ইসলামের আলোকে পরকীয়ার কারণ, শাস্তি, ও মুক্তির পথ
পরকীয়া : স্বামী-স্ত্রীর পরকীয়া করলে লক্ষণ,পরিণাম ও প্রতিকার
- আপডেট সময়ঃ ০২:১১:১১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫
- / ৫৪ বার পড়া হয়েছে।
এ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা
“পরকীয়া” শব্দটি সাধারণভাবে বোঝায়—বিবাহিত অবস্থায় অন্য কারও সাথে প্রেম, সম্পর্ক বা যৌন সম্পর্ক স্থাপন। সমাজে এটি যেমন নৈতিকভাবে নিন্দিত, ইসলামে তেমনি এটি একটি মহা গুনাহ। আজকের সমাজে এটি নীরবে ছড়িয়ে পড়ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, কর্মক্ষেত্র, ও ব্যক্তিগত দুর্বলতার কারণে।
পরকীয়া শব্দের অর্থ ও ইসলামী ব্যাখ্যা
আরবি ভাষায় পরকীয়া বা ব্যভিচারকে বলা হয় “যিনা” (الزِّنَى)। কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَى ۖ إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلًا
“ব্যভিচারের নিকটেও যেয়ো না, এটি অশ্লীলতা ও নিকৃষ্ট পথ।”
— (সূরা আল-ইসরাঃ ৩২)
অর্থাৎ, শুধু ব্যভিচার নয়, এমন সব অবস্থাও পরিহার করতে বলা হয়েছে যা ব্যভিচারের দিকে নিয়ে যায়।
পরকীয়া কি ইসলামে পাপ না অপরাধ?
কুরআনের দৃষ্টিতে পরকীয়া
আল্লাহর বাণীতে পরকীয়া বা ব্যভিচার সরাসরি “ফাহিশা” বা অশ্লীলতা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এটি এমন এক কাজ যা পরিবার, সমাজ ও ঈমানের ভিত নষ্ট করে।
হাদীসের আলোকে পরকীয়া
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:
“যখন কেউ ব্যভিচার করে, তখন তার ঈমান তার থেকে সরে যায়।”
— (সহিহ বুখারী, হাদীস: ২৪৭৫)
অর্থাৎ, ব্যভিচার বা পরকীয়া এমন পাপ যা মুহূর্তের জন্য ঈমান কেড়ে নেয়।
সমাজে পরকীয়ার বিস্তার ও কারণসমূহ
দাম্পত্য জীবনে অসন্তুষ্টি
অধিকাংশ পরকীয়া শুরু হয় দাম্পত্য জীবনে ভালোবাসা ও বোঝাপড়ার অভাব থেকে।
সামাজিক ও প্রযুক্তিগত প্রভাব
ফেসবুক, মেসেঞ্জার, টিকটক ইত্যাদি প্ল্যাটফর্ম অনেক ক্ষেত্রে “পরিচয়” থেকে “প্রলোভনে” পরিণত হচ্ছে।
ঈমানের দুর্বলতা ও নৈতিক অবক্ষয়
যেখানে আল্লাহভীতি কমে যায়, সেখানে পাপের আগ্রহ বেড়ে যায়।
স্বামী বা স্ত্রী পরকীয়ায় জড়ালে করণীয়
ইসলামী দৃষ্টিতে ধৈর্য ও পরামর্শ
কোনো পক্ষ যদি পরকীয়ায় লিপ্ত হয়, অন্য পক্ষের উচিত আগে ধৈর্য ধারণ করা ও সালাহকারীদের মাধ্যমে ইসলামী পদ্ধতিতে পরামর্শ নেওয়া।
বিবাহ রক্ষা করার উপায়
যদি অনুতপ্ত হয়, তবে ক্ষমা করে পুনরায় সম্পর্ক গড়া ইসলামসম্মত, কারণ তাওবা সব পাপ মুছে দেয়।
পরকীয়ার মানসিক ও সামাজিক প্রভাব
সন্তান ও পরিবারের উপর প্রভাব
পরকীয়া সন্তানদের মধ্যে অবিশ্বাস, মানসিক আঘাত ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে।
সমাজে অশান্তি ও অবিশ্বাসের জন্ম
একজনের পরকীয়া অন্য পরিবারকেও ভেঙে দিতে পারে—এ যেন আগুনে আগুন জ্বালানো।
পরকীয়ার শাস্তি ইসলামে
বিবাহিত ব্যক্তির শাস্তি (রজম)
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:
“বিবাহিত ব্যভিচারীর শাস্তি হলো পাথর নিক্ষেপ করে মৃত্যুদণ্ড।”
— (সহিহ মুসলিম, হাদীস: ১৬৯০)
অবিবাহিত ব্যক্তির শাস্তি (বেত্রাঘাত)
“অবিবাহিত ব্যভিচারীকে ১০০ বেত্রাঘাত করা হবে।”
— (সূরা নূর: ২)
আইন অনুযায়ী পরকীয়া অপরাধ
বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৪৯৭ ধারায় পরকীয়া ছিল অপরাধ হিসেবে গণ্য, যদিও এখন তা বাতিল করা হয়েছে। তবে ধর্মীয় ও সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটি এখনও নৈতিক অপরাধ।
পরকীয়া প্রতিরোধের উপায়
- আল্লাহভীতি ও তাকওয়া বৃদ্ধি করা
- দাম্পত্য জীবনে ভালোবাসা ও বোঝাপড়া বজায় রাখা
- একে অপরের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলা
- অবৈধ বন্ধুত্ব থেকে বিরত থাকা
পরকীয়া থেকে বাঁচার দোয়া ও আমল
اللّهُمَّ احْفَظْنِي مِنَ الزِّنَا وَالْمَعَاصِي
“হে আল্লাহ! আমাকে ব্যভিচার ও পাপ থেকে হেফাজত করুন।”
এছাড়াও প্রতিদিন সূরা নূর ও সূরা ইখলাস পাঠ করা আত্মসংযম বৃদ্ধি করে।
আল্লাহর রহমত ও তাওবা করার সুযোগ
আল্লাহ তাআলা বলেন:
إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا
“নিশ্চয়ই আল্লাহ সব পাপ ক্ষমা করেন।”
— (সূরা আয-যুমার: ৫৩)
অতএব, কেউ যদি পরকীয়ায় লিপ্ত হয়েও অনুতপ্ত হয়, সে আন্তরিক তাওবায় ফিরে এলে আল্লাহ ক্ষমা করবেন।
পরকীয়ার চূড়ান্ত পরিণতি (দুনিয়া ও আখিরাতে)
- সংসার ভাঙন
- সামাজিক অসম্মান
- আখিরাতে জাহান্নামের শাস্তি
ইসলামি দৃষ্টিতে পরকীয়া সম্পর্ক ছিন্ন করার উপায়
- আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের ইচ্ছা
- সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করা
- নামাজ ও ইস্তেগফার বৃদ্ধি
- আল্লাহভীরু সঙ্গ গ্রহণ করা
মনোবৈজ্ঞানিক দিক থেকে পুনর্বাসন ও আত্মসংযম
বিশেষজ্ঞদের মতে, আত্মসম্মান পুনরুদ্ধার ও আত্মসংযম প্রশিক্ষণই পুনর্বাসনের মূল উপায়।
উপদেশমূলক বার্তা
পরকীয়া কোনো ভালোবাসা নয়—এটি শয়তানের ফাঁদ। ইসলামে ভালোবাসা মানে পবিত্রতা, বিশ্বাস ও আল্লাহভীতি। তাই পরকীয়া থেকে বাঁচতে হলে তাকওয়া, নামাজ, ও ধৈর্যই সর্বোত্তম অস্ত্র।
FAQs
১. পরকীয়া কি শুধু শারীরিক সম্পর্কেই সীমাবদ্ধ?
না, মানসিক বা অনলাইন সম্পর্কও পরকীয়া হিসেবে গণ্য হতে পারে।
২. পরকীয়ার শাস্তি কি শুধু পুরুষের জন্য প্রযোজ্য?
না, পুরুষ ও নারী উভয়ের জন্যই সমান শাস্তি নির্ধারিত।
৩. কেউ পরকীয়ার পর তাওবা করলে কি ক্ষমা পাবে?
হ্যাঁ, আন্তরিক তাওবা করলে আল্লাহ ক্ষমা করেন।
৪. স্ত্রী পরকীয়া করলে স্বামী কী করবে?
ধৈর্য ধরবে, সালাহকারীর পরামর্শ নেবে, প্রয়োজনে ইসলামিক বিচ্ছেদ (তালাক) বিবেচনা করবে।
৫. পরকীয়া রোধে কোন দোয়া কার্যকর?
“اللّهُمَّ احْفَظْنِي مِنَ الزِّنَا” — এই দোয়াটি নিয়মিত পাঠ করলে আল্লাহর সাহায্য পাওয়া যায়।









