হজ করতে গিয়ে মৃত্যুবরণকারীর মর্যাদা ও সুসংবাদ
হজ করতে গিয়ে মৃত্যুবরণকারীর মর্যাদা ও সুসংবাদ

- আপডেট সময়ঃ ১০:৫৮:৫৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫
- / ৪২ বার পড়া হয়েছে।
ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ হলো হজ। এটি এমন এক ইবাদত, যেখানে মুসলিম উম্মাহ আল্লাহর ঘর কা’বাকে কেন্দ্র করে মিলিত হয়। হজের সময় একজন মুমিন শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সব কিছু ত্যাগ করে পবিত্র ভূমিতে উপস্থিত হয়।
কেউ যদি হজের এই পবিত্র সফরে ইন্তিকাল করেন, তাহলে তার জন্য রয়েছে বিশেষ মর্যাদা ও সুসংবাদ — যা কুরআন-হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
১. হজের সফরে মৃত্যুবরণকারীর বিশেষ ফজিলত
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন:“যে ব্যক্তি হজ করতে গিয়ে মারা যায় এবং তার কোনো গোনাহ ছিল না, সে কিয়ামত পর্যন্ত ইহরামের অবস্থায় থাকবে এবং তার জন্য হজকারীর সাওয়াব লেখা হতে থাকবে।
“— মুসনাদে আহমদ: ১৫৬২৭ 🔹 এই হাদীস থেকে বোঝা যায়, হজের সময় মৃত্যু হলে, সে ব্যক্তি ইহরাম অবস্থায় জান্নাতের পথে চলে যান, আর তার সওয়াব চলতেই থাকে।
২. শহীদের মর্যাদা লাভ
হাদীসে শহীদের সংখ্যা সাত শ্রেণীর কথা বলা হয়েছে, তাদের মধ্যে একজন হলেন:“যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় সফরে গিয়ে মারা যায় — সে শহীদ।”— আবু দাউদ: ৩১১১, সহীহ ইবনে হিব্বান: ৪৬৫২
🔹 হজ একটি ‘ফী সাবীলিল্লাহ’ ইবাদত। ফলে এই সফরে মৃত্যু হলে, হজযাত্রী শহীদের মর্যাদা লাভ করেন।
৩. জান্নাতের সুসংবাদ
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন:“হজ করতে গিয়ে কেউ মারা গেলে, আল্লাহ তাকে কিয়ামত পর্যন্ত হজকারীর পোশাকে উঠাবেন এবং ‘লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ বলতে বলতে সে হাশরের ময়দানে উঠবে।”— বায়হাকী, শু‘আবুল ঈমান
🔹 এটি এক চিরন্তন সম্মানের প্রতীক, যেখানে মৃত্যুর পরও আল্লাহর ডাকে সাড়া দেওয়া অবস্থায় তাকে পুনরুত্থিত করা হবে।
৪. গুনাহসমূহ মাফ হয়ে যায়
হজ একটি সর্বোচ্চ ইবাদত — এর দ্বারা পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ হয়ে যায়।“যে ব্যক্তি হজ করে এবং অশ্লীলতা বা গোনাহে লিপ্ত না হয়, সে সেদিনই ফিরে আসে যেদিন তার মা তাকে জন্ম দিয়েছিল।”— সহীহ বুখারী: ১৫২১, সহীহ মুসলিম: ১৩৫০
🔹 অতএব, যদি কেউ হজের সময় মৃত্যুবরণ করে, তাহলে আশা করা যায়—সে বিশুদ্ধ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করল।
৫. মৃত্যুর সময় অবস্থান: বরকতময় স্থান
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন:“রাসূল ﷺ বলেছেন, ‘হারামের (মক্কা) ভেতরে মৃত্যু হলে তা বিশেষ মর্যাদার নিদর্শন।’
“— মুয়াত্তা মালিক, ১:৩৯৮ 🔹 কা‘বা শরীফের আশেপাশে, মিনায়, আরাফায়, মুজদালিফায় ইন্তিকাল হওয়া— এগুলো জান্নাতের নিদর্শনের মধ্যেই গণ্য।
৬. কা‘বার অদূরে কবর: এক বিশেষ সৌভাগ্য
অনেক আলিম বলেন:
“যে স্থানে আল্লাহর রহমতের নাজিল বেশি, সেখানে দাফন হওয়া এক বড় নিয়ামত।
“— ইবনুল কায়্যিম, কিতাবুর রুহ 🔹 তাই মক্কা-মদিনার পবিত্র ভূমিতে দাফন হওয়া এক অসাধারণ সৌভাগ্য, যা হজযাত্রী মৃত্যুবরণকারীরা লাভ করেন।
৭. ইতিহাসের আলোকপাত: সাহাবীগণ ও বুযুর্গদের আকাঙ্ক্ষা
অনেক সাহাবী, তাবেঈন, এবং ওলি-আউলিয়ারা দোয়া করতেন যেন তারা হজের সময় ইন্তিকাল করেন।
🔸 হজরত খুবাইব ইবন আদী (রা.) বলেছিলেন:“হে আল্লাহ! যেন আমি তোমার ঘরের পথে মৃত্যু লাভ করি।”
🔹 অনেক বুযুর্গের ইতিহাসে দেখা যায়, তারা হজের সময় মৃত্যুবরণ করে জান্নাতুল মুআল্লায় দাফন হন।
৮. হজযাত্রীদের প্রতি আল্লাহর বিশেষ দৃষ্টি
“হজ ও উমরার যাত্রীরা আল্লাহর মেহমান। তারা যদি তাঁর কাছে কিছু চায়, আল্লাহ তা দান করেন। আর যদি দোয়া করে, আল্লাহ তা কবুল করেন।
“-— ইবনু মাজাহ: ২৮৯৩-🔹 তাই হজের সময় মৃত্যু হলে, সে ব্যক্তি মৃত্যুর মুহূর্তে আল্লাহর ‘মেহমান’ অবস্থায় ছিলেন — যা ঈমানদারদের জন্য এক বিরাট আশীর্বাদ।
হজ করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করা কোনো সাধারণ মৃত্যু নয়। এটি শহীদির মর্যাদা, জান্নাতের প্রতিশ্রুতি, গুনাহ মাফের কারণ এবং ইহরামের অবস্থায় পুনরুত্থানের অসাধারণ এক ফজিলতপূর্ণ অবস্থা।
তাই মুসলিম উম্মাহর বহু প্রিয় বান্দা হজের সময় ইন্তিকালের জন্য দোয়া করতেন।
আসুন, আমরাও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হজের নিয়ত করি এবং এই মহান ইবাদতে ইন্তিকালের সৌভাগ্যের দোয়া করতে থাকি:
“হে আল্লাহ! আমাকে তাওফিক দাও, যেন আমি তোমার ঘরের দিকে ইখলাসের সাথে হজ করি এবং যদি মৃত্যু হয়, যেন তা তোমার সন্তুষ্টির সঙ্গে হয়।”
📚 তথ্যসূত্র:
- সহীহ বুখারী – ১৫২১
- সহীহ মুসলিম – ১৩৫০
- মুসনাদে আহমদ – ১৫৬২৭
- আবু দাউদ – ৩১১১
- শু‘আবুল ঈমান (বায়হাকী)
- ইবনু মাজাহ – ২৮৯৩
- মুয়াত্তা মালিক – ১:৩৯৮
- কিতাবুর রুহ – ইবনুল কায়্যিম