প্রবারণা পূর্ণিমা : কি? কেন হয় এবং মুসলমানের জন্য এর বিধান কি?
- আপডেট সময়ঃ ০৯:৫৬:৪২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ অক্টোবর ২০২৫
- / ৬৭ বার পড়া হয়েছে।
🌕 প্রবারণা পূর্ণিমা কী?
প্রবারণা পূর্ণিমা (Pavarana Purnima) হলো বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের একটি প্রধান ধর্মীয় উৎসব, যা প্রতি বছর বাংলা মাসের আশ্বিন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে (সাধারণত অক্টোবর মাসে) পালিত হয়।
“প্রবারণা” শব্দটি পালি ভাষার “Pavāraṇā” থেকে এসেছে, যার অর্থ “অনুমতি”, “স্বীকারোক্তি” বা “ক্ষমা প্রার্থনা”।
এদিন বৌদ্ধ ভিক্ষুরা তিন মাসব্যাপী বর্ষাবাস (Vassa) শেষ করেন এবং নিজেদের ত্রুটি, দোষ বা ভুল কাজের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা ও আত্মশুদ্ধির অঙ্গীকার করেন।পূজা কি মুসলিমদের জন্য সার্বজনীন?
🪷 কারা প্রবারণা পূর্ণিমা পালন করে?
এই উৎসবটি পালন করেন বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা, যেমন:
-
বাংলাদেশ
-
মায়ানমার
-
থাইল্যান্ড
-
শ্রীলঙ্কা
-
কম্বোডিয়া
-
লাওস ইত্যাদি দেশ
বাংলাদেশে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলায় এই দিনটি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে উদযাপন করা হয়।
🕯️ কেন প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপিত হয়?
বৌদ্ধ ধর্মমতে:
-
বর্ষাকালে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা কোথাও ভ্রমণ না করে এক স্থানে থাকেন, ধ্যান ও ধর্মচর্চা করেন।
-
তিন মাসব্যাপী এই অবস্থান শেষে তারা প্রবারণা সভা করেন।
-
এই সভায় প্রত্যেকে নিজের দোষ স্বীকার করে এবং অন্যদের নিজের ভুল ধরিয়ে দিতে অনুরোধ করে।
-
এটি আত্মশুদ্ধি, বিনয় ও ঐক্যের প্রতীক হিসেবে পালিত হয়।
রাতে ফানুস (আকাশ প্রদীপ) উড়ানো হয়, যা অন্ধকার দূর করে আলোকিত জীবনের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
✨ প্রবারণা পূর্ণিমার মূল বার্তা
এই উৎসবের মূল শিক্ষা হলো:
-
নিজের ভুল স্বীকার করা ও সংশোধন করা।
-
অন্যের প্রতি ক্ষমাশীলতা ও সহানুভূতি প্রদর্শন।
-
সংঘ বা সমাজে ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ব বজায় রাখা।
এটি একধরনের নৈতিক ও আত্মিক শুদ্ধির উৎসব, যা বৌদ্ধ ধর্মের করুণা ও ধ্যানচর্চার মূলনীতি প্রতিফলিত করে।
🕌 ইসলামের দৃষ্টিতে প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপন
ইসলামে অমুসলিম ধর্মীয় উৎসব বা আচার-অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা বা অভিনন্দন জানানো সম্পূর্ণরূপে হারাম (নিষিদ্ধ)।
কারণ, ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ দীন, এবং মুসলমানদেরকে অন্য ধর্মের ধর্মীয় উৎসব থেকে পৃথক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
📖 কুরআনের দলিল
-
সূরা আল-কাফিরুন (১০৯:১–৬):
قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُونَ (١) لَا أَعْبُدُ مَا تَعْبُدُونَ (٢)… لَكُمْ دِينُكُمْ وَلِيَ دِينِ (٦)
অর্থ: “বলুন, হে কাফেরগণ! আমি তোমাদের উপাস্যদের উপাসনা করি না… তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্ম, আর আমার জন্য আমার ধর্ম।”
➡️ এখানে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে — মুসলমান ও অমুসলিমদের ধর্মীয় আচারের মধ্যে পার্থক্য থাকা আবশ্যক।
-
সূরা আল-ফুরকান (২৫:৭২):
وَالَّذِينَ لَا يَشْهَدُونَ الزُّورَ
অর্থ: “আর তারা মিথ্যা বা অসত্য কর্মকাণ্ডে উপস্থিত থাকে না।”
🔹 ইবনু কাসির (রহ.) এর তাফসিরে বলা হয়েছে, “অসত্য কর্মকাণ্ড (az-zoor)” বলতে অমুসলিম ধর্মীয় উৎসবে অংশগ্রহণও অন্তর্ভুক্ত।
📜 হাদীসের দলিল
-
সহীহ মুসলিম (হাদীস নং ১৩৪৯):
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:
“من تشبه بقوم فهو منهم”
অর্থ: “যে কোনো জাতির অনুকরণ করবে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে।”
🔹 সুতরাং, অমুসলিমদের ধর্মীয় উৎসব বা আচার অনুকরণ করা ইসলামি দৃষ্টিতে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
-
সহীহ বুখারী (হাদীস ৫৯৮৬):
নবী ﷺ বলেছেন:
“তোমরা ইহুদি ও খ্রিস্টানদের বিপরীতে কাজ কর।”
➡️ অর্থাৎ মুসলমানের পরিচয়, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় আচরণে পৃথকতা বজায় রাখা ফরজ।
⚠️ মুসলমানদের জন্য বিধান
| কাজ | ইসলামি বিধান |
|---|---|
| বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রতি সৌজন্য ও মানবিক আচরণ | ✅ জায়েজ |
| ধর্মীয় অর্থে অভিনন্দন জানানো (যেমন “হ্যাপি প্রবারণা পূর্ণিমা”) | ❌ হারাম |
| তাদের ফানুস উড়ানো, মন্দিরে যাওয়া, দান-উৎসবে অংশ নেওয়া | ❌ হারাম |
| ধর্মীয় বিষয় ব্যতীত সাধারণ সৌজন্য (যেমন, প্রতিবেশীকে সাহায্য) | ✅ জায়েজ |
প্রবারণা পূর্ণিমা বৌদ্ধ ধর্মের আত্মশুদ্ধি ও ক্ষমার উৎসব, কিন্তু মুসলমানদের জন্য এতে অংশগ্রহণ বা অভিনন্দন জানানো হারাম।
ইসলাম অন্য ধর্মের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের শিক্ষা দেয়, কিন্তু তাদের ধর্মীয় আচারে অংশ নেওয়া শিরক ও তাশাব্বুহ (অনুকরণ) হিসেবে গণ্য হয়।









