তাহাজ্জুদ নামাজের বিস্তারিত জানুন
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম : কত রাকাত? ফজিলত | ২০টি প্রশ্নোত্তর
- আপডেট সময়ঃ ০৬:০৮:১৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫
- / ৫৬ বার পড়া হয়েছে।
তাহাজ্জুদ নামাজ কী?
এ নামাজ হল রাতের বিশেষ একটি নফল ইবাদত। এটি এমন একটি সালাত, যা রাতে ঘুম থেকে উঠে পড়ে আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য আদায় করা হয়।
তাহাজ্জুদ নামাজের শাব্দিক ও পারিভাষিক অর্থ
“তাহাজ্জুদ” শব্দটি এসেছে আরবি “হুজুদ” ধাতু থেকে, যার অর্থ হলো ঘুম। “তাহাজ্জুদ” অর্থ দাঁড়ায় — ঘুম ত্যাগ করা বা ঘুম ভেঙে নামাজ পড়া।
তাহাজ্জুদের গুরুত্ব ইসলামে
এ নামাজকে কুরআন ও হাদীসে অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে উল্লেখ করা হয়েছে। এটি আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় ইবাদতগুলোর একটি। কুরআনে বলা হয়েছে:
“وَمِنَ ٱلَّيْلِ فَتَهَجَّدْ بِهِۦ نَافِلَةًۭ لَّكَ”
“রাত্রির একাংশে তাহাজ্জুদের জন্য উঠো; এটা তোমার জন্য অতিরিক্ত ইবাদত।”
(সূরা ইসরা, আয়াত: ৭৯)
তাহাজ্জুদের নামাজ ফরজ, সুন্নত না নফল?
এ নামাজ ফরজ নয়। এটি নবীজি (সা.)-এর জন্য ওয়াজিব ছিল (সূরা মুয্জাম্মিল, আয়াত: ২)। তবে আমাদের জন্য এটি নফল। আর নফল ইবাদতের ফজিলত অনেক বেশি।
তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত পড়া যায়?
তাহাজ্জুদের নামাজের কোনো নির্দিষ্ট রাকাত নেই। সাধারণত ২ রাকাত থেকে ৮ বা ১২ রাকাত পর্যন্ত আদায় করা যায়। রাসুল (সা.) কখনো ৮, কখনো ১১ রাকাত আদায় করেছেন। হাদীসে এসেছে:
“كانَ رسولُ اللَّهِ صلَّى اللَّهُ عليْهِ وسلَّمَ يصلِّي منَ اللَّيلِ ثلاثَ عشرةَ ركعةً”
(সহীহ বুখারী ১১৪৭)
তাহাজ্জুদের নিয়ম কীভাবে পড়তে হয়?
১. রাতের ঘুম থেকে উঠতে হবে।
২. পবিত্র অবস্থায় অযু করতে হবে।
৩. দুই রাকাত করে নামাজ পড়া উত্তম।
৪. প্রতিটি রাকাতে ফাতিহা ও কুরআনের সূরা পড়া যাবে।
৫. শেষে নিজের ভাষায় দোয়া করা যাবে।
ঘুম ভেঙে না উঠলে তাহাজ্জুদ হবে কি?
না, তাহাজ্জুদের শর্তই হচ্ছে ঘুম থেকে উঠে পড়া। যদি কেউ ঘুমায় না, তবে তা ‘কিয়ামুল লাইল’ হিসেবে ধরা হবে।
তাহাজ্জুদের সময় কখন?
তাহাজ্জুদের সময় শুরু হয় এশার নামাজের পর থেকে এবং শেষ হয় ফজরের সময় শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত। সর্বোত্তম সময় হলো রাতের শেষ তৃতীয়াংশ।
“ينزل ربُّنا تبارك وتعالى كلَّ ليلةٍ إلى السَّماءِ الدُّنيا حينَ يبقى ثلثُ اللَّيلِ الآخرُ”
(সহীহ মুসলিম ৭৫৮)
তাহাজ্জুদ নামাজে কী সূরা পড়া উত্তম?
লম্বা সূরা পড়া উত্তম। রাসুল (সা.) সূরা বাকারা, আলে ইমরান, নিসা ইত্যাদি দীর্ঘ সূরা পড়তেন। তবে ছোট সূরাও পড়া যায়।
তাহাজ্জুদে দোয়া করার নিয়ম
তাহাজ্জুদের পর দু’আ করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। এ সময় আল্লাহ তা’আলা দোয়া কবুল করে থাকেন। আপনি চাইলে নিজের প্রয়োজনীয় সব কিছু আল্লাহর কাছে চাইতে পারেন।
তাহাজ্জুদের বিশেষ ফজিলত ও পুরস্কার
-
আল্লাহর নৈকট্য লাভ
-
দোয়া কবুল হওয়া
-
গুনাহ মাফ হওয়া
-
জান্নাতের উচ্চ মর্যাদা
-
কিয়ামতের আলো
পবিত্র কুরআনে তাহাজ্জুদের গুরুত্ব
কুরআনে বিভিন্ন জায়গায় তাহাজ্জুদের উল্লেখ এসেছে। যেমন:
“كَانُوا۟ قَلِيلًۭا مِّنَ ٱلَّيْلِ مَا يَهْجَعُونَ”
“তারা রাত্রির সামান্য অংশই ঘুমাত।”
(সূরা যারিয়াত: ১৭)
হাদীসে তাহাজ্জুদের বর্ণনা ও গুরুত্ব
হাদীসে এসেছে:
“أفضل الصلاة بعد الفريضة صلاة الليل”
“ফরজ নামাজের পর সর্বোত্তম নামাজ হচ্ছে রাতের নামাজ।”
(সহীহ মুসলিম ১১৬৩)
সাহাবায়ে কেরামের তাহাজ্জুদের আমল
সাহাবাগণ নিয়মিত তাহাজ্জুদ পড়তেন। উমর (রা.), আবু বকর (রা.) সহ অনেকেই রাতের শেষ অংশে উঠে ইবাদত করতেন।
তাহাজ্জুদ না পড়লে কোনো গুনাহ হবে কি?
না, গুনাহ হবে না। কারণ এটি ফরজ নয়। তবে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও না পড়লে এক ধরনের আফসোসের বিষয়।
তাহাজ্জুদের জন্য আলাদা অযু করা জরুরি কি?
যদি ঘুম থেকে ওঠার পর অযু ভেঙে যায়, তবে অবশ্যই নতুন করে অযু করতে হবে।
নারীরা কীভাবে তাহাজ্জুদ আদায় করবেন?
নারীরাও ঘুম থেকে উঠে তাহাজ্জুদ আদায় করতে পারবেন। ঘরে একান্তভাবে আদায় করাই উত্তম।
তাহাজ্জুদের সময় দোয়া কবুল হওয়ার সময়
রাতের শেষ তৃতীয়াংশ আল্লাহর রহমতের সময়। এ সময় আল্লাহ নিজেই বলেন:
“هل من سائلٍ فأُعطيَهُ؟”
“কেউ কি আছে কিছু চাইবে? আমি তাকে দেব।”
(সহীহ বুখারী ১১৪৫)
তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য ঘড়ি ব্যবহার জায়েয কি?
হ্যাঁ,











