ফজরের নামাজ ৪ রাকাত, যার মধ্যে ২ রাকাত সুন্নত ও ২ রাকাত ফরজ।
ফজরের নামাজের সময় – কয় রাকাত? নিয়ম,দোআ ও ২০টি প্রশ্নোত্তর
- আপডেট সময়ঃ ০৪:৩৫:১০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫
- / ৪১ বার পড়া হয়েছে।
🕌 ফজরের নামাজ –
❓ ১. ফজরের নামাজ কখন শুরু হয়?
উত্তর: ফজরের নামাজ শুরু হয় সবে সবে দাউস (ফজরের আলো-উদয় হরিণ সাদা দিক থেকে প্রসারিত হওয়া) শুরু হওয়ার পর। অর্থাৎ আকাশে একটি শীতল সাদা ঝিলিক দেখা দিলে।
❓ ২. ফজরের নামাজ কখন শেষ হয়?
উত্তর: ফজরের নামাজ শেষ হয় সূর্যোদয়ের আগেই — অর্থাৎ সূর্য উঠা আরম্ভ হওয়ায় নামাজ আদায় করা যাবে না।
❓ ৩. ফজরের নামাজ কয় রাকাত?
উত্তর:
-
فرض (ফরজ) অংশ: ২ রাকাত
-
সুন্নত (সুন্নত-মুয়াক্কাদাহ) অংশ: ২ রাকাত
সুতরাং সাধারণভাবে বলা হয়: ফজরের নামাজ ৪ রাকাত, যার মধ্যে ২ রাকাত সুন্নত ও ২ রাকাত ফরজ।
🔍 আলোচিত অন্যান্য প্রশ্ন ও উত্তর (প্রায় ২০)
নীচে কিছু প্রায়শই অনুসন্ধিত প্রশ্ন ও সংক্ষিপ্ত উত্তর দেওয়া হলো:
-
ফজরের নামাজের সময় কতক্ষণ চলে?
উত্তর: শুরু থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত — সাধারণত প্রায় ১ ঘন্টা থেকে দেড় ঘণ্টার মধ্যে (ভৌগোলিক অবস্থান ও ঋতু ভেদে)। -
ফজরের সুন্নত কত রাকাত?
উত্তর: ২ রাকাত সুন্নত (সুন্নত-মুয়াক্কাদাহ)। -
ফজরের নফল নামাজ আছে কি?
উত্তর: অনেক হাদিসে নফল নামাজের উৎসাহ আছে, তবে ফরজ ও সুন্নতের পর অতিরিক্ত নফল (যেমন তাসবিহ, হাজত) করা যেতে পারে। -
ফজরের নামাজ কখন পড়া ভালো?
উত্তর: যত দ্রুত সম্ভব, এর আদায় শুরুতে করার নির্দেশ আছে। -
ফজর ও অন্যান্য নামাজের মধ্যে পার্থক্য
উত্তর: ফজর একমাত্র প্রারম্ভে ২ রাকাত সুন্নত থাকে; অন্যান্য নামাজে সুন্নত বিভিন্ন হয়। -
ফজর আদায় না করলে কি হবে?
উত্তর: এটি গোনাহ; আল্লাহর হক ও দায়িত্ব অগ্রাহ্য করা হবে। -
ফজরের আজান ও ইকামাহ সময়ের পার্থক্য কী?
উত্তর: আজান নামাজের ঘোষণা; ইকামাহ নামাজ শুরু করার সংকেত। -
ফজর নামাজে সূরা আল-ফাতিহা ও অন্য সূরা পাঠ করা উচিত?
উত্তর: হ্যাঁ, প্রতিটি রাকাতে ফাতিহা এবং আরেকটি সূরা বা কিছু আয়াত পাঠ করা সুন্নত। -
ফজরের নামাজ জায়গা বা অবস্থান কি গুরুত্বপূর্ণ?
উত্তর: যেকোনো পবিত্র স্থান (মসজিদ বা বাড়ি) — তবে এ সেটিং (মসজিদই ভালো)। -
ফজরের নামাজে কেয়াম (দাঁড়ানো) কত স্থায়ী হওয়া উচিত?
উত্তর: যথাসামর্থ — যতটা সম্ভব স্তব্ধ ও মনোযোগ সহকারে থাকতে হবে। -
ফজরের নামাজে সিজদা ও তাশাহ্হুদ একই নিয়মে?
উত্তর: হ্যাঁ, অন্যান্য নামাজের মতোই আরকান মেনে সিজদা ও তাশাহ্হুদ করতে হবে। -
ফজরের সময় ভুলে নামাজ পড়া কি-বাপারে?
উত্তর: যদি নামাজের সময় শেষ হয়ে যায়, তবে দুঃখিত হওয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিৎ; যদি সম্ভাব্য হয়, সেই সময়ের নামাজ Qadha (বাদে পড়া নামাজ) পড়া যেতে পারে। -
ফজরের নামে অন্য কোনো নাম?
উত্তর: “সুবহে-সাদিক” নামে পরিচিত, অর্থ প্রামাণ্য ভোর। -
ফজরের নামাজ ও রমজানে তার গুরুত্ব?
উত্তর: রমজানে ফজরের নামাজ (বিশেষ করে প্রথম অংশ) বেশি ফজিলতপূর্ণ। -
ফজরের নামাজে তাকবির কতবার বলা হবে?
উত্তর: সাধারণ নামাজের মতো তাকবিরের আরকান থেকে; আলাদা কিছু উল্লেখ নেই। -
ফজরের নামাজ মিস করা হলে ক্ষতি কী?
উত্তর: ঈমান ও দায়িত্বের প্রতি অবহেলা; Qadha করে মাফের চেষ্টা করা উচিত। -
ফজরের নামাজে দোয়ার গুরুত্ব?
উত্তর: নামাজ শেষে কেউ ব্যক্তিগত দোয়া করতে পারেন — বিশেষ করে সেই দিন (সকাল) ও কাজের জন্য। -
নিজ দেশে ফজরের সময় নির্ধারণ কীভাবে হয়?
উত্তর: মসজিদের দ্বার বা ইসলামিক সময়সূচি, জ্যোতির্বিজ্ঞান ভিত্তিক হিসাব, মাসলাহের ভিত্তিতে নির্ধারণ। -
ফজরের নামাজ শুরুতে জেগে ওঠার প্রয়োজনীয়তা?
উত্তর: ইচ্ছা সৎ হওয়া ও প্রস্তুতির জন্য ভোরে জেগে উঠা ভালো। -
ফজরে নামাজ দ্রুত পড়া উচিত নাকি ধীরে ধীরে?
উত্তর: সম্মান ও খতরার কারণে যতটা সম্ভব ধীরে ও মনোযোগ সহকারে পড়ার নির্দেশ।
🕌 ফজরের নামাজ আদায়ের পদ্ধতি ও নিয়ম
(দুই রাকাত সুন্নাত ও দুই রাকাত ফরজ নামাজের সঠিক নিয়ম)
✅ নামাজের পূর্ব প্রস্তুতি:
১. ওযু করা – পবিত্রতা অর্জন করা ফরজ।
২. পোশাক ও স্থান পবিত্র হওয়া – কাপড়, শরীর ও নামাজের জায়গা পাক-পরিচ্ছন্ন হতে হবে।
3. কিবলা অভিমুখে হওয়া
4. সময় শুরু হওয়া – ফজরের ওয়াক্ত শুরু হলেই নামাজ আদায় করা যাবে।
✨ ফজরের নামাজের রাকাতসমূহ:
| নামাজ | রাকাত সংখ্যা | ধরণ |
|---|---|---|
| ১ | ২ রাকাত | সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ |
| ২ | ২ রাকাত | ফরজ |
🌙 ফজরের ২ রাকাত সুন্নাত নামাজের পদ্ধতি:
সুন্নাত নামাজ ফরজের আগে আদায় করতে হয়।
▶ রাকাত ১:
-
নিয়ত:
“আমি ২ রাকাত সুন্নাতে মুআক্কাদাহ ফজরের নামাজ কিবলার দিকে মুখ করে আল্লাহর জন্য আদায় করছি।”
-
তাকবির – “আল্লাহু আকবার” বলে হাত বেঁধে দাঁড়ান।
-
সানা পড়ুন:
“সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা…”
-
সূরা ফাতিহা পড়ুন।
-
এরপর যেকোনো সূরা বা আয়াত, যেমন: সূরা ইখলাস।
-
রুকু – “সুবহানা রাব্বিয়াল আযিম” (৩ বার)।
-
সামি’আল্লাহু লিমান হামিদাহ – উঠে দাঁড়ান এবং “রাব্বানা লাকাল হাম্দ” বলুন।
-
সিজদা – “সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা” (৩ বার)।
-
বসা – “রব্বিগ্ফিরলি” বলুন।
-
দ্বিতীয় সিজদা।
▶ রাকাত ২:
-
সূরা ফাতিহা + অন্য সূরা
-
রুকু
-
কিয়াম
-
সিজদা
-
বসা
-
তাশাহহুদ (আত্তাহিয়্যাতু) পড়ুন
-
দরূদ শরীফ পড়ুন (ইব্রাহীমি দরূদ)
-
দোয়া পড়ুন, যেমন:
“রব্বানা আতিনা ফিদ্ দুনিয়া হাসানাহ…”
-
তাসলিম – ডানে ও বামে সালাম ফিরান।
🌅 ফজরের ২ রাকাত ফরজ নামাজের পদ্ধতি:
সুন্নাত নামাজের পরে ফরজ নামাজ আদায় করবেন।
▶ নিয়ত:
“আমি ২ রাকাত ফরজ ফজরের নামাজ কিবলার দিকে মুখ করে আল্লাহর জন্য আদায় করছি।”
এরপর ঠিক সুন্নাতের মতোই আদায় করবেন, কিন্তু ফরজ হওয়ায় আরো খুশু ও খুজু (মনোযোগ ও বিনয়) সহকারে পড়া আবশ্যক।
📖 দলিল (হাদীস):
১. রাসূল ﷺ বলেন:
“ফজরের দুই রাকাত সুন্নাত, দুনিয়া ও তার ভেতরের সমস্ত কিছু থেকেও উত্তম।”
— (সহীহ মুসলিম: ৭২৫)
২. কুরআনে আল্লাহ বলেন:
“নিশ্চয়ই সালাত মুমিনদের জন্য নির্ধারিত সময়ে ফরজ।”
— (সূরা নিসা: ১০৩)
✅ গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়:
-
ফজরের নামাজ দেরিতে না পড়ে ওয়াক্ত শুরুতেই আদায় করা উত্তম।
-
প্রথমে ২ রাকাত সুন্নাত, এরপর ২ রাকাত ফরজ পড়তে হয়।
-
ফজরের ফরজ নামাজ জামাআতের সাথে পড়া সুন্নাত মুয়াক্কাদাহ।
🕓 সময়সীমা:
-
শুরু: সুবহে সাদিক (আলোর রেখা দেখা দিলে)
-
শেষ: সূর্যোদয়ের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত
📌 সূর্য ওঠার পর নামাজ আদায় করা নিষিদ্ধ সময়। ফজরের নামাজ সময়মতো না পড়লে, কাজা (পরে পড়া) করতে হবে।
🕌 ফজরের নামাজের পর আমলসমূহ
(কুরআন ও হাদীসের আলোকে ফজরের পর করণীয় ইবাদত)
✅ ১. আল্লাহর যিকর করা (তাসবিহ, তাহমিদ, তাকবির, তাহলীল)
নামাজের পরে নিচের তাসবিহগুলো পড়া খুব ফজিলতপূর্ণ:
| যিকর | উচ্চারণ | অর্থ |
|---|---|---|
| ১ | سُبْحَانَ اللَّهِ (৩৩ বার) | আল্লাহ পবিত্র |
| ২ | الْحَمْدُ لِلَّهِ (৩৩ বার) | সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর |
| ৩ | اللَّهُ أَكْبَرُ (৩৩ বার) | আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ |
| ৪ | لَا إِلٰهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ… (১ বার) | আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই… |
📚 হাদীস:
রাসুল (ﷺ) বলেন:
“ফজরের নামাজের পর কেউ না উঠে এই তাসবিহগুলো পড়লে, তার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়, যদিও তা সমুদ্রের ফেনার মতো হয়।”
— (মুসলিম: ৫৯৭)
✅ ২. আসকার বা দুআ পাঠ করা
ফজরের পর “সাবাহের আসকার” অর্থাৎ সকালের দোয়া পড়া সুন্নাত। যেমন:
🔹 আয়াতুল কুরসী (সূরা বাকারাহ ২:২৫৫)
🔹 সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক, সূরা নাস – ৩ বার করে
🔹 নিচের দোয়াটি:
اللَّهُمَّ أَجِرْنِي مِنَ النَّارِ
“হে আল্লাহ! আমাকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করুন।” (৭ বার)
🔹 সকাল-সন্ধ্যার দোয়া বই (Hisnul Muslim বা অন্য বই) থেকে দোয়া পড়া উত্তম।
✅ ৩. কুরআন তিলাওয়াত
ফজরের নামাজের পর কুরআন তিলাওয়াত করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ।
📚 কুরআন বলেছে:
“আর ফজরের কুরআন — নিশ্চয়ই তা সাক্ষীস্বরূপ পড়া হয়।”
— (সূরা ইসরা: ১৭:৭৮)
📝 প্রতিদিন অন্তত ৫-১০ আয়াত হলেও তিলাওয়াত করুন।
✅ ৪. তাসবিহ, তাহলীল ও ইস্তেগফার করা
🔹 আস্তাগফিরুল্লাহ (١٠০ বার)
🔹 لا إله إلا الله (যত ইচ্ছা)
🔹 সালাতুন নাবী (দরূদ শরীফ ১০ বা ১০০ বার)
✅ ৫. সূর্যোদয় পর্যন্ত বসে ইবাদত করা ও ঈশার নামাজ আদায় করা
🕌 ফজরের নামাজ পড়ে বসে আল্লাহর যিকর ও ইবাদতে নিয়োজিত থেকে সূর্য ওঠার ১৫-২০ মিনিট পরে ২ রাকাত নফল নামাজ আদায় করলে এক হজ ও ওমরার সওয়াব পাওয়া যায়।
📚 হাদীস:
“যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাআতে আদায় করে, তারপর বসে আল্লাহর যিকর করতে থাকে সূর্য ওঠা পর্যন্ত, তারপর ২ রাকাত নামাজ পড়ে — তার জন্য হজ ও ওমরার পূর্ণ সওয়াব রয়েছে।”
— (তিরমিজি: ৫৮৬, সহীহ)
✅ ৬. দু’আ করা
ফজরের পর সময়টা দুআ কবুলের অন্যতম সময়। নিজের জন্য, পরিবার, উম্মাহ, রোগীদের জন্য দোয়া করতে পারেন।
✅ ৭. কাজে বের হবার আগে রিযিকের দোয়া ও ইখলাস সহকারে ইচ্ছা করা
“হে আল্লাহ! আমার রিজিক হালাল, বরকতময় ও সহজ করুন।”
— এই দোয়া সকালবেলায় কাজে যাওয়ার আগে করলে বরকত হয়।
☀️ উপসংহার:
ফজরের নামাজের পর সময়টা জীবনের সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ মুহূর্ত। যারা এই সময়কে ইবাদতে ব্যয় করেন, তাদের রিজিক বরকতময় হয়, দুঃখ-কষ্ট দূর হয় এবং দিনটি আলোকিত হয়ে যায়।
✅ সংক্ষেপে ফজরের পর করণীয় আমল:
-
✅ তাসবিহ (৩৩+৩৩+৩৩+১)
-
✅ আয়াতুল কুরসী
-
✅ সূরা ইখলাস, ফালাক, নাস (৩ বার)
-
✅ দোয়া ও আসকার
-
✅ কুরআন তিলাওয়াত
-
✅ দরূদ শরীফ
-
✅ ইস্তেগফার
-
✅ সূর্যোদয়ের পর ২ রাকাত ঈশরাক নামাজ
-
✅ হালাল রিজিকের দোয়া











