ডিভোর্স বা তালাক হওয়ার প্রধান ১০টি কারণ, প্রতিকার ও রাষ্ট্রীয় আইন
বিবাহবিচ্ছেদ হওয়ার প্রধান ১০টি কারণ, প্রতিকার ও রাষ্ট্রীয় আইন
- আপডেট সময়ঃ ০২:৩৫:০৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫
- / ৪০ বার পড়া হয়েছে।
🕌 প্রধান ১০টি কারণ, প্রতিকার ও রাষ্ট্রীয় আইন
📖
বিবাহ ইসলাম ধর্মে একটি পবিত্র বন্ধন। কিন্তু কখনও কখনও দাম্পত্য জীবনে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, যখন একসাথে জীবনযাপন অসম্ভব হয়ে পড়ে। তখন ইসলাম “তালাক” (طلاق) বা বিবাহবিচ্ছেদ-এর অনুমতি দিয়েছে, তবে এটি সবচেয়ে অপছন্দনীয় হালাল কাজ।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন —
“أبغض الحلال إلى الله الطلاق”
অর্থ: “আল্লাহর নিকট সবচেয়ে অপছন্দনীয় হালাল বিষয় হলো তালাক।”
(সুনান আবু দাউদ: ২১৭৮)
💔 ডিভোর্স বা তালাক হওয়ার প্রধান ১০টি কারণ
১️⃣ অবিশ্বাস ও বিশ্বাসঘাতকতা
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস ভেঙে গেলে সম্পর্ক টিকে থাকে না। পরকীয়া, গোপন সম্পর্ক বা মিথ্যা বলার কারণে তালাকের ঘটনা বাড়ে।
প্রতিকার:
👉 ইসলামী শিক্ষা অনুযায়ী পরস্পরের প্রতি সততা ও আল্লাহভীতি রাখা জরুরি।
👉 নিয়মিত পারিবারিক কাউন্সেলিং করা উচিত।
২️⃣ ধর্মীয় অজ্ঞতা ও নামাযহীনতা
ধর্মীয় নীতিমালা অমান্য করা, নামায না পড়া, চরিত্রহীনতা ইত্যাদি দাম্পত্যে কলহ সৃষ্টি করে।
প্রতিকার:
👉 উভয়ের ইসলামিক জ্ঞান অর্জন করা উচিত।
👉 একে অপরকে আল্লাহর পথে আহ্বান করতে হবে।
৩️⃣ আর্থিক অস্থিতিশীলতা
চাকরি না থাকা, অর্থনৈতিক টানাপোড়েন বা অর্থ ব্যবস্থাপনা নিয়ে মতবিরোধের কারণেও বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে।
প্রতিকার:
👉 দম্পতিকে একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে।
👉 পরিবারিক ব্যয় ইসলামী নীতিতে ভারসাম্যপূর্ণভাবে করতে হবে।
৪️⃣ পারিবারিক হস্তক্ষেপ
শ্বশুরবাড়ি বা বাপের বাড়ির অতিরিক্ত হস্তক্ষেপ দাম্পত্য কলহের বড় কারণ।
প্রতিকার:
👉 স্বামী-স্ত্রী উভয়ের উচিত নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরাই নেওয়া।
👉 পারিবারিক সমস্যায় তৃতীয় পক্ষকে সীমিতভাবে যুক্ত করা।
৫️⃣ মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন
অসহনীয় মানসিক চাপ, শারীরিক আঘাত, বা গালাগালি ইসলামে হারাম এবং তালাকের কারণ হতে পারে।
প্রতিকার:
👉 ইসলামীভাবে ধৈর্য ও সংলাপের মাধ্যমে সমাধান খোঁজা।
👉 প্রয়োজনে সামাজিক সালিশ বা আইনি সহায়তা নেওয়া।
৬️⃣ সন্তান না হওয়া বা বন্ধ্যাত্ব
সন্তান না হওয়ার কারণে অনেক পরিবারে সম্পর্ক ভেঙে যায়।
প্রতিকার:
👉 ইসলামে ধৈর্য ও দোয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
👉 “আল্লাহ যাকে চান সন্তান দান করেন” (সূরা আশ-শুরা: ৪৯-৫০)।
৭️⃣ অত্যাধিক সন্দেহ ও নিয়ন্ত্রণপ্রবণতা
অতিরিক্ত সন্দেহ দাম্পত্যে বিষের মতো কাজ করে।
প্রতিকার:
👉 একে অপরকে সময় দেওয়া ও বিশ্বাস স্থাপন করা জরুরি।
👉 অযথা গোপনীয়তা না রাখা।
৮️⃣ যোগাযোগের অভাব (Communication Gap)
বেশিরভাগ তালাকের মূল কারণ — কথোপকথনের অভাব।
প্রতিকার:
👉 সমস্যা হলে তা খোলামেলাভাবে আলোচনা করা উচিত।
👉 নীরবতা বা দূরত্ব না রেখে ভালোবাসার মাধ্যমে সমাধান করা।
৯️⃣ মাদকাসক্তি ও চরিত্রহীনতা
নেশা, জুয়া, বা অবৈধ সম্পর্ক ইসলামী দৃষ্টিতে হারাম এবং দাম্পত্য জীবনে ধ্বংস ডেকে আনে।
প্রতিকার:
👉 ইসলামীভাবে তওবা করে জীবন সংশোধন করা।
👉 প্রয়োজনে সমাজ ও রাষ্ট্রের সহায়তা নেওয়া।
🔟 অতিরিক্ত যৌতুক ও আর্থিক লোভ
যৌতুকের দাবি বা লোভ ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ, অথচ এ কারণেও বহু তালাক ঘটে।
প্রতিকার:
👉 রাসূল ﷺ বলেছেন: “সর্বোত্তম বিবাহ হলো সেই, যেখানে খরচ কম।” (ইবন মাজাহ ১৮৮৭)
⚖️ বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী তালাকের নিয়ম
বাংলাদেশে মুসলমানদের তালাক প্রক্রিয়া “মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১” দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
🔸 ধারা ৭ অনুযায়ী প্রক্রিয়া:
- স্বামী তালাক উচ্চারণ করার পর স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ/সিটি কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান বা মেয়রকে লিখিতভাবে নোটিশ দিতে হবে।
- চেয়ারম্যান নোটিশ পাওয়ার পর ৯০ দিনের মধ্যে মীমাংসা সভা (arbitration council) আহ্বান করবেন।
- যদি মীমাংসা ব্যর্থ হয়, তবে ৯০ দিনের শেষে তালাক কার্যকর হয়।
- নারীর ক্ষেত্রেও “খুলা” প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তালাকের আবেদন করা যায়।
📘 দলিল: মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১ (ধারা ৭)।
💡 ইসলামে তালাকের আগে করণীয়
কুরআনে আল্লাহ বলেন —
“আর যদি তোমরা তাদেরকে তালাক দাও, তবে নির্ধারিত সময় পর্যন্ত তাদেরকে তাদের ঘরে রাখো এবং সুন্দরভাবে আচরণ করো।”
(সূরা আত-তালাক: ১)
অর্থাৎ — তালাকের আগে দাম্পত্য রক্ষা ও সমঝোতার চেষ্টা করা ইসলামের নির্দেশ।
🕊️
তালাক কোনো সমাধান নয়, বরং এটি শেষ বিকল্প। ইসলামে দাম্পত্য জীবনের মূল ভিত্তি হলো ভালোবাসা, সহনশীলতা ও পরস্পরের প্রতি সম্মান। তাই তালাকের আগে উভয় পক্ষের উচিত আল্লাহর দিকে ফিরে আসা এবং পরস্পরের প্রতি দায়িত্বশীল হওয়া।
❓FAQ (সাধারণ প্রশ্নোত্তর)
1️⃣ ইসলামে তালাক বৈধ কি?
হ্যাঁ, তবে এটি আল্লাহর কাছে সবচেয়ে অপছন্দনীয় হালাল কাজ।
2️⃣ তালাকের পর স্ত্রী কোথায় থাকবে?
ইদ্দতের সময় পর্যন্ত স্বামীর বাসায় অবস্থান করা ইসলামী বিধান (সূরা আত-তালাক: ১)।
3️⃣ তালাকের সময় সাক্ষী প্রয়োজন কি?
হ্যাঁ, দুইজন ন্যায়পরায়ণ সাক্ষী রাখা সুন্নত (সূরা আত-তালাক: ২)।
4️⃣ রাগের সময় তালাক দিলে কার্যকর হয় কি?
রাগের মাত্রার ওপর নির্ভর করে — যদি বোধশক্তি থাকে, তাহলে কার্যকর।
5️⃣ তালাকের পর পুনরায় বিয়ে করা যাবে কি?
হ্যাঁ, তবে ইদ্দত শেষে এবং নতুন চুক্তির মাধ্যমে।
🔖 বার্তা:
তালাক কোনো খারাপ বিষয় নয়, তবে এটি অত্যন্ত সংবেদনশীল একটি পদক্ষেপ। ইসলামী দৃষ্টিতে তালাকের উদ্দেশ্য — দাম্পত্য জীবনের অন্যায় বা কষ্ট থেকে মুক্তি দেওয়া, নয় সম্পর্ক ধ্বংস করা।
📜 উৎস:
- কুরআন: সূরা আল-বাকারা (২:২২৯-২৩২), সূরা আত-তালাক (৬৫:১-২)
- হাদীস: সুনান আবু দাউদ (২১৭৮), ইবন মাজাহ (১৮৮৭)
- মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১
Download Divorce_Paper_Bangladesh Formate









