মাছের “জবান বন্ধ” হওয়ার বিষয়টি কোথা থেকে এসেছে?
মাছের জবান বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনা

- আপডেট সময়ঃ ১২:৫৭:৫৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫
- / ৪৯ বার পড়া হয়েছে।
📖 ভূমিকা-
আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সৃষ্টির মধ্যে এমন কিছু দৃষ্টান্ত রেখেছেন যা মানুষের জন্য শিক্ষা, ইবারত ও চিন্তার খোরাক। মাছের জবান বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনা তেমনই একটি শিক্ষণীয় ঘটনা, যা মূলত বনি ইসরাঈলের যুগে ঘটেছিল। এই ঘটনাটি কুরআনে স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত সহকারে এসেছে এবং হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।
📚 ঘটনাটির পটভূমি: বনি ইসরাঈলের এক গোষ্ঠী
সূরা আল-আ‘রাফ (আয়াত ১৬৩)-এ একটি জাতির কথা বলা হয়েছে, যারা সাপ্তাহিক এক দিন (শনিবার বা সাব্বাত) আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী কোনো কাজ করতে পারতো না, বিশেষ করে মাছ শিকার। কিন্তু সেই দিনেই সমুদ্র থেকে প্রচুর মাছ ভেসে আসত, আর বাকি দিনগুলোতে মাছ থাকত না।
وَسْئَلْهُمْ عَنِ ٱلْقَرْيَةِ ٱلَّتِى كَانَتْ حَاضِرَةَ ٱلْبَحْرِ إِذْ يَعْدُونَ فِى ٱلسَّبْتِ إِذْ تَأْتِيهِمْ حِيتَانُهُمْ يَوْمَ سَبْتِهِمْ شُرَّعًۭا وَيَوْمَ لَا يَسْبِتُونَ ۙ لَا تَأْتِيهِمْ ۚ
“তুমি তাদেরকে সেই জনপদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করো, যা সমুদ্রতীরে ছিল। যখন তারা শনিবারের সীমালঙ্ঘন করত, তাদের শনিবারে মাছ আসত পানির উপর ভেসে, আর যখন শনিবার থাকত না, তখন মাছ আসত না।”
📘 [সূরা আল-আ‘রাফ, ৭:১৬৩]
🐟 তারা কী করেছিল?
তারা ধোঁকাবাজির আশ্রয় নেয়। তারা শুক্রবার জাল পেতে রাখতো, এবং রোববার মাছগুলো সংগ্রহ করত, যাতে তারা বলতে পারে—”আমরা তো শনিবার সরাসরি শিকার করিনি।” এভাবে তারা আল্লাহর হুকুমের ব্যঙ্গ করে বসে।
🧕 তিন দলের অবস্থান
ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, এ জনগোষ্ঠী তিন ভাগে বিভক্ত হয়:
-
অপরাধী দল: যারা সরাসরি নিষিদ্ধ দিনে মাছ ধরত।
-
নাসিহ দল: যারা অপরাধীদের নিষেধ করত।
-
নীরব দল: যারা না শিকার করতো, না প্রতিবাদ করতো।
✅ রেফারেন্স:
📘 ইবনে কাসীর, তাফসীর আল-আ‘রাফ ১৬৩
📘 সহীহ বুখারী, হাদীস: ৩৪৭৯
⚠️ শাস্তি কী হয়েছিল?
আল্লাহ তা‘আলা অপরাধীদের বানিয়ে দেন বানর ও শুকর।
فَلَمَّا عَتَوْا۟ عَن مَّا نُهُوا۟ عَنْهُ قُلْنَا لَهُمْ كُونُوا۟ قِرَدَةً خَـٰسِـِٔينَ
“অতঃপর তারা যখন তাদেরকে যা থেকে নিষেধ করা হয়েছিল তা অমান্য করল, তখন আমি বললাম: ‘তোমরা লাঞ্ছিত বানর হয়ে যাও।’”
📘 [সূরা আল-আ‘রাফ, ৭:১৬৬]
🔎 অনেক মুফাসসির বলেন, এসব বানর ও শুকর ছিল রূপান্তরিত মানব, যাতে তারা দুনিয়ার লোকদের জন্য ইবরত হয়ে থাকে।
🐟 মাছের “জবান বন্ধ” হওয়ার বিষয়টি কোথা থেকে এসেছে?
ইমাম কুরতুবি ও অন্যান্য মুফাসসিরগণ ব্যাখ্যা করেন:
-
আল্লাহ তা‘আলা মাছদের বিশেষভাবে সেদিন পাঠাতেন, যেন তারা এ গোষ্ঠীকে পরীক্ষা করতে পারেন।
-
পরবর্তীতে আল্লাহ তাদের সেই আশীর্বাদ ফিরিয়ে নেন।
-
মাছগুলোকে যেন মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয় বা তাদের থেকে কোনো লাভ না হয় — এ রূপ ইঙ্গিত রয়েছে।
📘 রেফারেন্স:
-
তাফসীর কুরতুবী, (৭:১৬৩ এর ব্যাখ্যা)
-
তাফসীর ইবনে কাসীর
-
হাদীস: বুখারী, ২২২৭; মুসলিম, ২৬৭১
📌 আল্লাহ কেন এমন করলেন?
এই ঘটনাটি কেবল মাছ শিকারের নয়, এটি ছিল আল্লাহর হুকুমকে ব্যঙ্গ করার ভয়াবহ পরিণতি।
🔶 যারা দ্বীনের সাথে হেলা করে, তারা ধ্বংস হয়।
🔶 যারা “চালাকি” করে হুকুম এড়িয়ে চলে, তারা আল্লাহর শাস্তি থেকে রক্ষা পায় না।
🎓 শিক্ষণীয় বিষয়:
বিষয় | ব্যাখ্যা |
---|---|
📖 হুকুম মানার গুরুত্ব | আল্লাহর আদেশে চাতুরী করলে শাস্তি আসবে |
🚫 নিষেধ অমান্যের পরিণাম | সরাসরি মাছ ধরেনি বললেও, চাতুরী ছিল স্পষ্ট |
🗣️ সঠিক লোকদের নিষেধ | যারা প্রতিবাদ করেছিল, আল্লাহ তাদের রক্ষা করেছিলেন |
🧠 আল্লাহর পরীক্ষা | তিনি মানুষকে কখনো অতিরিক্ত সুযোগ দিয়ে পরীক্ষা করেন |
🔇 মাছের “জবান বন্ধ” | মাছরা সেই নির্দিষ্ট দিনে মুখে কিছু নিত না, যেন শিকার অর্থহীন হয় |
🙏 শেষ কথা
আজকের যুগেও আমরা অনেক সময় আল্লাহর আদেশকে এড়িয়ে যাওয়ার জন্য “বুদ্ধি” খাটি। কিন্তু এই বনি ইসরাঈলের ঘটনা আমাদের জন্য একটি জীবন্ত সতর্কবার্তা।
✅ রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন:
“তোমরা পূর্ববর্তী জাতিগুলোর পদাঙ্ক অনুসরণ করবে…”
📘 (বুখারী: ৩৪৫৬)
🔔 সুতরাং আমাদের উচিত:
-
আল্লাহর হুকুম মনেপ্রাণে মেনে চলা
-
ফিকির করা এই জাতির পরিণতি নিয়ে
-
আল্লাহর ভয় রাখা এবং চাতুরীর পথ না খোঁজা
📘 গুরুত্বপূর্ণ রেফারেন্সসমূহ:
-
কুরআন মাজিদ – সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত ১৬৩–১৬৬
-
তাফসীর ইবনে কাসীর
-
তাফসীর আল-কুরতুবি
-
সহীহ বুখারী – ৩৪৭৯, ৩৪৫৬
-
সহীহ মুসলিম – ২৬৭১