কি কি দর্শনীয় জিনিস রয়েছে? কিভাবে যেতে হয়?
সিলেট শাহ জালালের দরগায় কি কি দর্শনীয় জিনিস রয়েছে? কিভাবে যেতে হয়?

- আপডেট সময়ঃ ০১:৫৩:৩৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৯ মে ২০২৫
- / ৫৩ বার পড়া হয়েছে।
সিলেট শহর বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। এখানে অবস্থিত হজরত শাহ জালাল (রহঃ) এর দরগা বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় তীর্থস্থান। প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষের ভীড় এই দরগায় জমা হয় দোয়া ও শান্তির সন্ধানে। কিন্তু দরগার পাশাপাশিই রয়েছে অসংখ্য দর্শনীয় স্থান ও ঐতিহাসিক স্মৃতিস্তম্ভ যা পর্যটকদের জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয়। এই প্রবন্ধে আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব সিলেট শাহ জালালের দরগার দর্শনীয় স্থানগুলো এবং কিভাবে সহজে সেখানে পৌঁছানো যায়।
শাহ জালালের দরগা: একটি সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
শাহ জালাল (রহঃ) ছিলেন ইসলামের একজন মহান সুফি সাধক, যিনি ১৩শ শতকে বাংলায় ইসলাম প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তার দরগা সিলেট শহরের হৃদয়ে অবস্থিত, যেখানে তার কবরে লাখো লোক শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসেন।
দরগার প্রধান দর্শনীয় স্থানসমূহ
১. শাহ জালালের মাজার
দরগার কেন্দ্রীয় আকর্ষণ শাহ জালালের কবর। এটি একটি সুন্দর ও পবিত্র স্থান যেখানে মুসলিম ও অমুসলিম উভয়ই ভক্তি নিবেদন করেন। মাজারের চারপাশে রয়েছে নানা ধরনের কারুকাজ ও প্রাচীন নির্মাণশৈলী।
২. মসজিদ ও নামাজখানা
দরগার কমপ্লেক্সে রয়েছে একটি বিশাল মসজিদ, যেখানে হাজারো মুসলিম একসঙ্গে নামাজ আদায় করেন। মসজিদের স্থাপত্য ও পরিবেশ ভক্তদের আধ্যাত্মিক অনুভূতি জাগায়।
৩. শাহ জালালের চিরস্থায়ী আবাসস্থল (মাজারের চারপাশের এলাকা)
এখানে রয়েছে ছোট ছোট কামরা, যেখানে সাধকগণ থাকতেন এবং পাঠদান করতেন। আজ এই জায়গাটি দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত।
৪. দরগার প্রাঙ্গণের প্রাচীন গাছ
দরগার কমপ্লেক্সে বহু শতাব্দী পুরনো গাছ আছে, যা দর্শকদের জন্য প্রাকৃতিক ছায়া ও আরামের জায়গা হিসেবে পরিচিত।
৫. ইতিহাস ও স্থাপত্য
দরগার সংলগ্ন স্থাপত্যগুলোতে রয়েছে বহু স্থাপত্য নিদর্শন, যেমন পুরনো প্রাচীর, গম্বুজ, এবং কারুকার্য যা ইসলামিক স্থাপত্যের অনন্য উদাহরণ।
৬. দরগার উরস ও অন্যান্য উৎসব
দরগায় বিশেষ করে শাহ জালালের উরস অত্যন্ত জনপ্রিয়। এই সময় দরগার পরিবেশ সম্পূর্ণ ভিন্ন রকম হয়ে ওঠে, যেখানে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, কোরআন পাঠ ও প্রার্থনা করা হয়।
৭. দরগার আশেপাশের বাজার ও পণ্যের দোকান
দরগার আশপাশে রয়েছে ছোট ছোট দোকান ও হাট, যেখানে স্থানীয় হস্তশিল্প, সুগন্ধি, ধর্মীয় সামগ্রী পাওয়া যায়।
৮. শাহ জালাল রহঃ এর ঐতিহাসিক জালালী কবুতর রয়েছে।
যাদেরকে ঘিরে শাহপরান রহঃ এর একটি কারামতও শুনতে পাওয়া যায়।দর্শনার্থীরা কবুতরকে খাবার খাওয়াতে পারে নিজের হাতে।
৯.বিখ্যাত সেই গোজার মাছ রয়েছে
যেগুলুওকে জালালী গোজার বলা হয়। পুকুরে বড় বড় গোজার দেখে দর্শনার্থীরা আনন্দিত হয়।
১০.মাজারের পেছনে কবর স্থান রয়েছে।
সেখানে বাংলাদেশের নায়ক সালমান শাহের কবর বা সমাধি রয়েছে।পেছনে আরও কিছু কুয়ো রয়েছে।
সিলেট শাহ জালালের দরগায় কীভাবে যাওয়া যায়?
সড়ক পথে যাওয়া:
সিলেট ঢাকা থেকে প্রায় ২৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ঢাকা থেকে সরাসরি বাস, মাইক্রোবাস বা প্রাইভেট কারে এসে পৌঁছানো যায়। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক দিয়ে যাত্রা করলে প্রায় ৫-৬ ঘণ্টা সময় লাগে। সিলেট শহরে পৌঁছানোর পর স্থানীয় পরিবহনে (অটো রিকশা, সিএনজি) দরগায় যাওয়া খুবই সহজ।
বিমান পথে যাওয়া:
সিলেট শহরে সিলেট শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অবস্থিত, যা দেশের প্রধান শহরগুলো থেকে সরাসরি ফ্লাইট পেয়ে থাকে। বিমানবন্দর থেকে দরগা পর্যন্ত প্রায় ২০ মিনিটের দূরত্ব। ট্যাক্সি বা রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের মাধ্যমে সহজেই দরগায় পৌঁছানো যায়।
রেলপথে যাওয়া:
ঢাকা থেকে সিলেট রেলওয়ে যোগাযোগ রয়েছে। সিলেট রেলস্টেশন থেকে রিকশা বা সিএনজি গাড়িতে দরগায় যাওয়া যায়। তবে রেলপথের মাধ্যমে যাত্রা কিছুটা ধীর হতে পারে।
দরগার দর্শন উপভোগ করার জন্য পরামর্শ
-
দরগায় যাওয়ার সময় যথাযথ পোশাক পরিধান করা উচিত, যাতে ধর্মীয় মর্যাদা বজায় থাকে।
-
দরগার ভিতরে মোবাইল ফোন এবং ক্যামেরা ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সম্মানের সাথে কাজ করতে হবে।
-
উরস বা উৎসবের সময় অতিরিক্ত ভিড় হয়, তাই আগাম পরিকল্পনা করে যাওয়া বাঞ্ছনীয়।
-
দরগা পরিদর্শনের পাশাপাশি সিলেটের অন্যান্য দর্শনীয় স্থান যেমন লালাখাল, জাফলং, জিন্দাবাজারেও যেতে পারেন।
সিলেট শাহ জালাল দরগার গুরুত্ব
শাহ জালালের দরগা শুধু একটি ধর্মীয় স্থান নয়, এটি বাংলাদেশের আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। এখানে আসা মানুষ শুধু ধর্মীয় শান্তি খোঁজে না, বরং ঐতিহাসিক পরিবেশ ও স্থানীয় সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হয়।
সিলেটের শাহ জালালের দরগা দর্শনীয় স্থান হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে আপনি শুধু ধর্মীয় অনুভূতি গ্রহণ করবেন না, পাশাপাশি বাংলার ইতিহাস ও স্থাপত্যের সঙ্গে পরিচিত হবেন। সহজ যাতায়াত ব্যবস্থা ও চারপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এই স্থানটিকে করে তোলে একটি সম্পূর্ণ পর্যটন গন্তব্য। তাই সিলেট যাত্রা করলে শাহ জালালের দরগা দর্শন আপনার তালিকায় অবশ্যই থাকবে।
৫টি গুরুত্বপূর্ণ FAQ
১. শাহ জালালের দরগা কখন থেকে খুলে থাকে?
সাধারণত সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকে।
২. দরগায় কি সব ধর্মের মানুষ যেতে পারেন?
হ্যাঁ, এখানে সবাইকে স্বাগত জানানো হয়।
৩. উরস কবে হয়?
প্রতি বছর জিলকদ মাসের ১৩ থেকে ১৫ তারিখে উরস অনুষ্ঠিত হয়।
৪. দরগার আশপাশে কোথায় থাকা যায়?
সিলেট শহরে অনেক হোটেল রয়েছে যা দরগার কাছাকাছি অবস্থিত।
৫. দরগা দর্শনের জন্য কোন বিশেষ অনুমতি লাগে?
না, দরগা দর্শনে কোনো অনুমতির প্রয়োজন নেই।