০৯:০১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫
ফজরের নামাজ ৪ রাকাত, যার মধ্যে ২ রাকাত সুন্নত ও ২ রাকাত ফরজ।

ফজরের নামাজের সময় – কয় রাকাত? নিয়ম,দোআ ও ২০টি প্রশ্নোত্তর

Faruq Hasan
  • আপডেট সময়ঃ ০৪:৩৫:১০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫
  • / ৪১ বার পড়া হয়েছে।

ফজরের নামাজ

🕌 ফজরের নামাজ

❓ ১. ফজরের নামাজ কখন শুরু হয়?

উত্তর: ফজরের নামাজ শুরু হয় সবে সবে দাউস (ফজরের আলো-উদয় হরিণ সাদা দিক থেকে প্রসারিত হওয়া) শুরু হওয়ার পর। অর্থাৎ আকাশে একটি শীতল সাদা ঝিলিক দেখা দিলে।

❓ ২. ফজরের নামাজ কখন শেষ হয়?

উত্তর: ফজরের নামাজ শেষ হয় সূর্যোদয়ের আগেই — অর্থাৎ সূর্য উঠা আরম্ভ হওয়ায় নামাজ আদায় করা যাবে না।

❓ ৩. ফজরের নামাজ কয় রাকাত?

উত্তর:

  • فرض (ফরজ) অংশ: ২ রাকাত

  • সুন্নত (সুন্নত-মুয়াক্কাদাহ) অংশ: ২ রাকাত 
    সুতরাং সাধারণভাবে বলা হয়: ফজরের নামাজ ৪ রাকাত, যার মধ্যে ২ রাকাত সুন্নত ও ২ রাকাত ফরজ।


🔍 আলোচিত অন্যান্য প্রশ্ন ও উত্তর (প্রায় ২০)

নীচে কিছু প্রায়শই অনুসন্ধিত প্রশ্ন ও সংক্ষিপ্ত উত্তর দেওয়া হলো:

  1. ফজরের নামাজের সময় কতক্ষণ চলে?
    উত্তর: শুরু থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত — সাধারণত প্রায় ১ ঘন্টা থেকে দেড় ঘণ্টার মধ্যে (ভৌগোলিক অবস্থান ও ঋতু ভেদে)।

  2. ফজরের সুন্নত কত রাকাত?
    উত্তর: ২ রাকাত সুন্নত (সুন্নত-মুয়াক্কাদাহ)।

  3. ফজরের নফল নামাজ আছে কি?
    উত্তর: অনেক হাদিসে নফল নামাজের উৎসাহ আছে, তবে ফরজ ও সুন্নতের পর অতিরিক্ত নফল (যেমন তাসবিহ, হাজত) করা যেতে পারে।

  4. ফজরের নামাজ কখন পড়া ভালো?
    উত্তর: যত দ্রুত সম্ভব, এর আদায় শুরুতে করার নির্দেশ আছে।

  5. ফজর ও অন্যান্য নামাজের মধ্যে পার্থক্য
    উত্তর: ফজর একমাত্র প্রারম্ভে ২ রাকাত সুন্নত থাকে; অন্যান্য নামাজে সুন্নত বিভিন্ন হয়।

  6. ফজর আদায় না করলে কি হবে?
    উত্তর: এটি গোনাহ; আল্লাহর হক ও দায়িত্ব অগ্রাহ্য করা হবে।

  7. ফজরের আজান ও ইকামাহ সময়ের পার্থক্য কী?
    উত্তর: আজান নামাজের ঘোষণা; ইকামাহ নামাজ শুরু করার সংকেত।

  8. ফজর নামাজে সূরা আল-ফাতিহা ও অন্য সূরা পাঠ করা উচিত?
    উত্তর: হ্যাঁ, প্রতিটি রাকাতে ফাতিহা এবং আরেকটি সূরা বা কিছু আয়াত পাঠ করা সুন্নত।

  9. ফজরের নামাজ জায়গা বা অবস্থান কি গুরুত্বপূর্ণ?
    উত্তর: যেকোনো পবিত্র স্থান (মসজিদ বা বাড়ি) — তবে এ সেটিং (মসজিদই ভালো)।

  10. ফজরের নামাজে কেয়াম (দাঁড়ানো) কত স্থায়ী হওয়া উচিত?
    উত্তর: যথাসামর্থ — যতটা সম্ভব স্তব্ধ ও মনোযোগ সহকারে থাকতে হবে।

  11. ফজরের নামাজে সিজদা ও তাশাহ্হুদ একই নিয়মে?
    উত্তর: হ্যাঁ, অন্যান্য নামাজের মতোই আরকান মেনে সিজদা ও তাশাহ্হুদ করতে হবে।

  12. ফজরের সময় ভুলে নামাজ পড়া কি-বাপারে?
    উত্তর: যদি নামাজের সময় শেষ হয়ে যায়, তবে দুঃখিত হওয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিৎ; যদি সম্ভাব্য হয়, সেই সময়ের নামাজ Qadha (বাদে পড়া নামাজ) পড়া যেতে পারে।

  13. ফজরের নামে অন্য কোনো নাম?
    উত্তর: “সুবহে-সাদিক” নামে পরিচিত, অর্থ প্রামাণ্য ভোর।

  14. ফজরের নামাজ ও রমজানে তার গুরুত্ব?
    উত্তর: রমজানে ফজরের নামাজ (বিশেষ করে প্রথম অংশ) বেশি ফজিলতপূর্ণ।

  15. ফজরের নামাজে তাকবির কতবার বলা হবে?
    উত্তর: সাধারণ নামাজের মতো তাকবিরের আরকান থেকে; আলাদা কিছু উল্লেখ নেই।

  16. ফজরের নামাজ মিস করা হলে ক্ষতি কী?
    উত্তর: ঈমান ও দায়িত্বের প্রতি অবহেলা; Qadha করে মাফের চেষ্টা করা উচিত।

  17. ফজরের নামাজে দোয়ার গুরুত্ব?
    উত্তর: নামাজ শেষে কেউ ব্যক্তিগত দোয়া করতে পারেন — বিশেষ করে সেই দিন (সকাল) ও কাজের জন্য।

  18. নিজ দেশে ফজরের সময় নির্ধারণ কীভাবে হয়?
    উত্তর: মসজিদের দ্বার বা ইসলামিক সময়সূচি, জ্যোতির্বিজ্ঞান ভিত্তিক হিসাব, মাসলাহের ভিত্তিতে নির্ধারণ।

  19. ফজরের নামাজ শুরুতে জেগে ওঠার প্রয়োজনীয়তা?
    উত্তর: ইচ্ছা সৎ হওয়া ও প্রস্তুতির জন্য ভোরে জেগে উঠা ভালো।

  20. ফজরে নামাজ দ্রুত পড়া উচিত নাকি ধীরে ধীরে?
    উত্তর: সম্মান ও খতরার কারণে যতটা সম্ভব ধীরে ও মনোযোগ সহকারে পড়ার নির্দেশ।

🕌 ফজরের নামাজ আদায়ের পদ্ধতি ও নিয়ম

(দুই রাকাত সুন্নাত ও দুই রাকাত ফরজ নামাজের সঠিক নিয়ম)


✅ নামাজের পূর্ব প্রস্তুতি:

১. ওযু করা – পবিত্রতা অর্জন করা ফরজ।
২. পোশাক ও স্থান পবিত্র হওয়া – কাপড়, শরীর ও নামাজের জায়গা পাক-পরিচ্ছন্ন হতে হবে।
3. কিবলা অভিমুখে হওয়া
4. সময় শুরু হওয়া – ফজরের ওয়াক্ত শুরু হলেই নামাজ আদায় করা যাবে।


✨ ফজরের নামাজের রাকাতসমূহ:

নামাজ রাকাত সংখ্যা ধরণ
২ রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ
২ রাকাত ফরজ

🌙 ফজরের ২ রাকাত সুন্নাত নামাজের পদ্ধতি:

সুন্নাত নামাজ ফরজের আগে আদায় করতে হয়।

▶ রাকাত ১:

  1. নিয়ত:

“আমি ২ রাকাত সুন্নাতে মুআক্কাদাহ ফজরের নামাজ কিবলার দিকে মুখ করে আল্লাহর জন্য আদায় করছি।”

  1. তাকবির – “আল্লাহু আকবার” বলে হাত বেঁধে দাঁড়ান।

  2. সানা পড়ুন:

“সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা…”

  1. সূরা ফাতিহা পড়ুন।

  2. এরপর যেকোনো সূরা বা আয়াত, যেমন: সূরা ইখলাস

  3. রুকু – “সুবহানা রাব্বিয়াল আযিম” (৩ বার)।

  4. সামি’আল্লাহু লিমান হামিদাহ – উঠে দাঁড়ান এবং “রাব্বানা লাকাল হাম্দ” বলুন।

  5. সিজদা – “সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা” (৩ বার)।

  6. বসা – “রব্বিগ্‌ফিরলি” বলুন।

  7. দ্বিতীয় সিজদা

▶ রাকাত ২:

  1. সূরা ফাতিহা + অন্য সূরা

  2. রুকু

  3. কিয়াম

  4. সিজদা

  5. বসা

  6. তাশাহহুদ (আত্তাহিয়্যাতু) পড়ুন

  7. দরূদ শরীফ পড়ুন (ইব্রাহীমি দরূদ)

  8. দোয়া পড়ুন, যেমন:

“রব্বানা আতিনা ফিদ্‌ দুনিয়া হাসানাহ…”

  1. তাসলিম – ডানে ও বামে সালাম ফিরান।


🌅 ফজরের ২ রাকাত ফরজ নামাজের পদ্ধতি:

সুন্নাত নামাজের পরে ফরজ নামাজ আদায় করবেন।

▶ নিয়ত:

“আমি ২ রাকাত ফরজ ফজরের নামাজ কিবলার দিকে মুখ করে আল্লাহর জন্য আদায় করছি।”

এরপর ঠিক সুন্নাতের মতোই আদায় করবেন, কিন্তু ফরজ হওয়ায় আরো খুশু ও খুজু (মনোযোগ ও বিনয়) সহকারে পড়া আবশ্যক।


📖 দলিল (হাদীস):

১. রাসূল ﷺ বলেন:

“ফজরের দুই রাকাত সুন্নাত, দুনিয়া ও তার ভেতরের সমস্ত কিছু থেকেও উত্তম।”
— (সহীহ মুসলিম: ৭২৫)

২. কুরআনে আল্লাহ বলেন:

“নিশ্চয়ই সালাত মুমিনদের জন্য নির্ধারিত সময়ে ফরজ।”
— (সূরা নিসা: ১০৩)


✅ গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়:

  • ফজরের নামাজ দেরিতে না পড়ে ওয়াক্ত শুরুতেই আদায় করা উত্তম।

  • প্রথমে ২ রাকাত সুন্নাত, এরপর ২ রাকাত ফরজ পড়তে হয়।

  • ফজরের ফরজ নামাজ জামাআতের সাথে পড়া সুন্নাত মুয়াক্কাদাহ।


🕓 সময়সীমা:

  • শুরু: সুবহে সাদিক (আলোর রেখা দেখা দিলে)

  • শেষ: সূর্যোদয়ের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত

📌 সূর্য ওঠার পর নামাজ আদায় করা নিষিদ্ধ সময়। ফজরের নামাজ সময়মতো না পড়লে, কাজা (পরে পড়া) করতে হবে।

🕌 ফজরের নামাজের পর আমলসমূহ

(কুরআন ও হাদীসের আলোকে ফজরের পর করণীয় ইবাদত)


✅ ১. আল্লাহর যিকর করা (তাসবিহ, তাহমিদ, তাকবির, তাহলীল)

নামাজের পরে নিচের তাসবিহগুলো পড়া খুব ফজিলতপূর্ণ:

যিকর উচ্চারণ অর্থ
سُبْحَانَ اللَّهِ (৩৩ বার) আল্লাহ পবিত্র
الْحَمْدُ لِلَّهِ (৩৩ বার) সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর
اللَّهُ أَكْبَرُ (৩৩ বার) আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ
لَا إِلٰهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ… (১ বার) আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই…

📚 হাদীস:
রাসুল (ﷺ) বলেন:

“ফজরের নামাজের পর কেউ না উঠে এই তাসবিহগুলো পড়লে, তার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়, যদিও তা সমুদ্রের ফেনার মতো হয়।”
— (মুসলিম: ৫৯৭)


✅ ২. আসকার বা দুআ পাঠ করা

ফজরের পর “সাবাহের আসকার” অর্থাৎ সকালের দোয়া পড়া সুন্নাত। যেমন:

🔹 আয়াতুল কুরসী (সূরা বাকারাহ ২:২৫৫)
🔹 সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক, সূরা নাস – ৩ বার করে
🔹 নিচের দোয়াটি:

اللَّهُمَّ أَجِرْنِي مِنَ النَّارِ
“হে আল্লাহ! আমাকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করুন।” (৭ বার)

🔹 সকাল-সন্ধ্যার দোয়া বই (Hisnul Muslim বা অন্য বই) থেকে দোয়া পড়া উত্তম।


✅ ৩. কুরআন তিলাওয়াত

ফজরের নামাজের পর কুরআন তিলাওয়াত করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ।

📚 কুরআন বলেছে:

“আর ফজরের কুরআন — নিশ্চয়ই তা সাক্ষীস্বরূপ পড়া হয়।”
— (সূরা ইসরা: ১৭:৭৮)

📝 প্রতিদিন অন্তত ৫-১০ আয়াত হলেও তিলাওয়াত করুন।


✅ ৪. তাসবিহ, তাহলীল ও ইস্তেগফার করা

🔹 আস্তাগফিরুল্লাহ (١٠০ বার)
🔹 لا إله إلا الله (যত ইচ্ছা)
🔹 সালাতুন নাবী (দরূদ শরীফ ১০ বা ১০০ বার)


✅ ৫. সূর্যোদয় পর্যন্ত বসে ইবাদত করা ও ঈশার নামাজ আদায় করা

🕌 ফজরের নামাজ পড়ে বসে আল্লাহর যিকর ও ইবাদতে নিয়োজিত থেকে সূর্য ওঠার ১৫-২০ মিনিট পরে ২ রাকাত নফল নামাজ আদায় করলে এক হজ ও ওমরার সওয়াব পাওয়া যায়।

📚 হাদীস:

“যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাআতে আদায় করে, তারপর বসে আল্লাহর যিকর করতে থাকে সূর্য ওঠা পর্যন্ত, তারপর ২ রাকাত নামাজ পড়ে — তার জন্য হজ ও ওমরার পূর্ণ সওয়াব রয়েছে।”
— (তিরমিজি: ৫৮৬, সহীহ)


✅ ৬. দু’আ করা

ফজরের পর সময়টা দুআ কবুলের অন্যতম সময়। নিজের জন্য, পরিবার, উম্মাহ, রোগীদের জন্য দোয়া করতে পারেন।


✅ ৭. কাজে বের হবার আগে রিযিকের দোয়া ও ইখলাস সহকারে ইচ্ছা করা

“হে আল্লাহ! আমার রিজিক হালাল, বরকতময় ও সহজ করুন।”
— এই দোয়া সকালবেলায় কাজে যাওয়ার আগে করলে বরকত হয়।


☀️ উপসংহার:

ফজরের নামাজের পর সময়টা জীবনের সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ মুহূর্ত। যারা এই সময়কে ইবাদতে ব্যয় করেন, তাদের রিজিক বরকতময় হয়, দুঃখ-কষ্ট দূর হয় এবং দিনটি আলোকিত হয়ে যায়।


✅ সংক্ষেপে ফজরের পর করণীয় আমল:

  • ✅ তাসবিহ (৩৩+৩৩+৩৩+১)

  • ✅ আয়াতুল কুরসী

  • ✅ সূরা ইখলাস, ফালাক, নাস (৩ বার)

  • ✅ দোয়া ও আসকার

  • ✅ কুরআন তিলাওয়াত

  • ✅ দরূদ শরীফ

  • ✅ ইস্তেগফার

  • ✅ সূর্যোদয়ের পর ২ রাকাত ঈশরাক নামাজ

  • ✅ হালাল রিজিকের দোয়া

ট্যাগসঃ

নিউজটি শেয়ার করুন

বিস্তারিত লিখুনঃ

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

ফজরের নামাজ ৪ রাকাত, যার মধ্যে ২ রাকাত সুন্নত ও ২ রাকাত ফরজ।

ফজরের নামাজের সময় – কয় রাকাত? নিয়ম,দোআ ও ২০টি প্রশ্নোত্তর

আপডেট সময়ঃ ০৪:৩৫:১০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

🕌 ফজরের নামাজ

❓ ১. ফজরের নামাজ কখন শুরু হয়?

উত্তর: ফজরের নামাজ শুরু হয় সবে সবে দাউস (ফজরের আলো-উদয় হরিণ সাদা দিক থেকে প্রসারিত হওয়া) শুরু হওয়ার পর। অর্থাৎ আকাশে একটি শীতল সাদা ঝিলিক দেখা দিলে।

❓ ২. ফজরের নামাজ কখন শেষ হয়?

উত্তর: ফজরের নামাজ শেষ হয় সূর্যোদয়ের আগেই — অর্থাৎ সূর্য উঠা আরম্ভ হওয়ায় নামাজ আদায় করা যাবে না।

❓ ৩. ফজরের নামাজ কয় রাকাত?

উত্তর:

  • فرض (ফরজ) অংশ: ২ রাকাত

  • সুন্নত (সুন্নত-মুয়াক্কাদাহ) অংশ: ২ রাকাত 
    সুতরাং সাধারণভাবে বলা হয়: ফজরের নামাজ ৪ রাকাত, যার মধ্যে ২ রাকাত সুন্নত ও ২ রাকাত ফরজ।


🔍 আলোচিত অন্যান্য প্রশ্ন ও উত্তর (প্রায় ২০)

নীচে কিছু প্রায়শই অনুসন্ধিত প্রশ্ন ও সংক্ষিপ্ত উত্তর দেওয়া হলো:

  1. ফজরের নামাজের সময় কতক্ষণ চলে?
    উত্তর: শুরু থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত — সাধারণত প্রায় ১ ঘন্টা থেকে দেড় ঘণ্টার মধ্যে (ভৌগোলিক অবস্থান ও ঋতু ভেদে)।

  2. ফজরের সুন্নত কত রাকাত?
    উত্তর: ২ রাকাত সুন্নত (সুন্নত-মুয়াক্কাদাহ)।

  3. ফজরের নফল নামাজ আছে কি?
    উত্তর: অনেক হাদিসে নফল নামাজের উৎসাহ আছে, তবে ফরজ ও সুন্নতের পর অতিরিক্ত নফল (যেমন তাসবিহ, হাজত) করা যেতে পারে।

  4. ফজরের নামাজ কখন পড়া ভালো?
    উত্তর: যত দ্রুত সম্ভব, এর আদায় শুরুতে করার নির্দেশ আছে।

  5. ফজর ও অন্যান্য নামাজের মধ্যে পার্থক্য
    উত্তর: ফজর একমাত্র প্রারম্ভে ২ রাকাত সুন্নত থাকে; অন্যান্য নামাজে সুন্নত বিভিন্ন হয়।

  6. ফজর আদায় না করলে কি হবে?
    উত্তর: এটি গোনাহ; আল্লাহর হক ও দায়িত্ব অগ্রাহ্য করা হবে।

  7. ফজরের আজান ও ইকামাহ সময়ের পার্থক্য কী?
    উত্তর: আজান নামাজের ঘোষণা; ইকামাহ নামাজ শুরু করার সংকেত।

  8. ফজর নামাজে সূরা আল-ফাতিহা ও অন্য সূরা পাঠ করা উচিত?
    উত্তর: হ্যাঁ, প্রতিটি রাকাতে ফাতিহা এবং আরেকটি সূরা বা কিছু আয়াত পাঠ করা সুন্নত।

  9. ফজরের নামাজ জায়গা বা অবস্থান কি গুরুত্বপূর্ণ?
    উত্তর: যেকোনো পবিত্র স্থান (মসজিদ বা বাড়ি) — তবে এ সেটিং (মসজিদই ভালো)।

  10. ফজরের নামাজে কেয়াম (দাঁড়ানো) কত স্থায়ী হওয়া উচিত?
    উত্তর: যথাসামর্থ — যতটা সম্ভব স্তব্ধ ও মনোযোগ সহকারে থাকতে হবে।

  11. ফজরের নামাজে সিজদা ও তাশাহ্হুদ একই নিয়মে?
    উত্তর: হ্যাঁ, অন্যান্য নামাজের মতোই আরকান মেনে সিজদা ও তাশাহ্হুদ করতে হবে।

  12. ফজরের সময় ভুলে নামাজ পড়া কি-বাপারে?
    উত্তর: যদি নামাজের সময় শেষ হয়ে যায়, তবে দুঃখিত হওয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিৎ; যদি সম্ভাব্য হয়, সেই সময়ের নামাজ Qadha (বাদে পড়া নামাজ) পড়া যেতে পারে।

  13. ফজরের নামে অন্য কোনো নাম?
    উত্তর: “সুবহে-সাদিক” নামে পরিচিত, অর্থ প্রামাণ্য ভোর।

  14. ফজরের নামাজ ও রমজানে তার গুরুত্ব?
    উত্তর: রমজানে ফজরের নামাজ (বিশেষ করে প্রথম অংশ) বেশি ফজিলতপূর্ণ।

  15. ফজরের নামাজে তাকবির কতবার বলা হবে?
    উত্তর: সাধারণ নামাজের মতো তাকবিরের আরকান থেকে; আলাদা কিছু উল্লেখ নেই।

  16. ফজরের নামাজ মিস করা হলে ক্ষতি কী?
    উত্তর: ঈমান ও দায়িত্বের প্রতি অবহেলা; Qadha করে মাফের চেষ্টা করা উচিত।

  17. ফজরের নামাজে দোয়ার গুরুত্ব?
    উত্তর: নামাজ শেষে কেউ ব্যক্তিগত দোয়া করতে পারেন — বিশেষ করে সেই দিন (সকাল) ও কাজের জন্য।

  18. নিজ দেশে ফজরের সময় নির্ধারণ কীভাবে হয়?
    উত্তর: মসজিদের দ্বার বা ইসলামিক সময়সূচি, জ্যোতির্বিজ্ঞান ভিত্তিক হিসাব, মাসলাহের ভিত্তিতে নির্ধারণ।

  19. ফজরের নামাজ শুরুতে জেগে ওঠার প্রয়োজনীয়তা?
    উত্তর: ইচ্ছা সৎ হওয়া ও প্রস্তুতির জন্য ভোরে জেগে উঠা ভালো।

  20. ফজরে নামাজ দ্রুত পড়া উচিত নাকি ধীরে ধীরে?
    উত্তর: সম্মান ও খতরার কারণে যতটা সম্ভব ধীরে ও মনোযোগ সহকারে পড়ার নির্দেশ।

🕌 ফজরের নামাজ আদায়ের পদ্ধতি ও নিয়ম

(দুই রাকাত সুন্নাত ও দুই রাকাত ফরজ নামাজের সঠিক নিয়ম)


✅ নামাজের পূর্ব প্রস্তুতি:

১. ওযু করা – পবিত্রতা অর্জন করা ফরজ।
২. পোশাক ও স্থান পবিত্র হওয়া – কাপড়, শরীর ও নামাজের জায়গা পাক-পরিচ্ছন্ন হতে হবে।
3. কিবলা অভিমুখে হওয়া
4. সময় শুরু হওয়া – ফজরের ওয়াক্ত শুরু হলেই নামাজ আদায় করা যাবে।


✨ ফজরের নামাজের রাকাতসমূহ:

নামাজ রাকাত সংখ্যা ধরণ
২ রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ
২ রাকাত ফরজ

🌙 ফজরের ২ রাকাত সুন্নাত নামাজের পদ্ধতি:

সুন্নাত নামাজ ফরজের আগে আদায় করতে হয়।

▶ রাকাত ১:

  1. নিয়ত:

“আমি ২ রাকাত সুন্নাতে মুআক্কাদাহ ফজরের নামাজ কিবলার দিকে মুখ করে আল্লাহর জন্য আদায় করছি।”

  1. তাকবির – “আল্লাহু আকবার” বলে হাত বেঁধে দাঁড়ান।

  2. সানা পড়ুন:

“সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা…”

  1. সূরা ফাতিহা পড়ুন।

  2. এরপর যেকোনো সূরা বা আয়াত, যেমন: সূরা ইখলাস

  3. রুকু – “সুবহানা রাব্বিয়াল আযিম” (৩ বার)।

  4. সামি’আল্লাহু লিমান হামিদাহ – উঠে দাঁড়ান এবং “রাব্বানা লাকাল হাম্দ” বলুন।

  5. সিজদা – “সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা” (৩ বার)।

  6. বসা – “রব্বিগ্‌ফিরলি” বলুন।

  7. দ্বিতীয় সিজদা

▶ রাকাত ২:

  1. সূরা ফাতিহা + অন্য সূরা

  2. রুকু

  3. কিয়াম

  4. সিজদা

  5. বসা

  6. তাশাহহুদ (আত্তাহিয়্যাতু) পড়ুন

  7. দরূদ শরীফ পড়ুন (ইব্রাহীমি দরূদ)

  8. দোয়া পড়ুন, যেমন:

“রব্বানা আতিনা ফিদ্‌ দুনিয়া হাসানাহ…”

  1. তাসলিম – ডানে ও বামে সালাম ফিরান।


🌅 ফজরের ২ রাকাত ফরজ নামাজের পদ্ধতি:

সুন্নাত নামাজের পরে ফরজ নামাজ আদায় করবেন।

▶ নিয়ত:

“আমি ২ রাকাত ফরজ ফজরের নামাজ কিবলার দিকে মুখ করে আল্লাহর জন্য আদায় করছি।”

এরপর ঠিক সুন্নাতের মতোই আদায় করবেন, কিন্তু ফরজ হওয়ায় আরো খুশু ও খুজু (মনোযোগ ও বিনয়) সহকারে পড়া আবশ্যক।


📖 দলিল (হাদীস):

১. রাসূল ﷺ বলেন:

“ফজরের দুই রাকাত সুন্নাত, দুনিয়া ও তার ভেতরের সমস্ত কিছু থেকেও উত্তম।”
— (সহীহ মুসলিম: ৭২৫)

২. কুরআনে আল্লাহ বলেন:

“নিশ্চয়ই সালাত মুমিনদের জন্য নির্ধারিত সময়ে ফরজ।”
— (সূরা নিসা: ১০৩)


✅ গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়:

  • ফজরের নামাজ দেরিতে না পড়ে ওয়াক্ত শুরুতেই আদায় করা উত্তম।

  • প্রথমে ২ রাকাত সুন্নাত, এরপর ২ রাকাত ফরজ পড়তে হয়।

  • ফজরের ফরজ নামাজ জামাআতের সাথে পড়া সুন্নাত মুয়াক্কাদাহ।


🕓 সময়সীমা:

  • শুরু: সুবহে সাদিক (আলোর রেখা দেখা দিলে)

  • শেষ: সূর্যোদয়ের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত

📌 সূর্য ওঠার পর নামাজ আদায় করা নিষিদ্ধ সময়। ফজরের নামাজ সময়মতো না পড়লে, কাজা (পরে পড়া) করতে হবে।

🕌 ফজরের নামাজের পর আমলসমূহ

(কুরআন ও হাদীসের আলোকে ফজরের পর করণীয় ইবাদত)


✅ ১. আল্লাহর যিকর করা (তাসবিহ, তাহমিদ, তাকবির, তাহলীল)

নামাজের পরে নিচের তাসবিহগুলো পড়া খুব ফজিলতপূর্ণ:

যিকর উচ্চারণ অর্থ
سُبْحَانَ اللَّهِ (৩৩ বার) আল্লাহ পবিত্র
الْحَمْدُ لِلَّهِ (৩৩ বার) সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর
اللَّهُ أَكْبَرُ (৩৩ বার) আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ
لَا إِلٰهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ… (১ বার) আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই…

📚 হাদীস:
রাসুল (ﷺ) বলেন:

“ফজরের নামাজের পর কেউ না উঠে এই তাসবিহগুলো পড়লে, তার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়, যদিও তা সমুদ্রের ফেনার মতো হয়।”
— (মুসলিম: ৫৯৭)


✅ ২. আসকার বা দুআ পাঠ করা

ফজরের পর “সাবাহের আসকার” অর্থাৎ সকালের দোয়া পড়া সুন্নাত। যেমন:

🔹 আয়াতুল কুরসী (সূরা বাকারাহ ২:২৫৫)
🔹 সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক, সূরা নাস – ৩ বার করে
🔹 নিচের দোয়াটি:

اللَّهُمَّ أَجِرْنِي مِنَ النَّارِ
“হে আল্লাহ! আমাকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করুন।” (৭ বার)

🔹 সকাল-সন্ধ্যার দোয়া বই (Hisnul Muslim বা অন্য বই) থেকে দোয়া পড়া উত্তম।


✅ ৩. কুরআন তিলাওয়াত

ফজরের নামাজের পর কুরআন তিলাওয়াত করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ।

📚 কুরআন বলেছে:

“আর ফজরের কুরআন — নিশ্চয়ই তা সাক্ষীস্বরূপ পড়া হয়।”
— (সূরা ইসরা: ১৭:৭৮)

📝 প্রতিদিন অন্তত ৫-১০ আয়াত হলেও তিলাওয়াত করুন।


✅ ৪. তাসবিহ, তাহলীল ও ইস্তেগফার করা

🔹 আস্তাগফিরুল্লাহ (١٠০ বার)
🔹 لا إله إلا الله (যত ইচ্ছা)
🔹 সালাতুন নাবী (দরূদ শরীফ ১০ বা ১০০ বার)


✅ ৫. সূর্যোদয় পর্যন্ত বসে ইবাদত করা ও ঈশার নামাজ আদায় করা

🕌 ফজরের নামাজ পড়ে বসে আল্লাহর যিকর ও ইবাদতে নিয়োজিত থেকে সূর্য ওঠার ১৫-২০ মিনিট পরে ২ রাকাত নফল নামাজ আদায় করলে এক হজ ও ওমরার সওয়াব পাওয়া যায়।

📚 হাদীস:

“যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাআতে আদায় করে, তারপর বসে আল্লাহর যিকর করতে থাকে সূর্য ওঠা পর্যন্ত, তারপর ২ রাকাত নামাজ পড়ে — তার জন্য হজ ও ওমরার পূর্ণ সওয়াব রয়েছে।”
— (তিরমিজি: ৫৮৬, সহীহ)


✅ ৬. দু’আ করা

ফজরের পর সময়টা দুআ কবুলের অন্যতম সময়। নিজের জন্য, পরিবার, উম্মাহ, রোগীদের জন্য দোয়া করতে পারেন।


✅ ৭. কাজে বের হবার আগে রিযিকের দোয়া ও ইখলাস সহকারে ইচ্ছা করা

“হে আল্লাহ! আমার রিজিক হালাল, বরকতময় ও সহজ করুন।”
— এই দোয়া সকালবেলায় কাজে যাওয়ার আগে করলে বরকত হয়।


☀️ উপসংহার:

ফজরের নামাজের পর সময়টা জীবনের সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ মুহূর্ত। যারা এই সময়কে ইবাদতে ব্যয় করেন, তাদের রিজিক বরকতময় হয়, দুঃখ-কষ্ট দূর হয় এবং দিনটি আলোকিত হয়ে যায়।


✅ সংক্ষেপে ফজরের পর করণীয় আমল:

  • ✅ তাসবিহ (৩৩+৩৩+৩৩+১)

  • ✅ আয়াতুল কুরসী

  • ✅ সূরা ইখলাস, ফালাক, নাস (৩ বার)

  • ✅ দোয়া ও আসকার

  • ✅ কুরআন তিলাওয়াত

  • ✅ দরূদ শরীফ

  • ✅ ইস্তেগফার

  • ✅ সূর্যোদয়ের পর ২ রাকাত ঈশরাক নামাজ

  • ✅ হালাল রিজিকের দোয়া