
👁️ যাদু শনাক্তের বাস্তব লক্ষণসমূহ
❗️সাধারণ লক্ষণ:
-
হঠাৎ করেই ভয় লাগা বা আতঙ্ক
-
ঘুমের মধ্যে চিৎকার বা দুঃস্বপ্ন
-
বুকে চাপ, হঠাৎ কান্না
-
চিকিৎসায় কাজ না হওয়া (বিশেষ করে মানসিক রোগ)
-
পরিবার বা দাম্পত্য সম্পর্কে হঠাৎ ঝগড়া
❗️বিশেষ লক্ষণ:
-
শরীরে তাপ বা ঝাঁকুনি অনুভব
-
কারো নাম বা ছবি দেখলেই ভয়
-
গলায় বা পেটের ভেতরে চাপ অনুভব
-
হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যাওয়া পরীক্ষার আগে, বিয়ের আগে ইত্যাদি
উল্লেখ: এগুলো যাদুর ১০০% প্রমাণ নয়। তবে রুকইয়া করলে লক্ষণ প্রকট হয় কি না, তা বোঝা যায়।
🔖 তাবিজের ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গি
✅ বৈধ তাবিজ:
-
শুধুমাত্র কুরআনের আয়াত থাকলে (কিছু আলেম অনুমোদন দিয়েছেন)
-
শিরক বা বিদআত ছাড়া, আরবি ভাষায় থাকলে
❌ হারাম তাবিজ:
-
তাবিজে নাম না জানা চিহ্ন, যন্ত্র, সংখ্যা
-
কুফরি শব্দ বা অজানা ভাষা
-
যাদুকরের তৈরি তাবিজ
-
শরীরের সাথে লটকানো তাবিজ যা সালাতে বাধা দেয়
হাদীসের দলিল:
“তাবিজ ঝুলানো শিরক।”
— (আহমদ, আবু দাউদ)রাসুল (ﷺ) বলেছেন:
“যে ব্যক্তি ঝাড়ফুঁক করে, তাবিজ ঝুলায়, অথবা ভাগ্য গণনায় বিশ্বাস করে, সে শিরকে লিপ্ত হয়।”
— (আহমদ ৪/১৫৬)
📚 রুকইয়া পানি তৈরি সহজ, কিন্তু তাওয়াক্কুল আল্লাহর উপর থাকতে হবে।
-
যাদু শনাক্তে রুকইয়া পরীক্ষিত পদ্ধতি।
-
তাবিজের ক্ষেত্রে কুরআন ও হাদীসের নির্দেশ স্পষ্ট — শিরকের পথে যাওয়া যাবে না।
-