০৩:৪৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৫
পূজায় অংশ নেয়া সম্পর্কে ইসলামের সতর্কবার্তা কি?

মূর্তিপূজার শুভেচ্ছা জানানো বা সমর্থন কি ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক?

Manik Hossain
  • আপডেট সময়ঃ ০১:০৪:০৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ অক্টোবর ২০২৫
  • / ৯০ বার পড়া হয়েছে।

সমাজে আজকাল অনেক মুসলিম হিন্দু বা অন্যান্য ধর্মীয় উৎসবে অংশগ্রহণ বা শুভেচ্ছা জানানোর প্ররোচনায় পড়েন। বিশেষ করে মূর্তিপূজাতে “শুভ পূজা” বা “শুভ আরতি” জানানোকে অনেকেই সামান্য সামাজিক আচারের অংশ মনে করেন। কিন্তু ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই বিষয় কি গ্রহণযোগ্য? আসুন Qur’an ও Hadith-এর আলোকে বিশ্লেষণ করি।


১. মূর্তিপূজা এবং ইসলাম

মূর্তিপূজা বা Murti Puja হলো দেবতা বা দেবীর প্রতিমার পূজা ও আরাধনা। এটি ইসলামের মূল নীতির সাথে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক, কারণ ইসলাম একমাত্র আল্লাহর ইবাদত সমর্থন করে।

কুরআন-প্রমাণ:

وَلَا تُشْرِكُوا بِاللَّهِ شَيْئًا
“আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করো না।”
— [সূরা নিসা: 36]

وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلًا مِنْ قَبْلِكَ وَجَعَلْنَا لَهُمْ أَزْوَاجًا وَذُرِّيَّةً فَمَا أَغْنَتْ عَنْهُمُ الرُّسُلُ وَمَا كَانُوا يُؤْمِنُونَ
“আমরা তোমার পূর্বে রসূল পাঠিয়েছি। যারা তাদের প্রতি অবজ্ঞা দেখিয়েছে, তারা আমাদের নাযিলকৃত বার্তার প্রতি অগ্রাহ্য ছিল।”
— [সূরা আশ-শূরা: 13]

ব্যাখ্যা: মূর্তিপূজা আল্লাহর সাথে শিরকের সমতুল্য। আল্লাহ তা’আলা স্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছেন যে, কোনো সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ইবাদত করা হারাম।


২. শুভেচ্ছা জানানোর বিষয়টি কেন সমস্যা

মূর্তিপূজায় “শুভেচ্ছা” বা সমর্থন দেওয়া মানে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে সেই শিরককে স্বীকৃতি দেয়া। এটি ইসলামের নৈতিক ও আকীদাগত বিধানের সাথে সাংঘর্ষিক।

হাদীস-প্রমাণ:

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:

مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ
“যে ব্যক্তি কোনো জাতির সাথে সাদৃশ্য রাখে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত।”
— [আবু দাউদ, হাদীস: 4031]

ব্যাখ্যা: শুভেচ্ছা জানানো বা সমর্থন দেওয়া পরোক্ষভাবে শিরকীয় আচারের সাথে সাদৃশ্য সৃষ্টি করে।


৩. আলেমদের মতামত

  1. ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন:

    অমুসলিমদের ধর্মীয় উৎসবে অংশ নেওয়া বা তাদেরকে সমর্থন করা ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

  2. ইমাম নববী (রহ.) বলেন:

    মুসলমানদের জন্য মূর্তিপূজা বা কোনো শিরকীয় উৎসবে অংশগ্রহণ করা হারাম।

🔹 উপসংহার: শুভেচ্ছা দেওয়া বা উপস্থিতি দেখানোই শিরককে পরোক্ষভাবে সমর্থন হিসেবে গণ্য হতে পারে।


৪. কিভাবে সামাজিক সৌজন্য বজায় রাখা যায়?

মুসলিমরা সামাজিকভাবে ভদ্র আচরণ দেখাতে পারে—যেমন:

  • দূর থেকে অভিনন্দন জানান (কেবল সাধারণ সৌজন্য জ্ঞাপন)
  • ব্যক্তিগত কথোপকথন সীমিত রাখে, ধর্মীয় অনুষ্ঠান সমর্থন নয়
  • শিশুদের ও পরিবারকে উৎসবের নান্দনিক দিক দেখার অনুমতি, কিন্তু পূজা অংশগ্রহণ নয়

সূত্র: সূরা আল-মুমতাহিনা 60:8 — সামাজিক মেলবন্ধন বজায় রাখার নীতি


৫. 

  • মূর্তিপূজা মুসলিমদের জন্য হারাম
  • “শুভেচ্ছা” বা সমর্থন দেওয়া ইসলামিক দৃষ্টিতে পরোক্ষ শিরক
  • সামাজিক ভদ্রতা ও সৌজন্য দেখানোর জন্য নিরপেক্ষ এবং সীমাবদ্ধ পন্থা গ্রহণ করা উচিৎ।
  • মুসলিমদের উচিত সদা আল্লাহর ইবাদতকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অন্য ধর্মীয় উৎসবের আনুষ্ঠানিকতায় অংশ না নেওয়া।

৫টি FAQs

  1. প্রশ্ন: মূর্তিপূজার শুভেচ্ছা জানানো কি সরাসরি শিরক?
    উত্তর: সরাসরি না, তবে পরোক্ষভাবে সমর্থন হিসেবে গণ্য হয় এবং ইসলামিক দৃষ্টিতে অনুচিত।
  2. প্রশ্ন: সামাজিক ভদ্রতার জন্য কি কিছু ধরণের শুভেচ্ছা সম্ভব?
    উত্তর: হ্যাঁ, সাধারণ, নিরপেক্ষ ও ধর্মীয় অনুরূপতা ছাড়া ভদ্রতার মাধ্যমে।
  3. প্রশ্ন: শিশুদের পূজা দেখানো যাবে কি?
    উত্তর: শুধুমাত্র সাংস্কৃতিক ও নান্দনিক পর্যবেক্ষণের জন্য, পূজা অংশগ্রহণ নয়।
  4. প্রশ্ন: পূজায় ছবি/ভিডিও শেয়ার করা যাবে কি?
    উত্তর: না, এটি মূর্তিপূজা প্রচার হিসেবে বিবেচিত হবে।
  5. প্রশ্ন: মুসলিমদের কি পূজার দিন বন্ধুত্ব বজায় রাখা যাবে?
    উত্তর: হ্যাঁ, সামাজিক সম্পর্ক বজায় রাখতে পারবে, তবে পূজা অংশগ্রহণ না করে।

Reference Summary:

  • কুরআন: সূরা নিসা 4:36, সূরা আশ-শূরা 42:13, সূরা আল-মুমতাহিনা 60:8
  • হাদীস: আবু দাউদ 4031, সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম
  • আলেমদের ব্যাখ্যা: ইবনে তাইমিয়া, ইমাম নববী, অন্যান্য ফিকহি গ্রন্থ

পূজায় অংশ নেয়া সম্পর্কে ইসলামের সতর্কবার্তা কি?

নিউজটি শেয়ার করুন

বিস্তারিত লিখুনঃ

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

পূজায় অংশ নেয়া সম্পর্কে ইসলামের সতর্কবার্তা কি?

মূর্তিপূজার শুভেচ্ছা জানানো বা সমর্থন কি ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক?

আপডেট সময়ঃ ০১:০৪:০৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ অক্টোবর ২০২৫

সমাজে আজকাল অনেক মুসলিম হিন্দু বা অন্যান্য ধর্মীয় উৎসবে অংশগ্রহণ বা শুভেচ্ছা জানানোর প্ররোচনায় পড়েন। বিশেষ করে মূর্তিপূজাতে “শুভ পূজা” বা “শুভ আরতি” জানানোকে অনেকেই সামান্য সামাজিক আচারের অংশ মনে করেন। কিন্তু ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই বিষয় কি গ্রহণযোগ্য? আসুন Qur’an ও Hadith-এর আলোকে বিশ্লেষণ করি।


১. মূর্তিপূজা এবং ইসলাম

মূর্তিপূজা বা Murti Puja হলো দেবতা বা দেবীর প্রতিমার পূজা ও আরাধনা। এটি ইসলামের মূল নীতির সাথে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক, কারণ ইসলাম একমাত্র আল্লাহর ইবাদত সমর্থন করে।

কুরআন-প্রমাণ:

وَلَا تُشْرِكُوا بِاللَّهِ شَيْئًا
“আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করো না।”
— [সূরা নিসা: 36]

وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلًا مِنْ قَبْلِكَ وَجَعَلْنَا لَهُمْ أَزْوَاجًا وَذُرِّيَّةً فَمَا أَغْنَتْ عَنْهُمُ الرُّسُلُ وَمَا كَانُوا يُؤْمِنُونَ
“আমরা তোমার পূর্বে রসূল পাঠিয়েছি। যারা তাদের প্রতি অবজ্ঞা দেখিয়েছে, তারা আমাদের নাযিলকৃত বার্তার প্রতি অগ্রাহ্য ছিল।”
— [সূরা আশ-শূরা: 13]

ব্যাখ্যা: মূর্তিপূজা আল্লাহর সাথে শিরকের সমতুল্য। আল্লাহ তা’আলা স্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছেন যে, কোনো সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ইবাদত করা হারাম।


২. শুভেচ্ছা জানানোর বিষয়টি কেন সমস্যা

মূর্তিপূজায় “শুভেচ্ছা” বা সমর্থন দেওয়া মানে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে সেই শিরককে স্বীকৃতি দেয়া। এটি ইসলামের নৈতিক ও আকীদাগত বিধানের সাথে সাংঘর্ষিক।

হাদীস-প্রমাণ:

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:

مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ
“যে ব্যক্তি কোনো জাতির সাথে সাদৃশ্য রাখে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত।”
— [আবু দাউদ, হাদীস: 4031]

ব্যাখ্যা: শুভেচ্ছা জানানো বা সমর্থন দেওয়া পরোক্ষভাবে শিরকীয় আচারের সাথে সাদৃশ্য সৃষ্টি করে।


৩. আলেমদের মতামত

  1. ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন:

    অমুসলিমদের ধর্মীয় উৎসবে অংশ নেওয়া বা তাদেরকে সমর্থন করা ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

  2. ইমাম নববী (রহ.) বলেন:

    মুসলমানদের জন্য মূর্তিপূজা বা কোনো শিরকীয় উৎসবে অংশগ্রহণ করা হারাম।

🔹 উপসংহার: শুভেচ্ছা দেওয়া বা উপস্থিতি দেখানোই শিরককে পরোক্ষভাবে সমর্থন হিসেবে গণ্য হতে পারে।


৪. কিভাবে সামাজিক সৌজন্য বজায় রাখা যায়?

মুসলিমরা সামাজিকভাবে ভদ্র আচরণ দেখাতে পারে—যেমন:

  • দূর থেকে অভিনন্দন জানান (কেবল সাধারণ সৌজন্য জ্ঞাপন)
  • ব্যক্তিগত কথোপকথন সীমিত রাখে, ধর্মীয় অনুষ্ঠান সমর্থন নয়
  • শিশুদের ও পরিবারকে উৎসবের নান্দনিক দিক দেখার অনুমতি, কিন্তু পূজা অংশগ্রহণ নয়

সূত্র: সূরা আল-মুমতাহিনা 60:8 — সামাজিক মেলবন্ধন বজায় রাখার নীতি


৫. 

  • মূর্তিপূজা মুসলিমদের জন্য হারাম
  • “শুভেচ্ছা” বা সমর্থন দেওয়া ইসলামিক দৃষ্টিতে পরোক্ষ শিরক
  • সামাজিক ভদ্রতা ও সৌজন্য দেখানোর জন্য নিরপেক্ষ এবং সীমাবদ্ধ পন্থা গ্রহণ করা উচিৎ।
  • মুসলিমদের উচিত সদা আল্লাহর ইবাদতকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অন্য ধর্মীয় উৎসবের আনুষ্ঠানিকতায় অংশ না নেওয়া।

৫টি FAQs

  1. প্রশ্ন: মূর্তিপূজার শুভেচ্ছা জানানো কি সরাসরি শিরক?
    উত্তর: সরাসরি না, তবে পরোক্ষভাবে সমর্থন হিসেবে গণ্য হয় এবং ইসলামিক দৃষ্টিতে অনুচিত।
  2. প্রশ্ন: সামাজিক ভদ্রতার জন্য কি কিছু ধরণের শুভেচ্ছা সম্ভব?
    উত্তর: হ্যাঁ, সাধারণ, নিরপেক্ষ ও ধর্মীয় অনুরূপতা ছাড়া ভদ্রতার মাধ্যমে।
  3. প্রশ্ন: শিশুদের পূজা দেখানো যাবে কি?
    উত্তর: শুধুমাত্র সাংস্কৃতিক ও নান্দনিক পর্যবেক্ষণের জন্য, পূজা অংশগ্রহণ নয়।
  4. প্রশ্ন: পূজায় ছবি/ভিডিও শেয়ার করা যাবে কি?
    উত্তর: না, এটি মূর্তিপূজা প্রচার হিসেবে বিবেচিত হবে।
  5. প্রশ্ন: মুসলিমদের কি পূজার দিন বন্ধুত্ব বজায় রাখা যাবে?
    উত্তর: হ্যাঁ, সামাজিক সম্পর্ক বজায় রাখতে পারবে, তবে পূজা অংশগ্রহণ না করে।

Reference Summary:

  • কুরআন: সূরা নিসা 4:36, সূরা আশ-শূরা 42:13, সূরা আল-মুমতাহিনা 60:8
  • হাদীস: আবু দাউদ 4031, সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম
  • আলেমদের ব্যাখ্যা: ইবনে তাইমিয়া, ইমাম নববী, অন্যান্য ফিকহি গ্রন্থ

পূজায় অংশ নেয়া সম্পর্কে ইসলামের সতর্কবার্তা কি?