মিলাদ কিয়ামের বিস্তারিত জবাব
মিলাদ কিয়াম: ১১০টি বহুল আলোচিত প্রশ্ন ও উত্তর (দলিলসহ)

- আপডেট সময়ঃ ০৩:৩৭:১৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ মে ২০২৫
- / ১৬ বার পড়া হয়েছে।
প্রাথমিক গুরুত্বপূর্ণ ১০টি প্রশ্নউত্তর-
প্রশ্ন ১: মিলাদ কিয়াম কী?
উত্তর:
মিলাদ শব্দের অর্থ হলো জন্ম বা আগমনের বর্ণনা। আর কিয়াম মানে দাঁড়ানো। মিলাদ কিয়াম হল—পবিত্র নবী মুহাম্মদ ﷺ এর জন্ম ও জীবন সম্পর্কে আলোচনা ও শ্রদ্ধা প্রকাশ করার সময় দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করা।
প্রশ্ন ২: মিলাদ পালন করা কি বিদআত?
উত্তর:
না, এটি বিদআত হাসানাহ (ভালো বিদআত)। হাদীসে এসেছে:
“من سن في الإسلام سنة حسنة فله أجرها وأجر من عمل بها”
— (সহীহ মুসলিম, হাদীস: ১০১৭)
অর্থ: “যে কেউ ইসলামে একটি ভালো কাজ চালু করে, তার জন্য তার নিজের ও অনুসরণকারীদের সওয়াব রয়েছে।”
প্রশ্ন ৩: মিলাদ উদযাপন সাহাবায়ে কিরামের যুগে হতো কি?
উত্তর:
না, তবে তারা নবী ﷺ-কে ভালোবাসার বহু প্রকাশ করেছেন। মিলাদ উদযাপন পরবর্তী যুগে শুরু হয়, ভালোবাসা ও শিক্ষা প্রচারের একটি মাধ্যম হিসেবে।
প্রশ্ন ৪: কিয়াম (দাঁড়ানো) কেন করা হয়?
উত্তর:
কিয়াম করা হয় নবীজীর প্রতি সম্মান প্রকাশ ও ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে। যেমন নবীজি ﷺ এর সামনে সাহাবিরা দাঁড়াতেন (আবু সাইদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত হাদীস)।
প্রশ্ন ৫: কুরআনে কি মিলাদ উদযাপনের ইঙ্গিত আছে?
উত্তর:
হ্যাঁ, সূরা ইউনুস (১০:৫৮):
“বলুন: আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া (রহমত) – এর জন্য যেন তারা আনন্দিত হয়।”
তাফসীরে বলা হয়েছে, এই অনুগ্রহ ও দয়া হলো রাসূল ﷺ।
প্রশ্ন ৬: মিলাদ উদযাপন কোন মাজহাব সমর্থন করে?
উত্তর:
চার মাযহাবের ইমামগণের অনুসারীদের মধ্যে অধিকাংশই মিলাদকে সমর্থন করেন। বিশেষত ইমাম সুয়ূতি (রহ.), ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) প্রমুখ বড় বড় আলিমগণ এ উৎসবকে শরয়ি বলে গণ্য করেছেন।
প্রশ্ন ৭: মিলাদ অনুষ্ঠানে দাড়িয়ে কিয়াম করা কি হাদীসসম্মত?
উত্তর:
রাসূল ﷺ এর আগমনের সময় সায়্যিদা আমিনা (রহ.) এবং অন্যান্য সাহাবীদের সম্মান প্রদর্শনের ঘটনা উল্লেখযোগ্য। দাড়িয়ে সম্মান জানানো ইজতিহাদিভিত্তিক কাজ।
প্রশ্ন ৮: ইবনে তাইমিয়ার মতে মিলাদ কেমন?
উত্তর:
তিনি বলেন, “যদি কেউ মিলাদ উদযাপন করে নবীর প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাবোধে, তবে তার জন্য সওয়াবের আশা করা যায়।” (ইকতিদাউস সিরাতুল মুস্তাকিম)
প্রশ্ন ৯: মিলাদে গান বাজনা কি বৈধ?
উত্তর:
না, গান বাজনা হারাম। মিলাদে কেবল ইসলামি গজল, হামদ, নাত ইত্যাদি পরিবেশনা বৈধ।
প্রশ্ন ১০: মিলাদে কিয়াম করা কি নামাজের মতো ফরজ?
উত্তর:
না, এটা ফরজ নয়। বরং সুন্নত ও মুস্তাহাব হিসেবে করা হয়, ভালোবাসা ও আদব প্রকাশের অংশ হিসেবে।
১০০টি বহুল আলোচিত প্রশ্ন ও উত্তর (দলিলসহ)
প্রশ্ন ১: মিলাদ কিয়াম কী?
উত্তর:
মিলাদ অর্থ নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম এবং জীবনী স্মরণ। কিয়াম অর্থ দাঁড়ানো। মিলাদ কিয়াম বলতে বোঝানো হয় নবীজির স্মরণে আয়োজনকৃত অনুষ্ঠানে সালাম পাঠের সময় দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করা। এটা মূলত ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাবোধ থেকে উৎসারিত একটি আমল।
প্রশ্ন ২: মিলাদ কিয়াম কোথা থেকে এসেছে?
উত্তর:
মিলাদ অনুষ্ঠান প্রথম শুরু হয় ফাতিমিদ খিলাফতের সময় (৪র্থ হিজরী শতাব্দীতে)। তবে পরিপূর্ণভাবে জনসাধারণের মধ্যে প্রচলিত হয় আইয়ুবি ও মমলুক শাসনামলে। ইমাম সুয়ূতি, ইমাম ইবনে হাজার হায়তামী প্রমুখ আলেম তা সমর্থন করেছেন।
প্রশ্ন ৩: মিলাদ কিয়াম কি বিদআত?
উত্তর:
যদি এর মাঝে শরিয়ত বিরোধী কিছু না থাকে, তবে এটি বিদআত হাসানাহ (সুন্দর বিদআত)। ইমাম নববী (রহ.) বলেন:
“নতুন ভালো কিছু যদি শরীয়তের মূলনীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, তবে তা বিদআত নয় বরং নেক আমল।”
📘 (রেফ: শারহু মুসলিম, ইমাম নববী)
প্রশ্ন ৪: রাসূল (সা.) কি নিজে মিলাদ পালন করেছেন?
উত্তর:
রাসূল (সা.) প্রতি সোমবার রোযা রাখতেন এবং বলতেন, “এ দিন আমার জন্ম হয়েছে।”
📘 (সহীহ মুসলিম: ১১৬২)
এটি নবীজির পক্ষ থেকে তাঁর জন্মদিন স্মরণ করার একটি সূক্ষ্ম ইঙ্গিত।
প্রশ্ন ৫: সাহাবারা কি মিলাদ পালন করতেন?
উত্তর:
সাহাবারা আনুষ্ঠানিকভাবে মিলাদ পালন করেননি, তবে নবীজির প্রতি তাদের গভীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা ছিল। যেহেতু তারা সরাসরি নবীজিকে পেতেন, আলাদাভাবে মিলাদ অনুষ্ঠান করার প্রয়োজন হতো না।
প্রশ্ন ৬: তাবেঈন ও তাবে-তাবেঈন যুগে মিলাদ কিয়াম ছিল কি?
উত্তর:
প্রথাগত মিলাদ অনুষ্ঠান সে যুগে প্রচলিত ছিল না, তবে তারা নবীজির সীরাহ পাঠ, দরুদ পাঠ ইত্যাদির মাধ্যমে নবীপ্রেম প্রকাশ করতেন।
প্রশ্ন ৭: মিলাদ কিয়াম প্রথম কোথায় চালু হয়?
উত্তর:
মিলাদ প্রথম ফাতেমীয় শাসনামলে (মিশর) চালু হয়। পরবর্তীতে ইসলামি বিশ্বে বিস্তৃত হয়। ইমাম আবু শামা বলেন:
“নবীজির জন্ম স্মরণে মিলাদ মাহফিল করা একটি উত্তম আমল।”
📘 (ইবনে কাছীর, আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ১৩/১৩৬)
প্রশ্ন ৮: কুরআনে কি মিলাদের ইঙ্গিত আছে?
উত্তর:
হ্যাঁ, কুরআনে নবীদের জন্মদিবসের আলোচনা এসেছে।“সালাম হোক তার জন্ম দিবসে, মৃত্যু দিবসে, ও পুনরুত্থান দিবসে।”
📘 (সূরা মারইয়াম: ১৫, ইয়াহইয়া আঃ সম্পর্কে)
“আমার জন্মের দিন, মৃত্যুর দিন ও পুনরুত্থানের দিনে শান্তি বর্ষিত হোক।”
📘 (সূরা মারইয়াম: ৩৩, ঈসা আঃ সম্পর্কে)
এগুলো নবীজিদের জন্ম স্মরণে কুরআনের দৃষ্টিভঙ্গি।
প্রশ্ন ৯: হাদীসে কি মিলাদের দলিল আছে?
উত্তর:
নবীজির প্রতি সোমবার রোযা রাখা, নবীজির শানে কাব্য রচনা (কাব ইবনে যুহাইরের “বানাতু সু’আদ”), সাহাবিদের কবিতা ও সীরাহ পাঠ – এসব মিলাদের মৌলিক রূপ।
📘 (সহীহ মুসলিম: ১১৬২, সীরাতে ইবনে হিশাম)
প্রশ্ন ১০: মিলাদ মাহফিল করলে কি গোনাহ হয়?
উত্তর:
যদি মিলাদে শরিয়তসম্মত কাজ হয় যেমন সীরাহ পাঠ, দরুদ, নসীহত, তাহলে এটা গোনাহ নয় বরং নেক আমল।
ইমাম সুয়ূতি বলেন:
“আমি স্বপ্নে নবীজিকে দেখেছি, তিনি মিলাদে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।”
📘 (আল-হাবীব ফি মিলাদে খাইরুল বাশার, সুয়ূতি)প্রশ্ন ১১: মিলাদ কিয়ামের সময় দাঁড়ানো কি জরুরি?
উত্তর:
না, এটি ফরজ বা ওয়াজিব নয়, বরং ভক্তি ও শ্রদ্ধাবোধ থেকে অনেকেই দাঁড়িয়ে সালাম দেন। যেহেতু এটি একটি সম্মানজনক রীতি, তাই শরিয়ত বিরোধী নয়।
প্রশ্ন ১২: মিলাদ কিয়ামে দাঁড়ানো কোন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত?
উত্তর:
সরাসরি দাঁড়ানো নিয়ে সহীহ হাদীস নেই। তবে রাসূল (সা.) দাঁড়িয়ে সম্মানিত ব্যক্তিদের অভ্যর্থনা করতেন।
হাদীসে এসেছে:
“রাসূল (সা.) কায়েস ইবনে সা’দকে দেখে দাঁড়িয়ে পড়লেন।”
📘 (আবু দাউদ: ৫২২৫)
তাই কেউ নবীজির শানে দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করলে তা বিদআত বলা যাবে না।
প্রশ্ন ১৩: ইমাম সুয়ূতি (রহ.) মিলাদ সম্পর্কে কী বলেছেন?
উত্তর:
ইমাম সুয়ূতি মিলাদকে বিদআত হাসানাহ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। তিনি লেখেন:
“মিলাদে নবী (সা.) এর স্মরণ করে কুরআন পাঠ, সদকা ও আনন্দ উদযাপন করা একটি উত্তম আমল।”
📘 (আল-হাবীব ফি মিলাদে খাইরুল বাশার)
প্রশ্ন ১৪: ইমাম গাযযালী (রহ.) কি মিলাদের পক্ষে ছিলেন?
উত্তর:
ইমাম গাযযালী স্পষ্টভাবে মিলাদ নিয়ে আলোচনা করেননি, তবে তিনি নবীর প্রতি ভালোবাসাকে ঈমানের অংশ বলেছেন। মিলাদ এই ভালোবাসার প্রকাশ। তাই মিলাদ করা তাঁর দর্শনের সঙ্গে বিরোধপূর্ণ নয়।আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাতের আক্বিদা
প্রশ্ন ১৫: চার মাযহাব কি মিলাদকে সমর্থন করে?
উত্তর:
হ্যাঁ, চার মাযহাবের বহু ইমাম ও আলেম মিলাদ মাহফিলকে সমর্থন করেছেন। হানাফি, শাফি, মালিকি ও হাম্বলি মাযহাবের অনেক ফকীহ মিলাদে নবীর স্মরণ, দরুদ পাঠ, খাবার বিতরণ ইত্যাদি জায়েয বলেছেন।
প্রশ্ন ১৬: দেওবন্দি মতাদর্শ কি বলে মিলাদ সম্পর্কে?
উত্তর:
দেওবন্দি মতবাদ সাধারণত আনুষ্ঠানিক মিলাদ অনুষ্ঠানকে বিদআত বলে থাকে। তবে তারা নবীপ্রেম, দরুদ পাঠ এবং নবীর সীরাহ আলোচনার বিরোধিতা করে না।
প্রশ্ন ১৭: মিলাদ কিয়াম কি শুধু সূফিদের অনুষ্ঠান?
উত্তর:
না, এটি কেবল সূফিদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। অনেক আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের অনুসারীরাও এই অনুষ্ঠান করেন। সূফিদের মধ্যে এটি বেশি প্রচলিত হলেও অন্যরাও করে থাকেন।
প্রশ্ন ১৮: মিলাদে কি নাত পড়া বৈধ?
উত্তর:
হ্যাঁ, শর্ত সাপেক্ষে বৈধ। যদি তা শালীন হয়, শরিয়তবিরোধী কোনো কথা না থাকে এবং তা নবীর প্রশংসায় হয়, তবে জায়েয।
📘 (ফিকহে হানাফি, রদ্দুল মুখতার: ৬/৩৭৬)
প্রশ্ন ১৯: মিলাদে মাইক, লাইট ব্যবহার কি জায়েজ?
উত্তর:
হ্যাঁ, এগুলো দাওয়াহ ও প্রচারের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে অপচয়, শব্দদূষণ এবং অশ্লীলতার সংমিশ্রণ না হওয়া জরুরি।
প্রশ্ন ২০: মিলাদ উপলক্ষে মিষ্টি বিতরণ করা কি বিদআত?
উত্তর:
না, বিদআত নয়। ইসলামে দাওয়াত, মেহমানদারি এবং সদকা দেওয়া একটি প্রথিত নেক আমল। নবীজির শানে খাবার বিতরণ করতে দোষ নেই।প্রশ্ন ২১: মিলাদে খানা খাওয়ানো কি নবীজির সুন্নাত?
উত্তর:
রাসূল (সা.) নিজে জন্মোৎসব পালন করেননি। তবে তিনি দাওয়াত দিয়ে খাওয়ানোকে ভালো কাজ বলেছেন।
📘 হাদীস: “যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতে বিশ্বাস করে, সে যেন মেহমানের ইকরাম করে।” (বুখারি: ৬০১৮)
মিলাদের উপলক্ষে খাওয়ানো সদকার মধ্যে পড়ে।
প্রশ্ন ২২: রাসূল (সা.) এর জন্মদিবস কি ১২ই রবিউল আউয়াল?
উত্তর:
ইমাম ইবনু হিশাম, ইবনে কাসীর, ইবনে সা’দ প্রমুখ ইতিহাসবিদগণ ১২ রবিউল আউয়ালকে নবীজির জন্মদিন বলেছেন। যদিও কিছু মতভেদ আছে, তবুও অধিকাংশ আলেম এ তারিখকে গ্রহণযোগ্য মনে করেন।
প্রশ্ন ২৩: রাসূলের জন্ম ও ওফাত একই দিনে?
উত্তর:
হ্যাঁ, অধিকাংশ বর্ণনা মতে নবীজির ওফাতও ১২ই রবিউল আউয়ালেই হয়। তবে জন্মের মতো ওফাতের তারিখেও মতভেদ রয়েছে। মূল বিষয় হলো তাঁর জীবনী থেকে শিক্ষা নেওয়া।
প্রশ্ন ২৪: কুরআনে নবীজির স্মরণ ও প্রশংসার আদেশ আছে?
উত্তর:
হ্যাঁ, বহু আয়াতে নবীজিকে স্মরণ করতে বলা হয়েছে।
📘 আল কুরআন:
“নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতারা নবীর প্রতি দরুদ পাঠ করেন; হে মুমিনগণ! তোমরাও তাঁর প্রতি দরুদ ও সালাম প্রেরণ করো।”
📗 (সূরা আহযাব: ৫৬)
প্রশ্ন ২৫: মিলাদ না করলে কি গোনাহ হবে?
উত্তর:
না, গোনাহ হবে না। কারণ এটি ফরজ বা ওয়াজিব নয়। তবে কেউ যদি ইচ্ছা করে ভালো উদ্দেশ্যে মিলাদ করে, তা হলে নেকির আশা করা যায়।
প্রশ্ন ২৬: মিলাদ করলে কি নেকি হবে?
উত্তর:
হ্যাঁ, যদি তা শরিয়তসঙ্গত হয়—নবীর স্মরণ, দরুদ, সীরাত আলোচনা, দাওয়াত, কোরআন তিলাওয়াত, সদকা—সবই নেক আমল। উদ্দেশ্য ও পদ্ধতি সহীহ হলে ইনশাআল্লাহ নেকি হবে।
প্রশ্ন ২৭: মিলাদ কিয়াম কি কবুল হওয়ার আশা করা যায়?
উত্তর:
ইনশাআল্লাহ, যদি তা ইখলাসের সঙ্গে শরিয়তসম্মতভাবে করা হয়, তা হলে তা কবুল হওয়ার আশা করা যায়। তবে অহংকার, রিয়া, বিদআত এড়িয়ে চলা জরুরি।
প্রশ্ন ২৮: মিলাদে দাঁড়িয়ে সালাম পাঠানো কি জায়েজ?
উত্তর:
হ্যাঁ, যদি তা সম্মানের জন্য হয় এবং নবীজির আগমনের স্মরণে হয়, তাহলে তা নিষিদ্ধ নয়। অনেক ওলামা এটির অনুমোদন দিয়েছেন। তবে এটি ফরজ বা ওয়াজিব নয়।
প্রশ্ন ২৯: মিলাদ অনুষ্ঠানে গান-বাজনা জায়েজ কি?
উত্তর:
না, ইসলাম গান-বাজনা, বাদ্যযন্ত্র নিষিদ্ধ করেছে। তাই মিলাদে গান-বাজনা যুক্ত করলে তা বিদআত ও গুনাহ হবে।
📘 হাদীস: “আমার উম্মতের মধ্যে এমন কিছু লোক আসবে যারা গান-বাজনাকে হালাল মনে করবে।” (বুখারি)
প্রশ্ন ৩০: মিলাদে নারী-পুরুষ একত্রে থাকা কি বৈধ?
উত্তর:
না, পর্দা ও ইসলামি শালীনতা ভঙ্গকারী কোনো অনুষ্ঠানে নারী-পুরুষের মিশ্রণ হারাম। মিলাদ হোক বা অন্য যে অনুষ্ঠানই হোক, পর্দা মানা আবশ্যক।প্রশ্ন ৩১: মিলাদে প্রসাদ বিতরণ জায়েজ কি?
উত্তর:
প্রসাদ শব্দটি হিন্দু ধর্ম থেকে এসেছে। তবে ইসলামি দৃষ্টিতে খাবার বিতরণ (সদকা বা দাওয়াত) করা বৈধ, যদি তা হারাম কাজ বা আকীদা বিকৃতির সঙ্গে না মিশে। তাই “প্রসাদ” শব্দ ব্যবহার না করে “তবরুক”, “খেদমতের খাবার” বলা উচিত।
প্রশ্ন ৩২: মিলাদ উপলক্ষে মিছিল কি বৈধ?
উত্তর:
যদি মিছিল শান্তিপূর্ণ হয়, তাতে গান-বাজনা, নারী-পুরুষ মিশ্রণ, রাস্তা বন্ধ বা বিশৃঙ্খলা না থাকে, তাহলে তা দাওয়াত ও দ্বীনি চেতনার অংশ হিসেবে জায়েজ হতে পারে। তবে হারাম ও বিদআত যুক্ত হলে তা অনুচিত।
প্রশ্ন ৩৩: রাসূল (সা.) কি মিলাদে উপস্থিত হন?
উত্তর:
এ বিষয়ে কোরআন বা সহিহ হাদীসে সরাসরি কোনো প্রমাণ নেই যে, নবীজি কোনো মিলাদে হাযির হন। যদিও কিছু আধ্যাত্মিক মতবাদে এর বিশ্বাস রয়েছে, তবে এটি আকীদার বিষয় হওয়ায় সাবধানতা অবলম্বন জরুরি।
প্রশ্ন ৩৪: মিলাদে দাঁড়ানোর সময় ‘মুহাম্মাদ’ নাম উচ্চারণ করলে দাঁড়াতে হবে?
উত্তর:
না, এটি আবশ্যক নয়। সম্মান প্রকাশে দাঁড়ানো জায়েজ, তবে ‘মুহাম্মদ’ নাম শুনেই দাঁড়ানো জরুরি নয়। এটি ঐতিহাসিক রেওয়াজ মাত্র। শরিয়তে এ ব্যাপারে বাধ্যবাধকতা নেই।
প্রশ্ন ৩৫: মিলাদে সবার একসঙ্গে দাঁড়ানো জরুরি কি?
উত্তর:
না। এটি ফরজ, ওয়াজিব বা সুন্নাত নয়। কারো সম্মানে দাঁড়ানো ব্যক্তিগত ইচ্ছা হতে পারে, তবে তা সবার জন্য বাধ্যতামূলক নয়।
প্রশ্ন ৩৬: দাঁড়িয়ে দরুদ পড়া সুন্নাত কি?
উত্তর:
না। দরুদ শরীফ পড়া সুন্নাত, তবে দাঁড়িয়ে পড়া আবশ্যক নয়। কেউ দাঁড়িয়ে পড়লে তা সম্মানের নিদর্শন হতে পারে, তবে শরিয়ত এতে বাধ্য করে না।
প্রশ্ন ৩৭: মিলাদে নতুন নতুন কথা ও কবিতা সংযোজন কি বিদআত?
উত্তর:
যদি কবিতা বা বক্তব্য নবীর প্রশংসা ও ইসলামিক শিক্ষার মধ্যে থাকে, তবে তা জায়েজ। কিন্তু মিথ্যা গুণগান, শিরকী কথা বা অতিরঞ্জিত শব্দ থাকলে তা বিদআত ও গোনাহ হবে।
প্রশ্ন ৩৮: মিলাদে কি কিয়াম না করলে পাপ হয়?
উত্তর:
না, মিলাদে কিয়াম না করলে পাপ হবে না। কিয়াম করা জায়েজ, তবে না করলে গোনাহ হবে না। এটি ফরজ বা ওয়াজিব নয়।
প্রশ্ন ৩৯: মিলাদ পালন কি ইসলামের দৃষ্টিতে ইবাদত?
উত্তর:
ইবাদত মানে নির্দিষ্ট নিয়ত ও নিয়মে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। যদি মিলাদ শরিয়তসঙ্গতভাবে হয়—দরুদ, কোরআন, সীরাত আলোচনা—তাহলে তা ইবাদতের অংশ হতে পারে।
প্রশ্ন ৪০: মিলাদ নিয়ে সবচেয়ে বেশি মতবিরোধ কোথায়?
উত্তর:
মূলত দুই দিক থেকে মতভেদ:
১. এটি সুন্নাত না বিদআত?
২. এর পদ্ধতি শরিয়ত সম্মত কি না?
সুন্নিপন্থীরা মিলাদকে ইজতিহাদি ও জায়েজ বলেন, আবার কিছু সালাফি মতবাদ একে সম্পূর্ণ বিদআত বলে। এক্ষেত্রে মধ্যপন্থা জরুরি—বিদআত পরিহার, সুন্নাতের অনুসরণ।প্রশ্ন ৪১: মিলাদ সম্পর্কে ইবনে তাইমিয়া (রহ.) কী বলেছেন?
উত্তর:
ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন,“যে ব্যক্তি রাসূলের জন্ম উপলক্ষে আনন্দ করে এবং তা ইবাদত মনে না করে, সে নেককার হতে পারে। তবে এ বিদআত হিসেবে গণ্য।”
(সারাংশ: “Iqtidāʾ aṣ-Ṣirāṭ al-Mustaqīm”, ইবনে তাইমিয়া)অর্থাৎ, তিনি এটিকে বিদআত বলেছেন, তবে তা যদি আনন্দ ও ভালোবাসা থেকে হয়, তাহলে গুনাহ নয়।
প্রশ্ন ৪২: কিয়াম মানে দাঁড়ানো, তাহলে এটি তো সালাত ছাড়া বর্জনীয় না?
উত্তর:
না, সম্মান প্রকাশে দাঁড়ানো জায়েজ। কিয়াম (দাঁড়ানো) সালাত ছাড়াও অন্য সময় সম্মানার্থে করা যায়। যেমন, নবীজি (ﷺ) দাঁড়াতেন সাহাবাদের জন্য (বুখারী হাদীস)। তাই মিলাদে সম্মানের সাথে দাঁড়ালে তা হারাম নয়।
প্রশ্ন ৪৩: নবীজির জন্য কিয়াম করা কি সম্মানের কাজ?
উত্তর:
হ্যাঁ। রাসূল (ﷺ)-এর জন্য সম্মান প্রদর্শন করা শরীয়তসম্মত। কেউ দাঁড়িয়ে তা করলে জায়েজ। তবে এটি আবশ্যক নয়।আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাতের আক্বিদা
প্রশ্ন ৪৪: সাহাবীরা কি রাসূলের আগমনে দাঁড়িয়েছেন?
উত্তর:
জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত:“একবার নবীজি (ﷺ) মসজিদে প্রবেশ করলে আমরা তাঁর সামনে দাঁড়ালাম।”
📘 [তিরমিযি, হাদীস: 2754]
এই হাদীস থেকে সম্মানার্থে দাঁড়ানোর বৈধতা প্রমাণিত হয়।
প্রশ্ন ৪৫: ফাতিমা (রাঃ) এর বিয়েতে কি মিলাদের মতো কিছু হয়েছিল?
উত্তর:
না, সে সময়ে ‘মিলাদ’ নামে নির্দিষ্ট কোনো অনুষ্ঠান হয়নি। তবে নবীজি সাহাবাদের বিয়েতে দোয়া করতেন, কোরআন তিলাওয়াত হতো—যা মিলাদের অংশ হিসেবে আজ পালন করা হয়।
প্রশ্ন ৪৬: মিলাদে দাঁড়িয়ে সম্মান দেখানো কি শরিয়তসম্মত?
উত্তর:
যদি তা নবীজির সম্মান ও ভালোবাসা থেকে হয়, তাহলে তা বৈধ। তবে এটি ফরজ, ওয়াজিব বা সুন্নাত নয়। হাদীসে এর নিষেধও নেই।
প্রশ্ন ৪৭: ইসলাম কি জন্মদিন পালন করতে বলে?
উত্তর:
কুরআন ও হাদীসে জন্মদিন পালনের নির্দেশ নেই, তবে নবীজির জন্ম নিয়ে খুশি হওয়া (মিলাদ) বিদআত নয় যদি তা শরীয়তসঙ্গতভাবে হয়। যেমন—আল্লাহ বলেন:“তুমি বলো, আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমতের কারণে যেন তারা আনন্দ প্রকাশ করে।”
📘 [সূরা ইউনুস: ৫৮]
প্রশ্ন ৪৮: মিলাদ কিয়াম না করলে সমাজে অবজ্ঞা হয়, এ সমাধান কী?
উত্তর:
কোনো আমল সমাজ রক্ষার্থে ফরজ হয় না। তবে ভালোবাসা, সহনশীলতা ও সঠিক ব্যাখ্যার মাধ্যমে বিভ্রান্তি দূর করা উচিত।
প্রশ্ন ৪৯: মিলাদ কি ঐক্যের কারণ না বিভেদের?
উত্তর:
যদি তা সহিহ আকীদা ও সুন্নাহ অনুযায়ী পালন করা হয়, তাহলে তা ঐক্য আনতে পারে। অন্যথায় অতিরিক্ততা বিভেদ সৃষ্টি করতে পারে। আল্লাহ বলেন:“ধর্মে বাড়াবাড়ি করো না।”
📘 [সূরা নিসা: ১৭১]
প্রশ্ন ৫০: মিলাদ কিয়াম কিভাবে সুন্নাহর আলোকে পালন করা যায়?
উত্তর:
– কুরআন তিলাওয়াত
– নবীর সীরাত আলোচনা
– দরুদ পাঠ
– বিদআত থেকে বর্জন
– নারী-পুরুষ পর্দা মেনে
– খাদ্য বিতরণ সুন্নাহর সাথে
এভাবেই মিলাদ পালন করলে তা সুন্নাহ সম্মত হতে পারে।প্রশ্ন ৫১: কিয়াম মানে কি শুধু দাঁড়ানো বোঝায়?
উত্তর:
আরবি “কিয়াম” শব্দের অর্থ হচ্ছে “দাঁড়ানো”। কিন্তু ইসলামি পরিভাষায় এটি সম্মান ও ইবাদতের প্রসঙ্গে ব্যবহৃত হয়। মিলাদের কিয়ামে মূলত দাঁড়িয়ে নবীজিকে সম্মান জানানো বোঝায়।
প্রশ্ন ৫২: মিলাদে নবীর আগমনের সময় দাঁড়ানো কি আবশ্যক?
উত্তর:
না, এটি কোনো ফরজ, ওয়াজিব বা সুন্নাত নয়। যারা ভালোবাসা ও সম্মান থেকে দাঁড়ায়, তারা গুনাহগার নয়। তবে কাউকে বাধ্য করা যাবে না।
প্রশ্ন ৫৩: মিলাদ কিয়ামের জন্য নির্দিষ্ট কোনো রাত্রি কি প্রমাণিত?
উত্তর:
না, কুরআন-হাদীসে নির্দিষ্ট কোনো রাত্রি বা তারিখ মিলাদ উদযাপনের জন্য নির্ধারিত নেই। তবে ১২ রবিউল আউয়াল দিনটিতে অধিকাংশ মুসলমান মিলাদ পালন করে থাকে।
প্রশ্ন ৫৪: মিলাদে ‘মুহাম্মাদ’ নাম উচ্চারণে দাঁড়ানো কি জরুরি?
উত্তর:
না, এটি বাধ্যতামূলক নয়। এটি মানুষের আবেগ-ভক্তির বহিঃপ্রকাশ। হাদীসে এমন কোনো নির্দেশনা নেই।
প্রশ্ন ৫৫: মিলাদে সবার একসঙ্গে দাঁড়ানো জরুরি কি?
উত্তর:
না, কেউ দাঁড়াতে চাইলে দাঁড়াতে পারে, না চাইলে বাধ্য নয়। একে ফরজ, ওয়াজিব বানানো বিদআত।
প্রশ্ন ৫৬: দাঁড়িয়ে দরুদ পড়া সুন্নাত কি?
উত্তর:
দরুদ সব অবস্থায় পড়া সুন্নাত। দাঁড়িয়ে, বসে বা শুয়ে। কুরআন বলছে:“তোমরা তাঁর প্রতি সালাত পাঠ করো ও সালাম পাঠ করো।”
📘 [সূরা আহযাব: ৫৬]
প্রশ্ন ৫৭: মিলাদে নতুন নতুন কথা ও কবিতা সংযোজন কি বিদআত?
উত্তর:
যদি তা শরীয়তবিরোধী না হয় এবং নবীর প্রশংসা হয়, তবে বিদআত নয়। কিন্তু যদি অতিরঞ্জন ও মিথ্যা হয়, তা অবশ্যই বিদআত।
প্রশ্ন ৫৮: মিলাদে কি কিয়াম না করলে পাপ হয়?
উত্তর:
না। মিলাদে কিয়াম না করলে কেউ পাপী হয় না। এটি আবেগের বিষয়, ফরজ-ওয়াজিব নয়।
প্রশ্ন ৫৯: মিলাদ পালন কি ইসলামের দৃষ্টিতে ইবাদত?
উত্তর:
মিলাদ পালনের মাধ্যমে যদি নবীজির জীবনী আলোচনা, কুরআন তিলাওয়াত ও দরুদ পাঠ হয়—তাহলে তা ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। তবে তা নিজেই আলাদা ইবাদত নয়।
প্রশ্ন ৬০: মিলাদ নিয়ে সবচেয়ে বেশি মতবিরোধ কোথায়?
উত্তর:
মূলত “মিলাদ বিদআত না সুন্নাহ?”, “কিয়াম জরুরি কি না?”, “নারী-পুরুষ একত্রে থাকা” ইত্যাদি বিষয়ে মতবিরোধ রয়েছে। দলিলভিত্তিক আলোচনা ছাড়া বিতর্ক বাড়ে।প্রশ্ন ৬১: মিলাদ সম্পর্কে ইবনে তাইমিয়ার মত কী ছিল?
উত্তর:
ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন,“কেউ যদি মিলাদ উদযাপন করে রাসূল (সা.)-এর ভালোবাসা ও সম্মান দেখানোর জন্য এবং এতে বিদআত না থাকে, তবে এতে কোনো দোষ নেই বরং তার জন্য সওয়াব আশা করা যায়।”
📘 [ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া, ২৩/163]
প্রশ্ন ৬২: কিয়াম মানে দাঁড়ানো, তাহলে কি এটি সালাত ছাড়া বর্জনীয়?
উত্তর:
না, ইসলাম সম্মানজনক কারণে দাঁড়ানোকে বৈধ মনে করে। যেমন রাসূল (সা.) নিজে সাহাবিদের দাঁড়িয়ে সালাম গ্রহণ করেছেন।
📘 [বুখারি: 380]
প্রশ্ন ৬৩: নবীজির জন্য কিয়াম করা কি সম্মানের কাজ?
উত্তর:
হ্যাঁ। নবীজিকে সম্মান দেখাতে দাঁড়ানো জায়েজ, যদি তা অতিরঞ্জন বা শিরকসুলভ না হয়। হাদীসে আছে:“তোমরা তোমাদের নেতাদের সম্মান করো।”
📘 [আবু দাউদ: 2858]
প্রশ্ন ৬৪: সাহাবিরা কি রাসূল (সা.)-এর আগমনে দাঁড়িয়েছেন?
উত্তর:
হ্যাঁ। বর্ণিত আছে, সাহাবিরা নবীজিকে দেখতে পেলে সম্মানে দাঁড়িয়ে যেতেন।
📘 [তিরমিযি: 2754]
প্রশ্ন ৬৫: ফাতেমা (রাঃ)-এর বিয়েতে কি মিলাদের মতো কিছু হয়েছিল?
উত্তর:
ইতিহাসে রয়েছে, রাসূল (সা.) বিয়েতে দোয়া ও দরুদ পাঠের আয়োজন করতেন। তবে আজকের মিলাদের মতো আনুষ্ঠানিকতা ছিল না।
প্রশ্ন ৬৬: মিলাদে দাঁড়িয়ে সম্মান দেখানো কি শরিয়তসম্মত?
উত্তর:
যদি তা প্রেম ও ভক্তির বহিঃপ্রকাশ হয় এবং শরিয়তের সীমা লঙ্ঘন না করে, তবে জায়েজ। তবে তা ফরজ বা সুন্নাত নয়।
প্রশ্ন ৬৭: ইসলাম কি জন্মদিন পালন করতে বলে?
উত্তর:
ইসলামে জন্মদিন পালন বাধ্যতামূলক নয়। তবে কেউ যদি হারাম কার্যকলাপ ছাড়া স্মরণ ও শোকর আদায়ের মাধ্যমে পালন করে, তবে গুনাহ হবে না।
প্রশ্ন ৬৮: মিলাদ কিয়াম না করলে সমাজে অবজ্ঞা হয়, এ সমাধান কী?
উত্তর:
ইবাদতের বিষয়সমূহে সমাজের প্রভাব নয়, বরং দলিল ও আকিদা অনুসরণ করতে হবে। কাউকে কিয়াম না করার জন্য তিরস্কার করা অনুচিত।
প্রশ্ন ৬৯: মিলাদ কি ঐক্যের কারণ, না বিভেদের?
উত্তর:
যদি মিলাদ কুরআন-হাদীসের আলোকে পালিত হয়, তবে তা ঐক্য আনতে পারে। তবে বিদআত ও বাড়াবাড়ি করলে তা ফিতনা সৃষ্টি করে।
প্রশ্ন ৭০: মিলাদ কিয়াম কিভাবে সুন্নাহর আলোকে পালন করা যায়?
উত্তর:
কুরআন তিলাওয়াত
রাসূলের জীবন আলোচনা
দরুদ পাঠ
বিদআত পরিহার
নারী-পুরুষ আলাদা রাখা
এইভাবে পালন করলে সুন্নাহর পরিপন্থী হবে না।প্রশ্ন ৭১: কিয়ামের সময় ‘মুহাম্মাদ’ নাম উচ্চারিত হলে কি দাঁড়াতে হবে?
উত্তর:
না, ‘মুহাম্মাদ’ নাম উচ্চারণ হলেই দাঁড়ানো ফরজ নয়। এটি ভক্তি ও ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ মাত্র, বাধ্যতামূলক নয়। শরিয়ত থেকে এ নিয়ে স্পষ্ট কোনো হুকুম নেই।
প্রশ্ন ৭২: মিলাদে সবার একসঙ্গে দাঁড়ানো জরুরি কি?
উত্তর:
জরুরি নয়। কেউ দাঁড়ালে নেক নিয়তের জন্য, কেউ না দাঁড়ালেও কোনো গোনাহ নেই। এটি ব্যক্তিগত আবেগ ও ভক্তির প্রকাশ।
প্রশ্ন ৭৩: দাঁড়িয়ে দরুদ পড়া কি সুন্নাত?
উত্তর:
দরুদ পড়া সুন্নাত, তবে দাঁড়িয়ে পড়া আবশ্যক নয়। বসে, দাঁড়িয়ে, যেকোনো অবস্থায় পড়া জায়েয। কিয়ামের সময় দাঁড়িয়ে পড়া অতিরিক্ত সম্মান হিসেবে দেখা হয়।
প্রশ্ন ৭৪: মিলাদে নতুন কবিতা সংযোজন কি বিদআত?
উত্তর:
যদি তা রাসূলের প্রশংসা হয় এবং শরিয়তের সীমা লঙ্ঘন না করে, তবে তা বিদআত নয়। সাহাবীরাও রাসূলের প্রশংসায় কাব্য রচনা করেছেন।
📘 [সহীহ বুখারি, হাদীস: 3213] — হাসান ইবনে সাবিত (রাঃ)-এর কাব্যচর্চা
প্রশ্ন ৭৫: কিয়াম না করলে কি গোনাহ হয়?
উত্তর:
না। কিয়াম একটি ঐতিহ্যগত সম্মান প্রদর্শন। এটি ওয়াজিব, সুন্নাত বা ফরজ নয়, তাই না করলেও গোনাহ হয় না।
প্রশ্ন ৭৬: মিলাদ পালন কি ইসলামের দৃষ্টিতে ইবাদত?
উত্তর:
মূলত, মিলাদ একটি স্মরণানুষ্ঠান। যদি তাতে কুরআন, হাদীস, দোয়া, নসিহত থাকে, তবে তা ইবাদতের রূপ পেতে পারে। তবে তা বাধ্যতামূলক ইবাদত নয়।প্রশ্ন ৭৭: মিলাদ নিয়ে সবচেয়ে বেশি মতবিরোধ কোথায়?
উত্তর: বিশেষভাবে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের দেওবন্দি ও আহলে হাদীস মতাদর্শে বিদআত বলে অভিহিত করা হয়। আর বরেলভী ও সুফি ধারার মুসলিমরা তা সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত মনে করেন।
প্রশ্ন ৭৮: মিলাদ সম্পর্কে ইমাম নববী (রহ.) কী বলেছেন?
উত্তর: ইমাম নববী (রহ.) সরাসরি কিছু না বললেও,তাঁর অনুসরণকারীরা নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি অবলম্বন করেছেন।কিছু আলেম মিলাদকে মুস্তাহাব বলেছেন, শর্ত হলো—বিদআত ও গোমরাহী না থাকা।
প্রশ্ন ৭৯: কিয়াম কি শুধু রাসূল (সা.)-এর জন্য বৈধ?
>উত্তর:
কিয়াম শুধুমাত্র রাসূলের জন্য করলে তা সম্মান হিসেবে বৈধ। অন্য কারো জন্য কিয়াম করলে তা বাড়াবাড়ি হতে পারে।
📘 [ইবনে হাজার আসকালানি, ফাতহুল বারী]
প্রশ্ন ৮০: রাসূল (সা.)-এর প্রতি সম্মান দেখানো কি ইবাদত?
উত্তর:
হ্যাঁ। রাসূলের প্রতি ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও সম্মান ইসলামের মৌলিক আকীদার অংশ। কুরআনে আছে:“যারা নবীকে সম্মান করে, তাকে সাহায্য করে এবং তার প্রতি নূর অনুসরণ করে, তারাই সফল।”
📘 [সূরা আরাফ, আয়াত: ১৫৭]প্রশ্ন ৮১: কিয়াম মানে দাঁড়ানো, তাহলে এটি তো সালাত ছাড়া বর্জনীয় না?
উত্তর:
না, কিয়াম (দাঁড়ানো) সালাতের মধ্যে ফরজ হলেও সম্মান প্রদর্শনের জন্যও জায়েয। নবী (সা.)-এর জন্য দাঁড়ানো সম্মান হিসেবে ইসলামে বৈধ।
📘 [ইমাম নববী, শরহ মুসলিম, খণ্ড ৯]
প্রশ্ন ৮২: নবীজির জন্য কিয়াম করা কি সম্মানের কাজ?
উত্তর:
হ্যাঁ, এটি নবীজিকে ভালোবাসা ও ইজ্জত দেওয়ার বহিঃপ্রকাশ। সাহাবারা তাঁর সামনে দাঁড়িয়েছেন বলেই প্রমাণ পাওয়া যায়।
📘 [তিরমিযী, হাদীস: 2751] — সাহাবী রাসূলের সামনে দাঁড়ালেন
প্রশ্ন ৮৩: সাহাবীরা কি রাসূলের আগমনে দাঁড়িয়েছেন?
উত্তর:
হ্যাঁ, বিভিন্ন হাদীসে আছে, সাহাবীরা রাসূল (সা.)-কে দেখলে দাঁড়াতেন। যদিও রাসূল (সা.) তাঁদের কখনও বসে যেতে বলতেন।
📘 [আবু দাউদ, হাদীস: 5225]
প্রশ্ন ৮৪: ফাতেমা (রাঃ) এর বিয়েতে কি মিলাদের মতো কিছু হয়েছিল?
উত্তর:
না, হুবহু মিলাদ ছিল না। তবে আনন্দ, মেহমানদারি, দোয়া, জিকির ও প্রশংসা ছিল। এ থেকেই অনেকে মিলাদ মাহফিলের ভিত্তি তৈরি করেন।
প্রশ্ন ৮৫: মিলাদে দাঁড়িয়ে সম্মান দেখানো কি শরিয়তসম্মত?
উত্তর:
যদি তা রসুলের প্রতি সম্মান ও ভালোবাসা প্রকাশে হয় এবং শরীয়তবিরোধী কিছু না থাকে, তবে শরিয়তসম্মত। তবে বাধ্যতামূলক নয়।
প্রশ্ন ৮৬: ইসলাম কি জন্মদিন পালন করতে বলে?
উত্তর:
ইসলাম জন্মদিন উদযাপনের নির্দিষ্ট হুকুম দেয়নি, তবে রাসূল (সা.) প্রতি সোমবার রোযা রাখতেন, কারণ ওই দিনে তিনি জন্মগ্রহণ করেছেন।
📘 [সহীহ মুসলিম, হাদীস: 1162]
প্রশ্ন ৮৭: মিলাদ কিয়াম না করলে সমাজে অবজ্ঞা হয়, এ সমাধান কী?
উত্তর:
ইবাদত লোক দেখানো নয়। যার মন চায় করবে, না চাইলে করবে না। সমাজের ভুল দৃষ্টিভঙ্গি সংশোধন করা দরকার।
প্রশ্ন ৮৮: মিলাদ কি ঐক্যের কারণ না বিভেদের?
উত্তর:
সঠিকভাবে পালন করলে এটি ঐক্যের কারণ। তবে অপব্যাখ্যা, বাড়াবাড়ি ও বিতর্কের মাধ্যমে বিভেদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
প্রশ্ন ৮৯: মিলাদ কিয়াম কিভাবে সুন্নাহর আলোকে পালন করা যায়?
উত্তর:
কুরআন তেলাওয়াত, হাদীস পাঠ, রাসূলের জীবন আলোচনা, দোয়া, দরুদ পাঠ, খানা বিতরণ—এসব সুন্নাহর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ উপায়ে পালন করা যায়।
প্রশ্ন ৯০: মিলাদে যদি বিদআত কিছু থাকে, তাহলে তা কীভাবে দূর করা যায়?
উত্তর:
বিদআত বা শরীয়তবিরোধী কার্যক্রম বাদ দিয়ে কেবল কুরআন-হাদীসের আলোকে অনুষ্ঠান সাজালে তা সঠিক পথে পরিচালিত হতে পারে। যেমন:
– নারী-পুরুষ একত্রে না বসা
– গান-বাজনা পরিহার
– লোক দেখানো ও বাড়াবাড়ি থেকে দূরে থাকাপ্রশ্ন ৯১: মিলাদ অনুষ্ঠান কি শুধুই লোক দেখানো হয়ে গেছে?
উত্তর:
অনেক ক্ষেত্রে হ্যাঁ, তবে মূল নিয়ত ঠিক থাকলে এটি ইবাদতরূপে গণ্য হয়। লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে করলে তা রিয়া (প্রদর্শন) হয়ে যায় যা গুনাহ।
📘 [সহীহ মুসলিম, হাদীস: 2986] — “যে লোক দেখায়, আল্লাহও তাকে লোক দেখাবেন।”
প্রশ্ন ৯২: মিলাদে ছবি বা ব্যানারে রাসূলের অবয়ব আঁকা জায়েজ কি?
উত্তর:
না, ইসলামে রাসূল (সা.)-এর ছবি আঁকা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং গোনাহের কাজ।
📘 [সহীহ বুখারী, হাদীস: 5958]
প্রশ্ন ৯৩: রাসূল (সা.)-এর যুগে কি জন্মবার্ষিকী পালন হতো?
উত্তর:
না, তাঁর সময়ে জন্মবার্ষিকী পালনের রীতি ছিল না। তবে তাঁর জীবনের ঘটনাবলী আলোচনা করা হতো এবং তা শিক্ষামূলক ছিল।
প্রশ্ন ৯৪: রাসূল (সা.)-এর জন্মোৎসব প্রথম কোথায় শুরু হয়?
উত্তর:
ঐতিহাসিক তথ্য মতে, ফাতেমীয় খলিফারা (৪র্থ হিজরীতে) মিসরে প্রথম সরকারিভাবে মিলাদ উদযাপন শুরু করে।
📘 [আবু শামা, আল-ইবাদ ফিল মিলাদ]
প্রশ্ন ৯৫: মিলাদ কিয়ামের আয়োজন কি শির্ক হতে পারে?
উত্তর:
না, যদি তাওহীদ বিরোধী কোনো বিশ্বাস না থাকে, তবে তা শির্ক নয়। তবে ভুল আকিদা থাকলে তা শির্ক বা বিদআতের পর্যায়ে যেতে পারে।
প্রশ্ন ৯৬: চার ইমাম মিলাদ সম্পর্কে কী বলেন?
উত্তর:
চার ইমামের যুগে মিলাদ প্রচলিত ছিল না, তাই সরাসরি মন্তব্য পাওয়া যায় না। তবে তাঁদের উসূল অনুযায়ী, শরীয়তবিরোধী না হলে জায়েজ হতে পারে।
প্রশ্ন ৯৭: মিলাদে অতি বাড়াবাড়ি করলে এর শাস্তি কী?
উত্তর:
বিদআত বা বাড়াবাড়ি ইসলাম নিষেধ করে। রাসূল (সা.) বলেন, “প্রত্যেক বিদআত গোমরাহ এবং প্রত্যেক গোমরাহ জাহান্নামে।”
📘 [আবু দাউদ, হাদীস: 4607]
প্রশ্ন ৯৮: মিলাদ ও কিয়ামের সময় চোখে পানি আসা কি আল্লাহর রহমত?
উত্তর:
হ্যাঁ, যদি তা আন্তরিক ভালোবাসা থেকে আসে, তবে তা ঈমানের নিদর্শন এবং আল্লাহর রহমতের আলামত।
প্রশ্ন ৯৯: মিলাদ ও কিয়ামের বিরোধিতাকারীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হওয়া উচিত?
উত্তর:
সম্মান ও সহিষ্ণুতার সঙ্গে মতভেদ মেনে নেওয়া উচিত। কেউ মিলাদ না করলে তাকে বিদ্বেষের চোখে দেখা ইসলাম সমর্থন করে না।
প্রশ্ন ১০০: মিলাদ কিয়ামের মাধ্যমে কি ঈমান মজবুত হয়?
উত্তর:
হ্যাঁ, যদি তা আন্তরিকতা ও সঠিক আকিদার সঙ্গে হয়, তবে রাসূলের প্রেম, স্মরণ ও সুন্নাহর প্রতি ভালবাসা বাড়ে এবং ঈমান মজবুত হয়।
🕌 শেষ কথা:
মিলাদ কিয়াম নিয়ে মতভেদ থাকলেও এটি যদি কুরআন-হাদীস ও শরীয়তের সীমার মধ্যে থাকে, তাহলে তা প্রশংসনীয় হতে পারে। সব কিছুই নিয়তের উপর নির্ভরশীল।আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাতের আক্বিদাধারীগণ নবীজির প্রতি সম্মান জ্ঞাপক বৈধ কাজকে মুস্তাহাব ও মুস্তাহসান মনে করেন।