তাকবীরে তাশরীকের ২০টি বহুল আলোচিত প্রশ্ন ও উত্তর
তাকবীরে তাশরীক : ইতিহাস, অর্থ, নিয়ম কুরআন-হাদীসের দলিলসহ বিস্তারিত আলোচনা

- আপডেট সময়ঃ ১০:০৪:০২ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩১ মে ২০২৫
- / ২৭ বার পড়া হয়েছে।
জিলহজ মাসের ৯ তারিখ ফজরের নামাজ থেকে ১৩ তারিখ আসরের নামাজ পর্যন্ত, মুসলমানদের মাঝে একটি বিশেষ তাকবীর উচ্চারিত হয়—যা পরিচিত তাকবীরে তাশরীক নামে। এই তাকবীর পাঠ করা এক পবিত্র আমল যা কুরআন-হাদীস দ্বারা প্রমাণিত এবং ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধানগুলোর একটি। আজ আমরা জানব এর ইতিহাস, দলিল, গুরুত্ব এবং বহুল আলোচিত প্রশ্নোত্তরসহ বিস্তারিত বর্ণনা।
তাকবীরে তাশরীক কি?
শব্দগুচ্ছ ও অর্থ
আরবী:
اللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُ أَكْبَرُ، لَا إِلٰهَ إِلَّا اللَّهُ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُ أَكْبَرُ، وَلِلَّهِ الْحَمْدُ
বাংলা অনুবাদ:
আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান। আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান এবং সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।
উচ্চারণের দিকনির্দেশনা
শুদ্ধ উচ্চারণে এবং মনোযোগ সহকারে পড়া উত্তম।
-
তাকবীরে তাশরীক বাংলা-
- আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ
তাকবীরে তাশরীকের ইতিহাস
সাহাবীদের আমল
হযরত আলী (রাঃ), হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) এবং ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তাঁরা জিলহজের ৯-১৩ তারিখে এই তাকবীর পাঠ করতেন।
খলিফা ও ইমামদের তাফসির
ইমাম আবু হানিফা (রহঃ), ইমাম মালেক (রহঃ) ও ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) তাকবীরে তাশরীক পাঠকে ওয়াজিব বলেছেন। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ) এটিকে সুন্নাতে মুয়াক্কাদা বলেছেন।
তাকবীরে তাশরীক কখন পাঠ করতে হয়?
সময়সীমা
📅 ৯ জিলহজ ফজর থেকে শুরু করে ১৩ জিলহজ আসর পর্যন্ত।
কোন কোন নামাজের পর
🕌 প্রতি ফরজ নামাজের পরে একবার করে এই তাকবীর পাঠ করা হয়।
তাকবীরে তাশরীক পাঠের গুরুত্ব
দলিল: কুরআন
وَذَكِّرْهُمْ بِأَيَّامِ اللَّهِ
(সূরা ইবরাহিম: ৫)
—আল্লাহর দিনসমূহ স্মরণ করাও। এখানে তাশরীক-এর দিনসমূহও বোঝানো হয়েছে।
দলিল: হাদীস
রাসূল (সাঃ) বলেন:
“তাশরীকের দিনগুলো হচ্ছে খাওয়া, পান করা এবং আল্লাহর জিকির করার দিন।”
📚 (সহীহ মুসলিম: ১১৪১)
তাকবীরে তাশরীক না পড়লে কি হয়?
ওয়াজিব কি না?
ইমাম আবু হানিফা (রহঃ)-এর মতে এটি ওয়াজিব।
না পড়লে গুনাহ?
ওয়াজিব আদায় না করলে গুনাহ হবে। ভুলে ছুটে গেলে কাযা করার প্রয়োজন নেই তবে ইস্তিগফার করা উচিত।
কিভাবে তাকবীরে তাশরীক পাঠ করতে হয়?
পুরুষদের জন্য নিয়ম
প্রতি ফরজ নামাজের পর জোরে তাকবীর পাঠ করা সুন্নাহ।
মহিলাদের জন্য নিয়ম
মহিলারা আস্তে করে পড়বে, জোরে নয়।
তাকবীরে তাশরীক পড়ার নিয়ম ও ভঙ্গি
জোরে না আস্তে?
পুরুষরা মসজিদে বা জামাতে থাকলে জোরে পড়বে।
জামাতে না একা?
একাকী নামাজ হলেও তাকবীর পাঠ করা হবে।
তাকবীরে তাশরীক এবং ঈদুল আযহার সম্পর্ক
ঈদুল আযহা হলো কুরবানি ও তাকবীরের উৎসব। এই তাকবীর ঈদ ও তাশরীকের আমলকে পরিপূর্ণ করে।
২০টি বহুল আলোচিত প্রশ্ন ও উত্তর
-
তাকবীরে তাশরীক কতদিন পড়তে হয়?
➤ ৯ জিলহজ ফজর থেকে ১৩ জিলহজ আসর পর্যন্ত (৫ দিন)। -
কে কে পড়বে?
➤ সকল পুরুষ ও নারী, নামাযের পর। -
শুধু জামাতে নামাজ হলে পড়তে হয়?
➤ না, একাকী হলেও পড়তে হয়। -
কতবার পড়তে হয়?
➤ প্রতি ফরজ নামাজের পরে একবার। -
ইমামের সালাম ফিরানোর পরে পড়বে?
➤ হ্যাঁ, তৎক্ষণাৎ তাকবীর দিতে হবে। -
বাচ্চা, অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য কি নিয়ম?
➤ প্রাপ্তবয়স্কদের মত ওয়াজিব নয়, শেখানো যেতে পারে। -
অন্য তাকবীর পড়া যাবে?
➤ নির্দিষ্ট তাকবীরই পড়তে হবে। -
ভুলে না পড়লে?
➤ ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত। -
শরীর অসুস্থ থাকলে?
➤ সম্ভব হলে পড়বে, না পারলে ক্ষমাযোগ্য। -
মসজিদের বাইরে পড়া যাবে?
➤ হ্যাঁ, বাড়িতেও পড়া যাবে। -
সুন্নত, নফল নামাজের পর পড়বে?
➤ না, শুধু ফরজের পর। -
তাকবীর পাঠের মধ্যে কোনো বিরতি থাকবে?
➤ না, একবারে ধারাবাহিকভাবে পড়বে। -
সফরে থাকলে?
➤ সফরেও ওয়াজিব। -
ইমাম ও মুক্তাদীর তাকবীর একসাথে হবে?
➤ ইমামের পরে মুক্তাদী পড়বে। -
তাকবীর না জানলে কী করবে?
➤ শিখে নেওয়া উচিত। -
মহিলারা কি জামাতে না পড়লে পড়বে না?
➤ না, তাদেরও একাকী পড়তে হবে। -
মোবাইলে শুনে পড়া যাবে?
➤ না, নিজেই মুখে পড়া আবশ্যক। -
বিনা অজুতে পড়া যাবে?
➤ হ্যাঁ, ওজুর প্রয়োজন নেই। -
ইদ গিয়েছে, তবুও পড়বো?
➤ হ্যাঁ, ১৩ জিলহজ আসর পর্যন্ত। -
বাংলায় পড়লে হবে?
➤ না, আরবী ভাষায়ই পড়তে হবে।
তাকবীরে তাশরীক শুধু এক টুকরো বাক্য নয়, বরং এটি ঈমানদারের ঈদের আনন্দের প্রকাশ। এটি সাহাবীদের আমল, নবীজির নির্দেশ এবং কুরআনের আলোকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। তাই আসুন, আমরা নিয়ম মেনে এই তাকবীর পাঠ করি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করি।
FAQs
প্রশ্ন ১: তাকবীরে তাশরীক কি মসজিদের বাইরে পড়া যাবে?
হ্যাঁ, বাড়ি, বাজার, কোথাও নামাজ পড়লেও ফরজের পর তাকবীর পড়তে হবে।
প্রশ্ন ২: প্রতিটি ওয়াক্তে একবারই পড়া লাগবে?
হ্যাঁ, প্রতি ফরজ নামাজের পরে একবারই যথেষ্ট।
প্রশ্ন ৩: মহিলারা তাকবীর জোরে পড়তে পারবে?
না, মহিলাদের নিচু স্বরে পড়া উত্তম।
প্রশ্ন ৪: জামাতে নামাজ না হলে তাকবীর পড়বো না?
জামাত না হলেও তাকবীর পড়া ওয়াজিব।
প্রশ্ন ৫: ভুলে না পড়লে করণীয় কী?
ইস্তিগফার করা উচিত এবং পরবর্তী সময় স্মরণ রাখা উচিত।