কদম্বুচি (পা চুম্বন) সম্পর্কিত হাদীস ও দলিলসমূহ উপস্থাপন করা হলো
পা ছুঁয়ে সালাম করা বা কদম্বুচি ইসলামে জায়েজ না হারাম? (দালিলী সমাধান)
- আপডেট সময়ঃ ০১:৫১:২২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ মে ২০২৫
- / ৬৩ বার পড়া হয়েছে।
পা ছুঁয়ে সালাম করা বা কদম্বুচির মাঝে একটি সরল ব্যবধান রয়েছে। এটি বুঝতে হলে আমাদেরকে প্রথমেই কদম্বুচির দালিলি বিশ্লেষণটি জানতে হবে।তাই কদম্বুচির বিষয়টি জেনে নেয়া যাক।কদম্বুচি কি? কিভাবে করা হয়? এর দলিল কি?
🕌 ১. সাহাবীগণ রাসূল (সা.)-এর হাত ও পা চুম্বন করেছেন
হাদীসের পাঠ:
আব্দুর রহমান ইবনে রুযাইন (রহ.) বলেন : عن عبد الرحمن بن رزين قال: أتينا ربعي بن حراش فحدثنا عن رجل من عبد القيس أتى النبي ﷺ، فلما رأيناه ألقينا بأنفسنا فقبَّلنا يده ورجله
“আমরা রাবীই ইবনে হিরাশের নিকট গিয়েছিলাম। তিনি আমাদেরকে আবদুল কায়েস গোত্রের এক ব্যক্তির ঘটনা বললেন, যে নবী (সা.)-এর নিকট এসেছিল। আমরা যখন তাঁকে (নবী সা.) দেখতে পেলাম, আমরা নিজেরাই পড়ে গেলাম এবং তাঁর হাত ও পা চুম্বন করলাম।”
📚 সূত্র : মুসনাদ আহমদ (হাদীস: ২৩৪০৮), আবু দাউদ (হাদীস: ৫২২৫)
🔎 হাদীসের মান : হাসান (বিশ্বস্ত সূত্রে প্রমাণিত)
🕍 ২. ইহুদিদের পক্ষ থেকে রাসূল (সা.)-এর পা চুম্বনের ঘটনা
হাদীসের পাঠ:
সাফওয়ান ইবনে আসাল (রাঃ) বলেন : عن صفوان بن عسال قال: قدم يهوديان على النبي ﷺ فسألاه عن تسع آيات، فلما سمعا جوابه قبّلا يديه ورجليه وقالا نشهد أنك نبي
“দুইজন ইহুদি নবী (সা.)-এর নিকট আসল এবং তাঁকে নয়টি চিহ্ন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। নবী (সা.) উত্তর দেওয়ার পর তারা তাঁর হাত ও পা চুম্বন করল এবং বলল, ‘আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি, আপনি অবশ্যই নবী।’”
📚 সূত্র: তিরমিযী (হাদীস: ২৭৩৩), আহমদ, নাসাঈ
🔎 হাদীসের মান: সহীহ (বিশ্বস্ত হাদীস)
🕌 ৩. ইজ্জত ও সম্মানার্থে পা চুম্বনের বৈধতা
ইসলামে পা চুম্বন বা “কদম্বুচি” করা নিয়মিত আমল নয় বা এটি কোন ফরয, সুন্নত, নফল ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত নয়। তবে, মহান ব্যক্তিত্ব বা ওলীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য সাময়িকভাবে হাত বা পা চুম্বন করার অনুমতি রয়েছে, তবে তা উগ্রতা ও বাড়াবাড়ি ছাড়া হতে হবে।আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাতের আক্বীদার কোন অংশও বলা যায়।
💡 ইসলামি স্কলারদের মতামত:
-
ইমাম নববী (রহ.) বলেন:
“আলেম ও নেককারদের হাত চুম্বন করা বৈধ। পা চুম্বন করাও ইজ্জত প্রদর্শনের জন্য বৈধ হতে পারে।”
📚 সূত্র: শরহ্ আন্-নববী ‘আলা মুসলিম -
ইবনে হাজার আল আসকালানী (রহ.) বলেন:
“যদি তা মহব্বত ও শ্রদ্ধা প্রকাশের উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে, তবে এতে কোন আপত্তি নেই।”
📚 সূত্র: ফাতহুল বারিকদম্বুচির বিষয়টি আমাদের কাছে পরিষ্কার।এবার সালাম করার প্রসঙ্গ। ইসলামে সালাম করা বলে কাউকে সালাম প্রদান করাকে বুঝায়।যেটি এক মুসলমানের জন্য অপর মুসলমানের প্রতি সুন্নাত এবং এর জবাব দেয়া ২য় ব্যক্তির উপর ওয়াজিব হয়ে যায়।
প্রচলিত থাকা পা ছুঁয়ে যেই সম্মান দেখানো হয় সেটিকেও এদেশের অসংখ্য মুসলমানেরা সালাম বলে থাকেন।বাস্তব কথা হলো ,এটি সালাম নয় বরং একটি সম্মান জ্ঞাপক শিষ্টাচার,যেটি শত বছর ধরে প্রচলিত হয়ে আসছে।
প্রশ্ন হলো – এটি জায়েজ নাকি হারাম? জবাব – ইসলামের প্রাক যুগে এই প্রচলনটির অস্তিত্ব ছিলোনা যদিও ,তবে বর্তমানে এটি প্রসিদ্ধ।এমন শ্রেণীর আরও বড় আকারে কদম্বুচিকে ইসলামে চর্চা করা হতো।আরবের মুসলিমদের মাঝে তা আজও দেখা যায়।
তবে এটি সুন্নাত,ওয়াজিব বা ফরজ আমল নয়।আবার হারাম বা গোনাহগার হওয়ার মতো কোন কাজও নয়।আবার আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাতের আক্বীদার কোন অংশও বলা যায়না।
পা ছুঁয়ে সম্মান প্রদানের ব্যপারটি ইসলামের সরাসরি আলোচিত বিষয় না হওয়া সত্ত্বেও কদম্বুচিকে একই শ্রেণীর ইসলামী শিষ্টাচারভুক্ত হিসেবে পাওয়া যায়।যার ফলে এমন শিষ্টাচারকে হারাম বলার সুযোগ থাকে না।বরং জায়েজ হিসেবে সাব্যস্ত করা যায়।
তবে এই পদ্ধতির শিষ্টাচারকে যদি কেউ অস্বীকার করে এতে যেমন গোনাহ থাকবে না।তেমনই এত চর্চাকারীও গোনাহগার হবে না।এটিই উল্লেখিত আলোচনা ও দলিলের ভিত্তিতে সমাধান হিসেবে গ্রহণযোগ্য।আমরা বিতর্কে লিপ্ত না হয়ে সমঝদারের পরিচয়দেব এবং পছন্দ অনুযায়ী পালন করবো ইনশাআল্লাহ।









