০১:৩৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৫
অপবাদ দেওয়ার ভয়াবহতা

মাজার পূজারী বা কবর পূজারী বলে মুমিনকে গালি দেয়ার পরিণতি(রেফারেন্সসহ)

Farook Hasan
  • আপডেট সময়ঃ ১২:৪২:৫৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫
  • / ৪০ বার পড়া হয়েছে।

মাজার পূজারী বা কবর পূজারী বলে কোনো মুমিনকে গালি দেয়ার পরিণতি

ইসলামে সম্মানিত মুসলমানদের গালি দেওয়া কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। বিশেষ করে কাউকে ধর্মীয় অপবাদ দেওয়া যেমন “মাজার পূজারী” বা “কবর পূজারী” বলা — যদি সে বাস্তবিকভাবে এমন কিছু না করে — তা মারাত্মক গুনাহ ও ঈমান ধ্বংসকারী কাজ হতে পারে। এই প্রবন্ধে আমরা আলোচনার মাধ্যমে বুঝে নিবো, কেন কাউকে ভিত্তিহীনভাবে মুশরিক বা বিদআতী বলে গালি দেওয়া হারাম এবং এর পরিণতি কী।


১. ইসলাম মুমিনদের মর্যাদা দিয়েছে

আল্লাহ তাআলা বলেন:

“নিশ্চয়ই মু’মিনগণ পরস্পর ভাই ভাই।”
📖 সূরা হুজুরাত: ১০

ভাইয়ের সাথে দয়ালু ব্যবহার করতে হবে, অপবাদ দেওয়া তো দূরের কথা।


২. গালি দেওয়া মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়

রাসূল (সাঃ) বলেন:

“একজন মুসলিমকে গালি দেওয়া ফাসিকি এবং তাকে হত্যা করা কুফর।”
📚 (সহীহ বুখারী: ৪৮ এবং মুসলিম: ৬৪)

গালি দেওয়া এমন এক গোনাহ যা ঈমান ধ্বংস না করলেও মানুষের চরিত্রকে অপবিত্র করে।


৩. অপবাদ দেওয়ার ভয়াবহতা

রাসূল (সাঃ) বলেন:

“যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানকে কুফরী বা মুশরিক বলে, অথচ সে কুফর বা শিরক করে না, তাহলে সেই অপবাদদাতা নিজেই সেই কুফরে পতিত হয়।”
📚 (সহীহ বুখারী: ৫৬৯৮, সহীহ মুসলিম: ৬০)

এটি অত্যন্ত ভয়ের বিষয়। কেউ যদি কাউকে ‘মাজার পূজারী’ বলে শুধুমাত্র সে মাজার জিয়ারত করে বা ওলি-আউলিয়ার প্রতি শ্রদ্ধা রাখে, তাহলে সে নিজের ঈমান হারানোর ঝুঁকিতে পড়ে যেতে পারে।


৪. মাজার জিয়ারত করা কি শিরক?

না, ইসলামে মাজার জিয়ারতের অনুমতি আছে, যদি তা শরীয়তের সীমার মধ্যে হয়। নবীজী (সাঃ) নিজে বলেছেন:

“আমি তোমাদেরকে কবর জিয়ারতের নিষেধ করেছিলাম। এখন তোমরা কবর জিয়ারত করো; কেননা, এটা আখিরাতের কথা স্মরণ করায়।”
📚 (মুসলিম: ৯৭৭)

অতএব, কবর জিয়ারত করা সুন্নাহ। তবে কবরকে উপাসনার স্থান বানালে সেটি শিরকে পরিণত হয়।


৫. “কবর পূজারী” বলার সামাজিক ও ধর্মীয় ক্ষতি

  • মুমিনদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি হয়

  • দাওয়াহ কাজ বাধাগ্রস্ত হয়

  • ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ায়

  • ফিতনা-ফাসাদ বৃদ্ধি পায়


৬. অজ্ঞতাবশত অপবাদ দেওয়া : কি করণীয়?

যদি কেউ না জেনে কাউকে এমন বলে ফেলে, তাহলে:

  • তাওবা করা: আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া জরুরি

  • ক্ষমা চাওয়া: যাকে গালি দেওয়া হয়েছে, তার কাছে ক্ষমা চাওয়া

  • সতর্ক থাকা: ভবিষ্যতে এমন কথা না বলা


৭. আলেমদের বক্তব্য

ইমাম নববী (রহঃ):
“মুসলমানকে কুফর বা শিরকের অপবাদ দেওয়া হারাম, যদি না তার শিরকের নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া যায়।”
📚 (শরহে মুসলিম)

ইবনে তাইমিয়াহ (রহঃ):
“কারো কথার ভুল ব্যাখ্যা করে তাকে গোমরাহ বলা হারাম।”
📚 (মাজমু’ ফাতাওয়া)


৮. সহীহ আকিদা এবং ভ্রান্ত মতবাদ

ইসলাম আমাদের শিক্ষা দেয়, আমরা যেন সকল আমলের ব্যাখ্যা কুরআন ও সহীহ হাদীস অনুযায়ী দেই। অনেক সময় কিছু আমল ভুল ব্যাখ্যার কারণে ভ্রান্ত মনে হয়, কিন্তু তার মূল ব্যাখ্যা সহীহ হলে, কাউকে মুশরিক বা বিদআতী বলার অধিকার আমাদের নেই।


৯. মাজারপন্থীদের ব্যাপারে করণীয় কী?

  • নাসিহত করা: কুরআন ও হাদীস দিয়ে বুঝানো

  • দু’আ করা: হিদায়াতের জন্য

  • গালি না দেওয়া: কারণ গালি ইসলামে হারাম


১০. হিদায়াতের মালিক একমাত্র আল্লাহ

আল্লাহ বলেন:

“তুমি যাকে চাও হিদায়াত দিতে পারো না। বরং আল্লাহই হিদায়াত দেন যাকে ইচ্ছা করেন।”
📖 সূরা কাসাস: ৫৬

তাই হিদায়াতের বিষয়ে অহংকার ও অন্যকে অপমান করার কোনো অধিকার আমাদের নেই।


কোনো মুসলিমকে “মাজার পূজারী” বা “কবর পূজারী” বলে অপমান করা খুবই মারাত্মক একটি ভুল। যদি সে বাস্তবিকভাবে শিরক না করে, তাহলে এমন অপবাদ ঈমানের জন্য হুমকিস্বরূপ। ইসলাম আমাদের শিখিয়েছে নম্রতা, ভ্রাতৃত্ব এবং দ্বীনি দাওয়াহ। কাউকে সংশোধন করতে হলে কুরআন ও হাদীসের আলোকে, ভালোবাসা ও আদবের মাধ্যমে করতে হবে—না যে, তাকে গালি দিয়ে তাকে দ্বীনের বাইরে বের করে দেওয়ার মত জঘন্য কাজ করতে হবে।


রেফারেন্স তালিকা

  1. আল কুরআন: সূরা হুজুরাত, সূরা কাসাস

  2. সহীহ বুখারি: ৪৮, ৫৬৯৮

  3. সহীহ মুসলিম: ৬০, ৯৭৭

  4. তাফসীর ইবনে কাসীর

  5. মাজমু’ ফাতাওয়া – ইবনে তাইমিয়াহ

  6. শরহে মুসলিম – ইমাম নববী


৫টি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

  1. কাউকে “মাজার পূজারী” বলা কি হারাম?
    হ্যাঁ, যদি সে শিরক না করে, তাহলে এমন অপবাদ দেওয়া হারাম।

  2. গালি দিলে কি ঈমান নষ্ট হয়?
    হ্যাঁ, কুফর বা শিরকের অপবাদ দিলে ঈমান হারানোর ঝুঁকি থাকে।

  3. মাজার জিয়ারত কি বিদআত?
    না, শরীয়তের সীমায় থাকলে এটি সুন্নাহ।

  4. মুসলমানকে ফাসিক বলা কি ঠিক?
    না, যদি সে প্রকাশ্যে গোনাহে লিপ্ত না থাকে, তাহলে বলা যাবে না।

  5. তাওবা কীভাবে করতে হয়?
    সত্যিকারের অনুশোচনা, গোনাহ স্বীকার, ভবিষ্যতে না করার প্রতিজ্ঞা, এবং যদি সম্ভব হয়, যার প্রতি অন্যায় হয়েছে, তার কাছে ক্ষমা চাওয়া।

নিউজটি শেয়ার করুন

বিস্তারিত লিখুনঃ

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

অপবাদ দেওয়ার ভয়াবহতা

মাজার পূজারী বা কবর পূজারী বলে মুমিনকে গালি দেয়ার পরিণতি(রেফারেন্সসহ)

আপডেট সময়ঃ ১২:৪২:৫৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫

ইসলামে সম্মানিত মুসলমানদের গালি দেওয়া কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। বিশেষ করে কাউকে ধর্মীয় অপবাদ দেওয়া যেমন “মাজার পূজারী” বা “কবর পূজারী” বলা — যদি সে বাস্তবিকভাবে এমন কিছু না করে — তা মারাত্মক গুনাহ ও ঈমান ধ্বংসকারী কাজ হতে পারে। এই প্রবন্ধে আমরা আলোচনার মাধ্যমে বুঝে নিবো, কেন কাউকে ভিত্তিহীনভাবে মুশরিক বা বিদআতী বলে গালি দেওয়া হারাম এবং এর পরিণতি কী।


১. ইসলাম মুমিনদের মর্যাদা দিয়েছে

আল্লাহ তাআলা বলেন:

“নিশ্চয়ই মু’মিনগণ পরস্পর ভাই ভাই।”
📖 সূরা হুজুরাত: ১০

ভাইয়ের সাথে দয়ালু ব্যবহার করতে হবে, অপবাদ দেওয়া তো দূরের কথা।


২. গালি দেওয়া মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়

রাসূল (সাঃ) বলেন:

“একজন মুসলিমকে গালি দেওয়া ফাসিকি এবং তাকে হত্যা করা কুফর।”
📚 (সহীহ বুখারী: ৪৮ এবং মুসলিম: ৬৪)

গালি দেওয়া এমন এক গোনাহ যা ঈমান ধ্বংস না করলেও মানুষের চরিত্রকে অপবিত্র করে।


৩. অপবাদ দেওয়ার ভয়াবহতা

রাসূল (সাঃ) বলেন:

“যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানকে কুফরী বা মুশরিক বলে, অথচ সে কুফর বা শিরক করে না, তাহলে সেই অপবাদদাতা নিজেই সেই কুফরে পতিত হয়।”
📚 (সহীহ বুখারী: ৫৬৯৮, সহীহ মুসলিম: ৬০)

এটি অত্যন্ত ভয়ের বিষয়। কেউ যদি কাউকে ‘মাজার পূজারী’ বলে শুধুমাত্র সে মাজার জিয়ারত করে বা ওলি-আউলিয়ার প্রতি শ্রদ্ধা রাখে, তাহলে সে নিজের ঈমান হারানোর ঝুঁকিতে পড়ে যেতে পারে।


৪. মাজার জিয়ারত করা কি শিরক?

না, ইসলামে মাজার জিয়ারতের অনুমতি আছে, যদি তা শরীয়তের সীমার মধ্যে হয়। নবীজী (সাঃ) নিজে বলেছেন:

“আমি তোমাদেরকে কবর জিয়ারতের নিষেধ করেছিলাম। এখন তোমরা কবর জিয়ারত করো; কেননা, এটা আখিরাতের কথা স্মরণ করায়।”
📚 (মুসলিম: ৯৭৭)

অতএব, কবর জিয়ারত করা সুন্নাহ। তবে কবরকে উপাসনার স্থান বানালে সেটি শিরকে পরিণত হয়।


৫. “কবর পূজারী” বলার সামাজিক ও ধর্মীয় ক্ষতি

  • মুমিনদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি হয়

  • দাওয়াহ কাজ বাধাগ্রস্ত হয়

  • ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ায়

  • ফিতনা-ফাসাদ বৃদ্ধি পায়


৬. অজ্ঞতাবশত অপবাদ দেওয়া : কি করণীয়?

যদি কেউ না জেনে কাউকে এমন বলে ফেলে, তাহলে:

  • তাওবা করা: আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া জরুরি

  • ক্ষমা চাওয়া: যাকে গালি দেওয়া হয়েছে, তার কাছে ক্ষমা চাওয়া

  • সতর্ক থাকা: ভবিষ্যতে এমন কথা না বলা


৭. আলেমদের বক্তব্য

ইমাম নববী (রহঃ):
“মুসলমানকে কুফর বা শিরকের অপবাদ দেওয়া হারাম, যদি না তার শিরকের নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া যায়।”
📚 (শরহে মুসলিম)

ইবনে তাইমিয়াহ (রহঃ):
“কারো কথার ভুল ব্যাখ্যা করে তাকে গোমরাহ বলা হারাম।”
📚 (মাজমু’ ফাতাওয়া)


৮. সহীহ আকিদা এবং ভ্রান্ত মতবাদ

ইসলাম আমাদের শিক্ষা দেয়, আমরা যেন সকল আমলের ব্যাখ্যা কুরআন ও সহীহ হাদীস অনুযায়ী দেই। অনেক সময় কিছু আমল ভুল ব্যাখ্যার কারণে ভ্রান্ত মনে হয়, কিন্তু তার মূল ব্যাখ্যা সহীহ হলে, কাউকে মুশরিক বা বিদআতী বলার অধিকার আমাদের নেই।


৯. মাজারপন্থীদের ব্যাপারে করণীয় কী?

  • নাসিহত করা: কুরআন ও হাদীস দিয়ে বুঝানো

  • দু’আ করা: হিদায়াতের জন্য

  • গালি না দেওয়া: কারণ গালি ইসলামে হারাম


১০. হিদায়াতের মালিক একমাত্র আল্লাহ

আল্লাহ বলেন:

“তুমি যাকে চাও হিদায়াত দিতে পারো না। বরং আল্লাহই হিদায়াত দেন যাকে ইচ্ছা করেন।”
📖 সূরা কাসাস: ৫৬

তাই হিদায়াতের বিষয়ে অহংকার ও অন্যকে অপমান করার কোনো অধিকার আমাদের নেই।


কোনো মুসলিমকে “মাজার পূজারী” বা “কবর পূজারী” বলে অপমান করা খুবই মারাত্মক একটি ভুল। যদি সে বাস্তবিকভাবে শিরক না করে, তাহলে এমন অপবাদ ঈমানের জন্য হুমকিস্বরূপ। ইসলাম আমাদের শিখিয়েছে নম্রতা, ভ্রাতৃত্ব এবং দ্বীনি দাওয়াহ। কাউকে সংশোধন করতে হলে কুরআন ও হাদীসের আলোকে, ভালোবাসা ও আদবের মাধ্যমে করতে হবে—না যে, তাকে গালি দিয়ে তাকে দ্বীনের বাইরে বের করে দেওয়ার মত জঘন্য কাজ করতে হবে।


রেফারেন্স তালিকা

  1. আল কুরআন: সূরা হুজুরাত, সূরা কাসাস

  2. সহীহ বুখারি: ৪৮, ৫৬৯৮

  3. সহীহ মুসলিম: ৬০, ৯৭৭

  4. তাফসীর ইবনে কাসীর

  5. মাজমু’ ফাতাওয়া – ইবনে তাইমিয়াহ

  6. শরহে মুসলিম – ইমাম নববী


৫টি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

  1. কাউকে “মাজার পূজারী” বলা কি হারাম?
    হ্যাঁ, যদি সে শিরক না করে, তাহলে এমন অপবাদ দেওয়া হারাম।

  2. গালি দিলে কি ঈমান নষ্ট হয়?
    হ্যাঁ, কুফর বা শিরকের অপবাদ দিলে ঈমান হারানোর ঝুঁকি থাকে।

  3. মাজার জিয়ারত কি বিদআত?
    না, শরীয়তের সীমায় থাকলে এটি সুন্নাহ।

  4. মুসলমানকে ফাসিক বলা কি ঠিক?
    না, যদি সে প্রকাশ্যে গোনাহে লিপ্ত না থাকে, তাহলে বলা যাবে না।

  5. তাওবা কীভাবে করতে হয়?
    সত্যিকারের অনুশোচনা, গোনাহ স্বীকার, ভবিষ্যতে না করার প্রতিজ্ঞা, এবং যদি সম্ভব হয়, যার প্রতি অন্যায় হয়েছে, তার কাছে ক্ষমা চাওয়া।