সহবাসের সময় লজ্জাস্থানে মুখ দিয়ে আদর করা জায়েজ না হারাম?
- আপডেট সময়ঃ ০৩:০২:২২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ৭৭ বার পড়া হয়েছে।
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা যা দাম্পত্য জীবনের প্রতিটি দিক নির্দেশনা দিয়েছে। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক শুধু শারীরিক নয়, বরং আধ্যাত্মিক, মানসিক ও আবেগময় বন্ধন। তবে অনেক সময় কিছু ঘনিষ্ঠ বিষয় নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, যেমন স্বামী-স্ত্রী লজ্জাস্থানে মুখ দিয়ে আদর করা বৈধ নাকি হারাম। এই বিষয়ে ইসলামী শরীয়ত, হাদীস ও উলামাদের মতামতের আলোকে বিশদ আলোচনা করা হলো।
ইসলামে দাম্পত্য জীবনের সৌন্দর্য
কুরআনে বলা হয়েছে:
﴿هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَأَنتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّ﴾
(সূরা আল-বাকারাহ 2:187)
“তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের জন্য আচ্ছাদন, আর তোমরা তাদের জন্য আচ্ছাদন।”
এই আয়াতে বোঝানো হয়েছে যে স্বামী-স্ত্রী একে অপরের জন্য আড়াল, রক্ষা ও সৌন্দর্য। তাই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ইসলাম স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করেছে।
কুরআনে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের দিকনির্দেশনা
“তোমাদের স্ত্রী তোমাদের জন্য আচ্ছাদন”
কুরআন দাম্পত্য সম্পর্কে স্বাভাবিকতা ও ভালোবাসার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছে।
বৈধ সম্পর্কের সীমারেখা
আল্লাহ শুধুমাত্র ঋতুকালে সহবাস ও পায়ুপথে সহবাস নিষিদ্ধ করেছেন। অন্য কোনো পদ্ধতি স্পষ্টভাবে হারাম করা হয়নি।
বাসর ঘরের সুন্নাতসমূহ কি কি? আমল ও পদ্ধতি
হাদীসে স্বামী-স্ত্রীর ঘনিষ্ঠতা
নবী ﷺ এর দিকনির্দেশনা
রাসূল ﷺ স্বামী-স্ত্রীকে একে অপরকে ভালোবাসা ও খেলাধুলার মাধ্যমে সম্পর্ক দৃঢ় করার পরামর্শ দিয়েছেন। তবে পায়ু সহবাস স্পষ্টভাবে হারাম করেছেন।
সাহাবীদের জীবন থেকে উদাহরণ
সাহাবীরা স্ত্রীদের সাথে খোলামেলা ছিলেন, তবে শালীনতা বজায় রাখতেন।
উলামাদের ভিন্ন মতামত
যারা এটি জায়েজ বলেছেন
অনেক আলেমের মতে, কুরআন ও হাদীসে এর স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা নেই। তাই শর্তসাপেক্ষে জায়েজ।
যারা এটি মাকরুহ বলেছেন
কিছু উলামার মতে, এটি অপবিত্রতার কারণে মাকরুহ।
যারা একে হারাম বলেছেন
অল্পসংখ্যক আলেম স্বাস্থ্যগত ও শালীনতার কারণে হারাম বলেছেন।
শরীয়তসম্মত বৈধতার মূলনীতি
সবকিছু হালাল, হারামের দলিল ব্যতীত
ইসলামী ফিকহের মূলনীতি: “আসল হলো জিনিসগুলো হালাল, যতক্ষণ না হারামের দলিল আসে।”
কেবল পায়ু সহবাসের স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা
রাসূল ﷺ বলেছেন:
“যে ব্যক্তি স্ত্রীকে পায়ুপথে সহবাস করে, সে অভিশপ্ত।”
(আবু দাউদ, তিরমিজি)
মুখ দিয়ে আদর করার ক্ষেত্রে শর্তাবলী
-
উভয়ের সম্মতি থাকতে হবে।
-
অপবিত্রতা এড়িয়ে চলতে হবে।
-
স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
বাসর ঘরের সুন্নাতসমূহ কি কি? আমল ও পদ্ধতি
চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতামত
সংক্রমণের ঝুঁকি
চিকিৎসা মতে, মুখ ও যৌনাঙ্গের সংস্পর্শে কিছু সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে।
সুরক্ষার উপায়
পরিচ্ছন্নতা ও সুরক্ষা মেনে চললে ঝুঁকি অনেকটা কমানো সম্ভব।
আধুনিক সমাজে বিষয়টির বিতর্ক
আজকের সমাজে এ নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। কেউ একে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ মনে করেন, আবার কেউ একে শালীনতার বাইরে মনে করেন।
স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সম্মতি ও সম্মান
দাম্পত্য সম্পর্কে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো পারস্পরিক সম্মান। কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়া ইসলাম অনুমোদন করে না।
আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে দাম্পত্য জীবনের গুরুত্ব
নবী ﷺ বলেছেন:
“যখন তোমরা স্ত্রীর সাথে সহবাস করো, তখনো তা সওয়াবের কাজ।”
(সহীহ মুসলিম)
দাম্পত্য জীবনে শালীনতা ও পরিমিতি
অতিরিক্ততা বা বিকৃত রুচি ইসলাম সমর্থন করে না। বরং ভারসাম্য ও শালীনতা বজায় রাখতে হবে।
স্বামী-স্ত্রীর লজ্জাস্থানে মুখ লাগিয়ে আদর করা বিষয়ে কুরআন-হাদীসে স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা নেই। তাই এটি শর্তসাপেক্ষে জায়েজ বলা যায়। তবে অপবিত্রতা, স্বাস্থ্যগত ক্ষতি এবং পারস্পরিক অস্বস্তি থাকলে তা পরিহার করাই উত্তম। ইসলামের মূল শিক্ষা হলো ভালোবাসা, সম্মান ও পরিমিতি বজায় রেখে দাম্পত্য জীবনকে সুখী করা।
FAQs
1. লজ্জাস্থানে মুখ দিয়ে আদর করা কি হারাম?
না, স্পষ্ট দলিল নেই। তবে শর্তসাপেক্ষে জায়েজ।
2. উলামাদের মতামতে পার্থক্য কেন?
কারণ কেউ স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনা করেছেন, কেউ শরীয়তের সাধারণ মূলনীতি অনুসরণ করেছেন।
3. এতে কি সওয়াব পাওয়া যাবে?
হ্যাঁ, স্বামী-স্ত্রীর বৈধ সম্পর্ক সওয়াবের কাজ।
4. চিকিৎসকদের মতে কি ঝুঁকি আছে?
সংক্রমণ ও রোগের ঝুঁকি আছে।
5. সেরা উপায় কী?
পারস্পরিক সম্মতি, পরিচ্ছন্নতা ও শালীনতা বজায় রাখা।









