০১:৩৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৫
দলিল সহ কুরআন-হাদিসের বিশ্লেষণ

কুরআন তিলাওয়াতের ইহকালীন ও পরকালীন ফজিলত

Mahmud abdullah
  • আপডেট সময়ঃ ০৪:৫৬:২৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ মে ২০২৫
  • / ৩৩ বার পড়া হয়েছে।

কুরআন তিলাওয়াতের ইহকালীন ও পরকালীন ফজিলত

কুরআন তিলাওয়াত: এক পরিপূর্ণ ইবাদত

কুরআন শরীফ হলো মানবজাতির জন্য আল্লাহ প্রদত্ত সর্বশেষ এবং সর্বোচ্চ হেদায়েতপূর্ণ গ্রন্থ। এটি এমন এক কিতাব, যা শুধুমাত্র ধর্মীয় দিকনির্দেশনাই দেয় না, বরং জীবনের সকল দিক পরিচালনার জন্য আলোকবর্তিকা।

কুরআনের অর্থ ও পরিচয়

“القرآن” শব্দের অর্থ হলো “তিলাওয়াতযোগ্য” বা “পাঠযোগ্য”। এটি আল্লাহর বানী, যা তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর উপর ২৩ বছর ধরে নাযিল করেছেন।

আল্লাহর শেষ কিতাব হিসেবে কুরআন

إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ
“নিশ্চয়ই আমরাই ‘যিকির’ (কুরআন) অবতীর্ণ করেছি এবং আমরাই এর সংরক্ষণকারী।”
— সূরা হিজর (১৫:৯)


কুরআন তিলাওয়াতের গুরুত্ব কুরআনের আলোকে

আল্লাহ নিজেই কুরআনের মর্যাদা বর্ণনা করেছেন এবং এর পাঠকারীদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতার গ্যারান্টি দিয়েছেন।

ذَٰلِكَ ٱلۡكِتَٰبُ لَا رَيۡبَۛ فِيهِۛ هُدٗى لِّلۡمُتَّقِينَ
“এই কিতাবে কোন সন্দেহ নেই, এটি পরহেযগারদের জন্য পথনির্দেশ।”
— সূরা বাকারা (২:২)


হাদিসের আলোকে তিলাওয়াতের ফজিলত

রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেন:

مَنْ قَرَأَ حَرْفًا مِنْ كِتَابِ اللَّهِ فَلَهُ بِهِ حَسَنَةٌ، وَالْحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا
“যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাব থেকে একটি হরফ পাঠ করে, তার জন্য একটি নেকি রয়েছে, এবং প্রতিটি নেকির জন্য দশগুণ সওয়াব দেওয়া হয়।”
— (তিরমিযী, হাদীস: ২৯১০)


কুরআন তিলাওয়াতের ইহকালীন ফজিলত

🕊 হৃদয় প্রশান্তি ও মানসিক শান্তি

أَلَا بِذِكْرِ اللَّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ
“নিশ্চয়ই আল্লাহর জিকিরেই হৃদয় প্রশান্ত হয়।”
— সূরা রা’দ (১৩:২৮)

🌾 রিজিক বৃদ্ধির মাধ্যম

ইমাম শাফেয়ি (রহঃ) বলেন: “যে ব্যক্তি কুরআনের তিলাওয়াত করে, আল্লাহ তাকে হালাল রিজিকে বরকত দেন।”


কুরআন তিলাওয়াতের পরকালীন ফজিলত

📖 কুরআন হবে সুপারিশকারী

اقْرَؤُوا الْقُرْآنَ، فَإِنَّهُ يَأْتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ شَفِيعًا لِأَصْحَابِهِ
“তোমরা কুরআন পড়ো, কারণ কিয়ামতের দিন কুরআন তার পাঠকারীদের জন্য সুপারিশ করবে।”
— (সহীহ মুসলিম, হাদীস: ৮০৪)

🌟 জান্নাতে উচ্চ মর্যাদা

يُقَالُ لِصَاحِبِ الْقُرْآنِ اقْرَأْ وَارْقَ وَرَتِّلْ
“কুরআনের সাহাবাকে বলা হবে: পড়ো, আরো উপরে উঠো, সুন্দর করে তিলাওয়াত করো।”
— (আবু দাউদ, হাদীস: ১৪৬৪)


তিলাওয়াতের আদব ও পদ্ধতি

  • পবিত্র অবস্থায় থাকা
  • আরবি উচ্চারণ সহ ঠিকভাবে পড়া (তাজবিদ)
  • ধীরে ধীরে ভাবার্থসহ তিলাওয়াত করা

বৈজ্ঞানিক প্রভাব ও মানসিক প্রশান্তি

  • গবেষণায় দেখা গেছে, কুরআন তিলাওয়াত মস্তিষ্কের β-ওয়েভ কমিয়ে প্রশান্তি এনে দেয়।
  • হৃদরোগ ও উদ্বেগ নিরাময়ের জন্য এটি এক প্রাকৃতিক ওষুধ।

নারীদের জন্য কুরআন তিলাওয়াত

  • হায়েজ-নেফাস চলাকালে মুথালা বা শ্রবণ করা উত্তম।
  • গর্ভবতী নারীদের তিলাওয়াতে সন্তানের চরিত্রে প্রভাব পড়ে।

শিশুদের কুরআন শিক্ষা: অমূল্য সম্পদ

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “তোমরা সন্তানদের কুরআন শিক্ষা দাও, কারণ এটি তাদের অন্তরে ঈমানের আলো জ্বালিয়ে দেয়।”
— (দারিমি)


তিলাওয়াতের বাধা ও প্রতিকার

  • অলসতা ত্যাগ করুন, ছোট সূরা দিয়েও শুরু করা যেতে পারে।
  • সময় নির্ধারণ করে প্রতিদিন অন্তত ১০ মিনিট পড়ুন।

প্রযুক্তি ও আধুনিক প্ল্যাটফর্মে তিলাওয়াত

  • Qur’an Explorer, Ayat, iQuran অ্যাপ ব্যবহার করে নিয়মিত পড়া সহজ
  • ইউটিউব, Spotify-তে বিশ্বসেরা কারিদের তিলাওয়াত শুনে উৎসাহ পাওয়া যায়

সমাজে কুরআন কেন্দ্রিক সংস্কৃতি গঠন

  • পরিবারে সাপ্তাহিক কুরআন পাঠ
  • অফিস, স্কুল ও মসজিদে কুরআন ক্লাস

কুরআন তিলাওয়াত শুধু মুখের পাঠ নয়, বরং এটি অন্তরের জন্য দাওয়াই। এর প্রতি ভালোবাসা, অধ্যবসায় এবং সম্মানই পারে আমাদের দুনিয়া ও আখিরাতকে সফল করতে। আমাদের উচিত প্রতিদিন কুরআন তিলাওয়াত করা, বুঝে পড়া এবং জীবনকে কুরআনের আলোয় আলোকিত করা।


❓ প্রশ্নোত্তর (FAQs)

১. প্রতিদিন কত আয়াত পড়া উচিত?

প্রতিদিন অন্তত ১০ আয়াত পড়লে কিয়ামতের দিনে তিলাওয়াতকারী হিসেবে গণ্য হবেন।

২. নারীরা কি মাসিক চলাকালে কুরআন পড়তে পারে?

তিলাওয়াত না করলেও শ্রবণ বা অনুবাদ পড়া জায়েজ।

৩. মোবাইলে কুরআন পড়া কি সওয়াবের কাজ?

হ্যাঁ, মোবাইলে পড়লেও একই সওয়াব হবে, নিয়ত বিশুদ্ধ থাকতে হবে।

৪. মুখস্থ কুরআনের আয়াত পড়লেও কি সওয়াব পাওয়া যায়?

অবশ্যই। মুখস্থ থেকে তিলাওয়াত করাও সওয়াবের কাজ।

৫. কোন সময় কুরআন তিলাওয়াত উত্তম?

ফজরের পর ও রাতে ঘুমের আগে পড়া সবচেয়ে বরকতময়।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

বিস্তারিত লিখুনঃ

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

দলিল সহ কুরআন-হাদিসের বিশ্লেষণ

কুরআন তিলাওয়াতের ইহকালীন ও পরকালীন ফজিলত

আপডেট সময়ঃ ০৪:৫৬:২৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ মে ২০২৫

কুরআন তিলাওয়াত: এক পরিপূর্ণ ইবাদত

কুরআন শরীফ হলো মানবজাতির জন্য আল্লাহ প্রদত্ত সর্বশেষ এবং সর্বোচ্চ হেদায়েতপূর্ণ গ্রন্থ। এটি এমন এক কিতাব, যা শুধুমাত্র ধর্মীয় দিকনির্দেশনাই দেয় না, বরং জীবনের সকল দিক পরিচালনার জন্য আলোকবর্তিকা।

কুরআনের অর্থ ও পরিচয়

“القرآن” শব্দের অর্থ হলো “তিলাওয়াতযোগ্য” বা “পাঠযোগ্য”। এটি আল্লাহর বানী, যা তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর উপর ২৩ বছর ধরে নাযিল করেছেন।

আল্লাহর শেষ কিতাব হিসেবে কুরআন

إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ
“নিশ্চয়ই আমরাই ‘যিকির’ (কুরআন) অবতীর্ণ করেছি এবং আমরাই এর সংরক্ষণকারী।”
— সূরা হিজর (১৫:৯)


কুরআন তিলাওয়াতের গুরুত্ব কুরআনের আলোকে

আল্লাহ নিজেই কুরআনের মর্যাদা বর্ণনা করেছেন এবং এর পাঠকারীদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতার গ্যারান্টি দিয়েছেন।

ذَٰلِكَ ٱلۡكِتَٰبُ لَا رَيۡبَۛ فِيهِۛ هُدٗى لِّلۡمُتَّقِينَ
“এই কিতাবে কোন সন্দেহ নেই, এটি পরহেযগারদের জন্য পথনির্দেশ।”
— সূরা বাকারা (২:২)


হাদিসের আলোকে তিলাওয়াতের ফজিলত

রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেন:

مَنْ قَرَأَ حَرْفًا مِنْ كِتَابِ اللَّهِ فَلَهُ بِهِ حَسَنَةٌ، وَالْحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا
“যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাব থেকে একটি হরফ পাঠ করে, তার জন্য একটি নেকি রয়েছে, এবং প্রতিটি নেকির জন্য দশগুণ সওয়াব দেওয়া হয়।”
— (তিরমিযী, হাদীস: ২৯১০)


কুরআন তিলাওয়াতের ইহকালীন ফজিলত

🕊 হৃদয় প্রশান্তি ও মানসিক শান্তি

أَلَا بِذِكْرِ اللَّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ
“নিশ্চয়ই আল্লাহর জিকিরেই হৃদয় প্রশান্ত হয়।”
— সূরা রা’দ (১৩:২৮)

🌾 রিজিক বৃদ্ধির মাধ্যম

ইমাম শাফেয়ি (রহঃ) বলেন: “যে ব্যক্তি কুরআনের তিলাওয়াত করে, আল্লাহ তাকে হালাল রিজিকে বরকত দেন।”


কুরআন তিলাওয়াতের পরকালীন ফজিলত

📖 কুরআন হবে সুপারিশকারী

اقْرَؤُوا الْقُرْآنَ، فَإِنَّهُ يَأْتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ شَفِيعًا لِأَصْحَابِهِ
“তোমরা কুরআন পড়ো, কারণ কিয়ামতের দিন কুরআন তার পাঠকারীদের জন্য সুপারিশ করবে।”
— (সহীহ মুসলিম, হাদীস: ৮০৪)

🌟 জান্নাতে উচ্চ মর্যাদা

يُقَالُ لِصَاحِبِ الْقُرْآنِ اقْرَأْ وَارْقَ وَرَتِّلْ
“কুরআনের সাহাবাকে বলা হবে: পড়ো, আরো উপরে উঠো, সুন্দর করে তিলাওয়াত করো।”
— (আবু দাউদ, হাদীস: ১৪৬৪)


তিলাওয়াতের আদব ও পদ্ধতি

  • পবিত্র অবস্থায় থাকা
  • আরবি উচ্চারণ সহ ঠিকভাবে পড়া (তাজবিদ)
  • ধীরে ধীরে ভাবার্থসহ তিলাওয়াত করা

বৈজ্ঞানিক প্রভাব ও মানসিক প্রশান্তি

  • গবেষণায় দেখা গেছে, কুরআন তিলাওয়াত মস্তিষ্কের β-ওয়েভ কমিয়ে প্রশান্তি এনে দেয়।
  • হৃদরোগ ও উদ্বেগ নিরাময়ের জন্য এটি এক প্রাকৃতিক ওষুধ।

নারীদের জন্য কুরআন তিলাওয়াত

  • হায়েজ-নেফাস চলাকালে মুথালা বা শ্রবণ করা উত্তম।
  • গর্ভবতী নারীদের তিলাওয়াতে সন্তানের চরিত্রে প্রভাব পড়ে।

শিশুদের কুরআন শিক্ষা: অমূল্য সম্পদ

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “তোমরা সন্তানদের কুরআন শিক্ষা দাও, কারণ এটি তাদের অন্তরে ঈমানের আলো জ্বালিয়ে দেয়।”
— (দারিমি)


তিলাওয়াতের বাধা ও প্রতিকার

  • অলসতা ত্যাগ করুন, ছোট সূরা দিয়েও শুরু করা যেতে পারে।
  • সময় নির্ধারণ করে প্রতিদিন অন্তত ১০ মিনিট পড়ুন।

প্রযুক্তি ও আধুনিক প্ল্যাটফর্মে তিলাওয়াত

  • Qur’an Explorer, Ayat, iQuran অ্যাপ ব্যবহার করে নিয়মিত পড়া সহজ
  • ইউটিউব, Spotify-তে বিশ্বসেরা কারিদের তিলাওয়াত শুনে উৎসাহ পাওয়া যায়

সমাজে কুরআন কেন্দ্রিক সংস্কৃতি গঠন

  • পরিবারে সাপ্তাহিক কুরআন পাঠ
  • অফিস, স্কুল ও মসজিদে কুরআন ক্লাস

কুরআন তিলাওয়াত শুধু মুখের পাঠ নয়, বরং এটি অন্তরের জন্য দাওয়াই। এর প্রতি ভালোবাসা, অধ্যবসায় এবং সম্মানই পারে আমাদের দুনিয়া ও আখিরাতকে সফল করতে। আমাদের উচিত প্রতিদিন কুরআন তিলাওয়াত করা, বুঝে পড়া এবং জীবনকে কুরআনের আলোয় আলোকিত করা।


❓ প্রশ্নোত্তর (FAQs)

১. প্রতিদিন কত আয়াত পড়া উচিত?

প্রতিদিন অন্তত ১০ আয়াত পড়লে কিয়ামতের দিনে তিলাওয়াতকারী হিসেবে গণ্য হবেন।

২. নারীরা কি মাসিক চলাকালে কুরআন পড়তে পারে?

তিলাওয়াত না করলেও শ্রবণ বা অনুবাদ পড়া জায়েজ।

৩. মোবাইলে কুরআন পড়া কি সওয়াবের কাজ?

হ্যাঁ, মোবাইলে পড়লেও একই সওয়াব হবে, নিয়ত বিশুদ্ধ থাকতে হবে।

৪. মুখস্থ কুরআনের আয়াত পড়লেও কি সওয়াব পাওয়া যায়?

অবশ্যই। মুখস্থ থেকে তিলাওয়াত করাও সওয়াবের কাজ।

৫. কোন সময় কুরআন তিলাওয়াত উত্তম?

ফজরের পর ও রাতে ঘুমের আগে পড়া সবচেয়ে বরকতময়।