০২:৪০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫
সুন্নাহ পদ্ধতিতে ব্যায়ামের গুরুত্ব – একটি তথ্যচিত্রধর্মী আলোচনা

সুন্নাহ পদ্ধতিতে ব্যায়ামের গুরুত্ব – তথ্যচিত্রধর্মী আলোচনা

Dr.Amanullah Kashem
  • আপডেট সময়ঃ ০২:৩৫:৩৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫
  • / ৬৫ বার পড়া হয়েছে।

সুন্নাহ পদ্ধতিতে ব্যায়ামের গুরুত্ব – একটি তথ্যচিত্রধর্মী আলোচনা

ইসলাম শুধু আত্মার পরিশুদ্ধি নয়, দেহের সুস্থতাকেও সমান গুরুত্ব দিয়েছে। রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর জীবনচর্চা ছিল ভারসাম্যপূর্ণ—তিনি ইবাদত, সমাজসেবা ও দেহ চর্চার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

সুন্নাহ পদ্ধতিতে ব্যায়াম বলতে বোঝায় এমন শারীরিক কর্মকাণ্ড যা রাসূল ﷺ নিজে পালন করেছেন এবং সাহাবিদের উৎসাহ দিয়েছেন, যা শারীরিক, মানসিক ও আত্মিকভাবে উপকারী।


কুরআনের নির্দেশনায় দেহচর্চার গুরুত্ব

আল্লাহ তাআলা বলেন:“وَأَعِدُّوا لَهُم مَّا اسْتَطَعْتُم مِّن قُوَّةٍ”“তাদের মোকাবেলায় তোমরা যথাসম্ভব শক্তি সঞ্চয় কর।

— (সূরা আনফাল: ৬০)

এই আয়াত ইঙ্গিত করে যে শারীরিক সক্ষমতা অর্জন মুসলিম জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ।


হাদীসে শক্তিশালী মুমিনের প্রশংসা

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:“المؤمن القوي خير وأحب إلى الله من المؤمن الضعيف”“শক্তিশালী মুমিন আল্লাহর কাছে দুর্বল মুমিন অপেক্ষা উত্তম ও প্রিয়।

— (সহীহ মুসলিম: ২৬৬৪)

এখানে ‘শক্তিশালী’ বলতে শারীরিক, মানসিক ও আত্মিক সকল দিক বুঝানো হয়েছে। ব্যায়াম এ শক্তি অর্জনের অন্যতম উপায়।


সুন্নাহ অনুযায়ী কিছু ব্যায়ামমূলক আমল

১. হেঁটে চলা ও দ্রুত পদক্ষেপে হাঁটা

রাসূল ﷺ-এর হাঁটার বর্ণনায় বলা হয়েছে:“كان إذا مشى تكفأ تكفؤا كأنما ينحط من صبب”“তিনি যখন হাঁটতেন, মনে হতো তিনি যেন ঢালু পথ দিয়ে নিচে নামছেন।”

— (সহীহ মুসলিম)

এই ধরণের হাঁটা একটি চমৎকার কার্ডিওভাসকুলার ব্যায়াম।


২. দৌড় ও কুস্তি

রাসূল ﷺ নিজে হযরত আয়েশা (রাঃ) এর সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা করেছেন।
এছাড়া তিনি কুস্তিও করেছেন সাহাবিদের সঙ্গে।

এগুলো ছিল শরীর গঠনের জন্য চমৎকার ব্যায়াম।


৩. তিরন্দাজি, ঘোড়সওয়ারী ও সাঁতার

রাসূল ﷺ বলেন:“علموا أبناءكم السباحة والرماية وركوب الخيل”“তোমরা তোমাদের সন্তানদের সাঁতার, তিরন্দাজি এবং ঘোড়সওয়ারী শেখাও।

— (মুসনাদে আহমদ)

এসব সুন্নাহ ব্যায়াম কেবল দেহ নয়, মন ও আত্মার উন্নয়নেও ভূমিকা রাখে।


বায়ুরোধী জীবন নয়—চলাচল ও পরিশ্রম ইসলামে উৎসাহিত

আজকের আধুনিক জীবনব্যবস্থায় মানুষ দিনভর বসে কাজ করে, যা বহু রোগের উৎস। অথচ রাসূল ﷺ সারাদিন সক্রিয় ছিলেন—জান্নাতের বাগান পরিচর্যা থেকে শুরু করে যুদ্ধক্ষেত্রে শারীরিক কৌশল অবলম্বন

—সবই ছিল একধরনের স্বাস্থ্যকর ব্যায়াম।


সুন্নাহ পদ্ধতিতে ব্যায়াম মানে কেবল শরীর গঠনের দিকেই মনোযোগ দেওয়া নয়; বরং তা জীবনের ভারসাম্য রক্ষা, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, ইবাদতে মনোযোগ ও মানসিক প্রশান্তি অর্জনের একটি উপায়।

আধুনিক গবেষণাও প্রমাণ করেছে, যেসব ব্যায়াম রাসূল ﷺ উৎসাহ দিয়েছেন, তা শরীরের জন্য খুবই উপকারী। তাই আমাদের উচিত, সুন্নাহভিত্তিক জীবনচর্চার মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর মুসলিম সমাজ গড়ে তোলা।

নিউজটি শেয়ার করুন

বিস্তারিত লিখুনঃ

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

সুন্নাহ পদ্ধতিতে ব্যায়ামের গুরুত্ব – একটি তথ্যচিত্রধর্মী আলোচনা

সুন্নাহ পদ্ধতিতে ব্যায়ামের গুরুত্ব – তথ্যচিত্রধর্মী আলোচনা

আপডেট সময়ঃ ০২:৩৫:৩৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫

ইসলাম শুধু আত্মার পরিশুদ্ধি নয়, দেহের সুস্থতাকেও সমান গুরুত্ব দিয়েছে। রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর জীবনচর্চা ছিল ভারসাম্যপূর্ণ—তিনি ইবাদত, সমাজসেবা ও দেহ চর্চার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

সুন্নাহ পদ্ধতিতে ব্যায়াম বলতে বোঝায় এমন শারীরিক কর্মকাণ্ড যা রাসূল ﷺ নিজে পালন করেছেন এবং সাহাবিদের উৎসাহ দিয়েছেন, যা শারীরিক, মানসিক ও আত্মিকভাবে উপকারী।


কুরআনের নির্দেশনায় দেহচর্চার গুরুত্ব

আল্লাহ তাআলা বলেন:“وَأَعِدُّوا لَهُم مَّا اسْتَطَعْتُم مِّن قُوَّةٍ”“তাদের মোকাবেলায় তোমরা যথাসম্ভব শক্তি সঞ্চয় কর।

— (সূরা আনফাল: ৬০)

এই আয়াত ইঙ্গিত করে যে শারীরিক সক্ষমতা অর্জন মুসলিম জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ।


হাদীসে শক্তিশালী মুমিনের প্রশংসা

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:“المؤمن القوي خير وأحب إلى الله من المؤمن الضعيف”“শক্তিশালী মুমিন আল্লাহর কাছে দুর্বল মুমিন অপেক্ষা উত্তম ও প্রিয়।

— (সহীহ মুসলিম: ২৬৬৪)

এখানে ‘শক্তিশালী’ বলতে শারীরিক, মানসিক ও আত্মিক সকল দিক বুঝানো হয়েছে। ব্যায়াম এ শক্তি অর্জনের অন্যতম উপায়।


সুন্নাহ অনুযায়ী কিছু ব্যায়ামমূলক আমল

১. হেঁটে চলা ও দ্রুত পদক্ষেপে হাঁটা

রাসূল ﷺ-এর হাঁটার বর্ণনায় বলা হয়েছে:“كان إذا مشى تكفأ تكفؤا كأنما ينحط من صبب”“তিনি যখন হাঁটতেন, মনে হতো তিনি যেন ঢালু পথ দিয়ে নিচে নামছেন।”

— (সহীহ মুসলিম)

এই ধরণের হাঁটা একটি চমৎকার কার্ডিওভাসকুলার ব্যায়াম।


২. দৌড় ও কুস্তি

রাসূল ﷺ নিজে হযরত আয়েশা (রাঃ) এর সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা করেছেন।
এছাড়া তিনি কুস্তিও করেছেন সাহাবিদের সঙ্গে।

এগুলো ছিল শরীর গঠনের জন্য চমৎকার ব্যায়াম।


৩. তিরন্দাজি, ঘোড়সওয়ারী ও সাঁতার

রাসূল ﷺ বলেন:“علموا أبناءكم السباحة والرماية وركوب الخيل”“তোমরা তোমাদের সন্তানদের সাঁতার, তিরন্দাজি এবং ঘোড়সওয়ারী শেখাও।

— (মুসনাদে আহমদ)

এসব সুন্নাহ ব্যায়াম কেবল দেহ নয়, মন ও আত্মার উন্নয়নেও ভূমিকা রাখে।


বায়ুরোধী জীবন নয়—চলাচল ও পরিশ্রম ইসলামে উৎসাহিত

আজকের আধুনিক জীবনব্যবস্থায় মানুষ দিনভর বসে কাজ করে, যা বহু রোগের উৎস। অথচ রাসূল ﷺ সারাদিন সক্রিয় ছিলেন—জান্নাতের বাগান পরিচর্যা থেকে শুরু করে যুদ্ধক্ষেত্রে শারীরিক কৌশল অবলম্বন

—সবই ছিল একধরনের স্বাস্থ্যকর ব্যায়াম।


সুন্নাহ পদ্ধতিতে ব্যায়াম মানে কেবল শরীর গঠনের দিকেই মনোযোগ দেওয়া নয়; বরং তা জীবনের ভারসাম্য রক্ষা, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, ইবাদতে মনোযোগ ও মানসিক প্রশান্তি অর্জনের একটি উপায়।

আধুনিক গবেষণাও প্রমাণ করেছে, যেসব ব্যায়াম রাসূল ﷺ উৎসাহ দিয়েছেন, তা শরীরের জন্য খুবই উপকারী। তাই আমাদের উচিত, সুন্নাহভিত্তিক জীবনচর্চার মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর মুসলিম সমাজ গড়ে তোলা।