ইসলামী শরীয়তের আলোকে দুর্গাপূজা ও পূজামণ্ডপে মুসলিমদের উপস্থিতির বিধান ও ক্ষতি
দুর্গাপূজা : মুসলিমরা পূজামণ্ডপে গেলে কি কি ক্ষতি? ইসলাম কি বলে ?
- আপডেট সময়ঃ ১১:৫৭:০৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ অক্টোবর ২০২৫
- / ৮২ বার পড়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ও উপমহাদেশের মুসলমানরা প্রায়ই এমন এক বাস্তবতায় বসবাস করেন যেখানে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা পালিত হয়। এ সময় প্রশ্ন ওঠে—একজন মুসলমান কি পূজামণ্ডপে যেতে পারে? সেটা কি জায়েজ নাকি হারাম? এ আলোচনার উদ্দেশ্য হলো কুরআন, হাদীস এবং আলেমদের ব্যাখ্যা থেকে সঠিক দিকনির্দেশনা তুলে ধরা।
দুর্গাপূজা কী এবং এর ধর্মীয় তাৎপর্য
দুর্গাপূজা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য দেবী দুর্গার আরাধনার অন্যতম প্রধান উৎসব। এ উৎসবের কেন্দ্রবিন্দু হলো মূর্তি, পূজা ও আরতি—যা সরাসরি শিরক বা মূর্তিপূজা। ইসলামে মূর্তিপূজা কঠোরভাবে হারাম।
ইসলামে পূজা-পার্বণে অংশগ্রহণের মূলনীতি
হুকুমের ভিত্তি: কুরআন
وَالَّذِينَ لَا يَشْهَدُونَ الزُّورَ
“আর তারা (আল্লাহর বান্দারা) যারা মিথ্যা ও অসত্য অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে না।”
(সূরা আল-ফুরকান 25:72)
তাফসীর ইবনে কাসীর ব্যাখ্যা করেছেন: “الزور” এর অন্তর্ভুক্ত হলো মুশরিকদের উৎসব ও পূজা-পার্বণ।
হুকুমের ভিত্তি: হাদীস
রাসূল ﷺ বলেছেন:
“من تشبه بقوم فهو منهم”
“যে ব্যক্তি কোনো জাতির সাথে সাদৃশ্য রাখে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত।”
(আবু দাউদ 4031)
মুসলিমদের জন্য শিরক থেকে দূরে থাকার নির্দেশনা
আল্লাহ বলেছেন:
إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ
“নিশ্চয় শিরক এক মহা জুলুম।”
(সূরা লুকমান 31:13)
এ আয়াত স্পষ্ট করছে—মূর্তি, পূজা বা এ ধরনের আচার-অনুষ্ঠান কোনোভাবেই একজন মুসলিমের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়।
আকীদাহগত ঝুঁকি
পূজামণ্ডপে যাওয়া বা উৎসবে যোগদান করা মানে:
-
শিরককে সম্মান দেওয়া।
-
ইসলামী আকীদাহকে দুর্বল করা।
-
অন্যদের মনে ইসলামের সীমারেখা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করা।
দুর্গাপূজার মণ্ডপে গেলে মুসলিমদের কী কী ক্ষতি হতে পারে
১. আকীদাহর ক্ষতি
শিরককে পরোক্ষভাবে সমর্থন করার সমান।
২. গুনাহের বোঝা বৃদ্ধি
হারাম স্থানে উপস্থিতি আল্লাহর কাছে কবীরা গুনাহ।
৩. সামাজিক বিভ্রান্তি
অমুসলিমরা মনে করতে পারে, মুসলিমরা তাদের ধর্মকে সমর্থন করছে।
৪. ইমান দুর্বল হওয়া
হারাম পরিবেশে বারবার গেলে ইমান দুর্বল হয়ে যায়।
সামাজিক সম্পর্ক বনাম ধর্মীয় সীমারেখা
ইসলাম অমুসলিমদের সাথে সদাচার, ব্যবসা, সহানুভূতি করার অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু ধর্মীয় আচার, পূজা-পার্বণ বা মূর্তিপূজায় যোগদান করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
ইসলাম ও সহাবস্থান: অমুসলিমদের সাথে সদাচার
আল্লাহ বলেছেন:
لَا يَنْهَاكُمُ اللَّهُ عَنِ الَّذِينَ لَمْ يُقَاتِلُوكُمْ فِي الدِّينِ وَلَمْ يُخْرِجُوكُمْ مِنْ دِيَارِكُمْ أَنْ تَبَرُّوهُمْ وَتُقْسِطُوا إِلَيْهِمْ
“যারা তোমাদের সাথে ধর্মের কারণে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদের দেশ থেকে বের করে দেয়নি—আল্লাহ তোমাদের তাদের সাথে সদাচার ও ন্যায়বিচার করতে নিষেধ করেন না।”
(সূরা আল-মুমতাহিনা 60:8)
অতএব, সামাজিক সম্পর্ক রাখতে কোনো সমস্যা নেই, তবে ধর্মীয় আচার মেনে চলা বা অংশ নেওয়া হারাম।
দুর্গাপূজার সময় মুসলিমের করণীয়
-
মণ্ডপে না যাওয়া।
-
পূজার অনুষ্ঠান থেকে বিরত থাকা।
-
ইমান অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য দোয়া করা।
-
নিজের পরিবার ও সন্তানদের এ বিষয়ে সচেতন করা।
ভুল ধারণা ও প্রচলিত অজুহাত
অনেকে বলেন, “আমি শুধু ঘুরতে যাচ্ছি, পূজা করছি না।”
👉 কিন্তু বাস্তবে এভাবে যাওয়া মূর্তিপূজার সমর্থন হিসেবে গণ্য হয়।
ইসলামের দৃষ্টিতে দুর্গাপূজা বা যেকোনো মূর্তিপূজার অনুষ্ঠানে মুসলমানদের উপস্থিত থাকা সম্পূর্ণ হারাম। এটা আকীদাহ ও ঈমানের জন্য ক্ষতিকর, সমাজের জন্য বিভ্রান্তিকর এবং আল্লাহর শাস্তির কারণ হতে পারে। মুসলিমদের উচিত অন্য ধর্মাবলম্বীদের সাথে সামাজিক সদাচার করা, কিন্তু তাদের ধর্মীয় আচার থেকে দূরে থাকা।
প্রশ্নোত্তর (FAQs)
প্রশ্ন ১: মুসলমানরা কি দুর্গাপূজায় গিয়ে ছবি তুলতে পারে?
উত্তর: না, কারণ এটি শিরকীয় অনুষ্ঠানের সমর্থন হিসেবে গণ্য হয়।
প্রশ্ন ২: পূজার সময় শুভেচ্ছা জানানো কি জায়েজ?
উত্তর: না, কারণ এতে কুফরী কাজকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
প্রশ্ন ৩: ব্যবসার কারণে দুর্গাপূজা উপলক্ষে দোকান সাজানো যাবে কি?
উত্তর: না, এতে শিরকীয় উৎসবকে সমর্থন করা হয়।
প্রশ্ন ৪: শুধু বন্ধুদের সাথে ঘুরতে গেলে সমস্যা আছে কি?
উত্তর: হ্যাঁ, কারণ উপস্থিত থাকাও হারাম।
প্রশ্ন ৫: মুসলমানরা কীভাবে অমুসলিম প্রতিবেশীদের সাথে আচরণ করবে?
উত্তর: সদাচার করবে, কিন্তু তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নেবে না।











