আশেকে রাসূল কোনো মুখের দাবি নয়, এটি এক মহত্তম সাধনার নাম।
প্রকৃত আশেকে রাসূল হওয়ার আমল,করণীয় ও উপায়
- আপডেট সময়ঃ ১২:১৩:৩৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫
- / ৭৪ বার পড়া হয়েছে।
রাসূল প্রেম কেন গুরুত্বপূর্ণ?
মহান আল্লাহ বলেন:
“নবী মু’মিনদের জন্য তাদের নিজের চেয়েও প্রিয়।”
📖 [সূরা আহযাব: ৬]
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর প্রতি ভালোবাসা ঈমানের অন্যতম শর্ত। রাসূলের প্রেম ব্যতীত কারো ঈমান পূর্ণ হয় না। নবীজিকে ভালোবাসা মানে তাঁর আনুগত্য করা, তাঁর সুন্নাহ মেনে চলা, তাঁর জীবনী চর্চা করা, এবং সর্বদা তাঁর স্মরণে মগ্ন থাকা।
১. রাসূলের প্রেমের গুরুত্ব
নবীজি বলেছেন:
“তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মু’মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার নিকট তার পিতা, সন্তান ও সকল মানুষের চেয়েও প্রিয় হব।”
📚 (বুখারি: ১৫)
২. আশেকে রাসূল কারা?
আশেকে রাসূল বলা হয় সেইসব লোকদের, যারা:
-
রাসূলের আদর্শকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করে।
-
রাসূলের স্মরণে কাঁদে, তাঁর পথে জীবন কাটায়।
-
তাঁর সুন্নাতকে ভালোবাসে ও ছড়িয়ে দেয়।
৩. প্রকৃত আশেক হওয়ার আমলসমূহ
(ক) নিয়মিত দরূদ পাঠ করা
“যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ পড়ে, আল্লাহ তাকে দশটি রহমত দান করেন।”
📚 (মুসলিম: ৪০৮)
প্রতিদিন কমপক্ষে ১০০ বার দরূদ শরীফ পাঠ করা প্রকৃত আশেক হওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ চর্চা।
(খ) রাসূলের সুন্নাত পালন করা
সুন্নাহ পালনে ঈমান মজবুত হয়। দাঁড়ি রাখা, মিসওয়াক করা, ডান দিক দিয়ে খাওয়া, সালাম দেওয়া, ছোট পোশাক ইত্যাদি সুন্নাহ পালনে রাসূলের সাথে সম্পর্ক মজবুত হয়।
(গ) রাসূলের জীবনী অধ্যয়ন করা (সীরাহ)
যিনি রাসূলকে জানতে পারবে, সেই-ই তাকে ভালোবাসবে। তাই নবীজির জীবনী জানলে প্রকৃত প্রেম তৈরি হয়।
📚 রেফারেন্স: “আর-রাহীকুল মাখতুম”, “সীরাতে মুস্তাফা”, ইবনে হিশামের সীরাতুন্নবী।
(ঘ) কাবা শরীফ ও মদিনা মনোয়ারায় ভালবাসা রাখা
“যে মদিনায় মৃত্যুবরণ করবে, আমি তার জন্য সুপারিশ করবো।”
📚 (তিরমিজি: ৩৯১৭)
(ঙ) রাসূলের আদর্শে পরিবার গঠন করা
বাসায় সুন্নাহ অনুযায়ী আমল করলে বরকত আসে। স্ত্রী-সন্তানদের সুন্নাহ শিক্ষা দেওয়া আশেকে রাসূলের বৈশিষ্ট্য।
(চ) রাসূলের প্রতি দোয়া করা ও তাঁর উম্মতের জন্য কান্না করা
রাসূল ছিলেন উম্মতের জন্য অশ্রুপাতকারী। তাঁর উম্মতও তাঁর নামে কান্না করবে।
৪. আশেকে রাসূলের বৈশিষ্ট্য
-
দুনিয়াবি জৌলুসে নয়, আখিরাতের চিন্তায় থাকে।
-
গীবত, হিংসা, অহংকার থেকে বাঁচে।
-
আল্লাহ ও রাসূলের আদেশকে প্রাধান্য দেয়।
-
ইবাদতে লিপ্ত থাকে।
৫. রাসূলের স্মরণে জীবনের রঙ বদলে দেওয়া আমল
১. প্রতিদিন দরূদ পাঠ করা (দরূদ ইব্রাহিম বা দরূদ তুনাজিনা)।
২. জুমা রাতে দরূদের সংখ্যাবৃদ্ধি করা।
৩. ‘সীরাতুন্নবী’ বা হাদীস পাঠ।
৪. রাসূলের আদর্শ অনুযায়ী দিনযাপন।
৫. ‘মাওলা ইয়াসল্লি ওয়া সাল্লিম দাঈমান আবাদা’ পাঠে অভ্যস্ত হওয়া।
৬. রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ বা অবমাননার শাস্তি
“তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করো না।”
📖 (সূরা আনফাল: ২০)
নবীজিকে হেয় করা, তাঁর সুন্নাহ অবহেলা করা মারাত্মক গুনাহ। ইতিহাসে দেখা যায় যারা রাসূলকে কটাক্ষ করেছে, আল্লাহ তাদের দুনিয়াতে লাঞ্ছিত করেছেন।
৭. রাসূল প্রেমের ফসল কী?
ঈমান পরিপূর্ণতা লাভ করে
হাশরে রাসূলের শাফায়াত পাওয়া যাবে
জান্নাত লাভের রাস্তা সহজ হয়
✅ জীবনে বরকত আসে
৮. আশেকে রাসূল হওয়া কীভাবে সম্ভব? (উপায়)
| উপায় | বর্ণনা |
|---|---|
| ১ | প্রতিদিন নির্ধারিত সময় দরূদ পাঠ |
| ২ | রাসূলের জীবনী অধ্যয়ন |
| ৩ | নফল রোযা, তাহাজ্জুদ, ইতিকাফে অভ্যস্ত হওয়া |
| ৪ | রাসূলের সুন্নাহ বাস্তবায়ন |
| ৫ | উম্মতের প্রতি দয়ার মনোভাব |
৯. সাহাবীগণ কিভাবে রাসূলকে ভালোবাসতেন?
-
হযরত বেলাল (রাঃ): মদিনা ছেড়ে দিতেন না, কারণ সেখানে রাসূল শায়িত আছেন।
-
হযরত ওমর (রাঃ): রাসূলের প্রতি ভালবাসায় বারবার কাঁদতেন।
১০. রাসূলকে ভালবাসার বাস্তব প্রমাণ কীভাবে দিবো?
-
মুখে নয়, কাজে প্রমাণ দিতে হবে।
-
সুন্নাহ অবলম্বন করতে হবে।
-
জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে রাসূলের আদর্শ অনুসরণ করতে হবে।
আশেকে রাসূল হওয়া কোনো মুখের দাবি নয়, এটি এক মহত্তম সাধনার নাম। যতক্ষণ না আমরা রাসূলের জীবনে প্রবেশ করি, ততক্ষণ আমরা সত্যিকারের আশেক হতে পারবো না। আমাদের উচিত তাঁর প্রতি দরূদ, তাঁর সুন্নাহ, এবং তাঁর আদর্শে পরিপূর্ণভাবে আত্মনিয়োগ করা।
রেফারেন্স সমূহ
-
কোরআন মাজীদ: সূরা আহযাব, সূরা আনফাল
-
হাদীস: সহীহ বুখারি, সহীহ মুসলিম, তিরমিজি
-
আর-রাহীকুল মাখতুম (সীরাহ গ্রন্থ)
-
সীরাতে মুস্তাফা – মাওলানা ইদরিস কান্ধলভী (রহঃ)
৫টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
-
আশেকে রাসূল হওয়ার প্রথম পদক্ষেপ কী?
রাসূলের জীবনী অধ্যয়ন ও দরূদ শরীফ পাঠ শুরু করা। -
রাসূল প্রেম কি কেবল মুখে বললেই হবে?
না, বাস্তব জীবনে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। -
রাসূলের সুন্নাত কি বর্তমান যুগে প্রযোজ্য?
হ্যাঁ, সুন্নাত সর্বযুগে প্রাসঙ্গিক ও বরকতময়। -
রাসূলকে দেখার উপায় কী?
বেশি বেশি দরূদ পাঠ ও পবিত্রতা অবলম্বনে স্বপ্নে রাসূলকে দেখার সৌভাগ্য হয়। -
একজন নবীন মুসলমান কীভাবে রাসূল প্রেম শুরু করবে?
দরূদ পাঠ, সীরাহ পাঠ এবং সুন্নাহ মেনে জীবন শুরু করবে।











