০৮:৫৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫
“সালাতুল তাসবিহ: গুনাহ মাফ ও নৈকট্য লাভের বিশেষ নামাজ — হাদীস ও আমলভিত্তিক বিশ্লেষণ”

সালাতুল তাসবিহ নামাজের নিয়ম ও ফজিলত

Mufty Sheikh Imran
  • আপডেট সময়ঃ ০৩:৫৯:১১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫
  • / ২৭ বার পড়া হয়েছে।

সালাতুল তাসবিহ

🔹 সালাতুল তাসবিহ নামাজ কী?

সালাতুল তাসবিহ (صلاة التسبيح) একটি বিশেষ নফল নামাজ, যাতে নির্দিষ্টভাবে একটি তাসবিহ পড়া হয় বারবার—মোট ৩শ’ বার
এ নামাজের মাধ্যমে গুনাহ মাফ চাওয়া, আত্মার পরিশুদ্ধি ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুযোগ সৃষ্টি হয়।


🔹 সালাতুল তাসবিহ নামাজের হাদীস ভিত্তি:

রাসুলুল্লাহ ﷺ তাঁর চাচা হযরত আব্বাস (রাঃ)-কে এ নামাজ পড়তে শিখিয়েছেন এবং ফজিলতের কথা বলেছেন:

“হে আব্বাস! হে চাচা! আমি কি আপনাকে দান না করব? আমি কি আপনাকে দান না করব? আমি কি আপনাকে উপহার না দেব? আমি কি আপনাকে এমন কাজ না শিখাব যাতে আপনি আল্লাহর পক্ষ থেকে ১০টি গুণ লাভ করবেন?”

তারপর তিনি বলেন:
“সালাতুল তাসবিহ নামাজে তুমি এই তাসবিহ ৩শ বার পড়বে —
سُبْحَانَ اللَّهِ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ، وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ”
(পবিত্র আল্লাহ, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, আল্লাহ মহান)

— (সুনান আবু দাউদ, হাদীস: ১২৯৭)
— (ইবনে মাজাহ, তিরমিযী, বাইহাকি, মুসনাদে আহমদেও বর্ণিত)

📌 হাদীসটি কিছু আলেম যঈফ বলেছেন, তবে ফজায়েলের ক্ষেত্রে যঈফ হাদীস গ্রহণযোগ্য, তাই সালাফ ও ইমামগণ এ নামাজ পড়াকে উৎসাহ দিয়েছেন।


🔹 সালাতুল তাসবিহ নামাজের নিয়ম (১ রাকাতে যা করতে হবে):

এই নামাজ ৪ রাকাত বিশিষ্ট, যেটি একসাথে অথবা দুই রাকাতে সালাম ফিরিয়ে আদায় করা যায়।
প্রতিটি রাকাতে ৭৫ বার তাসবিহ পড়া হয়। সব মিলিয়ে মোট ৩০০ বার।

🧾 এক রাকাতের পদ্ধতি:

১. নিয়্যত করুন — ৪ রাকাত সালাতুল তাসবিহ নামাজ পড়ার।
২. তাকবিরে তাহরিমা ও তারপর
📿 তাসবিহ ১৫ বার:

سُبْحَانَ اللَّهِ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ، وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ

  1. সূরা ফাতিহা ও অন্য যেকোনো সূরা (যেমন সূরা ইখলাস)।
  2. আবার 📿 তাসবিহ ১০ বার।
  3. রুকু — রুকুর তাসবিহ শেষে 📿 তাসবিহ ১০ বার।
  4. রুকু থেকে ওঠা — 📿 তাসবিহ ১০ বার।
  5. প্রথম সিজদা — 📿 তাসবিহ ১০ বার।
  6. সিজদার মাঝখানে বসা — 📿 তাসবিহ ১০ বার।
  7. দ্বিতীয় সিজদা — 📿 তাসবিহ ১০ বার।

👉 এভাবে প্রতিটি রাকাতে ১৫ + ১০ + ১০ + ১০ + ১০ + ১০ + ১০ = ৭৫ বার তাসবিহ পড়বেন।

⏱ প্রতিটি রাকাত ধীরে ধীরে পড়লে ৮-১০ মিনিট সময় লাগে।


🔹 সালাতুল তাসবিহ কখন পড়া যায়?

সালাতুল তাসবিহ পড়া যায়:

  • রাতে (তাহাজ্জুদের সময়),
  • দিনে (চাইলে চاشتের সময়),
  • জুমার দিন বা আরাফার দিন বিশেষ ফজিলতপূর্ণ,
  • রমজান, আশুরা, শবে কদর, শবে বরাতেও আদায় করা যায়।

⚠️ নিষিদ্ধ সময় (সূর্যোদয়, সূর্য মধ্যগগণে, সূর্যাস্ত) বাদে যে কোনো সময় পড়া বৈধ।


🕋 সালাতুল তাসবিহের ফজিলত (হাদীস অনুসারে):

রাসূল (ﷺ) হযরত আব্বাস (রাঃ)-কে বলেছিলেন:

“যদি তুমি পারো, তাহলে প্রতিদিন এই নামাজ পড়ো। যদি না পারো, তাহলে প্রতি শুক্রবারে। না পারলে মাসে একবার, অথবা বছরে একবার। আর এতেও না পারো, তাহলে জীবনে একবার হলেও পড়ো।”
— (আবু দাউদ, হাদীস: ১২৯৭)

🌟 এ হাদীস প্রমাণ করে যে, সালাতুল তাসবিহের গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি, আর এটি গুনাহ মাফের এক বিশেষ উপায়।


📌 কে এই নামাজ পড়তে পারেন?

  • পুরুষ-মহিলা উভয়েই পড়তে পারেন।
  • সুস্থ/অসুস্থ — উভয় অবস্থা অনুযায়ী রুকু-সিজদা বা ইশারা দ্বারা আদায় করা যাবে।

✅ উপকারিতা ও ফজিলতের সারসংক্ষেপ:

ফজিলত বর্ণনা
গুনাহ মাফ জীবনের ছোট-বড় সব গুনাহের জন্য তওবা ও ক্ষমা পাওয়া যায়।
আত্মার প্রশান্তি বারবার আল্লাহর যিকির আত্মা ও মনকে পরিশুদ্ধ করে।
দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্তি যারা নিয়মিত এ নামাজ পড়ে, আল্লাহ তাদের অন্তর প্রশান্ত রাখেন।
দোয়া কবুলের সুযোগ নফল ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের দরজা খুলে যায়।


📌 শেষ কথা:

সালাতুল তাসবিহ এমন একটি নামাজ, যা জীবনে অন্তত একবার হলেও পড়া উচিত। এটি শুধুমাত্র গোনাহ মোচন নয়, বরং আত্মিক প্রশান্তি ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের অসাধারণ একটি মাধ্যম। রাসূল (ﷺ)-এর সরাসরি নির্দেশনায় প্রমাণিত এই নামাজ আমাদের জীবনের একটি মূল্যবান আমল।

নিউজটি শেয়ার করুন

বিস্তারিত লিখুনঃ

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

“সালাতুল তাসবিহ: গুনাহ মাফ ও নৈকট্য লাভের বিশেষ নামাজ — হাদীস ও আমলভিত্তিক বিশ্লেষণ”

সালাতুল তাসবিহ নামাজের নিয়ম ও ফজিলত

আপডেট সময়ঃ ০৩:৫৯:১১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

🔹 সালাতুল তাসবিহ নামাজ কী?

সালাতুল তাসবিহ (صلاة التسبيح) একটি বিশেষ নফল নামাজ, যাতে নির্দিষ্টভাবে একটি তাসবিহ পড়া হয় বারবার—মোট ৩শ’ বার
এ নামাজের মাধ্যমে গুনাহ মাফ চাওয়া, আত্মার পরিশুদ্ধি ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুযোগ সৃষ্টি হয়।


🔹 সালাতুল তাসবিহ নামাজের হাদীস ভিত্তি:

রাসুলুল্লাহ ﷺ তাঁর চাচা হযরত আব্বাস (রাঃ)-কে এ নামাজ পড়তে শিখিয়েছেন এবং ফজিলতের কথা বলেছেন:

“হে আব্বাস! হে চাচা! আমি কি আপনাকে দান না করব? আমি কি আপনাকে দান না করব? আমি কি আপনাকে উপহার না দেব? আমি কি আপনাকে এমন কাজ না শিখাব যাতে আপনি আল্লাহর পক্ষ থেকে ১০টি গুণ লাভ করবেন?”

তারপর তিনি বলেন:
“সালাতুল তাসবিহ নামাজে তুমি এই তাসবিহ ৩শ বার পড়বে —
سُبْحَانَ اللَّهِ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ، وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ”
(পবিত্র আল্লাহ, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, আল্লাহ মহান)

— (সুনান আবু দাউদ, হাদীস: ১২৯৭)
— (ইবনে মাজাহ, তিরমিযী, বাইহাকি, মুসনাদে আহমদেও বর্ণিত)

📌 হাদীসটি কিছু আলেম যঈফ বলেছেন, তবে ফজায়েলের ক্ষেত্রে যঈফ হাদীস গ্রহণযোগ্য, তাই সালাফ ও ইমামগণ এ নামাজ পড়াকে উৎসাহ দিয়েছেন।


🔹 সালাতুল তাসবিহ নামাজের নিয়ম (১ রাকাতে যা করতে হবে):

এই নামাজ ৪ রাকাত বিশিষ্ট, যেটি একসাথে অথবা দুই রাকাতে সালাম ফিরিয়ে আদায় করা যায়।
প্রতিটি রাকাতে ৭৫ বার তাসবিহ পড়া হয়। সব মিলিয়ে মোট ৩০০ বার।

🧾 এক রাকাতের পদ্ধতি:

১. নিয়্যত করুন — ৪ রাকাত সালাতুল তাসবিহ নামাজ পড়ার।
২. তাকবিরে তাহরিমা ও তারপর
📿 তাসবিহ ১৫ বার:

سُبْحَانَ اللَّهِ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ، وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ

  1. সূরা ফাতিহা ও অন্য যেকোনো সূরা (যেমন সূরা ইখলাস)।
  2. আবার 📿 তাসবিহ ১০ বার।
  3. রুকু — রুকুর তাসবিহ শেষে 📿 তাসবিহ ১০ বার।
  4. রুকু থেকে ওঠা — 📿 তাসবিহ ১০ বার।
  5. প্রথম সিজদা — 📿 তাসবিহ ১০ বার।
  6. সিজদার মাঝখানে বসা — 📿 তাসবিহ ১০ বার।
  7. দ্বিতীয় সিজদা — 📿 তাসবিহ ১০ বার।

👉 এভাবে প্রতিটি রাকাতে ১৫ + ১০ + ১০ + ১০ + ১০ + ১০ + ১০ = ৭৫ বার তাসবিহ পড়বেন।

⏱ প্রতিটি রাকাত ধীরে ধীরে পড়লে ৮-১০ মিনিট সময় লাগে।


🔹 সালাতুল তাসবিহ কখন পড়া যায়?

সালাতুল তাসবিহ পড়া যায়:

  • রাতে (তাহাজ্জুদের সময়),
  • দিনে (চাইলে চاشتের সময়),
  • জুমার দিন বা আরাফার দিন বিশেষ ফজিলতপূর্ণ,
  • রমজান, আশুরা, শবে কদর, শবে বরাতেও আদায় করা যায়।

⚠️ নিষিদ্ধ সময় (সূর্যোদয়, সূর্য মধ্যগগণে, সূর্যাস্ত) বাদে যে কোনো সময় পড়া বৈধ।


🕋 সালাতুল তাসবিহের ফজিলত (হাদীস অনুসারে):

রাসূল (ﷺ) হযরত আব্বাস (রাঃ)-কে বলেছিলেন:

“যদি তুমি পারো, তাহলে প্রতিদিন এই নামাজ পড়ো। যদি না পারো, তাহলে প্রতি শুক্রবারে। না পারলে মাসে একবার, অথবা বছরে একবার। আর এতেও না পারো, তাহলে জীবনে একবার হলেও পড়ো।”
— (আবু দাউদ, হাদীস: ১২৯৭)

🌟 এ হাদীস প্রমাণ করে যে, সালাতুল তাসবিহের গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি, আর এটি গুনাহ মাফের এক বিশেষ উপায়।


📌 কে এই নামাজ পড়তে পারেন?

  • পুরুষ-মহিলা উভয়েই পড়তে পারেন।
  • সুস্থ/অসুস্থ — উভয় অবস্থা অনুযায়ী রুকু-সিজদা বা ইশারা দ্বারা আদায় করা যাবে।

✅ উপকারিতা ও ফজিলতের সারসংক্ষেপ:

ফজিলত বর্ণনা
গুনাহ মাফ জীবনের ছোট-বড় সব গুনাহের জন্য তওবা ও ক্ষমা পাওয়া যায়।
আত্মার প্রশান্তি বারবার আল্লাহর যিকির আত্মা ও মনকে পরিশুদ্ধ করে।
দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্তি যারা নিয়মিত এ নামাজ পড়ে, আল্লাহ তাদের অন্তর প্রশান্ত রাখেন।
দোয়া কবুলের সুযোগ নফল ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের দরজা খুলে যায়।


📌 শেষ কথা:

সালাতুল তাসবিহ এমন একটি নামাজ, যা জীবনে অন্তত একবার হলেও পড়া উচিত। এটি শুধুমাত্র গোনাহ মোচন নয়, বরং আত্মিক প্রশান্তি ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের অসাধারণ একটি মাধ্যম। রাসূল (ﷺ)-এর সরাসরি নির্দেশনায় প্রমাণিত এই নামাজ আমাদের জীবনের একটি মূল্যবান আমল।