০৮:১১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫
কুরআন ও হাদিসের আলোকে বিস্তারিত বর্ণনা & ৫০টি বহুল আলোচিত প্রশ্নের উত্তর

নারী ও পুরুষের নামাজ পড়ার সহীহ পদ্ধতি, দোআ ,মাসআলা ও গুরুত্ব

Tareq Jahangir
  • আপডেট সময়ঃ ১২:৫৪:৩৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১ জুন ২০২৫
  • / ১২ বার পড়া হয়েছে।

নারী ও পুরুষের নামাজ পড়ার সহীহ পদ্ধতি, দোআ ও মাসআলা — কুরআন-হাদীসের আরবি দলিলসহ, সাথে রয়েছে ৫০টি বহুল আলোচিত অজানা প্রশ্নোত্তর

নামাজ বা সালাত হলো ইসলামের পাঁচটি ফরজ স্তম্ভের একটি এবং প্রত্যেক মুসলমানের জন্য আবশ্যিক ইবাদত। আল্লাহ তাআলা কুরআনে নামাজ ফরজ করে দিয়েছেন এবং বহু হাদিসে এর গুরুত্ব ও রূপকার ব্যাখ্যা করেছেন।


নামাজের ফরজীয়তা ও গুরুত্ব

কুরআন থেকে প্রমাণ:

“নিশ্চয়ই নামাজ মুমিনদের উপর নির্ধারিত সময়মতো ফরজ”
— সূরা আন-নিসা (৪:১০৩)

হাদিসে এসেছে:

“ইসলাম পাঁচ স্তম্ভের ওপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছে — আল্লাহর ইবাদত এবং কোনো কিছু তার সাথে শরিক করা বাদ দিয়ে, নামাজ পড়া, যাকাত দেওয়া, হজ করা এবং রমজান মাসে রোজা রাখা।”
— সহিহ আল-বুখারী ও মুসলিম


নামাজের উদ্দেশ্য ও উপকারিতা

  • আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন
    নামাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যম। এটা ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে তওবা, শুকরিয়া ও দোয়ার সুযোগ দেয়।

  • আত্মা পরিশোধ
    নিয়মিত নামাজ আত্মাকে পবিত্র করে, গুনাহ থেকে দূরে রাখে এবং মনোবল বাড়ায়।

  • আচরণ ও জীবনপদ্ধতি শৃঙ্খলা করা
    নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া সময়ানুবর্তিতা ও আত্মশৃঙ্খলা শেখায়।

  • সামাজিক ঐক্য
    জমাত নামাজ মুসলমানদের মধ্যে একতা ও ভাইত্ব গড়ে তোলে।


নামাজের গুরুত্বপূর্ণ আদব ও পদ্ধতি

১. নিয়্যাত (ইচ্ছা করা)
নামাজ শুরু করার আগে মনে মনে নামাজ পড়ার উদ্দেশ্য স্থির করা আবশ্যক।

২. তাকবীরুত-ইহরাম
“আল্লাহু আকবার” বলেই নামাজের শুরু।

৩. কিয়াম (দাড়ানো)
সূরা আল ফাতিহা এবং অন্য কোনো কুরআনিক আয়াত বা সূরা পড়া।

৪. রুকু (নমন)
কাঁধের সমানভাবে নমিয়ে “সুবহানা রাব্বিয়াল আজীম” বলা।

৫. কিয়াম থেকে উঠে এসে
“সামিয়া আল্লাহু লিমান হামিদাহ” ও “রব্বানা লাকা আল হামদ” পড়া।

৬. সুজুদ (সিজদা)
মাটি স্পর্শ করে “সুবহানা রাব্বিয়াল আ‘লা” বলা।

৭. দুই সিজদার মাঝের বসা
দোয়া পাঠ করা যেমন “রাব্বিগফির লি…”

৮. তাহিয়াত (বসা)
“আত্তাহিয়াতুলিল্লাহ…”

৯. দরুদ শরীফ পাঠ
দরূদ ইব্রাহিমি পড়া।

১০. তাসলীম
ডান ও বাম দিকে সালাম দিয়ে নামাজ শেষ।


নামাজের সময় ও ওয়াক্ত

  • ফজর: সূর্যোদয়ের আগের সময়

  • যোহর: সূর্য ঠিক মধ্যাহ্নে আসার পর

  • আসর: যোহরের পর থেকে সূর্য ডোবে তার আগে

  • মাগরিব: সূর্য ডোবার পরে

  • ইশা: সন্ধ্যার পরে


হাদিসের আলোকে নামাজের ফজিলত

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:

“যে ব্যক্তি নির্দিষ্ট পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ঠিকমতো আদায় করে, তার জন্য জান্নাত ফরজ হয়ে যায়।”
— সহিহ বুখারি


রেফারেন্স:

  • কুরআন: সূরা আন-নিসা (৪:১০৩), সূরা মুমিনুন (২৩:১-২)

  • সহিহ বুখারী, হাদিস ٦٣٧

  • সহিহ মুসলিম, হাদিস ৮৩৩

🕌 নামাজের গুরুত্ব: কুরআন ও হাদীসের আলোকে

﴿إِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَّوْقُوتًا﴾
— (সূরা নিসা: ১০৩)
“নিশ্চয়ই নামাজ ঈমানদারদের উপর নির্ধারিত সময়ে ফরজ করা হয়েছে।”

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
«الصلاة عماد الدين، من أقامها فقد أقام الدين»
“নামাজ হচ্ছে দ্বীনের খুঁটি। যে তা কায়েম করলো, সে দ্বীন কায়েম করলো।”
(হাদীস: তাবারানী, হাকিম)

✅ পুরুষের নামাজের সহীহ পদ্ধতি

১. তাকবীরে তাহরীমা:

الله أكبر বলে হাত উঠিয়ে কানের লতি বরাবর পর্যন্ত তুলে, বুকে বা নাভির উপর হাত রাখা।

২. কিরাআত:

সুরা ফাতিহা ও অন্য একটি সুরা পড়া।

৩. রুকু:

পিঠ সমান রেখে, উভয় হাত হাঁটুতে রেখে রুকুতে যাওয়া।
سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ বলা।৩/৫/৭ বার পড়া সুন্নাত

৪. সিজদা:

মাটিতে সাত অঙ্গ স্পর্শ করে সিজদা করা।
سُبْحَانَ رَبِّيَ الأَعْلَى বলা।৩/৫/৭ বার পড়া সুন্নাত

৫. তাশাহহুদ:

التحيات لله… পড়া। তাশাহহুদের সময় ডান হাতের শাহাদাত আঙ্গুল তুলে ইশারা করা।


✅ নারীর নামাজের সহীহ পদ্ধতি

নারীর নামাজে কিছু ভিন্নতা রয়েছে:

▪ তাকবীরে তাহরীমা:

হাত বুকের উপর উঠিয়ে রাখা (পুরুষের মতো কান পর্যন্ত নয়)।

▪ রুকু:

নারী রুকুতে কিছুটা নত হয়ে পিঠ বেশি বাঁকান না। হাত হাঁটুর উপর হালকাভাবে রাখবেন।

▪ সিজদা:

পেট ও উরু সংযুক্ত থাকবে, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গুটিয়ে রাখা।

▪ বসা:

নারী ডান পায়ের উপর বাম পা রেখে একদিকে বসবেন (তাওয়াররুক)।
(সূত্র: আবু দাউদ, বাইহাকি)

অন্যান্য বাকি তাসবীহ তাহলীল গুলো পুরুষের মতোই পাঠ করতে হবে।


📿 🕌 নামাজের গুরুত্বপূর্ণ দোআসমূহ


১. দোয়া-ই ইস্তিফতাহ (নামাজ শুরু করার সময় পড়া)

নামাজ শুরু করে “আল্লাহু আকবার” বলার পরে পড়া হয়।

আরবি:
سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ، وَتَبَارَكَ اسْمُكَ، وَتَعَالَى جَدُّكَ، وَلَا إِلَهَ غَيْرُكَ

বাংলা অর্থ:
হে আল্লাহ! তুমি পরিপূর্ণ পবিত্র, তোমাকে প্রশংসা জানাই, তোমার নাম বরকতময়, তোমার মহিমা অতুলনীয় এবং তোমার বাইরে কোনো ইলাহ (পরমেশ্বর) নেই।


২. শয়তানের ফিতনা থেকে বাঁচার জন্য দোয়া (কুরআন তেলাওয়াতের আগে)

আরবি:
أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ

বাংলা অর্থ:
আমি আল্লাহর আশ্রয় চাই সন্ত্রাসকারী শয়তানের থেকে।


৩. সূরা ফাতিহা (নামাজের প্রত্যেক রাকআতে পড়া আবশ্যক)

আরবি:
الْـحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ … (সম্পূর্ণ সূরা)

বাংলা অর্থ:
সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি সকল জগতের পালনকর্তা…


৪. রুকুতে দোয়া

আরবি:
سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ

বাংলা অর্থ:
পবিত্র আমার মহান প্রতিপালক।৩/৫/৭ বার পড়া সুন্নাত


৫. রুকু থেকে উঠে দোয়া

আরবি:
سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ
رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ

বাংলা অর্থ:
আল্লাহ তার প্রশংসা করা ব্যক্তির কন্ঠ শুনেন।
হে আমাদের রব, সব প্রশংসা শুধুমাত্র তোমার জন্য।


৬. সিজদায় দোয়া

আরবি:
سُبْحَانَ رَبِّيَ الأَعْلَى

বাংলা অর্থ:
পবিত্র আমার সর্বোচ্চ প্রতিপালক।৩/৫/৭ বার পড়া সুন্নাত


৭. দুই সিজদার মাঝের দোয়া

আরবি:
رَبِّ اغْفِرْ لِي، وَارْحَمْنِي، وَاجْبُرْنِي، وَارْفَعْنِي، وَاهْدِنِي، وَعَافِنِي، وَارْزُقْنِي

বাংলা অর্থ:
হে আমার রব! আমাকে ক্ষমা করো, আমাকে দয়া করো, আমার ত্রুটি মিটিয়ে দাও, আমাকে উচ্চ স্থান দাও, আমাকে সঠিক পথ দেখাও, আমাকে সুস্থতা দাও, আমাকে রিযিক দাও। পড়া সুন্নাত


৮. তাহিয়াতের দোয়া (শেষে পড়া হয়)

আরবি:
التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ … (সম্পূর্ণ দোয়া)

বাংলা অর্থ:
সমস্ত সালাম, দোয়া এবং সৎকাজ আল্লাহর জন্য।


৯. দরূদ ইব্রাহীমি (নামাজের শেষের দরুদ)

আরবি:
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ … (সম্পূর্ণ দরুদ)

বাংলা অর্থ:
হে আল্লাহ! মুহাম্মদ ও তার পরিবারে বরকত বর্ষণ করো।


১০. নামাজ শেষে শেষ দোয়া

আরবি:
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ … (সম্পূর্ণ দোয়া)

বাংলা অর্থ:
হে আল্লাহ! আমি জাহান্নামের শাস্তি থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই..


⚖️ নামাজের মাসআলা ও মাসায়েল

১. নামাজের সময় ভুলে কিছু পড়া গেলে সাহু সিজদা করতে হবে।
২. জামাতে পুরুষদের সামনে নারীদের দাঁড়ানো জায়েজ নয়।
৩. রুকু বা সিজদা ভুলে গেলে নামাজ পুনরায় আদায় করতে হবে।

নামাজ ভঙ্গের কারণ

নামাজ (সালাত) ইসলামের অন্যতম প্রধান ইবাদত। এটি অত্যন্ত সংবেদনশীল একটি ইবাদত, যা নির্দিষ্ট নিয়ম-নীতি অনুসরণ করে সম্পন্ন করতে হয়। কিছু কাজ বা অবস্থা নামাজকে বাতিল করে দেয়, যেগুলো জানা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জরুরি।

নিচে কুরআন ও হাদীসের আলোকে নামাজ ভঙ্গের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ বর্ণনা করা হলো:


১. কথা বলা (আলাপচারিতা করা)

নামাজের সময় ইচ্ছাকৃতভাবে কথা বললে নামাজ বাতিল হয়ে যায়।

📖 হাদীস:
رسول الله ﷺ বলেছেন,
“নিশ্চয়ই এই নামাজ মানুষের কথা বলার জন্য নয়…”
— (সহিহ মুসলিম: ৫৩৮)


২. হাসাহাসি করা

নামাজে উচ্চ আওয়াজে হাসলে নামাজ ভেঙে যায়। নিঃশব্দে হেসেও যদি গা কাঁপে তবে সতর্ক হওয়া উচিত।


৩. অযু ভেঙে গেলে

নামাজ অবস্থায় যদি কেউ অযু ভঙ্গকারী কাজ (যেমন পেশাব-পায়খানা, গ্যাস নির্গমন ইত্যাদি) করে ফেলেন, তাহলে নামাজ ভেঙে যায়।

📖 কুরআন:
“হে মুমিনগণ, যখন তোমরা নামাজে দাঁড়াতে চাও, তখন তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত ধুয়ে নাও…”
— সূরা আল-মায়েদা: ৬


৪. কিবলার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া

ইচ্ছাকৃতভাবে কিবলা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে নামাজ ভেঙে যায়।


৫. বড় ধরনের নড়াচড়া করা

নামাজে তিনবার বা তার বেশি অপ্রয়োজনীয় চলাফেরা নামাজ বাতিল করে দিতে পারে। উদাহরণ: মোবাইল দেখা, কাঁধ ঘুরিয়ে তাকানো।


৬. শরীরের কোনো অংশ সম্পূর্ণরূপে অনাবৃত হওয়া

যদি নামাজরত অবস্থায় শরীরের এমন কোনো অংশ প্রকাশ পায় যা ছাওয়া ফরজ, তবে নামাজ ভেঙে যাবে। যেমন: নারীদের মাথা বা পুরুষদের নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত এলাকা।


৭. কান্না বা শব্দ করে আহাজারি করা

শব্দ করে কাঁদলে অথবা ব্যথার আওয়াজ (আহ্, উফ্) উচ্চারিত হলে নামাজ ভেঙে যায়। তবে আল্লাহর ভয়ে কাঁদলে তা ব্যতিক্রম।


৮. খাবার চিবানো বা খাওয়া

নামাজে চিবানো, গিলে ফেলা, খাওয়া বা পান করা নামাজকে বাতিল করে দেয়।


৯. সালামের আগে ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ ভঙ্গের ইচ্ছা

সালাম ফেরানোর আগেই যদি কেউ মনে মনে নামাজ ছেড়ে দেওয়ার ইচ্ছা করে ফেলে, তবে নামাজ বাতিল।


১০. কোন স্তব্ধতায় দীর্ঘক্ষণ চুপ থাকা

যদি কেউ রুকনসমূহ ভুলে যায় এবং দীর্ঘ সময় কোনো কিরাত বা রুকন না পড়ে চুপ থাকে, তবে নামাজ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।


❓ ৫০টি বহুল আলোচিত প্রশ্ন ও উত্তর

🔹 নামাজ পড়ার নিয়ম নিয়ে প্রশ্ন

১. পুরুষ ও নারীর নামাজে ভিন্নতা কেন?
— হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নারীদের শরীর রক্ষার্থে কিছু ভিন্নতা রয়েছে।
(আবু দাউদ, বাইহাকি)

২. নারীর কণ্ঠে কিরাআত কি জায়েজ?
— একাকী হলে হালকাভাবে পড়তে পারেন, জামাতে না।

৩. তাকবীরের সময় হাত কোথায় তুলতে হবে?
— পুরুষদের কানের লতি বরাবর, নারীদের কাঁধ পর্যন্ত।

৪. নারী কি ইমামতি করতে পারবে?
— কেবল নারীদের জামাতে ইমাম হতে পারবে।

৫. জামাতে নারীর অংশগ্রহণ?
— বৈধ, তবে পুরুষদের পেছনে।

৬. মাহরাম ছাড়া নামাজে যাওয়া কি বৈধ?
— না, নিরাপদ ও অনুমতিসাপেক্ষে যাওয়া উত্তম।

৭. হ্যান্ডব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে নামাজ পড়া?
— পড়া জায়েজ, তবে ব্যাঘাত না ঘটে।

৮. পুরুষ কি হাত বুকের উপর বাঁধবে?
— মতভেদ রয়েছে, অধিকাংশ হাদীসে বুকে বলা হয়েছে।

৯. হাত খোলা রেখে নামাজ পড়া কি সুন্নত?
— কিছু সালাফ এটি করেছেন, তবে অধিকাংশ উলামা বেঁধে পড়ার পক্ষে।

১০. চোখ বন্ধ রেখে নামাজ পড়া?
— না, চোখ খোলা রাখা সুন্নত।

🔹 শুদ্ধতা ও নিয়ত সংক্রান্ত প্রশ্ন

১১. ওযু ছাড়া নামাজ?
— বাতিল।

১২. জানাবাত অবস্থায় নামাজ?
— হারাম, আগে গোসল করতে হবে।

১৩. শুধু ইচ্ছা করলেই কি নামাজ শুরু হয়?
— না, নিয়ত করতে হবে।

১৪. কিবলা ভুল হলে নামাজ?
— জানার পর ঠিক করলে বৈধ, ইচ্ছাকৃত হলে বাতিল।

১৫. ফজরের আজান চলাকালীন খাওয়া চলবে কি?
— না, আজান শুরু হলে রোযা শুরু।

🔹 সেজদাহ ও সাহু সিজদা সংক্রান্ত প্রশ্ন

১৬. সাহু সিজদা কিভাবে করতে হয়?
— তাশাহহুদের পর দু’টি সিজদা করে সালাম।

১৭. ভুলে রুকু বা সিজদা বেশি হলে?
— সাহু সিজদা করা আবশ্যক।

১৮. কিরাআত ভুল হলে সাহু সিজদা?
— হ্যাঁ, ভুল সংশোধন না করলে।

১৯. সাহু সিজদা ভুলে গেলে নামাজ?
— পুনরায় পড়তে হবে।

২০. সিজদার মধ্যে কথা বলা হলে?
— নামাজ ভেঙে যাবে।

২১. রুকুতে দোয়া বাড়িয়ে পড়া যাবে কি?
— হ্যাঁ, তবে রাসূল ﷺ যেসব দোআ শিখিয়েছেন, সেগুলোর সীমার মধ্যে হওয়া উত্তম। (মুসলিম)

২২. মহিলারা কি জোরে কিরাআত পড়বে?
— না, একা নামাজ হলেও আস্তে পড়বে। পুরুষদের মত জোরে কিরাআত পড়া মহিলার জন্য নয়। (আল-মুগনী)

২৩. নামাজে মোবাইল বাজলে কী করবো?
— তাড়াতাড়ি সাইলেন্ট করে ফেলা উচিত, এতে নামাজ নষ্ট হয় না।

২৪. মহিলাদের জন্য পা খোলা রেখে নামাজ পড়া কি জায়েজ?
— না, পর্দা রক্ষা করে সম্পূর্ণ শরীর আবৃত করে নামাজ পড়তে হবে। (আবু দাউদ)

২৫. পুরুষ কি কাঁধে কাপড় তুলে নামাজ পড়তে পারবে?
— না, দুই কাঁধ ঢাকা থাকা নামাজের জন্য আবশ্যক। (বুখারী)

২৬. মহিলারা মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়তে পারবে?
— হ্যাঁ, তবে ঘরে পড়া উত্তম। (আবু দাউদ)

২৭. কাঁদতে কাঁদতে নামাজ পড়া যাবে কি?
— হ্যাঁ, যদি তা ইখলাসের কারণে হয় এবং শব্দে রূপ না নেয়।

২৮. নামাজের সময় কান্নার শব্দে নামাজ ভেঙে যাবে?
— না, যদি কথার মত পরিষ্কার শব্দ না হয়।

২৯. ইমামের পেছনে সূরা ফাতিহা পড়তে হবে কি?
— হ্যাঁ, নিঃশব্দ সালাতে পড়া ওয়াজিব। (বুখারী)

৩০. নামাজে শরীর একটু নড়াচড়া করলে হবে?
— হ্যাঁ, একান্ত প্রয়োজন হলে অল্প নড়াচড়া জায়েজ।

৩১. মহিলা কি নিজেই ইকামত দিতে পারবে?
— না, এটি পুরুষদের দায়িত্ব। নারীদের ইকামতের দরকার নেই।

৩২. শিশুকে কোলে নিয়ে নামাজ পড়া যাবে?
— হ্যাঁ, রাসূল ﷺ নিজে নাতিকে কোলে নিয়ে নামাজ পড়েছেন। (বুখারী)

৩৩. জামাতের নামাজে দেরি হলে কী করবো?
— যতটুকু পেয়েছেন ইমামের সাথে আদায় করুন, বাকি একা পূর্ণ করুন।

৩৪. পুরুষরা জামাতে দাঁড়ানোর সময় কিভাবে কাঁধ মিলাবে?
— একসাথে কাঁধ ও গোড়ালি মিলিয়ে কাতার তৈরি করতে হবে।

৩৫. মহিলাদের জামাতে কি কাতার তৈরি করতে হবে?
— হ্যাঁ, তবে পুরুষদের মত ঠিক সমান্তরাল হওয়া জরুরি নয়।

৩৬. নামাজে ঘুমিয়ে পড়লে?
— নামাজ বাতিল হবে, ওযু পুনরায় করতে হবে।

৩৭. ইমামের ভুল ধরিয়ে দেওয়া কি জায়েজ?
— হ্যাঁ, পুরুষ হলে “সুবহানাল্লাহ”, মহিলা হলে “তাসফিক” (তালি) দিবে। (বুখারী)

৩৮. নামাজে চুল খোলা থাকলে কি হবে?
— নামাজ বাতিল হবে, মহিলার মাথা আবৃত না থাকলে নামাজ সহীহ হয় না।

৩৯. পায়ের আঙ্গুল কি সিজদায় রাখা জরুরি?
— হ্যাঁ, পায়ের আঙ্গুল মাটিতে লাগানো আবশ্যক। (আবু দাউদ)

৪০. কাপড়ে নাপাক লাগলে নামাজ হবে কি?
— না, আগে কাপড় পরিষ্কার করতে হবে।

৪১. নামাজে কানে হেডফোন বা ইয়ারফোন থাকলে?
— জায়েজ নয়, নামাজে কোনো মনোযোগ না থাকলে বাতিল।

৪২. দাঁড়ানো অবস্থায় কুরআন হাতে ধরে নামাজ পড়া যাবে কি?
— সুন্নত বা নফল নামাজে জায়েজ, ফরজে নয়।

৪৩. ছেলেরা কি গেঞ্জি পরে নামাজ পড়তে পারবে?
— যদি কাঁধ ঢাকা থাকে এবং শরীর আবৃত থাকে, তবে জায়েজ।

৪৪. মেয়েরা কি মোজা ছাড়া নামাজ পড়তে পারবে?
— না, পায়ের চামড়া দেখা না যাওয়ার শর্তে পড়া উচিত।

৪৫. নামাজে কাপড় সামলানো কি নিষিদ্ধ?
— হ্যাঁ, অপ্রয়োজনীয়ভাবে কাপড় গুটানো নিষিদ্ধ। (বুখারী)

৪৬. নামাজে ঘড়ি দেখা যাবে কি?
— না, ইচ্ছাকৃতভাবে দুনিয়াবী চিন্তা ও কার্যক্রম নামাজে নিষেধ।

৪৭. তিলাওয়াতের সিজদা ভুলে গেলে কি করবো?
— স্মরণ হলে তখনই আদায় করে নিতে হবে।

৪৮. মহিলারা জামাতে উচ্চ স্বরে কিরাআত পড়তে পারবে কি?
— না, নীচু স্বরে নিজে পড়বে।

৪৯. নামাজের মধ্যে মোবাইলে কুরআন দেখে পড়া যাবে কি?
— নফল নামাজে পারলেও মনোযোগের ক্ষতি হয়, তাই না করাই উত্তম।

৫০. নামাজে কাশি দিলে কি হবে?
— যদি তা কৌশলে হয়, তবে গুনাহ, আর স্বাভাবিক কাশি নামাজ ভঙ্গ করে না।


পুরুষ ও নারীর নামাজের পদ্ধতি শরিয়তের নির্দিষ্ট নিয়মে চলে। দোআ, তাসবীহ ও মাসায়েল বুঝে নামাজ আদায় করলে ইবাদতের পূর্ণতা অর্জন হয়। হাদীসের ভাষ্য অনুযায়ী,

«صلوا كما رأيتموني أصلي»
— “তোমরা আমাকে যেভাবে নামাজ পড়তে দেখো, সেভাবেই নামাজ পড়ো।”
(বুখারী: ৬৩১)

নিউজটি শেয়ার করুন

বিস্তারিত লিখুনঃ

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

কুরআন ও হাদিসের আলোকে বিস্তারিত বর্ণনা & ৫০টি বহুল আলোচিত প্রশ্নের উত্তর

নারী ও পুরুষের নামাজ পড়ার সহীহ পদ্ধতি, দোআ ,মাসআলা ও গুরুত্ব

আপডেট সময়ঃ ১২:৫৪:৩৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১ জুন ২০২৫

নামাজ বা সালাত হলো ইসলামের পাঁচটি ফরজ স্তম্ভের একটি এবং প্রত্যেক মুসলমানের জন্য আবশ্যিক ইবাদত। আল্লাহ তাআলা কুরআনে নামাজ ফরজ করে দিয়েছেন এবং বহু হাদিসে এর গুরুত্ব ও রূপকার ব্যাখ্যা করেছেন।


নামাজের ফরজীয়তা ও গুরুত্ব

কুরআন থেকে প্রমাণ:

“নিশ্চয়ই নামাজ মুমিনদের উপর নির্ধারিত সময়মতো ফরজ”
— সূরা আন-নিসা (৪:১০৩)

হাদিসে এসেছে:

“ইসলাম পাঁচ স্তম্ভের ওপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছে — আল্লাহর ইবাদত এবং কোনো কিছু তার সাথে শরিক করা বাদ দিয়ে, নামাজ পড়া, যাকাত দেওয়া, হজ করা এবং রমজান মাসে রোজা রাখা।”
— সহিহ আল-বুখারী ও মুসলিম


নামাজের উদ্দেশ্য ও উপকারিতা

  • আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন
    নামাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যম। এটা ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে তওবা, শুকরিয়া ও দোয়ার সুযোগ দেয়।

  • আত্মা পরিশোধ
    নিয়মিত নামাজ আত্মাকে পবিত্র করে, গুনাহ থেকে দূরে রাখে এবং মনোবল বাড়ায়।

  • আচরণ ও জীবনপদ্ধতি শৃঙ্খলা করা
    নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া সময়ানুবর্তিতা ও আত্মশৃঙ্খলা শেখায়।

  • সামাজিক ঐক্য
    জমাত নামাজ মুসলমানদের মধ্যে একতা ও ভাইত্ব গড়ে তোলে।


নামাজের গুরুত্বপূর্ণ আদব ও পদ্ধতি

১. নিয়্যাত (ইচ্ছা করা)
নামাজ শুরু করার আগে মনে মনে নামাজ পড়ার উদ্দেশ্য স্থির করা আবশ্যক।

২. তাকবীরুত-ইহরাম
“আল্লাহু আকবার” বলেই নামাজের শুরু।

৩. কিয়াম (দাড়ানো)
সূরা আল ফাতিহা এবং অন্য কোনো কুরআনিক আয়াত বা সূরা পড়া।

৪. রুকু (নমন)
কাঁধের সমানভাবে নমিয়ে “সুবহানা রাব্বিয়াল আজীম” বলা।

৫. কিয়াম থেকে উঠে এসে
“সামিয়া আল্লাহু লিমান হামিদাহ” ও “রব্বানা লাকা আল হামদ” পড়া।

৬. সুজুদ (সিজদা)
মাটি স্পর্শ করে “সুবহানা রাব্বিয়াল আ‘লা” বলা।

৭. দুই সিজদার মাঝের বসা
দোয়া পাঠ করা যেমন “রাব্বিগফির লি…”

৮. তাহিয়াত (বসা)
“আত্তাহিয়াতুলিল্লাহ…”

৯. দরুদ শরীফ পাঠ
দরূদ ইব্রাহিমি পড়া।

১০. তাসলীম
ডান ও বাম দিকে সালাম দিয়ে নামাজ শেষ।


নামাজের সময় ও ওয়াক্ত

  • ফজর: সূর্যোদয়ের আগের সময়

  • যোহর: সূর্য ঠিক মধ্যাহ্নে আসার পর

  • আসর: যোহরের পর থেকে সূর্য ডোবে তার আগে

  • মাগরিব: সূর্য ডোবার পরে

  • ইশা: সন্ধ্যার পরে


হাদিসের আলোকে নামাজের ফজিলত

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:

“যে ব্যক্তি নির্দিষ্ট পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ঠিকমতো আদায় করে, তার জন্য জান্নাত ফরজ হয়ে যায়।”
— সহিহ বুখারি


রেফারেন্স:

  • কুরআন: সূরা আন-নিসা (৪:১০৩), সূরা মুমিনুন (২৩:১-২)

  • সহিহ বুখারী, হাদিস ٦٣٧

  • সহিহ মুসলিম, হাদিস ৮৩৩

🕌 নামাজের গুরুত্ব: কুরআন ও হাদীসের আলোকে

﴿إِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَّوْقُوتًا﴾
— (সূরা নিসা: ১০৩)
“নিশ্চয়ই নামাজ ঈমানদারদের উপর নির্ধারিত সময়ে ফরজ করা হয়েছে।”

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
«الصلاة عماد الدين، من أقامها فقد أقام الدين»
“নামাজ হচ্ছে দ্বীনের খুঁটি। যে তা কায়েম করলো, সে দ্বীন কায়েম করলো।”
(হাদীস: তাবারানী, হাকিম)

✅ পুরুষের নামাজের সহীহ পদ্ধতি

১. তাকবীরে তাহরীমা:

الله أكبر বলে হাত উঠিয়ে কানের লতি বরাবর পর্যন্ত তুলে, বুকে বা নাভির উপর হাত রাখা।

২. কিরাআত:

সুরা ফাতিহা ও অন্য একটি সুরা পড়া।

৩. রুকু:

পিঠ সমান রেখে, উভয় হাত হাঁটুতে রেখে রুকুতে যাওয়া।
سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ বলা।৩/৫/৭ বার পড়া সুন্নাত

৪. সিজদা:

মাটিতে সাত অঙ্গ স্পর্শ করে সিজদা করা।
سُبْحَانَ رَبِّيَ الأَعْلَى বলা।৩/৫/৭ বার পড়া সুন্নাত

৫. তাশাহহুদ:

التحيات لله… পড়া। তাশাহহুদের সময় ডান হাতের শাহাদাত আঙ্গুল তুলে ইশারা করা।


✅ নারীর নামাজের সহীহ পদ্ধতি

নারীর নামাজে কিছু ভিন্নতা রয়েছে:

▪ তাকবীরে তাহরীমা:

হাত বুকের উপর উঠিয়ে রাখা (পুরুষের মতো কান পর্যন্ত নয়)।

▪ রুকু:

নারী রুকুতে কিছুটা নত হয়ে পিঠ বেশি বাঁকান না। হাত হাঁটুর উপর হালকাভাবে রাখবেন।

▪ সিজদা:

পেট ও উরু সংযুক্ত থাকবে, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গুটিয়ে রাখা।

▪ বসা:

নারী ডান পায়ের উপর বাম পা রেখে একদিকে বসবেন (তাওয়াররুক)।
(সূত্র: আবু দাউদ, বাইহাকি)

অন্যান্য বাকি তাসবীহ তাহলীল গুলো পুরুষের মতোই পাঠ করতে হবে।


📿 🕌 নামাজের গুরুত্বপূর্ণ দোআসমূহ


১. দোয়া-ই ইস্তিফতাহ (নামাজ শুরু করার সময় পড়া)

নামাজ শুরু করে “আল্লাহু আকবার” বলার পরে পড়া হয়।

আরবি:
سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ، وَتَبَارَكَ اسْمُكَ، وَتَعَالَى جَدُّكَ، وَلَا إِلَهَ غَيْرُكَ

বাংলা অর্থ:
হে আল্লাহ! তুমি পরিপূর্ণ পবিত্র, তোমাকে প্রশংসা জানাই, তোমার নাম বরকতময়, তোমার মহিমা অতুলনীয় এবং তোমার বাইরে কোনো ইলাহ (পরমেশ্বর) নেই।


২. শয়তানের ফিতনা থেকে বাঁচার জন্য দোয়া (কুরআন তেলাওয়াতের আগে)

আরবি:
أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ

বাংলা অর্থ:
আমি আল্লাহর আশ্রয় চাই সন্ত্রাসকারী শয়তানের থেকে।


৩. সূরা ফাতিহা (নামাজের প্রত্যেক রাকআতে পড়া আবশ্যক)

আরবি:
الْـحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ … (সম্পূর্ণ সূরা)

বাংলা অর্থ:
সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি সকল জগতের পালনকর্তা…


৪. রুকুতে দোয়া

আরবি:
سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ

বাংলা অর্থ:
পবিত্র আমার মহান প্রতিপালক।৩/৫/৭ বার পড়া সুন্নাত


৫. রুকু থেকে উঠে দোয়া

আরবি:
سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ
رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ

বাংলা অর্থ:
আল্লাহ তার প্রশংসা করা ব্যক্তির কন্ঠ শুনেন।
হে আমাদের রব, সব প্রশংসা শুধুমাত্র তোমার জন্য।


৬. সিজদায় দোয়া

আরবি:
سُبْحَانَ رَبِّيَ الأَعْلَى

বাংলা অর্থ:
পবিত্র আমার সর্বোচ্চ প্রতিপালক।৩/৫/৭ বার পড়া সুন্নাত


৭. দুই সিজদার মাঝের দোয়া

আরবি:
رَبِّ اغْفِرْ لِي، وَارْحَمْنِي، وَاجْبُرْنِي، وَارْفَعْنِي، وَاهْدِنِي، وَعَافِنِي، وَارْزُقْنِي

বাংলা অর্থ:
হে আমার রব! আমাকে ক্ষমা করো, আমাকে দয়া করো, আমার ত্রুটি মিটিয়ে দাও, আমাকে উচ্চ স্থান দাও, আমাকে সঠিক পথ দেখাও, আমাকে সুস্থতা দাও, আমাকে রিযিক দাও। পড়া সুন্নাত


৮. তাহিয়াতের দোয়া (শেষে পড়া হয়)

আরবি:
التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ … (সম্পূর্ণ দোয়া)

বাংলা অর্থ:
সমস্ত সালাম, দোয়া এবং সৎকাজ আল্লাহর জন্য।


৯. দরূদ ইব্রাহীমি (নামাজের শেষের দরুদ)

আরবি:
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ … (সম্পূর্ণ দরুদ)

বাংলা অর্থ:
হে আল্লাহ! মুহাম্মদ ও তার পরিবারে বরকত বর্ষণ করো।


১০. নামাজ শেষে শেষ দোয়া

আরবি:
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ … (সম্পূর্ণ দোয়া)

বাংলা অর্থ:
হে আল্লাহ! আমি জাহান্নামের শাস্তি থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই..


⚖️ নামাজের মাসআলা ও মাসায়েল

১. নামাজের সময় ভুলে কিছু পড়া গেলে সাহু সিজদা করতে হবে।
২. জামাতে পুরুষদের সামনে নারীদের দাঁড়ানো জায়েজ নয়।
৩. রুকু বা সিজদা ভুলে গেলে নামাজ পুনরায় আদায় করতে হবে।

নামাজ ভঙ্গের কারণ

নামাজ (সালাত) ইসলামের অন্যতম প্রধান ইবাদত। এটি অত্যন্ত সংবেদনশীল একটি ইবাদত, যা নির্দিষ্ট নিয়ম-নীতি অনুসরণ করে সম্পন্ন করতে হয়। কিছু কাজ বা অবস্থা নামাজকে বাতিল করে দেয়, যেগুলো জানা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জরুরি।

নিচে কুরআন ও হাদীসের আলোকে নামাজ ভঙ্গের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ বর্ণনা করা হলো:


১. কথা বলা (আলাপচারিতা করা)

নামাজের সময় ইচ্ছাকৃতভাবে কথা বললে নামাজ বাতিল হয়ে যায়।

📖 হাদীস:
رسول الله ﷺ বলেছেন,
“নিশ্চয়ই এই নামাজ মানুষের কথা বলার জন্য নয়…”
— (সহিহ মুসলিম: ৫৩৮)


২. হাসাহাসি করা

নামাজে উচ্চ আওয়াজে হাসলে নামাজ ভেঙে যায়। নিঃশব্দে হেসেও যদি গা কাঁপে তবে সতর্ক হওয়া উচিত।


৩. অযু ভেঙে গেলে

নামাজ অবস্থায় যদি কেউ অযু ভঙ্গকারী কাজ (যেমন পেশাব-পায়খানা, গ্যাস নির্গমন ইত্যাদি) করে ফেলেন, তাহলে নামাজ ভেঙে যায়।

📖 কুরআন:
“হে মুমিনগণ, যখন তোমরা নামাজে দাঁড়াতে চাও, তখন তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত ধুয়ে নাও…”
— সূরা আল-মায়েদা: ৬


৪. কিবলার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া

ইচ্ছাকৃতভাবে কিবলা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে নামাজ ভেঙে যায়।


৫. বড় ধরনের নড়াচড়া করা

নামাজে তিনবার বা তার বেশি অপ্রয়োজনীয় চলাফেরা নামাজ বাতিল করে দিতে পারে। উদাহরণ: মোবাইল দেখা, কাঁধ ঘুরিয়ে তাকানো।


৬. শরীরের কোনো অংশ সম্পূর্ণরূপে অনাবৃত হওয়া

যদি নামাজরত অবস্থায় শরীরের এমন কোনো অংশ প্রকাশ পায় যা ছাওয়া ফরজ, তবে নামাজ ভেঙে যাবে। যেমন: নারীদের মাথা বা পুরুষদের নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত এলাকা।


৭. কান্না বা শব্দ করে আহাজারি করা

শব্দ করে কাঁদলে অথবা ব্যথার আওয়াজ (আহ্, উফ্) উচ্চারিত হলে নামাজ ভেঙে যায়। তবে আল্লাহর ভয়ে কাঁদলে তা ব্যতিক্রম।


৮. খাবার চিবানো বা খাওয়া

নামাজে চিবানো, গিলে ফেলা, খাওয়া বা পান করা নামাজকে বাতিল করে দেয়।


৯. সালামের আগে ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ ভঙ্গের ইচ্ছা

সালাম ফেরানোর আগেই যদি কেউ মনে মনে নামাজ ছেড়ে দেওয়ার ইচ্ছা করে ফেলে, তবে নামাজ বাতিল।


১০. কোন স্তব্ধতায় দীর্ঘক্ষণ চুপ থাকা

যদি কেউ রুকনসমূহ ভুলে যায় এবং দীর্ঘ সময় কোনো কিরাত বা রুকন না পড়ে চুপ থাকে, তবে নামাজ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।


❓ ৫০টি বহুল আলোচিত প্রশ্ন ও উত্তর

🔹 নামাজ পড়ার নিয়ম নিয়ে প্রশ্ন

১. পুরুষ ও নারীর নামাজে ভিন্নতা কেন?
— হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নারীদের শরীর রক্ষার্থে কিছু ভিন্নতা রয়েছে।
(আবু দাউদ, বাইহাকি)

২. নারীর কণ্ঠে কিরাআত কি জায়েজ?
— একাকী হলে হালকাভাবে পড়তে পারেন, জামাতে না।

৩. তাকবীরের সময় হাত কোথায় তুলতে হবে?
— পুরুষদের কানের লতি বরাবর, নারীদের কাঁধ পর্যন্ত।

৪. নারী কি ইমামতি করতে পারবে?
— কেবল নারীদের জামাতে ইমাম হতে পারবে।

৫. জামাতে নারীর অংশগ্রহণ?
— বৈধ, তবে পুরুষদের পেছনে।

৬. মাহরাম ছাড়া নামাজে যাওয়া কি বৈধ?
— না, নিরাপদ ও অনুমতিসাপেক্ষে যাওয়া উত্তম।

৭. হ্যান্ডব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে নামাজ পড়া?
— পড়া জায়েজ, তবে ব্যাঘাত না ঘটে।

৮. পুরুষ কি হাত বুকের উপর বাঁধবে?
— মতভেদ রয়েছে, অধিকাংশ হাদীসে বুকে বলা হয়েছে।

৯. হাত খোলা রেখে নামাজ পড়া কি সুন্নত?
— কিছু সালাফ এটি করেছেন, তবে অধিকাংশ উলামা বেঁধে পড়ার পক্ষে।

১০. চোখ বন্ধ রেখে নামাজ পড়া?
— না, চোখ খোলা রাখা সুন্নত।

🔹 শুদ্ধতা ও নিয়ত সংক্রান্ত প্রশ্ন

১১. ওযু ছাড়া নামাজ?
— বাতিল।

১২. জানাবাত অবস্থায় নামাজ?
— হারাম, আগে গোসল করতে হবে।

১৩. শুধু ইচ্ছা করলেই কি নামাজ শুরু হয়?
— না, নিয়ত করতে হবে।

১৪. কিবলা ভুল হলে নামাজ?
— জানার পর ঠিক করলে বৈধ, ইচ্ছাকৃত হলে বাতিল।

১৫. ফজরের আজান চলাকালীন খাওয়া চলবে কি?
— না, আজান শুরু হলে রোযা শুরু।

🔹 সেজদাহ ও সাহু সিজদা সংক্রান্ত প্রশ্ন

১৬. সাহু সিজদা কিভাবে করতে হয়?
— তাশাহহুদের পর দু’টি সিজদা করে সালাম।

১৭. ভুলে রুকু বা সিজদা বেশি হলে?
— সাহু সিজদা করা আবশ্যক।

১৮. কিরাআত ভুল হলে সাহু সিজদা?
— হ্যাঁ, ভুল সংশোধন না করলে।

১৯. সাহু সিজদা ভুলে গেলে নামাজ?
— পুনরায় পড়তে হবে।

২০. সিজদার মধ্যে কথা বলা হলে?
— নামাজ ভেঙে যাবে।

২১. রুকুতে দোয়া বাড়িয়ে পড়া যাবে কি?
— হ্যাঁ, তবে রাসূল ﷺ যেসব দোআ শিখিয়েছেন, সেগুলোর সীমার মধ্যে হওয়া উত্তম। (মুসলিম)

২২. মহিলারা কি জোরে কিরাআত পড়বে?
— না, একা নামাজ হলেও আস্তে পড়বে। পুরুষদের মত জোরে কিরাআত পড়া মহিলার জন্য নয়। (আল-মুগনী)

২৩. নামাজে মোবাইল বাজলে কী করবো?
— তাড়াতাড়ি সাইলেন্ট করে ফেলা উচিত, এতে নামাজ নষ্ট হয় না।

২৪. মহিলাদের জন্য পা খোলা রেখে নামাজ পড়া কি জায়েজ?
— না, পর্দা রক্ষা করে সম্পূর্ণ শরীর আবৃত করে নামাজ পড়তে হবে। (আবু দাউদ)

২৫. পুরুষ কি কাঁধে কাপড় তুলে নামাজ পড়তে পারবে?
— না, দুই কাঁধ ঢাকা থাকা নামাজের জন্য আবশ্যক। (বুখারী)

২৬. মহিলারা মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়তে পারবে?
— হ্যাঁ, তবে ঘরে পড়া উত্তম। (আবু দাউদ)

২৭. কাঁদতে কাঁদতে নামাজ পড়া যাবে কি?
— হ্যাঁ, যদি তা ইখলাসের কারণে হয় এবং শব্দে রূপ না নেয়।

২৮. নামাজের সময় কান্নার শব্দে নামাজ ভেঙে যাবে?
— না, যদি কথার মত পরিষ্কার শব্দ না হয়।

২৯. ইমামের পেছনে সূরা ফাতিহা পড়তে হবে কি?
— হ্যাঁ, নিঃশব্দ সালাতে পড়া ওয়াজিব। (বুখারী)

৩০. নামাজে শরীর একটু নড়াচড়া করলে হবে?
— হ্যাঁ, একান্ত প্রয়োজন হলে অল্প নড়াচড়া জায়েজ।

৩১. মহিলা কি নিজেই ইকামত দিতে পারবে?
— না, এটি পুরুষদের দায়িত্ব। নারীদের ইকামতের দরকার নেই।

৩২. শিশুকে কোলে নিয়ে নামাজ পড়া যাবে?
— হ্যাঁ, রাসূল ﷺ নিজে নাতিকে কোলে নিয়ে নামাজ পড়েছেন। (বুখারী)

৩৩. জামাতের নামাজে দেরি হলে কী করবো?
— যতটুকু পেয়েছেন ইমামের সাথে আদায় করুন, বাকি একা পূর্ণ করুন।

৩৪. পুরুষরা জামাতে দাঁড়ানোর সময় কিভাবে কাঁধ মিলাবে?
— একসাথে কাঁধ ও গোড়ালি মিলিয়ে কাতার তৈরি করতে হবে।

৩৫. মহিলাদের জামাতে কি কাতার তৈরি করতে হবে?
— হ্যাঁ, তবে পুরুষদের মত ঠিক সমান্তরাল হওয়া জরুরি নয়।

৩৬. নামাজে ঘুমিয়ে পড়লে?
— নামাজ বাতিল হবে, ওযু পুনরায় করতে হবে।

৩৭. ইমামের ভুল ধরিয়ে দেওয়া কি জায়েজ?
— হ্যাঁ, পুরুষ হলে “সুবহানাল্লাহ”, মহিলা হলে “তাসফিক” (তালি) দিবে। (বুখারী)

৩৮. নামাজে চুল খোলা থাকলে কি হবে?
— নামাজ বাতিল হবে, মহিলার মাথা আবৃত না থাকলে নামাজ সহীহ হয় না।

৩৯. পায়ের আঙ্গুল কি সিজদায় রাখা জরুরি?
— হ্যাঁ, পায়ের আঙ্গুল মাটিতে লাগানো আবশ্যক। (আবু দাউদ)

৪০. কাপড়ে নাপাক লাগলে নামাজ হবে কি?
— না, আগে কাপড় পরিষ্কার করতে হবে।

৪১. নামাজে কানে হেডফোন বা ইয়ারফোন থাকলে?
— জায়েজ নয়, নামাজে কোনো মনোযোগ না থাকলে বাতিল।

৪২. দাঁড়ানো অবস্থায় কুরআন হাতে ধরে নামাজ পড়া যাবে কি?
— সুন্নত বা নফল নামাজে জায়েজ, ফরজে নয়।

৪৩. ছেলেরা কি গেঞ্জি পরে নামাজ পড়তে পারবে?
— যদি কাঁধ ঢাকা থাকে এবং শরীর আবৃত থাকে, তবে জায়েজ।

৪৪. মেয়েরা কি মোজা ছাড়া নামাজ পড়তে পারবে?
— না, পায়ের চামড়া দেখা না যাওয়ার শর্তে পড়া উচিত।

৪৫. নামাজে কাপড় সামলানো কি নিষিদ্ধ?
— হ্যাঁ, অপ্রয়োজনীয়ভাবে কাপড় গুটানো নিষিদ্ধ। (বুখারী)

৪৬. নামাজে ঘড়ি দেখা যাবে কি?
— না, ইচ্ছাকৃতভাবে দুনিয়াবী চিন্তা ও কার্যক্রম নামাজে নিষেধ।

৪৭. তিলাওয়াতের সিজদা ভুলে গেলে কি করবো?
— স্মরণ হলে তখনই আদায় করে নিতে হবে।

৪৮. মহিলারা জামাতে উচ্চ স্বরে কিরাআত পড়তে পারবে কি?
— না, নীচু স্বরে নিজে পড়বে।

৪৯. নামাজের মধ্যে মোবাইলে কুরআন দেখে পড়া যাবে কি?
— নফল নামাজে পারলেও মনোযোগের ক্ষতি হয়, তাই না করাই উত্তম।

৫০. নামাজে কাশি দিলে কি হবে?
— যদি তা কৌশলে হয়, তবে গুনাহ, আর স্বাভাবিক কাশি নামাজ ভঙ্গ করে না।


পুরুষ ও নারীর নামাজের পদ্ধতি শরিয়তের নির্দিষ্ট নিয়মে চলে। দোআ, তাসবীহ ও মাসায়েল বুঝে নামাজ আদায় করলে ইবাদতের পূর্ণতা অর্জন হয়। হাদীসের ভাষ্য অনুযায়ী,

«صلوا كما رأيتموني أصلي»
— “তোমরা আমাকে যেভাবে নামাজ পড়তে দেখো, সেভাবেই নামাজ পড়ো।”
(বুখারী: ৬৩১)