০৩:২৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫
যারা সামর্থ্যবান, তাদের জন্য কুরবানী করা অত্যন্ত জরুরি এবং তা না করলে কঠোর সাবধানবাণী এসেছে হাদীসে। তাই কুরবানী পালনে উদাসীনতা নয় বরং সচেষ্ট হওয়া প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য।

কুরবানীর গুরুত্ব ও ফজিলত

Mahmud abdullah
  • আপডেট সময়ঃ ০২:৩২:৫৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫
  • / ১০৯ বার পড়া হয়েছে।

🔹 কুরবানীর সুন্নত (Sunnah of Qurbani) ইসলামী শরীয়তে কুরবানী একটি মহান ইবাদত, যা হযরত ইব্রাহিম (আঃ) ও হযরত ইসমাইল (আঃ)-এর ত্যাগ ও আনুগত্যের স্মরণে পালন করা হয়। কুরবানী করা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। ▶️ দলিল: হাদীস: রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, "আমি মদিনায় ১০ বছর অবস্থান করেছি এবং প্রত্যেক বছর কুরবানী করেছি।" 📚 (তিরমিজি, হাদীস: ১৫০৭) এ থেকে বোঝা যায়, কুরবানী রাসূল (সাঃ)-এর নিয়মিত আমল ছিল, যা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। 🔹 কুরবানীর ওয়াজিব (Wajib of Qurbani) হানাফি মাজহাব অনুযায়ী, কুরবানী করা ওয়াজিব—অর্থাৎ বাধ্যতামূলক—নিম্নলিখিত শর্ত পূরণকারীদের জন্য: ✅ কুরবানী ওয়াজিব কার উপর: মুসলিম বালেগ (প্রাপ্তবয়স্ক) আক্লবান (স্মরণশক্তি সম্পন্ন) মুকীম (মুসাফির নয়) যে ব্যক্তি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক (৮৭.৪৮ গ্রাম স্বর্ণ বা তার সমমূল্য) ▶️ কুরআনের দলিল: "فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ" “অতএব, তোমার প্রভুর উদ্দেশ্যে নামায পড় এবং কুরবানী কর।” 📚 (সূরা কাওসার: ২) ▶️ হাদীসের দলিল: রাসূল (সাঃ) বলেন: "যে ব্যক্তি কুরবানীর সামর্থ্য রাখে কিন্তু করে না, সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।" 📚 (ইবন মাজাহ, হাদীস: ৩১২৩) এই হাদীস প্রমাণ করে যে সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানী না করাটা মারাত্মক গোনাহ। 🔹 কুরবানীর শিক্ষা (Lessons from Qurbani) ১. আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আনুগত্য কুরবানীর প্রকৃত শিক্ষা হলো, আল্লাহর আদেশের প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্য। হযরত ইব্রাহিম (আঃ) তাঁর একমাত্র সন্তানকে কুরবানী করতে প্রস্তুত হয়েছিলেন আল্লাহর নির্দেশে। 📖 সূরা আস-সাফফাত: ১০২ "তিনি বললেন, হে আমার পুত্র! আমি স্বপ্নে দেখি তোমাকে কুরবানী করছি, তুমি কী বলো?" ইসমাইল (আঃ) বললেন, "হে আমার পিতা! আপনি যা আদেশ পেয়েছেন, তা পালন করুন।" ২. ত্যাগের চেতনা (Sacrifice) নিজের প্রিয় জিনিস ত্যাগ করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের শিক্ষা দেয় কুরবানী। শুধু পশু নয়, নিজের লোভ, অহংকার, ও স্বার্থপরতা ত্যাগের নির্দেশও দেয় এটি। ৩. তাকওয়া অর্জন (God-consciousness) আল্লাহ কুরবানীর পশুর গোশত বা রক্ত চান না, চান আমাদের তাকওয়া। 📖 সূরা হজ্জ: ৩৭ "আল্লাহর নিকট পৌঁছে না এগুলোর গোশত বা রক্ত; বরং পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া।" ৪. দরিদ্রদের সাহায্য ও সমাজে সমতা কুরবানীর মাধ্যমে সমাজের দরিদ্র ও অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফোটে। এই গোশত একা ভোগ না করে আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী ও গরীবদের মাঝে বিতরণ করতে হয়। 📌 সুন্নাহ অনুযায়ী তিন ভাগে ভাগ করা উত্তম: এক তৃতীয়াংশ নিজের জন্য এক তৃতীয়াংশ আত্মীয়/বন্ধুদের জন্য এক তৃতীয়াংশ গরীবদের জন্য ৫. একতা ও ভ্রাতৃত্বের শিক্ষা কুরবানী মুসলিমদের মাঝে ভ্রাতৃত্ব, সংহতি ও পারস্পরিক সহানুভূতির চেতনা জাগায়। সবাই একসাথে ঈদের নামায পড়ে, কুরবানী করে, এবং একে অপরের খোঁজখবর রাখে। 🧾 সংক্ষিপ্ত সারাংশ (Summary Table) বিষয় ব্যাখ্যা দলিল সুন্নত রাসূল (সাঃ)-এর নিয়মিত আমল তিরমিজি ১৫০৭ ওয়াজিব নির্দিষ্ট মুসলমানদের উপর ফরজের নিকটবর্তী কাওসার ২, ইবন মাজাহ ৩১২৩ শিক্ষা তাকওয়া, ত্যাগ, দরিদ্রদের সহায়তা, আনুগত্য হজ্জ ৩৭, সাফফাত ১০২ 🔚 উপসংহার কুরবানী কেবল পশু জবাইয়ের নাম নয়, এটি হল আল্লাহর জন্য নিজেকে, নিজের চাওয়া-পাওয়া, ও আরাম-আয়েশ ত্যাগ করার প্রতীক। এটি তাকওয়া, আত্মত্যাগ এবং সাম্যবোধের বাস্তব প্রশিক্ষণ।

কুরবানী বা কুরবানি (আরবি: الأضحية) ইসলামে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত,যা প্রতি বছর জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখে আদায় করা হয়।

এটি ঈদুল আযহার প্রধান অনুষঙ্গ,

যা হযরত ইব্রাহিম (আঃ) ও তাঁর পুত্র হযরত ইসমাইল (আঃ)-এর আত্মত্যাগ ও আনুগত্যের ইতিহাসকে স্মরণ করিয়ে দেয়।

নিচে কুরবানীর ফজিলত ও গুরুত্ব কুরআন ও হাদীসের দলিলসহ বর্ণনা করা হলো:


🔹 কুরবানীর গুরুত্ব ও ফজিলত:

১. আল্লাহর নির্দেশ পালন
আল-কুরআন:
﴿فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ (“অতএব, তোমার রবের উদ্দেশ্যে নামায পড় এবং কুরবানী কর।

”(সূরা কাওসার: ২) এই আয়াতে আল্লাহ স্পষ্টভাবে নামাজের সাথে কুরবানী করার নির্দেশ দিয়েছেন। এটি কুরবানীর গুরুত্বকে তুলে ধরে।

২. হযরত ইব্রাহিম (আঃ)-এর সুন্নাহ
হযরত ইব্রাহিম (আঃ) আল্লাহর আদেশে তাঁর প্রিয় পুত্র হযরত ইসমাইল (আঃ)-কে কুরবানী করতে প্রস্তুত হয়েছিলেন।

আল্লাহ তাঁর সেই আত্মত্যাগের নিদর্শনকে ক্বিয়ামত পর্যন্ত কুরবানীর মাধ্যমে জারি রাখেন।

📚 সূরা আস-সাফফাত: ১০৭

“আর আমি তার পরিবর্তে একটি মহান কুরবানীর ব্যবস্থা করেছিলাম।”
এ আয়াতে বোঝানো হচ্ছে, ইব্রাহিম (আঃ)-এর অনুগত্যের প্রতিদান স্বরূপ আল্লাহ একটি দুম্বার কুরবানীর মাধ্যমে তাঁকে পরীক্ষা থেকে উত্তীর্ণ করেন।

৩. প্রিয় ইবাদত
হাদীস:রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,
“আদম সন্তানের কৃত কাজের মধ্যে কুরবানীর দিন আল্লাহর নিকট কুরবানীর চেয়ে প্রিয় কোনো কাজ নেই।

কিয়ামতের দিন তা তার শিং, খুর ও লোমসহ নিয়ে আসবে এবং কুরবানীর রক্ত জমিনে পড়ার আগেই আল্লাহর কাছে কবুল হয়ে যায়।”

📚 (তিরমিজি, হাদিস: ১৪৯৩)

৪. আর্থিক ইবাদত হিসেবে কুরবানী
কুরবানী একটি আর্থিক ইবাদত, যেমন যাকাত। সামর্থ্যবান মুসলমানদের উপর এটি ওয়াজিব (হানাফী মাযহাব অনুযায়ী)।

হাদীস:“যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকার পরও কুরবানী না করে,সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।”
📚 (ইবনে মাজাহ, হাদীস: ৩১২৩)

৫. কুরবানী কেয়ামতের দিন সাক্ষ্য দেবে

“তোমরা কুরবানী কর, কেননা কুরবানীর পশু কিয়ামতের দিন তার শিং, খুর ও লোমসহ নিয়ে আসবে এবং আল্লাহর কাছে সেসব উপস্থাপন করা হবে।

”📚 (তিরমিজি, হাদীস: ১৪৯২)


🔸 কুরবানীর শিক্ষা ও তাৎপর্য
আত্মত্যাগ ও আনুগত্যের চূড়ান্ত নিদর্শন
ধনসম্পদের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন

গরীব-দুঃখীদের পাশে দাঁড়ানো
ঈমান ও তাকওয়ার বহিঃপ্রকাশ

✅ কুরবানী শুধুমাত্র পশু জবাই নয়, বরং এটি একজন মুমিনের আল্লাহর প্রতি পরিপূর্ণ আনুগত্য, তাকওয়া ও আত্মত্যাগের প্রতীক।

এটি ইসলামের অন্যতম প্রতীকী ইবাদত এবং একটি মহান সুন্নাহ।

যারা সামর্থ্যবান, তাদের জন্য কুরবানী করা অত্যন্ত জরুরি এবং তা না করলে কঠোর সাবধানবাণী এসেছে হাদীসে।

তাই কুরবানী পালনে উদাসীনতা নয় বরং সচেষ্ট হওয়া প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য।

নিউজটি শেয়ার করুন

বিস্তারিত লিখুনঃ

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

যারা সামর্থ্যবান, তাদের জন্য কুরবানী করা অত্যন্ত জরুরি এবং তা না করলে কঠোর সাবধানবাণী এসেছে হাদীসে। তাই কুরবানী পালনে উদাসীনতা নয় বরং সচেষ্ট হওয়া প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য।

কুরবানীর গুরুত্ব ও ফজিলত

আপডেট সময়ঃ ০২:৩২:৫৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫

কুরবানী বা কুরবানি (আরবি: الأضحية) ইসলামে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত,যা প্রতি বছর জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখে আদায় করা হয়।

এটি ঈদুল আযহার প্রধান অনুষঙ্গ,

যা হযরত ইব্রাহিম (আঃ) ও তাঁর পুত্র হযরত ইসমাইল (আঃ)-এর আত্মত্যাগ ও আনুগত্যের ইতিহাসকে স্মরণ করিয়ে দেয়।

নিচে কুরবানীর ফজিলত ও গুরুত্ব কুরআন ও হাদীসের দলিলসহ বর্ণনা করা হলো:


🔹 কুরবানীর গুরুত্ব ও ফজিলত:

১. আল্লাহর নির্দেশ পালন
আল-কুরআন:
﴿فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ (“অতএব, তোমার রবের উদ্দেশ্যে নামায পড় এবং কুরবানী কর।

”(সূরা কাওসার: ২) এই আয়াতে আল্লাহ স্পষ্টভাবে নামাজের সাথে কুরবানী করার নির্দেশ দিয়েছেন। এটি কুরবানীর গুরুত্বকে তুলে ধরে।

২. হযরত ইব্রাহিম (আঃ)-এর সুন্নাহ
হযরত ইব্রাহিম (আঃ) আল্লাহর আদেশে তাঁর প্রিয় পুত্র হযরত ইসমাইল (আঃ)-কে কুরবানী করতে প্রস্তুত হয়েছিলেন।

আল্লাহ তাঁর সেই আত্মত্যাগের নিদর্শনকে ক্বিয়ামত পর্যন্ত কুরবানীর মাধ্যমে জারি রাখেন।

📚 সূরা আস-সাফফাত: ১০৭

“আর আমি তার পরিবর্তে একটি মহান কুরবানীর ব্যবস্থা করেছিলাম।”
এ আয়াতে বোঝানো হচ্ছে, ইব্রাহিম (আঃ)-এর অনুগত্যের প্রতিদান স্বরূপ আল্লাহ একটি দুম্বার কুরবানীর মাধ্যমে তাঁকে পরীক্ষা থেকে উত্তীর্ণ করেন।

৩. প্রিয় ইবাদত
হাদীস:রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,
“আদম সন্তানের কৃত কাজের মধ্যে কুরবানীর দিন আল্লাহর নিকট কুরবানীর চেয়ে প্রিয় কোনো কাজ নেই।

কিয়ামতের দিন তা তার শিং, খুর ও লোমসহ নিয়ে আসবে এবং কুরবানীর রক্ত জমিনে পড়ার আগেই আল্লাহর কাছে কবুল হয়ে যায়।”

📚 (তিরমিজি, হাদিস: ১৪৯৩)

৪. আর্থিক ইবাদত হিসেবে কুরবানী
কুরবানী একটি আর্থিক ইবাদত, যেমন যাকাত। সামর্থ্যবান মুসলমানদের উপর এটি ওয়াজিব (হানাফী মাযহাব অনুযায়ী)।

হাদীস:“যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকার পরও কুরবানী না করে,সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।”
📚 (ইবনে মাজাহ, হাদীস: ৩১২৩)

৫. কুরবানী কেয়ামতের দিন সাক্ষ্য দেবে

“তোমরা কুরবানী কর, কেননা কুরবানীর পশু কিয়ামতের দিন তার শিং, খুর ও লোমসহ নিয়ে আসবে এবং আল্লাহর কাছে সেসব উপস্থাপন করা হবে।

”📚 (তিরমিজি, হাদীস: ১৪৯২)


🔸 কুরবানীর শিক্ষা ও তাৎপর্য
আত্মত্যাগ ও আনুগত্যের চূড়ান্ত নিদর্শন
ধনসম্পদের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন

গরীব-দুঃখীদের পাশে দাঁড়ানো
ঈমান ও তাকওয়ার বহিঃপ্রকাশ

✅ কুরবানী শুধুমাত্র পশু জবাই নয়, বরং এটি একজন মুমিনের আল্লাহর প্রতি পরিপূর্ণ আনুগত্য, তাকওয়া ও আত্মত্যাগের প্রতীক।

এটি ইসলামের অন্যতম প্রতীকী ইবাদত এবং একটি মহান সুন্নাহ।

যারা সামর্থ্যবান, তাদের জন্য কুরবানী করা অত্যন্ত জরুরি এবং তা না করলে কঠোর সাবধানবাণী এসেছে হাদীসে।

তাই কুরবানী পালনে উদাসীনতা নয় বরং সচেষ্ট হওয়া প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য।