০৯:০৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫
নামাজের ওয়াক্ত শুরু ও শেষ সময় , তালিকা,নিয়ম ও আমল ,তাসবিহ,মোনাজাতের দোয়া, কত রাকাত, গুরুত্ব ও ফজিলত

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ওয়াক্ত শুরু ও শেষ সময় , তালিকা,নিয়ম ও আমল

Mufty Sheikh Imran
  • আপডেট সময়ঃ ০৫:০১:০৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫
  • / ৩৬ বার পড়া হয়েছে।

নামাজের ওয়াক্ত

নিচে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সম্পর্কে একটি বিস্তৃত ব্যাখ্যা দিচ্ছি — সময়সূচি, রাকাত সংখ্যা, নিয়ম ও আমল, নামাজের পর তাসবিহ ও মোনাজাতের দোয়া, গুরুত্ব ও ফজিলত কুরআনহাদীসের দলিলসহ:


🕌 পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ — পরিচিতি

ইসলামে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ হলো প্রতিদিন পূর্বনির্ধারিত সময়ে আদায় করতে বাধ্য করা ফরজ ইবাদত
কুরআনে আল্লাহ বলেন:

إِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَوْقُوتًا
“নিশ্চয়ই সালাত মুমিনদের উপর নির্ধারিত সময়ে ফরজ করা হয়েছে।” (সূরা আন-নিসা : ১০৩)


⏰ সময়সূচি (শুরু ও শেষ সময়)

নিচে সাধারণভাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময়সূচির ধাপ দেওয়া হলো (স্থান ও ঋতু অনুযায়ী পার্থক্য থাকতে পারে):

নামাজ শুরু হওয়ার সময় শেষ সময় (শেষ সুযোগ)
ফজর সুবহে সাদিক (আলোর রেখা শুরু হওয়া) সূর্যোদয় হওয়া পর্যন্ত
জোহর সূর্য ঢলে যাওয়ার পর সূর্য মধ্য গগনে পৌঁছার আগে (সাউম)
আসর জোহরের সময় শেষ হওয়ার পর সূর্য ঢলে পড়ার আগে
মাগরিব সূর্য অস্ত যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আকাশ থেকে লালিমা শেষ হওয়া পর্যন্ত
ইশা মাগরিবের লালিমা শেষ হওয়ার পর মধ্যরাত পর্যন্ত, বা ওয়াক্ত শেষ হওয়া পর্যন্ত

হাদিসে ঘোষণা আছে:
“যে পাঁচ নামাজ নির্ধারিত সময়ে আদায় করে…” (সহীহ বুখারী – উদাহরণস্বরূপ) — অর্থ যে সময়সূচি পালন করবে, আল্লাহ তার জন্য প্রতিশ্রুতি রাখেন।
এছাড়া, মুসলিম হাদিসে বলা হয়েছে:

“পাঁচ নামাজ এবং এক জুমা থেকে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত … গুনাহ মাফ হয় যদি বড় গুনাহ থেকে বিরত থাকে।”


📐 পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ — রাকাত সংখ্যা

নিচে প্রতিটি নামাজের ফরজ ও সুন্নত (অনুসূপ্র ও সুন্নত-মুয়াক্কাদাহ) রাকাত সংখ্যা:

নামাজ ফরজ রাকাত সুন্নত / নফল রাকাত / অন্যান্য
ফজর ২ রাকাত ফরজ ২ রাকাত সুন্নত (মুয়াক্কাদাহ)
জোহর ৪ রাকাত ফরজ ৪ রাকাত সুন্নত, ২ রাকাত নফল (বছরভেদে)
আসর ৪ রাকাত ফরজ ০ রাকাত সুন্নত (কিছু ফিকহ মতে কিছু সুন্নত)
মাগরিব ৩ রাকাত ফরজ ২ রাকাত সুন্নত, ১ রাকাত নফল
ইশা ৪ রাকাত ফরজ ২ রাকাত সুন্নত, ২ রাকাত নফল, ৩ রাকাত উইত্র (বহু মত)

(সুপারিশ: আপনি আপনার মাযহাব বা দ্বীনের দিশানির্দেশ অনুযায়ী সুন্নত ও নফল নামাজ আদায় করবেন।)
এরূপ রাকাত তথ্য বিভিন্ন ইসলামিক উৎসে পাওয়া যায়।


🧭 নামাজ আদায়ের নিয়ম ও পদ্ধতি (সাধারণ ধাপ)

প্রত্যেক ফরজ নামাজে নিম্নলিখিত ধাপগুলো পালন করতে হবে — (সাধারণ ছাঁচ, সুন্নত-নর্‍মাল অবস্থা):

  1. নিয়ত (নিয়্যত করা) — অন্তরে উদ্দেশ্য স্থির করা (যেমন: ফজর ফরজ)
  2. তাকবিরে ইহরাম — “আল্লাহু আকবার” বলে নামাজ শুরু
  3. সানা পাঠ — “সুবহানাকাল্লাহুম্মা…” ইত্যাদি
  4. সূরা ফাতিহা — প্রতিটি রাকাতে পাঠ
  5. অন্য সূরা বা কিছু আয়াত — প্রথম দুই রাকাতে
  6. রুকু — “সুবহানা রাব্বিয়াল আযিম” (কমপক্ষে ৩ বার)
  7. উঠা — “সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ” ও “রাব্বানা লাকাল হাম্দ”
  8. সিজদা — “সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা” (প্রাপ্তিমতো)
  9. বসা (সিজদার মাঝখানে) — “রব্বিগ্ফিরলি” ইত্যাদি
  10. দ্বিতীয় সিজদা
  11. পরবর্তী রাকাত (যদি থাকে) পুনরাবৃত্তি
  12. শেষ রাকাতে তাশাহহুদ, দরূদ ও দোয়া
  13. সালাম — ডানে ও বামে “আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ”
  14. নামের পর বন্ধ নামাজের অতিরিক্ত দোয়া ও তাসবিহ (নিচে বিস্তারিত)

🙏 নামাজের পর তাসবিহ ও মোনাজাতের দোয়া (নামাজ শেষে করণীয়)

নামাজের পর কিছু বরকতময় আমল:

  • তাসবিহ, তাহলীল, তাকবির (যেমন “সুবহানাল্লাহ”, “আলহামদুলিল্লাহ”, “আল্লাহু আকবার”, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”)
  • দোয়া মোনাজাত — ব্যক্তিগত সংলাপ আল্লাহর নিকট
  • বিশেষভাবে মোনাজাত যেমন:

    “হে আল্লাহ, আমাকে হেদায়েত দাও, আমার গুনাহ ক্ষমা করো, আমাকে আপনার দয়ার মধ্য দিয়ে প্রবেশ করো”

  • কুরআন থেকে আয়াত পাঠ ও স্মরণ
  • দরূদ পাঠ (যেমন সালাতুল ইব্রাহীমি)

🌟 পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত (কুরআনহাদিসে দলিলসহ)

পাপ ও গুনাহ মোচন:

রাসূল ﷺ বলেছেন:
“যদি তোমাদের কারোর দরজার বাইরে একটি নদী থাকে, এবং সে দিনে পাঁচবার স্নান কর, তাহলে কোনো ময়লা থাকবে কি?”
তারা বলল: “একটুও থাকবে না।”
তিনি বললেন: “এটি পাঁচ নামাজের মতো — আল্লাহ গুনাহ মুছে দেয় তাদের দ্বারা।”
— (সহীহ বুখারি ও মুসলিম)

গুনাহ মাফ হয় নামাজ দ্বারা:

“পাঁচ নামাজ ও এক জুমা থেকে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত (যদি বড় গুনাহ না করা হয়)— তাদের মধ্যে যা কিছু গুনাহ হবে, তা অর্থাৎ গুনাহ মাফ হয়ে যায়।”
— (সহীহ মুসলিম)

জান্নাত প্রবেশের প্রতিশ্রুতি:

হযরত ‘উবাদাহ রাঃ থেকে বর্ণিত:
“আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ওপর পাঁচ নামাজ ফরজ করেছেন। যে তাদের সঙ্গে (সময়মতো, খুশু সহ) থাকবে, তার জন্য একটি প্রতিশ্রুতি — আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।”
— (আবু দাউদ, আল-আলবানি দেয় এটি সহীহ বলে)

 সামাজিক ও আধ্যাত্মিক গুরুত্ব:

  • নামাজ মানুষের আধ্যাত্মিক পথচলা দৃঢ় করে
  • দিনে পাঁচবার ইসলামের আড্ডা ও সংযোগ স্মরণ করায়
  • হৃদয় শান্ত করে, পাপ থেকে বিরত রাখে
  • ব্যক্তিকে সময়মনে রাখতে সহায়তা করে

📝

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ হলো মুসলিম জীবনযাপনের কেন্দ্রবিন্দু। সময়মতো ও খুশু সহ নামাজ আদায় করলে মানুষের আত্মা পরিশুদ্ধ হয়, গুনাহ মুছে যায় এবং আখিরাতে সফলতার পথ সুগম হয়। কুরআন ও হাদীসে ইসলামী নামে ও জবাবদিহিতারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই ইবাদতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।

নিচে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের নিয়ত (নিয়্যত) আরবিবাংলা অনুবাদসহ দেওয়া হলো। নামাজের সময় নিয়ত করা ফরজ নয় তবে খুব গুরুত্বপূর্ণ। নিয়ত মূলত হৃদয়ের ইচ্ছা ও সংকল্প — মুখে উচ্চারণ করা উত্তম, তবে মনে থাকলেই যথেষ্ট।


🕌 ১. ফজরের নামাজের নিয়ত

আরবি:
نَوَيْتُ أَنْ أُصَلِّيَ صَلَاةَ الْفَجْرِ رَكْعَتَيْنِ فَرْضًا لِلّٰهِ تَعَالَى مُتَوَجِّهًا إِلَى الْقِبْلَةِ اَللّٰهُ أَكْبَرُ

বাংলা উচ্চারণ:
নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া সালাতাল ফাজরি রাকআতাইনি ফারদান লিল্লাহি তা’আলা মুতাৱাজ্জিহান ইলাল ক্বিবলাতি, আল্লাহু আকবার।

বাংলা অনুবাদ:
আমি ২ রাকাত ফজরের ফরজ নামাজ কাবার দিকে মুখ করে আল্লাহর জন্য পড়ার নিয়ত করলাম, আল্লাহু আকবার।


🕌 ২. জোহরের নামাজের নিয়ত

আরবি:
نَوَيْتُ أَنْ أُصَلِّيَ صَلَاةَ الظُّهْرِ أَرْبَعَ رَكَعَاتٍ فَرْضًا لِلّٰهِ تَعَالَى مُتَوَجِّهًا إِلَى الْقِبْلَةِ اَللّٰهُ أَكْبَرُ

বাংলা উচ্চারণ:
নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া সালাতায্‌ যুহরি আরবাআ রাকাআতিন ফারদান লিল্লাহি তা’আলা মুতাৱাজ্জিহান ইলাল ক্বিবলাতি, আল্লাহু আকবার।

বাংলা অনুবাদ:
আমি ৪ রাকাত জোহরের ফরজ নামাজ কাবার দিকে মুখ করে আল্লাহর জন্য পড়ার নিয়ত করলাম, আল্লাহু আকবার।


🕌 ৩. আসরের নামাজের নিয়ত

আরবি:
نَوَيْتُ أَنْ أُصَلِّيَ صَلَاةَ الْعَصْرِ أَرْبَعَ رَكَعَاتٍ فَرْضًا لِلّٰهِ تَعَالَى مُتَوَجِّهًا إِلَى الْقِبْلَةِ اَللّٰهُ أَكْبَرُ

বাংলা উচ্চারণ:
নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া সালাতাল আসরি আরবাআ রাকাআতিন ফারদান লিল্লাহি তা’আলা মুতাৱাজ্জিহান ইলাল ক্বিবলাতি, আল্লাহু আকবার।

বাংলা অনুবাদ:
আমি ৪ রাকাত আসরের ফরজ নামাজ কাবার দিকে মুখ করে আল্লাহর জন্য পড়ার নিয়ত করলাম, আল্লাহু আকবার।


🕌 ৪. মাগরিবের নামাজের নিয়ত

আরবি:
نَوَيْتُ أَنْ أُصَلِّيَ صَلَاةَ الْمَغْرِبِ ثَلَاثَ رَكَعَاتٍ فَرْضًا لِلّٰهِ تَعَالَى مُتَوَجِّهًا إِلَى الْقِبْلَةِ اَللّٰهُ أَكْبَرُ

বাংলা উচ্চারণ:
নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া সালাতাল মাগরিবি সালাসা রাকাআতিন ফারদান লিল্লাহি তা’আলা মুতাৱাজ্জিহান ইলাল ক্বিবলাতি, আল্লাহু আকবার।

বাংলা অনুবাদ:
আমি ৩ রাকাত মাগরিবের ফরজ নামাজ কাবার দিকে মুখ করে আল্লাহর জন্য পড়ার নিয়ত করলাম, আল্লাহু আকবার।


🕌 ৫. ইশার নামাজের নিয়ত

আরবি:
نَوَيْتُ أَنْ أُصَلِّيَ صَلَاةَ الْعِشَاءِ أَرْبَعَ رَكَعَاتٍ فَرْضًا لِلّٰهِ تَعَالَى مُتَوَجِّهًا إِلَى الْقِبْلَةِ اَللّٰهُ أَكْبَرُ

বাংলা উচ্চারণ:
নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া সালাতাল ইশাআই আরবাআ রাকাআতিন ফারদান লিল্লাহি তা’আলা মুতাৱাজ্জিহান ইলাল ক্বিবলাতি, আল্লাহু আকবার।

বাংলা অনুবাদ:
আমি ৪ রাকাত ইশার ফরজ নামাজ কাবার দিকে মুখ করে আল্লাহর জন্য পড়ার নিয়ত করলাম, আল্লাহু আকবার।


ℹ️ গুরুত্বপূর্ণ টিপস:

  • মুখে নিয়ত উচ্চারণ না করলেও চলে। আসল বিষয় হলো মন থেকে ইচ্ছা করে নামাজ শুরু করা।

  • সুন্নত, নফল বা বিতর নামাজের জন্যও অনুরূপভাবে নিয়তের শব্দ পরিবর্তন করে পড়া যায়।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

বিস্তারিত লিখুনঃ

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

নামাজের ওয়াক্ত শুরু ও শেষ সময় , তালিকা,নিয়ম ও আমল ,তাসবিহ,মোনাজাতের দোয়া, কত রাকাত, গুরুত্ব ও ফজিলত

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ওয়াক্ত শুরু ও শেষ সময় , তালিকা,নিয়ম ও আমল

আপডেট সময়ঃ ০৫:০১:০৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

নিচে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সম্পর্কে একটি বিস্তৃত ব্যাখ্যা দিচ্ছি — সময়সূচি, রাকাত সংখ্যা, নিয়ম ও আমল, নামাজের পর তাসবিহ ও মোনাজাতের দোয়া, গুরুত্ব ও ফজিলত কুরআনহাদীসের দলিলসহ:


🕌 পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ — পরিচিতি

ইসলামে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ হলো প্রতিদিন পূর্বনির্ধারিত সময়ে আদায় করতে বাধ্য করা ফরজ ইবাদত
কুরআনে আল্লাহ বলেন:

إِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَوْقُوتًا
“নিশ্চয়ই সালাত মুমিনদের উপর নির্ধারিত সময়ে ফরজ করা হয়েছে।” (সূরা আন-নিসা : ১০৩)


⏰ সময়সূচি (শুরু ও শেষ সময়)

নিচে সাধারণভাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময়সূচির ধাপ দেওয়া হলো (স্থান ও ঋতু অনুযায়ী পার্থক্য থাকতে পারে):

নামাজ শুরু হওয়ার সময় শেষ সময় (শেষ সুযোগ)
ফজর সুবহে সাদিক (আলোর রেখা শুরু হওয়া) সূর্যোদয় হওয়া পর্যন্ত
জোহর সূর্য ঢলে যাওয়ার পর সূর্য মধ্য গগনে পৌঁছার আগে (সাউম)
আসর জোহরের সময় শেষ হওয়ার পর সূর্য ঢলে পড়ার আগে
মাগরিব সূর্য অস্ত যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আকাশ থেকে লালিমা শেষ হওয়া পর্যন্ত
ইশা মাগরিবের লালিমা শেষ হওয়ার পর মধ্যরাত পর্যন্ত, বা ওয়াক্ত শেষ হওয়া পর্যন্ত

হাদিসে ঘোষণা আছে:
“যে পাঁচ নামাজ নির্ধারিত সময়ে আদায় করে…” (সহীহ বুখারী – উদাহরণস্বরূপ) — অর্থ যে সময়সূচি পালন করবে, আল্লাহ তার জন্য প্রতিশ্রুতি রাখেন।
এছাড়া, মুসলিম হাদিসে বলা হয়েছে:

“পাঁচ নামাজ এবং এক জুমা থেকে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত … গুনাহ মাফ হয় যদি বড় গুনাহ থেকে বিরত থাকে।”


📐 পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ — রাকাত সংখ্যা

নিচে প্রতিটি নামাজের ফরজ ও সুন্নত (অনুসূপ্র ও সুন্নত-মুয়াক্কাদাহ) রাকাত সংখ্যা:

নামাজ ফরজ রাকাত সুন্নত / নফল রাকাত / অন্যান্য
ফজর ২ রাকাত ফরজ ২ রাকাত সুন্নত (মুয়াক্কাদাহ)
জোহর ৪ রাকাত ফরজ ৪ রাকাত সুন্নত, ২ রাকাত নফল (বছরভেদে)
আসর ৪ রাকাত ফরজ ০ রাকাত সুন্নত (কিছু ফিকহ মতে কিছু সুন্নত)
মাগরিব ৩ রাকাত ফরজ ২ রাকাত সুন্নত, ১ রাকাত নফল
ইশা ৪ রাকাত ফরজ ২ রাকাত সুন্নত, ২ রাকাত নফল, ৩ রাকাত উইত্র (বহু মত)

(সুপারিশ: আপনি আপনার মাযহাব বা দ্বীনের দিশানির্দেশ অনুযায়ী সুন্নত ও নফল নামাজ আদায় করবেন।)
এরূপ রাকাত তথ্য বিভিন্ন ইসলামিক উৎসে পাওয়া যায়।


🧭 নামাজ আদায়ের নিয়ম ও পদ্ধতি (সাধারণ ধাপ)

প্রত্যেক ফরজ নামাজে নিম্নলিখিত ধাপগুলো পালন করতে হবে — (সাধারণ ছাঁচ, সুন্নত-নর্‍মাল অবস্থা):

  1. নিয়ত (নিয়্যত করা) — অন্তরে উদ্দেশ্য স্থির করা (যেমন: ফজর ফরজ)
  2. তাকবিরে ইহরাম — “আল্লাহু আকবার” বলে নামাজ শুরু
  3. সানা পাঠ — “সুবহানাকাল্লাহুম্মা…” ইত্যাদি
  4. সূরা ফাতিহা — প্রতিটি রাকাতে পাঠ
  5. অন্য সূরা বা কিছু আয়াত — প্রথম দুই রাকাতে
  6. রুকু — “সুবহানা রাব্বিয়াল আযিম” (কমপক্ষে ৩ বার)
  7. উঠা — “সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ” ও “রাব্বানা লাকাল হাম্দ”
  8. সিজদা — “সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা” (প্রাপ্তিমতো)
  9. বসা (সিজদার মাঝখানে) — “রব্বিগ্ফিরলি” ইত্যাদি
  10. দ্বিতীয় সিজদা
  11. পরবর্তী রাকাত (যদি থাকে) পুনরাবৃত্তি
  12. শেষ রাকাতে তাশাহহুদ, দরূদ ও দোয়া
  13. সালাম — ডানে ও বামে “আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ”
  14. নামের পর বন্ধ নামাজের অতিরিক্ত দোয়া ও তাসবিহ (নিচে বিস্তারিত)

🙏 নামাজের পর তাসবিহ ও মোনাজাতের দোয়া (নামাজ শেষে করণীয়)

নামাজের পর কিছু বরকতময় আমল:

  • তাসবিহ, তাহলীল, তাকবির (যেমন “সুবহানাল্লাহ”, “আলহামদুলিল্লাহ”, “আল্লাহু আকবার”, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”)
  • দোয়া মোনাজাত — ব্যক্তিগত সংলাপ আল্লাহর নিকট
  • বিশেষভাবে মোনাজাত যেমন:

    “হে আল্লাহ, আমাকে হেদায়েত দাও, আমার গুনাহ ক্ষমা করো, আমাকে আপনার দয়ার মধ্য দিয়ে প্রবেশ করো”

  • কুরআন থেকে আয়াত পাঠ ও স্মরণ
  • দরূদ পাঠ (যেমন সালাতুল ইব্রাহীমি)

🌟 পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত (কুরআনহাদিসে দলিলসহ)

পাপ ও গুনাহ মোচন:

রাসূল ﷺ বলেছেন:
“যদি তোমাদের কারোর দরজার বাইরে একটি নদী থাকে, এবং সে দিনে পাঁচবার স্নান কর, তাহলে কোনো ময়লা থাকবে কি?”
তারা বলল: “একটুও থাকবে না।”
তিনি বললেন: “এটি পাঁচ নামাজের মতো — আল্লাহ গুনাহ মুছে দেয় তাদের দ্বারা।”
— (সহীহ বুখারি ও মুসলিম)

গুনাহ মাফ হয় নামাজ দ্বারা:

“পাঁচ নামাজ ও এক জুমা থেকে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত (যদি বড় গুনাহ না করা হয়)— তাদের মধ্যে যা কিছু গুনাহ হবে, তা অর্থাৎ গুনাহ মাফ হয়ে যায়।”
— (সহীহ মুসলিম)

জান্নাত প্রবেশের প্রতিশ্রুতি:

হযরত ‘উবাদাহ রাঃ থেকে বর্ণিত:
“আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ওপর পাঁচ নামাজ ফরজ করেছেন। যে তাদের সঙ্গে (সময়মতো, খুশু সহ) থাকবে, তার জন্য একটি প্রতিশ্রুতি — আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।”
— (আবু দাউদ, আল-আলবানি দেয় এটি সহীহ বলে)

 সামাজিক ও আধ্যাত্মিক গুরুত্ব:

  • নামাজ মানুষের আধ্যাত্মিক পথচলা দৃঢ় করে
  • দিনে পাঁচবার ইসলামের আড্ডা ও সংযোগ স্মরণ করায়
  • হৃদয় শান্ত করে, পাপ থেকে বিরত রাখে
  • ব্যক্তিকে সময়মনে রাখতে সহায়তা করে

📝

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ হলো মুসলিম জীবনযাপনের কেন্দ্রবিন্দু। সময়মতো ও খুশু সহ নামাজ আদায় করলে মানুষের আত্মা পরিশুদ্ধ হয়, গুনাহ মুছে যায় এবং আখিরাতে সফলতার পথ সুগম হয়। কুরআন ও হাদীসে ইসলামী নামে ও জবাবদিহিতারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই ইবাদতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।

নিচে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের নিয়ত (নিয়্যত) আরবিবাংলা অনুবাদসহ দেওয়া হলো। নামাজের সময় নিয়ত করা ফরজ নয় তবে খুব গুরুত্বপূর্ণ। নিয়ত মূলত হৃদয়ের ইচ্ছা ও সংকল্প — মুখে উচ্চারণ করা উত্তম, তবে মনে থাকলেই যথেষ্ট।


🕌 ১. ফজরের নামাজের নিয়ত

আরবি:
نَوَيْتُ أَنْ أُصَلِّيَ صَلَاةَ الْفَجْرِ رَكْعَتَيْنِ فَرْضًا لِلّٰهِ تَعَالَى مُتَوَجِّهًا إِلَى الْقِبْلَةِ اَللّٰهُ أَكْبَرُ

বাংলা উচ্চারণ:
নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া সালাতাল ফাজরি রাকআতাইনি ফারদান লিল্লাহি তা’আলা মুতাৱাজ্জিহান ইলাল ক্বিবলাতি, আল্লাহু আকবার।

বাংলা অনুবাদ:
আমি ২ রাকাত ফজরের ফরজ নামাজ কাবার দিকে মুখ করে আল্লাহর জন্য পড়ার নিয়ত করলাম, আল্লাহু আকবার।


🕌 ২. জোহরের নামাজের নিয়ত

আরবি:
نَوَيْتُ أَنْ أُصَلِّيَ صَلَاةَ الظُّهْرِ أَرْبَعَ رَكَعَاتٍ فَرْضًا لِلّٰهِ تَعَالَى مُتَوَجِّهًا إِلَى الْقِبْلَةِ اَللّٰهُ أَكْبَرُ

বাংলা উচ্চারণ:
নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া সালাতায্‌ যুহরি আরবাআ রাকাআতিন ফারদান লিল্লাহি তা’আলা মুতাৱাজ্জিহান ইলাল ক্বিবলাতি, আল্লাহু আকবার।

বাংলা অনুবাদ:
আমি ৪ রাকাত জোহরের ফরজ নামাজ কাবার দিকে মুখ করে আল্লাহর জন্য পড়ার নিয়ত করলাম, আল্লাহু আকবার।


🕌 ৩. আসরের নামাজের নিয়ত

আরবি:
نَوَيْتُ أَنْ أُصَلِّيَ صَلَاةَ الْعَصْرِ أَرْبَعَ رَكَعَاتٍ فَرْضًا لِلّٰهِ تَعَالَى مُتَوَجِّهًا إِلَى الْقِبْلَةِ اَللّٰهُ أَكْبَرُ

বাংলা উচ্চারণ:
নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া সালাতাল আসরি আরবাআ রাকাআতিন ফারদান লিল্লাহি তা’আলা মুতাৱাজ্জিহান ইলাল ক্বিবলাতি, আল্লাহু আকবার।

বাংলা অনুবাদ:
আমি ৪ রাকাত আসরের ফরজ নামাজ কাবার দিকে মুখ করে আল্লাহর জন্য পড়ার নিয়ত করলাম, আল্লাহু আকবার।


🕌 ৪. মাগরিবের নামাজের নিয়ত

আরবি:
نَوَيْتُ أَنْ أُصَلِّيَ صَلَاةَ الْمَغْرِبِ ثَلَاثَ رَكَعَاتٍ فَرْضًا لِلّٰهِ تَعَالَى مُتَوَجِّهًا إِلَى الْقِبْلَةِ اَللّٰهُ أَكْبَرُ

বাংলা উচ্চারণ:
নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া সালাতাল মাগরিবি সালাসা রাকাআতিন ফারদান লিল্লাহি তা’আলা মুতাৱাজ্জিহান ইলাল ক্বিবলাতি, আল্লাহু আকবার।

বাংলা অনুবাদ:
আমি ৩ রাকাত মাগরিবের ফরজ নামাজ কাবার দিকে মুখ করে আল্লাহর জন্য পড়ার নিয়ত করলাম, আল্লাহু আকবার।


🕌 ৫. ইশার নামাজের নিয়ত

আরবি:
نَوَيْتُ أَنْ أُصَلِّيَ صَلَاةَ الْعِشَاءِ أَرْبَعَ رَكَعَاتٍ فَرْضًا لِلّٰهِ تَعَالَى مُتَوَجِّهًا إِلَى الْقِبْلَةِ اَللّٰهُ أَكْبَرُ

বাংলা উচ্চারণ:
নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া সালাতাল ইশাআই আরবাআ রাকাআতিন ফারদান লিল্লাহি তা’আলা মুতাৱাজ্জিহান ইলাল ক্বিবলাতি, আল্লাহু আকবার।

বাংলা অনুবাদ:
আমি ৪ রাকাত ইশার ফরজ নামাজ কাবার দিকে মুখ করে আল্লাহর জন্য পড়ার নিয়ত করলাম, আল্লাহু আকবার।


ℹ️ গুরুত্বপূর্ণ টিপস:

  • মুখে নিয়ত উচ্চারণ না করলেও চলে। আসল বিষয় হলো মন থেকে ইচ্ছা করে নামাজ শুরু করা।

  • সুন্নত, নফল বা বিতর নামাজের জন্যও অনুরূপভাবে নিয়তের শব্দ পরিবর্তন করে পড়া যায়।